কুরআন নাযিল ও তাকওয়া অর্জনের মাস “রমজান"-শেষ

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ০৯ জুলাই, ২০১৪, ০৪:১১:০২ বিকাল



এই পর্যায়ে চলুন দেখি তাওয়ার পরিধিটা কত বিস্তৃত। এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন- “(হে মানুষ) তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আল্লাহকে ভয় করো, ঠিক যতটুকু ভয় তাঁকে করা উচিত, আর (আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণ) আত্মসমর্পণকারী না হয়ে তোমরা কখনও মৃত্যুবরণ করো না।” সূরা আলে ইমরান-১০২

অর্থাৎ আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করতে হবে। আর এর মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হয়ে তারপরেই মৃত্যুর দিকে যেতে হবে নচেৎ খবর আছে। তবে এর মানে তো এ নয় যে যতক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হতে পারি নাই ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ আমাদেরকে মৃত্যু দেবেন না, বরং এর মানে হলো যে কোন সময়েই আল্লাহ আমাদেরকে মারতে পারেন আর যখনই মারবেন তখনই যেন তিনি আমাদেরকে মুসলিম হিসেবে পান। মানে আমাদেরকে চব্বিশ ঘন্টাই মুসলিম হিসেবে বসবাস করার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন।

এখন কুরআন নাযিলের ব্যাপারে আরও কিছু কথা বলতে চাই। আগেই বলা হয়েছে কুরআনটা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য হেদায়াত স্বরূপ হলেও এখান থেকে সবাই হেদায়াত পায় না। যারা আল্লাহর কথামত চলেন তারাই শুধু হেদায়াত পান। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেছেন-“আমি কুরআনে যা কিছু নাযিল করি তা হচ্ছে ঈমানদারদের জন্যে (তাদের রোগের) উপশমকারী ও রহমত, কিন্তু এ সত্ত্বেও তা যালেমদের জন্যে ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না।” সূরা বনী ইসরাঈল-৮২

তার মানে যালেমরা এই কুরআন থেকে কোন উপশম পাবে না।

আর এমনিতেই কেউ যদি কুরআনের অনুসরণ না করে তাহলে তার পরিণতি কি হবে সেই ব্যাপারে কুরআনের আলোচনা শুনুন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন- “যে ব্যক্তি আমার স্মরণ (উপদেশমালা) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য হবে দুনিয়ার সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ করে। সে (নিজেকে এভাবে দেখার পর) বলবে, হে আমার মালিক- তুমি আমাকে কেন (আজ) অন্ধ বানিয়ে উঠালে? (দুনিয়াতে তো আমি চক্ষুষ্মান ব্যক্তিই ছিলাম! আল্লাহ বলবেন, হাঁ, এভাবেই তো। আমার আয়াত যখন তোমার কাছে এসেছিল, তুমি তাকে ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হচ্ছে।” সূরা ত্বা-হা-১২৪-১২

স্পষ্ট যে আমরা যদি কুরআনের অনুসরণ না করি তাহলে পৃথিবীতে যতবড়ই ক্ষমতাশালী, প্রভাবশালী, সম্পদশালী হই না কেন আখিরাতে এগুলোর কোন মূল্য তো থাকবেই না বরং উল্টো আরো অন্ধ হয়ে উঠতে হবে। সেই কঠিন ময়দানে যদি কেউ অন্ধ হয়ে উঠে তাহলে তার অবস্থা কি হবে তা সহজেই অনুমেয়।

এ পর্যায়ে কুরআনের অনুসর করে তাকওয়া অর্জন করলে প্রতিদান কি পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে কিছু আলোচনা করা যাক।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন- “এবং তিনি তাকে এমন রেযেক দান করেন যার (উৎস) সম্পর্কে কোন ধারণা নাই, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট, (কেননা) আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিজের কাজটি পূর্ণ করেই নেন; আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি জিনিসের জন্যেই একটি পরিমান ঠিক করে রেখেছেন।” সূরা আত তালাক্ব-৩

আল্লাহ অন্যত্র বলেন- “হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করে চলো, তাহলে তিনি তোমাদের জন্যে (অন্যদের সাথে) পার্থক্য নির্ণয়কারী (কিছু স্বতন্ত্র মর্যাদা) দান করবেন, তিনি তোমাদের গোনাহ সমূহ মিটিয়ে দেবেন, তিনি তোমাদের ক্ষমা করে দেবে; আল্লাহ তায়ালার দান আসলেই অনেক বড়ো।” সূরা আল আনফাল-২৯

আল্লাহ আরো বলেন- “অথচ যদি সেই জনপদের মানুষগুলো (আল্লাহ তায়ালার উপর) ঈমনি আনতো এবং (আল্লাহকে) ভয় করতো, তাহলে আমি তাদের উপর আসমান-যমিনের যাবতীয় বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম...।” সূরা আল আরাফ-৯৬

আল্লাহ বলেন- “(তাদের অবস্থা হচ্ছে) তোমাদের কোন কল্যাণ হলে (তার কারনে) তাদের খারাপ লাগে, আবার তোমাদের কোন অকল্যাণ দেখলে তারা আনন্দে ফেটে পড়ে; (এ প্রতিকুল অবস্থায়) যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ করতে পারো এবং নিজেরা সাবধান হয়ে চলতে পারো, তাহলে তাদের চক্রান্ত (ও ষড়যন্ত্র) তোমাদের কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না; নিশ্চই আল্লা তায়ালা তাদের যাবতীয় কর্মকান্ড পরিবেষ্টন করে আছেন।” সূরা আলে ইমরান-১২০

উপরের আয়াতগুলো থেকে আমরা এটা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম যে একজন মুত্তাকী ব্যক্তির দুনিয়া এবং আখিরাতের কোথাও কোন সমস্যা নাই। অতএব কষ্ট করে হলেও আমাদেরকে মুত্তাকী হতেই হবে।

যদি মুত্তাকী হই তাহলে আরও বড় ধরনের একটা প্রতিদান আল্লাহ রাব্বুল আলামী আমাদেরকে দান করবেন, সেই কথা বলেই আজকে আলোচনার ইতি টানবো ইনশাল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছেন- “তোমরা তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে ক্ষমা পাওয়ার কাজে প্রতিযোগিতা করো, আর সেই জান্নাতের জন্যেও (প্রতিযোগিতা করো) যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের সমান, আর এই (বিশাল) জান্নাত প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে সে সব (ভাগ্যবান) লোকদের জন্যে, যারা আল্লাহকে ভয় করে-মুত্তাকী।” সূরা আলে ইমরান-১৩৩

আসুন আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন আমাদেরকে কুরআন নাযিলের এই মাসে তাকওয়া অর্জন করে সেই বেহেশতে যাওয়ার তাওফীক দান করেন, যার বিশালতা আসমান ও জমিনের সমান।

তৃতীয় কিস্তি

বিষয়: বিবিধ

১৬৩৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

243294
১০ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:১২
আফরা লিখেছেন : অনেক সুন্দর আলোচনা ,অনেক ভাল লাগল ।

হে আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন নাযিলের এই মাসে তাকওয়া অর্জন করে সেই বেহেশতে যাওয়ার তাওফীক দান করুন যার বিশালতা আসমান ও জমিনের সমান। আমীন।

জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
১০ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০১:৪১
189054
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
243498
১০ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২০
বাজলবী লিখেছেন : তাকওয়ার মাসে তাকওয়া অর্জন করে অাল্লাহর প্রিয় বান্দা মুত্তাকিন হওয়ার তাওফিক দিন। অামিন। ভাল লিখেছেন।জাজাক অাল্লাহ খায়ের।
১২ জুলাই ২০১৪ সকাল ১১:০৬
189543
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File