জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালাঃ ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার- ২
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৪:২৩:৪৩ বিকাল
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- “বাংলাদেশে বিকাশমান সম্প্রচার মাধ্যমকে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি অনুযায়ী পরিচালনা ও মান উন্নয়নের জন্য জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।”
কথাটা শুনতে বেশ ভালই লাগছে। কিন্তু মজার বিষয় হলো শুনতে যত ভালই লাগুক না কেন বাস্তবে এই নীতিমালা গণমাধ্যমের জন্য ততটাই খারাপ হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ইতোমধ্যে এর প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে।
আমাদের মাননীয় তথ্য মন্ত্রী জনাব হাসানুল হক ইনু ইতোমধ্যে বলেছেন যে, সাংবাদিকদের ভালোর জন্যই সরকার সম্প্রচার নীতিমালা দ্রুত করতে চায়, সাংবাদিকরা না বুঝেই এই নীতিমালার বিরোধীতা করছে। অথচ মজার বিষয় হলো এই নীতিমালা করার পূর্বে সম্ভবত একজন বিশেষজ্ঞেরও পরামর্শ বা মতামত নেওয়া হয়নি।
সদ্য নির্বাচনের কথা বাদই দিলাম। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বচনে দেখা গেলো কোন কোন কেন্দ্রে ১০০ থেকে ১২০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে। নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোর আশপাশে পাওয়া যাচ্ছিল ব্যালট পেপারের মুড়ি। অর্থাৎ কে বা কারা হাজার হাজার ব্যালট পেপার ছিড়ে, সিল মেরে ভোটের বাক্সে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। এ নিয়ে যখন প্রশ্ন উত্থাপিত হলো তখন নির্বাচন কমিশন এক ফরমান জারি করলো যে, এই মুড়ি যাদের কাছে পাওয়া যাবে, তাদেরই গ্রেফতার করা হবে। সাধারণত খেলতে গিয়ে ছোট শিশুরা নির্বাচন কেন্দ্র স্কুলের আশপাশ থেকে এসব মুড়ি কুড়িয়ে পাচ্ছিল। অভিভাবকেরা ভয়ে সেগুলো লুকিয়ে ফেলছিলেন। এই হলো নীতিমালার পটভূমি। সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এরপরও কিছু বলা যাবে না।
সরকার নিজেদের দূর্বলতা ঢাকার জন্যই যে এই নীতিমালা করেছে তা আজ দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। তার বাস্তব প্রমান হলো আমাদের মাননীয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ইদানিংকার কিছু বক্তব্য। নিজের দূর্বলতা ঢাকতে তিনি সাংবাদিকদের উপর প্রচন্ড ক্ষ্যাপা। আর এই কারনেই মাননীয় মন্ত্রী জনাব সৈয়দ মহসিন আলী স্পষ্টভাবেই বলেছেন “সাংবাদিকদের ঠিক করতে নীতিমালা হয়েছে, ওইদিন ক্যাবিনেট মিটিংয়ে আমি থাকলে সাংবাদিকদের .....(অকথ্য শব্দ) বাঁশ দিতাম। সাংবাদিকদের এখন এমনভাবে ঠিক করা হবে, যাতে নিজের স্ত্রীকে পাশে নিয়েও শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না। সাংবাদিকরা বদমাশ, চরিত্রহীন, লম্পট।....যারা পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে লেখালেখি করে, তারা দু’এক কলম লেখাপড়া করেছে। আমি বলি একটা, তারা লেখে আর একটা। দুই টাকা খেয়ে তারা আমার....(অকথ্য শব্দ) দিয়ে বাঁশ ঢুকাতে চায়।’’
মন্ত্রী আরো বলেন- ‘‘আমি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে কথা বলেছি, সেটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও আমাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। লন্ডন থাকি আইয়া নেত্রী কইছন, ঠিক কইছন মহসিন ভাই। আপনি আওয়ামীলীগের নেতা আর ইনু সাহেব ১৪ দলের নেতা। এভাবেতো বলবেনই।”
তিনি আরো বলেন- ‘‘আওয়ামীলীগ সাংবাদিকদের ঠিক জায়গায় ধরছে। এর লাগি সম্প্রচার নীতি হইছে, আমি যদি ওই ক্যাবিনেটে থাকতাম, তাহলে সাংবাদিকদের আর শ্বাসিক গলা ধরলাম নে, ফুয়াইনতর (ছেলেদের) রস বার খল্লামনে (বের করতাম)”।
মন্ত্রী মহোদয় সাংবাদিকদের উপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ, এই কারনে তিনি সিলেটের ভাষায় আরও বলেন- ‘‘কোমর কিলা ভাংতে হয় আমি জানি, চরিত্রহীন হকল। ট্যাকা নিয়া মাইনষর বিরুদ্ধে যেথা মনে হয় ওতা লিখিলাও। খাও ট্যাখা একজনের, বাঁশ ফুকাও আরেক জনের। মহসিন আলীরে... (অকথ্য শব্দ) বাঁশ দিলাও। সাংবাদিকরা আমার... (অকথ্য শব্দ) ছিঁড়তে পারবে না।”
মন্ত্রী দম্ভোক্তি করে বলেন- ‘‘খুব সতর্ক থাকবায়। ধুরলে কিন্তু ছাড়া পাইতায় না। কোমর কিভাবে ভাংতে হয় আমি জানি। চরিত্রহীন, তোমরা টাকা খাও অন্যের আর মহসিন আলীর বিরুদ্ধে লিখো। এটা আর হবে না, খুব সতর্ক থাকবে, ধরলে কিন্তু ছাড়া হবে না”।
এই হলো সরকারের একজন বড় মাপের এবং মানের(?) মন্ত্রীর কথা। এই কারনেই হয়তো জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালায় বলা হয়েছে ‘‘সরকারী কর্মকর্তাদের মানহানী হয় এমন কিছু প্রদর্শন করা যাবে না”। এসব কথা থেকেই মনে হয় আর কারো বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় যে কি জন্য সম্প্রচার নীতিমালা করা হয়েছে। এখানে একটা বিষয় লক্ষনীয়, একজন মন্ত্রী এমন অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে পারেন সেটা মনে হয় এই মন্ত্রী মহোদয়ের কথা না শুনলে চিরদিনই আমাদের অভিজ্ঞতার একটা বড় ধরনের গ্যাপ থেকে যেত!
চলবে....
বিষয়: বিবিধ
৯২৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শুভেচ্ছা রইলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন