পর্দানশিন ২৪জন ছাত্রীকে গ্রেফতারঃ অপরাধ না করার অপরাধ
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ০৫ জুলাই, ২০১৪, ১১:৫৩:৩৫ সকাল
শুরুর কথাঃ
সৌভাগ্যক্রমে সেদিন আমার ঢাকার সি.এম.এম. কোর্টে থাকার সুযোগ হয়েছিল। খুব কাছ থেকে আমি সার্বিক বিষয়গুলো উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছি। বিকাল বেলা যখন দেখলাম যে ছাত্রীদেরকে এক একজন মহিলা পুলিশ এক একজনের হাত ধরে কোর্টে তুলছেন। শুধু মনে হচ্ছিল, সরকার এদের প্রতি চরম অবিচার করছে-করতে যাচ্ছেন। আপনারা নিশ্চই এবার বুঝেছেন যে আমি কাদের কথা বলতে যাচ্ছি। হ্যাঁ গত ১৮জুন গ্রেফতার হওয়া পর্দানশিন সেই ২৪ জন ছাত্রীর কথাই বলছি। বাংলাদেশে সম্ভবত স্বাধীনতার পরে এই সরকারই এমন নিকৃষ্টমানের কাজ করতে পারলো। কিছুদিন পূর্বেও এমন পর্দানশিন আরও কিছু ছাত্রীকে এই সরকার বিনা কারনেই ১৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে রিমান্ড শেষে জেলে পাঠায়। এবার অবশ্য ঐ ১৫৪ এর মতো কোন অভিযোগ নয় বরং সরাসরি দ্রুত বিচার আইনের মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করে রিমান্ড চাওয়া হলো। কি আজব বিষয়, ছাত্রীদেরকে তাদের বাসা থেকে গ্রেফতার করে বলা হলো তারা নাকি সরকারী কাজে বাধাপ্রদান করেছে!
আদালত টু জেলঃ
আদালতে তোলা হলো তাদেরকে। দেখে মনে হলো তারা বেশ সাহসি, তাদের মনে কোন ভয় বা শঙ্কা কাজ করছে বলে মনেই হলো না।। সত্যি কথা বলতে কি, যারা ইসলামের পক্ষে থাকে তারা সাহসিই হয়ে থাকেন। কারন তারা জানেন যে, পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করা জায়েজ নয়। তাদেরকে যখন আদালতে তোলা হলো তখন আইনজীবী, সাংবাদিক আর সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ভিন্ন দৃশ্যের অবতারনা হলো। সবাই উন্মুখ হয়ে আছেন না জানি আদালত কত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন!
যথারিতি শুনানী শুরু হয়ে গেল। সবার মাঝে টানা টান উত্তেজনা। দেখলাম কেউ কেউ চোখ মুচছেন। দীর্ঘক্ষন শুনানী হলো। শুনানীতে সিনিয়রদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেছেন বারের নির্বাচিত সেক্রেটারী এডভোকেট মোসলেহ উদ্দিন জসিম, এডভোকেট এস.এম. কামাল উদ্দিন, এডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক, বারের নির্বাচিত ট্রেজারার এডভোকেট শামসুজ্জামান প্রমুখ সহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী। শুনানীতে কউে কেউ আবেগে আপ্লুত হয়ে কথা বলছিলেন। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছিল আসামীরা বোধ হয় তাদেরই কলিজার টুকরা সন্তান। বারের নির্বাচিত সেক্রেটারী এডভোকেট মোসলেহ উদ্দিন জসিম সহ সিনিয়র আইনজীবীগণ বললেন, মাননীয় আদালত যেই বই রাখার অপরাধে(?) এই মেয়েদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে এজাহারে সেই বইগুলোকে নিষিদ্ধ বই বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে সেই বইগুলো বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কোন নিষিদ্ধ বই নয়। আপনি জানেন বাংলাদেশে একটি বই নিষিদ্ধ আছে যেটার নাম হলো “আমার ফাঁসি চাই”। একজন বিশেষ ব্যক্তিকে নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে। যেহেতু বইটি নিষিদ্ধ তাই সেই বইটি বহন করা বা পড়া অপরাধ। কিন্তু যেই বই রাখার অপরাধে এই নিষ্পাপ মেয়েদেরকে ধরে নিয়ে আসা হলো সেই বইগুলোর একটিও নিষিদ্ধ নয়, এমন বই আমাদের বাড়িতেও আছে। আমার বিশ্বাস মাননীয় আদলতের বাসায়ও ত্রিশ পাড়া কুরআনের তাফসীর আছে। আর তারা সেখানে বসে প্রজেক্টরের মাধ্যমে কুরআনের তালিম দিচ্ছিল।আমাদের বক্তব্য হলোঃ এসব কুরআনের তাফসীর বা এমন ধরনের বই রাখা যদি অবৈধ হয়ে থাকে তাহলে সরকার মাননীয় আদালতের মাধ্যমে ঘোষনা দিক যে বাংলাদেশে এখন থেকে কোন মহিলা আর বোরখা বা পর্দা করতে পারবে না, কেউ ইসলামী বই পড়তে পারবে না, কুরআন পড়তে পারবে না যদি কেউ এসব কাজ করে তাহলে তা হবে দন্ডনীয় অপরাধ।
কথা বলতে বলতে যখন কেউ কেউ আবেগে আপ্লুত, তখন আদালত সবাইকে থামতে বলে রিমান্ড ও জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে চার দিনের মধ্যে জেল গেটে মহিলা পুলিশ দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়ে শুনানীর সমাপ্তি ঘোষনা করলেন।
এজাহারের বক্তব্যে অপরাধঃ
কাউকে গ্রেফতার করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোন না কোন অপরাধ থাকতে হয়। এই ২৪ জন ছাত্রীকে গ্রেফতার করতেও তার কারন উল্লেখ করা হয়েছে। এই মুহুর্তে মামলার এজাহারটা আমার হাতে। এই এজাহারে গ্রেফতারের যে কারন দেখানো হয়েছে তা উল্লেখ করছি।
মামলার বাদী এসআই মোঃ আলাউদ্দিন উল্লেখ করেছেন যে, “১৯৭১ সনের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার বাধাগ্রস্থ করার নিমিত্তে তাহারা (জামায়াতে ইসলামী) নতুন আঙ্গীকে নারী সদস্যদের দ্বারা দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য সমবেত হইয়া সঙ্গোপনে পরিকল্পনা করিতেছিল”!
একটা গল্প মনে পড়ে গেল- একজন শিক্ষক ছাত্রকে নাকি একটি রচনা লিখতে বলেছিলেন, তো সেই ছাত্র একটা কুমিরের রচনা লিখে নিয়ে আসলো। শিক্ষক পরে ছাত্রটিকে একটা গরুর রচনা লিখতে বললেন, কিন্তু ছাত্রটি মাত্র কুমিরের রচনাটিই মুখস্থ করেছিল এখন সে গরুর রচনা লিখবে কেমন করে, আবার স্যার যেহেতু লিখতে বলেছে সেহেতু সেটা লিখতোও হবে। এবার ছাত্রটি সাহস করে গরুর রচনা লিখতে বসলো- গরু আমাদের গৃহপালিত পশু, গরুর চারটা পা, একটা মাথা, দুইটা কান ও দুইটা চোখ আছে। এই গরুকে ভাল রাখার জন্য নদীতে গোছল করাতে হয়। গরুকে যখন নদীতে গোছল করাতে নামানো হলো তখন সেই নদীর কুমিরটি এসে গরুটিকে আক্রমন করলো। কুমিরটি অনেক বড় ছিল, সেই কুমিরটির ছিল....অনেক বড় একটা লেজ আর লেজটা ছিল খাঁজকাটা, খাঁজকাটা, খাঁজকাটা। শিক্ষক দেখেতো অগ্নীশর্মা। আবারও ছাত্রকে পরিক্ষা করার জন্য শিক্ষক ভিন্ন একটি রচনা লিখতে দিলেন। শিক্ষক বললেন- যাও এবার পলাশীর যুদ্ধ নিয়ে একটি রচনা লিখে আনো। এবারো ছাত্র মহা চিন্তায় পড়ে গেল। তার তো আর পলাশীর যুদ্ধ সম্পর্কে তেমন কিছু জানা নাই, সে লিখবে কি। এরপরও সাহস করে ছাত্রটি শুরু করলো- পলাশীর যুদ্ধে মানুষের অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। ইংরেজদেরকে এদেশে জায়গা দেওয়ার মানে হলো খাল কেটে কুমির আনার মতো অবস্থা। কুমিরের দুটি চোখ থাকে.... অনেক বড় একটা লেজ আর লেজটা ছিল খাঁজকাটা, খাঁজকাটা, খাঁজকাটা, এভাবে এবারো ছাত্রটি কুমির নিয়ে লেখা শুরু করে দিল।
আমাদের দেশের সরকার আইনশৃঙাখলা বাহিনীর সদস্য ও তাদের কর্মী বাহিনীকে একটা মাত্র বিষয় শেখাতে পেরেছে বলেই মনে হয় আর তা হলো, অমুক কাজটা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য হয়েছে আর তমুক কাজটা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য হয়নি। বিএনপির সাবেক মহাসচীব দুখ করে বলেছিলেন, অবস্থা এমন যে যদি কোন নারীর প্রসবে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে সেখানেও সম্ভবত বলা হবে যে, এখানেও যুদ্ধাপরাধীদের কোন ষড়যন্ত্র আছে।
এবার দেখুন সেই ছাত্রীদের নিকট থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (আমার কাছে মনে হয় তারা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গকারী বাহিনী) কি কি উদ্ধার করতে পারলেন। এজাহারে বলা আছে-
“তাহারা দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ধর্মপ্রাণ সহজ সরল মোসলিম নারীদের ধর্মের ভুল ব্যাখা প্রদান করিয়া গোলাম আযম ও আবুল আলা মওদূদী সহ অন্যান্যদের লেখা বইয়ের মাধ্যমে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর তথ্য স¤প্রচার ও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী বই বিলি বন্টন করিয়া আসিতেছে।”
হায়রে ডিজিটাল (টাল-যার মাথা সঠিকভাবে কাজ করে না) সরকার! যেখানে বুয়েট সহ বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্রীরা আছে সেখানে ডিজিটাল সরকারের নিয়মানুযায়ী প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হবে এটাইতো স্বাভাবিক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো এখন স্কুলগুলোতেও প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষা দানের কথা বলেছেন। আর সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা প্রজেক্টরের মাধ্যমে কুরআন শিখবে বা শেখাবে এতে আশ্চর্য হওয়ারতো কিছু নেই বরং এত উঁচু স্তরের মেধাবী ছাত্রীরা যদি সেখানে কুরআন শেখানোর আসরে ল্যাপটপ বা প্রজেক্টর ব্যাবহার না করতেন তাহলেই সেটা আশ্চর্যজন বলে বিবেচিত হতে পারতো। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর হুকুম অমান্য করার অপরাধেও অপরাধী হওয়ার আশঙ্কা ছিল। দেশ ডিজিটাল করার আগে সর্বপ্রথম এই আইনশৃঙাখলা বাহিনীর সদস্যদেকে ডিজিটাল বিষয়ে ট্রেনিং দেওয়া আবশ্যক বলে মনে করছি নয়তো ছাত্রীদের মতো অন্যদেরও ডিজিটাল ব্যবহার করতে গিয়ে হিতে বিপরিত হওয়া আশঙ্কা রয়েছে।
এই সরকারের নির্দেশে আমাকে যখন রিমান্ডে নিয়ে থানার ওসি জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আমার ই-মেইল জানতে চাইলেন তখন আমি আমার মেইল এড্রেসটা তাঁকে বললাম। কিন্তু দূর্বাগ্যজনকভাবে খেয়াল করলাম যে তিনি সেটা ভালভাবে লিখতে পারছেন না। আমাকে জ্ঞিাসা করছেন, অক্ষরগুলো ছোটহাতের হবে না বড় হাতের, কোথায় কোথায় স্পেস হবে এরকম আনাড়ী সব প্রশ্ন। তাঁর প্রশ্নের ধরনে দেখে আমিই লজ্জায় মরি মরি অবস্থা, কারন এখন একজন ছোট ছেলেও জানে যে মেইল এড্রেসে কখনো বড় হাতের অক্ষর হয় না। পুলিশের এতবড় একজন কর্মকর্তা কিভাবে মেইল এড্রসটা লিখতে হয় সেটাও জানেন না আর আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী এমনসব লোককে দিয়েই গড়তে চান ডিজিটাল বাংলাদেশ! অন্যদিকে যারা ডিজিটাল বুঝেন ও সেই অনুযায়ী চলেন (বিশেষ করে এই ছাত্রীরা) তাদেরকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হচ্ছে!
এবার আসুন দেখি যেসব নিষিদ্ধ বইয়ের কথা বলা হয়েছে সেই বইগুলোর ধরন কি। প্রথমত আমরা জানি যে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের কোথাও মাওলানা মওদূদী বা অধ্যাপক গোলাম আযমের কোন বই নিষিদ্ধ নয় বরং বিভিন্ন স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তা পাঠ্য। নিষিদ্ধের কথা বলে যে বইগুলোর নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো-
১. মজবুত ঈমান, সহীহ ইলম ও নেক আমল- অধ্যাপক গোলাম আযম
২. আমরা কজন কারিগর একসাথে- ইসলামী ছাত্রী সংস্থা
৩. সিয়াম- ইসলামী ছাত্রী সংস্থা
৪. তালিমুল কুরআন- মাওলানা একেএম শাহজাহান
৫. মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য- অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম
৬. ইসলাম পরিচিতি- সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (এজাহারে লেখকের নাম উল্লেখ নাই)
৭. আদর্শ মানব মোহাম্মদ (সাঃ)- অধ্যাপক একেএম নাজির আহম্মদ
৮. জিহাদের হাকীকত- সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী
৯. জীবন্ত নামাজ- অধ্যাপক গোলাম আযম
১০. বর্তমান প্রেক্ষাপটে সর্বস্তরের দায়িত্বশীল ও কর্মীদের উদ্দেশ্যে ঢাকা মহানগরী আমীরের আহ্বান
১১. কুরআনের মর্মকথা- সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী
১২. ঈমানের হাকিকত- সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী
১৩. আল্লাহর দুয়ারে ধরনা- অধ্যাপক গোলাম আযম (এটা একটা দোয়ার বই)
১৪. গীবত- ইমাম গাযালী (রহঃ)
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা, দেখুনতো এই বইগুলোর মধ্যে কোন বইটা বাংলাদেশ সরকার নিষিদ্ধ করেছেন। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের প্রায় সকল মুসলমানের বাড়িতে এই বইগুলোর কোন না কোন একটি বই আছে, এমনকি আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে খুঁজলেও এই বইগুলোর অন্তত কোন একটি বই পাওয়া যাবে।
এই বইগুলো রাখা এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে কুরআনের তালিম দেওয়া যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আমার মনে হয় সকল মুসলমানকেই এই অপরাধগুলো করা দরকার।
ইসলামের বিরুদ্ধে সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্রঃ
পর্দানশিন ছাত্রীদেরকে গ্রেফতারের কারন হিসেবে আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা শুধু ২৪জন ছাত্রীকে গ্রেফতার নয় বরং এটা হলো ইসলামের বিরুদ্ধেই একটা সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় বলেছিলেন যে, দেশে নাকি বোরখা বিক্রির হার- বোরখা পড়া মহিলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আর এটা তিনি ভাল দৃষ্টিতে নেননি বরং অশনি সংকেত হিসেবে ধরে নিয়েছেন। তার মানে আওয়ামীলীগ সরকার চায় না যে, বাংলাদেশের মহিলারা পর্দা করুক বা বোরখা পড়–ক। কিন্তু ইসলামপ্রিয় এই দেশের মানুষদেরকে যেহেতু সরাসরি বোরখা বা পর্দার বিরুদ্ধে বললে তারা ক্ষেপে যাবেন সেহেতু সাধু সাবধান।
একটা বিষয় একটু খেয়াল করুন। এই সরকার যখন প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসে তখন কিন্তু তাদের ইশতেহারে এই বিষয়টা ছিল না যে , আমরা ক্ষমতায় গেলে সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ বা আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিব। কিন্তু ঠিকই নির্বাচিত হওয়ার পরে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিলেন। একবার ভাবুনতো, আওয়ামীলীগ যদি বাংলাদেশের মানুষকে বলতেন যে, আমরা নির্বাচিত হলে সংবিধান থেকে “আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিব” তাহলে কয়জন মানুষ তাদেরকে ভোট দিতেন।
এখানেও ঠিক তেমনটাই ঘটেছে বা আল্লাহ না করুন ঘটতে যাচ্ছে। সরাসরি পর্দার বিরুদ্ধে বললে যদি দেশের মানুষ আবার তাদের উপর ক্ষেপে যায় তাই সরাসরি তারা সে পথে না গিয়ে একটু ঘুরে যাচ্ছে। বোরখা পড়া মেয়েদেরকে যেহেতু বিভিন্ন অযুহাতে গ্রেফতার করা হচ্ছে, এটা দেখে হয়তো অনেকেই মনে করতে পারেন যে, বোরখা পড়লেতো গ্রেফতারের ভয় আছে সেহেতু গ্রেফতার এড়ানোর জন্যই এই বোরখা পড়া বা পর্দা করা এড়িয়ে চলতে হবে।
দেখুন, বোরখার বিরুদ্ধে কিন্তু বলতে হচ্ছে না গ্রেফতার এড়াতে বরং নিজেরাই বোরখার বিরুদ্ধে অবস্থা নিতে যাচ্ছে- কি সাংঘাতিক পরিকল্পনা!
একটা কৌতুক শুনেছিলাম। একজন গৃহকর্তা কারনে অকারনে তার স্ত্রীকে বেদম প্রহার করে। একদিন স্ত্রী কেঁদে কেঁদে বলছেন, এত মারেন ক্যা আপনি কি আমাকে আর রাখবেন না। তখন গৃহ কর্তা বলে উঠে- এত মারার পড়েও বুঝোস না।
অপরাধ না করার অপরাধঃ
এক এলাকায় একজন বুড়ি ছিলেন। তো সেই এলাকাতে যেই ছেলেই বিয়ে করে নতুন বউ বাড়িতে নিয়ে আসতো এই বুড়ি গিয়ে সেই নতুন বউয়ের নানান দোষ বের করতেন। চোখটা কেন এরকম, নাকটা কেন ওরকম.... এমন ধরনের আরকি। একদিন এক ছেলে একজন সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসলো। তখন এই বুড়ি নতুন বউকে খুটে খুটে দেখতে লাগলেন, কিন্তু কোন দোষ বের করতে পারলো না। শেষতক বুড়ি নিরুপায় হয়ে বলে উঠলেন- এত ভাল ভাল না।
২৪ জন ছাত্রীকে গ্রেফতারের ব্যাপারটাও আমার কাছে ঠিক সেরকমই মনে হয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী, কুরআন-হাদীসের বাস্তব অনুসারিনী, তথ্য প্রযুক্তির দিক দিয়েও অনেকের চেয়ে বেশ এগিয়ে, সবগুলো মিলিয়ে সোনায় সোহাগা, এসব দেখে কি আর ঐরকম বুড়িদের ভাল লাগার কথা। তারাতো বলবেই এত ভাল ভাল না।
অন্যরা যেখানে অপরাধ করছে সেখানে এই ছাত্রীরা অপরাধ না করে থাকছে কেন এটাই এদের সবচেয়ে বড় অপরাধ। এরা কেন এত ভাল, এদেরকে গ্রেফতার করো, রিমান্ডে নাও নির্যাতন করো, জেলে বন্দি করে রাখ এটাই এদের বেশি ভাল হওয়ার শাস্তি!
বোনদের এমন পরিক্ষা নতুন নয়ঃ
আমরা জানি নির্যাতন সহ্য করার ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি নয় বরং মেয়েরা আরও একধাপ এগিয়ে আছেন। ইসলামের প্রথম শহীদ হযরত সুমাইয়ার (রাঃ) কথা আমরা সবাই জানি। তাঁকে যে নির্যাতন করা হয়েছিল তা কল্প-কাহিনীকেও হার মানায়। নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে শাহাদাৎ বরণ করে তিনি আমাদের মাঝে আদর্শের বাস্তব মডেল হয়ে বেঁচে আছেন।
আমরা জয়নব আল গাজালীর কথা জানি। যিনি দীর্ঘদিন জেলে থেকে নির্মম নির্যাতন সহ্য করেছিলেন। তাঁদের উত্তরসূরী হিসেবে বর্তমানে ইসলামের পক্ষের বোনদেরকেও যে তেমন নির্যাতন সহ্য করতে হবে না সেটাতো আর বলা যায় না। বরং ইসলামের ইতিহাস বলে, যখন যারাই ইসলামের পক্ষে থাকবেন তখন তাদেরকেই এরকম নির্যাতনের শিকার হওয়া লাগতে পারে। তাছাড়া আল্লাহ রাব্বুল আলামীনতো আমাদেরকে পরিক্ষা করার কথা কুরআনুল কারিমে ঘোষনা করেই দিয়েছেন। আল্লাহ সূরা আল ইমরানের ১৪২ নং আয়াতে বলেছেন-
“তোমরা কি মনে করো তোমরা (এমনি এমনি) বেহেশতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ আল্লাহ তায়ালা (পরিক্ষার মাধ্যমে) এ কথা জেনে নেবেন না, কে (তাঁর পথে) জেহাদ করতে প্রস্তুত হয়েছে এবং তোমাদের মধ্যে কে (বিপদে) কঠোর ধৈর্য ধারণ করতে পেরেছে!”
শেষ কথাঃ
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের উপর খরগহস্ত। কিন্তু তারা এটা ভুযে যান যে, নির্যাতন করে কখনো কোন আদর্শিক আন্দোলনকে দাবিয়ে রাখা যায় না। আলোর ধর্মই হলো সে প্রস্ফুটিত হবেই। আলোকে অন্ধকারের মধ্যে নিমজ্জিত করার জন্য যতই চাপাচাপি করো কোন লাভ নেই। যখন আর যেভাবেই হোক আলো তার স্বরুপে উদ্ভাসিত হবেই।
তবে বর্তমান সরকার এজন্য ধন্যবাদ পাওয়ার হকদার যে, তারা ইসলামী আন্দোলনের সোনার খন্ড সমতুল্য কর্মীগুলোকে পুড়ে গলিয়ে ময়লা মুক্ত করে খাঁটি সোনা বানিয়ে ফ্রেমে দিয়ে সুন্দর অলঙ্কারে পরিণত করছেন।
প্রিয় বোনেরা, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশের কোটি কোটি জনতা তোমাদের জন্য দোয়া করছেন, বুকে সাহস সঞ্চয় করে আল্লাহর উপর ভরসা করে সকল বাধা দুপায়ে দলে সামনের দিকে এগিয়ে যাও অবশ্যই আল্লাহ একদিন তোমাদের কামিয়াবী করবেন।
আল্লাহ বলেছেন- “(হে নবী) তুমি বলো, সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা (চিরতরে) বিলুপ্ত হয়ে গেছে, অবশ্যই মিথ্যাকে বিলুপ্ত হতে হবে।” সূরা বনী ইসরাঈল-৮১
বিষয়: বিবিধ
১৪৭৯ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি এই খাটি সোনা বোনদের জন্য মন ভরে দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদেরকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দিন এবং যে গন্তভ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন সেই গন্তব্যে পৌছে দিন। আমীন।
এই দেশে এখন কুরআন নিষিদ্ধ! মামলায় কুরআন শরিফকে নিষিদ্ধ দাবি করার সাহস হয়েছে এই সরকারের!!!
আল্লাহতায়লা তাদেরকে সবর করার শক্তি দিন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন