কুরআন নাযিল ও তাকওয়া অর্জনের মাস “রমজান"-২
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ০৩ জুলাই, ২০১৪, ০৪:৪৭:১৬ বিকাল
এখন কথা হলো যে এই কুরআন কেন নাযিল হলো। এর জবাবও উপরে দেয়া হয়ে গেছে, আর তা হলো- মানব জাতির পথনির্দেশিকার জন্যই কুরআন নাযিল হয়েছে। স্বতন্ত্র কোন জাতির জন্য এটা নাযিল হয়নি। এখানে বলা হয়েছে “হুদাল্লিন নাস” অর্থাৎ পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য কুরআন হেদায়াত-পথনির্দেশিকা স্বরুপ।
কিন্তু কথা হলো সবাই কি এই কুরআন থেকে হেদায়াত পান? সহজ উত্তর “না”। তাহলে না পাওয়ার পিছনে কারনটা কি? এই কারনই আল্লাহ সূরা বাকারার প্রথমেই বলে দিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন- “(এই) সেই (মহা) গ্রন্থ (আল কুরআন), তাতে (কোন) সন্দেহ নাই, যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করে (এই কিতাব কেবল) তাদের জন্যই পথ প্রদর্শক।”সূরা আল বাকারা-২
তার মানে কুরআন তাদের জন্য হেদায়াত যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করেন। এখানে বলা হয়েছে “হুদাল্লিল মুত্তাকীন” যারা মুত্তাকী তাদের জন্য হেদায়াত স্বরুপ। স্পষ্টত যারা আল্লাহকে ভয় করবে না তারা কুরআন পড়লেও হেদায়াত পাবে না।
আমরা জানি কুরআনের পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদ করেছেন গিরিশ চন্দ্র সেন, কিন্তু আশ্চর্য জনক হলো যে পুরো কুরআন পড়ার পরেও তিনি মুসলিম হতে পারেন নি।
এখন আল্লাহকে ভয় করা বা তাকওয়া অর্জন করা বলতে আমরা কি বুঝি সেই ব্যাপারে একটু আলোচনা করা দরকার। সহজ কথায় তাকওয়া হলো “আল্লাহ যা করতে বলেছেন তা নির্দিধায় করা ও আল্লাহ যা করতে নিষেধ করেছেন তা নির্দিধায় না করার নামই হলো তাকওয়া।” আল্লাহ যা করতে বলেছেন তা যদি আমি না করি তাহলে তিনি আমাকে পাকড়াও করবেন এই ভয়ে আমি তা করবো আর আল্লাহ যা করতে নিষেধ করেছেন তা যদি আমি করি তাহলেও আল্লাহ আমাকে পাকড়াও করবেন এই ভয়ে আমি সেই কাজ করা থেকে বিরত থাকবো, এ ব্যাপারে “কেন করবো আর কেন করবো না” এ ধরনের প্রশ্ন করার কোন অবকাশ নাই।
যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রোজা থাকা অবস্থায় পানাহার ও স্বামী-স্ত্রীদের নিকট যেতে নিষেধ করেছেন অতএব সেখানে যাওয়া যাবে না। এখানে “কেন যাওয়া যাবে না” এ ধরনের প্রশ্নের কোন অবকাশ নাই। প্রশ্ন করলেও উত্তর একটাই আর তা হলো- আল্লাহ বলেছেন তাই করা যাবে না। অথচ দেখুন দুটোই হালাল জিনিস। পানাহার করা যেমনি বৈধ তেমনি বৈধ স্বামী-স্ত্রীদের নিকট যাওয়া ও বৈধ। কিন্তু আল্লাহ যেহেতু নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেখানে যেতে নিষেধ করেছেন তাই বৈধ হওয়া সত্ত্বেও তা এখন অবৈধ। তার মানে বৈধ-অবৈধের কোন বিষয় নয়, বিষয়টা হলো আল্লাহ কি বলেছেন। এ জন্যই আল্লাহ বলেছেন- “হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করে দেয়া হয়েছে, যেমনি করে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীলোকদের উপর সম্ভবত তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অজূন করতে পারবে।” সূরা বাকারা-১৮৩
এখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন “লায়াল্লাকুম-সম্ভবত তোমরা ” শব্দ ব্যাবহার করে আমাদেরকে এটাই বোঝাতে চাচ্ছেন যে, যারা আমার কথা মেনে চলবে তারাই আমাকে ভয় করলো আর যারা আমার কথা মেনে চলবে না তারা আমাকে ভয় করলো না এটাই প্রমানিত হবে। অতএব যারা যথাযথভাবে এই ভয় করার কাজগুলো আঞ্জাম দিতে পারবে তারাই তাকওয়া অর্জন করবে বা মুত্তাকী হতে পারবে অন্যরা নয়।
এ ক্ষেত্রে আরও সহজভাবে বললে বলা যায় যে, সকল কাজের মধ্যেই আল্লাহকে স্মরণ করে তিনি যেভাবে যা করতে বলেছেন বা নিষেধ করেছেন সেটা সেভাবে করা বা না করার নামই তাকওয়া। এজন্য রোজাকে ফরজ করে দেয়া হয়েছে। কারন রোজা রাখলে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। কিন্তু রোজাদাররা আল্লাহর ভয়েই গোপনেও কোন কিছু খান না। এই ভয়ের নামই তাকওয়া।
অথচ অন্যান্য ইবাদতগুলোর মাধ্যমে এই তাকওয়া অর্জন হয় কি না বোঝা যায় না, কারন তা প্রকাশ্যেই করতে হয়। যেমন ধরুন “নামাজ”। নামাজ প্রকাশ্যে (জামায়াতের সাথে) পড়াই ফরজ। এখানে কে আল্লাহকে ভয় করে পড়লো আর কে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে পড়লো তা বিচার করা যায় না। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আমরা তাই লক্ষ্য করে থাকি। এ ব্যাপারে সকলেরই বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকার কথা। তাহলে এই নামাজের মাধ্যমে মুত্তাকী কি না সেটা বোঝা তুলনামূলক কঠিন। গোপন বিষয় দিয়েই তাকওয়াবান বোঝা সহজ।
প্রথম কিস্তি
বিষয়: বিবিধ
১৭১৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক সুন্দর করে লিখেছেন ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন