৪৩ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি-৪
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ২৩ মার্চ, ২০১৪, ০৪:২৭:৩৭ বিকাল
পাশের দেশ ভারত আজকে আমাদের দেশের প্রায় সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে এটা এখন দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। বাংলাদেশ কিভাবে চলবে আর কিভাবে চালাতে হবে এটা বলে দেয়া যেন তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে! তারা আজকে অনকেটা উলঙ্গভাবেই আমাদের দেশের বিষয় নিয়ে নাক গলাচ্ছে। আর আমাদের দেশের জাতীয় নেতৃবৃন্দ এমন মেরুদন্ডহীন যে, তাদের এমন কথাগুলোর প্রতিবাদটা পর্যন্ত করতে পারেন না! তারা আমাদের দেশের ফেলানীদেরকে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখছে, সাধারণ মানুষদেরকে গুলি করে পাখির মতো হত্যা করছে আর আমাদের দেশের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বলছেন, এটা তেমন কোন ব্যাপারই না এমনটা আগেও ঘটেছে, এখন ঘটছে আর ভবিষ্যতেও ঘটবে। যদি তাই হবে তাহলে আমাদের স্বাধীনতাটার কি দরকার ছিল? আমরাতো ভারতের অধীন হওয়ার জন্য পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হইনি।
কয়েকদিন আগে ক্রিকেট খেলা নিয়ে কি কান্ডটাই না ঘটাচ্ছিল ভারত। তারা এই ক্রিকেটেও আমাদেরকে গোলামের মত ব্যবহার করতে চেয়েছিল। আর আমাদের মেরুদন্ডহীন কর্তারা সেটাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য উঠে-পড়ে লেগে গেলেন!
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনাটি ঘটলো মাত্র কয়েকদিন আগে। ভারতীয়রা আমাদের দেশের স্বাধীনতাকে বিক্রিত করে “গুন্ডে” নামের একটি সিনেমা তৈরী করলো আর আমাদের দেশের সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে প্রতিবাদ করার দরকার ছিল অথচ সেভাবে এর প্রতিবাদটি পর্যন্ত কার হলো না! আমার মনে হয় পাকিস্তান বা অন্য কোন দেশ যদি এমন কোন সিনেমা তৈরী করতো তাহলে তার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়তাম আমরা। এটা কেন হবে? ঠিক আছে তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা করেছিল তার মানে কি এই যে এখানে তারা এখনও নেতৃত্ব দেবে! তাদের কথায় আমাদেরকে উঠতে আর বসতে হবে?
ভারত আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা করেছিল ঠিক তবে তা কঠিন শর্তের বিনিময়ে। আমরা যদি দুশো ছেষট্টি দিনের স্বাধীনতা বইটির ৩২৫ পৃষ্ঠাটা পড়ি তাহলে দেখতে পাব ভারত আমাদেরকে কি কি শর্তে সহযোগিতা করেছিল।
“একাত্তরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার যে ৭ দফা মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন করেছিল, তা ছিল নিম্নরূপ-
১. যারা সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে শুধু তারাই প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োজিত থাকতে পারবে। বাকীদের চাকরীচ্যুত করা হবে এবং সেই শুন্য পদ পুরণ করবে ভারতীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
২. বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করবে (কতদিন অবস্থান করবে, তার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় না)। ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাস থেকে আরম্ভ করে প্রতি বছর এ সম্পর্কে পুনরীক্ষণের জন্য দু’দেশের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
৩. বাংলাদেশের কোন নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকবে না।
৪. অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মুক্তিবাহিনীকে কেন্দ্র করে একটি প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হবে।
৫. সম্ভাব্য ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে (পূর্ব পাকিস্তান-পশ্চিম পাকিস্তান নয়!) অধিনায়কত্ব দেবেন ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নন এবং যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর অধিনায়কত্বে থাকবে।
৬. দু'দেশের বানিজ্য হবে খোলা বাজার (ওপেন মার্কেট) ভিত্তিক। তবে বানিজ্যের পরিমান হিসাব হবে বছর ওয়ারী এবং যার যা পাওনা, সেটা স্টার্লিং-এ পরিশোধ করা হবে।
৭. বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রশ্নে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে এবং ভারত যতদূর পারে এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে।
প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সাত দফা গোপন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর দানের পরপরই তিনি মুর্ছা যান।”
পরবর্তীতে এটাকে গোলামী চুক্তি হিসেবে অবহিত করা হয়। একটু ভেবে দেখুনতো এই চুক্তিতে বাংলাদেশের কোন স্বার্থ ছিল কি না? যদিওবা এখন এই চুক্তিটির আর কার্যকারিতা নেই কিন্তু ভারত সম্ভবত এখনও সেই চিন্তা নিয়েই বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে চাচ্ছে।
তৃতীয় কিস্তি
বিষয়: বিবিধ
৮৭৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন