৪৩ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি-৩
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ২০ মার্চ, ২০১৪, ০৭:০৭:০৯ সন্ধ্যা
১৯৪৭ সালে যখন পাকিস্তান হলো তখন অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে একটি অন্যতম সমস্যা হলো ভাষা নিয়ে। অনেক সংগ্রাম আর জীবনের বিনিময়ে সর্বশেষ আমরা বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে পেলাম ঠিকই কিন্তু স্বাধীনতার পরেও এই ভাষাটি অবজ্ঞাই রয়ে গেল।
আজকে উর্দূর জায়গায় স্থান করে নিয়েছে হিন্দি না হয় ইংলিশ। তাহলে কি আমরা উর্দূর বদলে হিন্দি আর ইংলিশের জন্য জীবন দিয়েছিলাম? আজকে আমাদের দেশের কোন ছেলে-মেয়েকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় কোন ছবি তোমাকে ভাল লাগে তাহলে বেশিরভাগ ছেলে-মেয়েই বলবে হিন্দি বা ইংলিশ ছবি। প্রায় বাড়িতেই আজ হিন্দির ছড়াছড়ি, আপনি যদি কাউকে বাংলায় প্রশ্ন করেন তাহলে সে বাংলায় না বলে হিন্দিতে উত্তর দেবে। বর্তমান প্রজন্মের দিকে তাকালে মনে হয় “বাংলা কোন ভাষা হলো, হিন্দিই তো মাতৃভাষা হওয়া উচিত ছিল” এরপরও এই বিষয়ে তেমন কোন উচ্চ বাচ্চ নেই। কর্তৃপক্ষের দিকে তাকালে মনে হয় তাদের অবস্থা হলো- কোন ভাষা হয় হোক উর্দুকে তো বিদায় করতে পেরেছি!
একই অবস্থা ইংলিশের ব্যাপারেও। আমরা সকল ভাষাকেই মূল্যায়ন করবো তবে অবশ্যই বাংলাকে বিষর্জন দিয়ে নয়।
আজকে কোর্ট-কাচারী সহ অধিকাংশ জায়গাগুলোতে বাংলাকে পিছনে ফেলে ইংলিশ এগিয়ে, অথচ জীবন দিলাম বাংলার জন্য! এজন্যই কিছুদিন আগে ড. তুহিন মালিক একটি জাতীয় দৈনিকের কলামে লিখেছিলেন “ফাঁসির আসামী জানলোই না কোন অপরাধে তার ফাঁসি হচ্ছে”, কারন রায়টা লেখা হয় ইংলিশে অথচ সেই আসামী বেচারাতো আর ইংলিশ জানেন না। দেশ স্বাধীনের দীর্ঘ ৪৩ বছর পরেও আমাদেরকে বসে বসে সেই বিষয়টাই ভাবতে হচ্ছে!
আগেই বলেছিলাম ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, মুক্তিযুদ্ধের আসল চেতনাই হলো ইসলাম। মুক্তযুদ্ধের সময় যোদ্ধাদেরকে ইসলামের কথা বলেই উজ্জিবিত করা হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন কুরবান করার প্রেরনাই ছিল ইসলাম। জনাব এ্যাডভোকেট নূরুল কাদির তাঁর দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা বইয়ের ৭১ পৃষ্ঠায় খুব সুন্দর করে এই বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন-
“অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষনতার সঙ্গে তাঁর অগাধ পান্ডিত্যের মাহাত্ম্যে খুবই মুনশিয়ানার সাথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্লেষন করেছিলেন। ইসলামকে সকলের কাছে যথার্থরূপে তুলে ধরেছিলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান সাহেবের সেই ধারাবাহিক ‘ইসলামের দৃষ্টিতে’ কথিকা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অত্যন্ত সময়োপযোগী ও উপকারী হয়েছিল।”
একটু খেয়াল করুন, যেই ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের সময় “ সময়োপযোগী ও উপকারী’’ হয়েছিল বলে বলা হচ্ছে সেই ইসলামকে আজ চরমভাবে অপমানিত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে জঙ্গীবাদের প্রজনন কেন্দ্র নাকি মাদরাসাগুলো, অথচ স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে জঙ্গী (সন্ত্রাসী) তৈরী হচ্ছে তার একশত ভাগের একভাগও মাদ্ররাসায় হচ্ছে না। মাদরাসা ‘‘জঙ্গীবাদের প্রজনন কেন্দ্র’’ কথাটা বলার একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম যেন মাদরাসায় না যায়- ইসলাম না শেখে, আর স্কুল কলেজেতো ইসলাম নাই বললেই চলে। তাছাড়া যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড মাদরাসা তারা যত বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই ডিগ্রি নিক না কেন আর যত তুখোড় মেধাবী হোক না কেন ভাল কোন সরকারী চাকরী তাদের জুটবে না বললেই চলে।
অতএব ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদেরকে মাদরাসায় পড়ার আগ্রহ দিন দিন হারিয়ে ফেলছেন। স্কুলে পড়ে পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পাওয়া গেলেও মাদরাসায় পড়লে তা পাওয়া যায় না। এমন সুপরিকল্পিতভাবে মাদরাসা তথা ইসলাম শিক্ষাটাকে মানুষের কাছে “অপ্রয়োজনীয়” একটা শিক্ষা হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে! মুক্তিযুদ্ধের সময় যেই ইসলামকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় বলে মনে হলো সেই ইসলামই আবার স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরে এতিম হয়ে ঘুরছে, তাহলে কি সেই আকাঙ্খিত স্বাধীনতা আর এই স্বাধীনতা এক হলো?
আজকে আমাদের এই স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সরকার গঠন করবে কে এটা নির্ধারন করে দেয় নাকি অন্য কোন দেশ! যদি তাই হবে তাহলে স্বাধীন হওয়ার দরকারটা কি ছিল? আমরা তখন পারাধীন ছিলাম আর এখনও পরাধীন। তখন ছিলাম প্রত্যক্ষভাবে পরাধীন আর এখন পরোক্ষভাবে এই যা তফাৎ। একটা স্বাধীন দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি নিয়ন্ত্রন করবে অন্য কোন দেশ এটা কেমন কথা। এই জন্যই কি আমরা লক্ষ প্রানের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম? স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও আমরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে না নিজস্ব কোন সংস্কৃতি চালু করতে পেরেছি আর না ধার করা গণতন্ত্রের পুরোপুরি অনুসরন করতে পেরেছি, এই হলো আমাদের প্রাণের স্বাধীনতা! আর এই কথা বলতে গেলেই আমি হয়ে যাই স্বাধীনতা বিরোধী। মুক্তিযুদ্ধের ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর আব্দুল জলিল এই কথাগুলো বলার কারনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দি হবার সৌভাগ্য(?) অর্জন করেছিলেন। সে জন্যই অত্যন্ত দুঃখ করেই লিখলেন একটি বই- অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা।
দ্বিতীয় কিস্তি
বিষয়: বিবিধ
১২০০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যেমন
হিন্দিতে- ধন্যেবাদ উর্দূতে-শুকরিয়া
হিন্দি-মানব,মনুষ্য উর্দূ-ইনসান
হিন্দি-পরিক্সা উর্দূ-ইমতেহান, এই শব্দটা বাংলায়-পরিক্ষা ।
উর্দু ভাষা হিন্দি নিকনাম ধারন করে বাংলা ভাষার উপর মধুর প্রতিশুধ নিতেছে । হিন্দুস্তানের রাজনিতি, সাংস্কৃতির জগত চলে উর্দু ভাষায় যদিও তারা অনেকেই এটাকে হিন্দি বলে ।
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন