কুরআন নাযিল ও তাকওয়া অর্জনের মাস “রমজান"-৩
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ০৬ জুলাই, ২০১৪, ০৪:১৫:২৪ বিকাল
অনেক আগে একটা গল্প শুনেছিলাম। গল্পটা হলো এমন- কোন একজন পীরের কাছে দুইজন ব্যক্তি গিয়েছেন মুরিদ হওয়ার আশায়। ব্যক্তি দুইজন সেই পীরকে গিয়ে বললেন, হুজুর আমরা আপনার নিকট মুরিদ হতে এসেছি আপনি আমাদেরকে বাইয়াত দেন। হুজুর বললেন, না আমি যেন তেনভাবে কাউকে মুরিদ বানাই না, আমার কাছে মুরিদ হতে হলে একটা পরীক্ষা দিতে হবে। ব্যক্তি দুইজন সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল। তারা বললো, হুজুর আপনি যে পরীক্ষই নিতে চান নেন এরপর আমাদেরকে মুরিদ করতেই হবে। হুজুর বললেন, ঠিক আছে তোমাদের কাজ হলো এই দুইটা ছাগল দু’জনে নিয়ে যাও আর এদেরকে আলাদা আলাদাবাবে জবাই করে এদের গোশতো আমার কাছে নিয়ে আস। তবে শর্ত হলো, যেখানে এগুলো জবাই করবে সেখানে যেন তোমাদেরকে কেউ না দেখে। জবাই করার সময় যদি কেউ দেখে ফেলে তা লে কিন্তু পরীক্ষায় ফেল করবে। এই কথায় তারা রাজি হয়ে গেল। দুইজন দুইটা ছাগল নিয়ে জবাই করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন দিকে রওয়ানা দিল। দেখা গেল কিছুক্ষণ পরেই এক ব্যক্তি ছাগল জবাই করে তার গোশতো সেই পীরের কাছে নিয়ে এসেছে। পীরসাহেব “কেউ দেখেছে কি না” জিজ্ঞাসা করলে সে বললো যে না তার ছাগল জবাই করা কেউ দেখেনি। কিন্তু অন্য একজন ব্যক্তি দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত আসছে না। কোন একসময় দেখা গেল যে ঐ ব্যক্তি ছাগল জবাই না করেই জীবন্ত নিয়ে চলে এসেছে। এতে পীরসাহেব আশ্চর্য হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে- ছাগল জবাই না করে ফিরে আসলে কেন! এতে সেই ব্যক্তি জবাব দিল- হুজুর অনেক গোপন জায়গায় পর্যন্ত আমি গিয়েছি কে জবাই করার জন্য কিন্তু যেখানেই গিয়েছি সেখানে কোন মানুষ বা পমু-পাখী না থাকলেও আমার কাছে মনে হয়ছে যে এখানে কেউ না দেখলেও নিশ্চই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে দেখছেন। আর আপনিতো বলেছেন যে কাউকেই দেখানো যাবে না তাই আমি এমন কোন গোপন জায়গা না পেয়ে এটা ফিরিয়ে আনলাম। আমি হেরে গেলাম হুজুর আমার আর মুরিদ হওয়া হলো না অথচ আমার বন্ধু আপনার মুরিদ হয়ে যাচ্ছেন! তখন সেই পীরসাহেব বললেন- সে নয় বরং তুমিই আমার মুরিদ হবে কারন তুমি সত্যি বলেছো আর সে মিথ্যা বলেছে। তুমি আল্লাহকে ভয় করেছো আর সে তা করতে পারেনি। তুমি মুত্তাকী কিন্তু সে এখনও মুত্তাকী হতে পারেনি।
এখন কথা হলো আমরা আমাদের এই সমাজে কিভাবে মুত্তাকী হতে পারবো? যেহেুতু এই সমাজে ভাল কাজ করার চেয়ে খারাপ কাজ করা অনেক সহজ। এ ক্ষেত্রে কথা হলো আমাদেরকে আরও সচেতন হতে হবে। আমাদের সমাজে যতই খারাপ কাজ হোক না কেন সেটাতো জড়িয়ে পরা যাবে না। যতটুকু সামর্থ আছে সেই খারাপকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে আর বাকিটা দমনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। অর্থাৎ খারাপের পাশেই থাকবো কিন্তু খারাপ হবো না এই শপথে বলিয়ান হতে হবে। ঈমান মজবুত হলেই কেবল সম্ভব এখান থেকে বেঁচে থাকা। আমাদেরকে অনেকটা বাইন (বাইম) মাছের তো হতে হবে। আমরা জানি বাইন মাছ কাদায় থাকে কিন্তু তার শরীরে কখনও কাদা লাগতে দেয় না। এত নোংরার মধ্যে থাকার পরেও যখন তাকে ধরা হয় তখন দেখা যায় যে তার শরীর একেবারে পরিস্কার। আমাদেরকেও ঐ বাই মাছ মার্কা হতে হবে তাহলেই কেবল আমরা মুত্তাকী হতে পারবো।
এই তাকওয়ার গুরত্ব দিতে গিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-“(হে মানুষ) তোমরা যারা ঈমান এনেছ, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, (তোমাদের) প্রত্যেকেরই উচিত (একথাটি) লক্ষ করা যে, আগামীকাল (আল্লাহর সামনে পেশ করার) জন্যে সে কি (আমলনামা) পেশ করতে যাচ্ছে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, অবশ্যই তোমরা যা কিছু করছো আল্লাহ তায়ালা তার পূর্ণাঙ্গ খবর রাখেন।”-সূরা আল হাশর-১৮
অন্যত্র বলেছেন- “আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের অন্তরের সব বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি খবর রাখেন।”-সূরা মায়েদা-৭
উপরের আয়াত থেকে এটাই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে- আল্লাহ যেহেতু আমাদের সকল খবর (সেটা যতই গোপন হোক না কেন) রাখেন বা জানেন তাই আমাদের উচিত সব সময়েই সচেতনতার সাথে কাজ করা। একটা ভিডিও ক্যামেরা সামনে থাকলে যেখাবে আমরা অনেক সতর্ককতার সাথে চলাফেরা করি এই ভয়ে যে, না জানি কখন কোন খারাপ জিনিস ক্যামেরার চোখে ধরা পড়ে, তার চেয়েও সতর্কতার সাথে আল্লাহর ক্যামেরার সামনে চলাফেরা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য, কারন আল্লাহর ক্যামেরা আমাদের এই ক্যামেরার চেয়ে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি ডিজিটাল-সুপার পাওয়ার। তবে আশার বাণী হলো সতর্কতার সাথে চলতে গিয়ে কখনও কোন ভুল কাজ করে ফেললে সাথে সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ অবশ্যই তা ক্ষমা করবেন, কারন আল্লাহ অনেক বেশি ক্ষমাশীল।
দ্বিতীয় কিস্তি
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন