৪৩ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি-৫
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ২৪ মার্চ, ২০১৪, ০৬:১৬:১৭ সন্ধ্যা
এই সকল দিক দেখেই সম্ভবত তৎকালীন ভারতীয় সেনা প্রধান একটি কঠিন মন্তব্য করেছিলেন। ১৯৮৮ সালের ২৯ এপ্রিল স্টেটসম্যান ভারতের সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড মার্শাল মানেক শ’ এর মন্তব্যটি প্রকাশ করে।
সেখানে তিনি বলেছেন-
“যদি বাংলাদেশকে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষনা করা হয় তাহলে ভারতের আশ্চর্য হবার কিছু নেই। যেদিন আমার সৈন্যরা বাংলাদেশকে মুক্ত করে সেদিনই আমি এ কথা উপলদ্ধি করি। বাংলাদেশীদের কখনই ভারতের প্রতি তেমন ভালবাসা ছিল না। আমি জানতাম ভারতের প্রতি তাদের ভালবাসা অস্থায়ী। অনুপ্রেরণা লাভের জন্য ভারতের দিকে না তাকিয়ে তারা মক্কা ও পাকিস্তানের দিকে দৃষ্টিপাত করবে। আমাদেরকে সত্যাশ্রয়ী হতে হবে। বাংলাদেশীদের প্রতি আমরা সঠিক আচরণ করিনি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের সব রকমের সাহায্য করা উচিত ছিল, কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা তা করেন নি। তারা বেনিয়ার মতো আচরণ করেছেন।” (দুই পলাশী দুই মীরজাফর- কে এম আমিনুল হক)
শুধু এই কয়েকটা বিষয় পর্যালোচনা করলেই এটা স্পষ্ট হয় যে, ভারতের সব কাজ আমাদেরকে ঠকানোর জন্য, সেটা যুদ্ধের সময় যেমন করেছে এখনও ঠিক তেমনই করে যাচ্ছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছর পরেও আমরা সেই বেষ্টনী থেকে বের হয়ে আসতে পারি নাই! আমরাতো এমন স্বাধীনতা চাই নি। এই পর্যায়ে আমাদের এমন এক নেতৃত্ব দরকার যার মেরুদন্ড অত্যন্ত শক্ত-মজবুত। আমরা কোন দেশের গোলামী করে থাকতে চাই না। আমাদের যা আছে আমরা সেটা নিয়েই গর্ব করে বাঁচতে চাই।
প্রথমে ব্রিটিশরা আর পরে পশ্চিম পাকিস্তানীরা আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করেছে। সেই অত্যাচার আর নির্যাতরে মুলচ্ছেদ করার জন্যই আমরা স্বাধীন হলাম অনেক রক্তের বিনিময়ে কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে এখনও আমাদের দেশের এক দল আরেক দল বা গোষ্ঠীকে নির্যাতন করেই আসছে। হত্যা আর গুমতো এখন একটা নিত্য দিনের কর্মে পরিণত হয়ে গেছে। আপনি আমার মতের বিরোধী অতএব আপনাকে মেরে ফেলতে হবে অথবা অপনাকে অন্য কোন ভাবে নির্যাতন করা হবে। এখন কথায় কথায় গুলি চালানো হচ্ছে অথচ ইতিহাস বলে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বেও এমন বাজে অবস্থার সৃষ্টি হয়নি।
গণতন্ত্র নাই গণতন্ত্র নাই বলে তখন আমরা মুখের ফেনা বের করেছিলাম অথচ স্বাধীনতার পর পরেই সেই গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করা হলো। বলা যায় এখনও সেই গণতন্ত্র উদ্ধার হয়নি। এই কি ছিল আমাদের নিয়তি! স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও আমরা আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করতে পারলাম না! এই জন্যই দুঃখ করে বলতে ইচ্ছে করে ৪৩ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি।
আমরা এমন একটা স্বাধীনতা চাই যেখানে থাকবে না কোন খুন-গুম, অত্যাচার-নির্যাতন, আশরাফ-আতরাফের শ্রেণী বিন্যাস, রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনের অপকৌশল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হল দখল আর মারা-মারির দৃশ্য, অশ্লীলতা-বেহায়ানা, যুলুম-অবিচার, আইনের পক্ষপাতিত্ত্ব, ভুক্ষা-নাঙার মিছিল, ডাস্টবিনের পাশে পড়ে মরার দৃশ্য। আমরা চাই একটি সুখি সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ। যদি সেটা আমরা নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে প্রিয় শিল্পী হায়দার হোসেনের মতো আমাদেরকেও করুন সুরে গেয়ে উঠতে হবে-
কি দেখার কথা কি দেখছি
কি শোনার কথা কি শুনছি
কি বলার কথা কি বলছি
কি ভাবার কথা কি ভাবছি
তিরিশ বছর পরেও আমি
স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি....।
আপাতত সমাপ্ত
চতুর্থ কিস্তি
বিষয়: বিবিধ
১০০৭ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকে উৎসর্গ করা এই লেখাটি দেখেছেন তো?!
মন্তব্য করতে লগইন করুন