৪৩ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি-২
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ১৮ মার্চ, ২০১৪, ০৪:৩৭:৩৯ বিকাল
১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ প্রথম বেতার ভাষণে যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন তার শেষাংশ উল্লেখ করছি-
‘‘আমাদের এই পবিত্র দায়িত্ব পালনে এক মুহুর্তের জন্যেও ভুলে গেলে চলবে না যে, এ যুদ্ধ গণ যুদ্ধ এবং সত্যিকার অর্থে এ কথাই বলতে হয় যে এ যুদ্ধ বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের যুদ্ধ। খেটে খাওয়া সাধারণ কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, ছাত্র-জনতা তাদের সাহস, তাঁদের দেশপ্রেম, তাঁদের বিশ্বাস, স্বাধীন বাংলাদেশের চিন্তায় তাঁদের নিমগ্নপ্রাণ, তাঁদের আত্মাহুতি, তাঁদের ত্যাগ ও তিতিক্ষায় জন্ম নিল এই নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ। সাড়ে সাত কোটি মানুষের সম্মিলিত প্রোচেষ্টায় ফলপ্রসু হয়ে উঠুক আমাদের স্বাধীনতার সম্পদ। বাংলাদেশের নিরন্ন দুঃখি মানুষের জন্যে রচিত হোক এক নতুন পৃথিবী, যেখানে মানুষ মানুষকে শোষন করবে না। আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক ক্ষুধা, রোগ, বেকারত্ব আর অজ্ঞানতার অভিশাপ থেকে মুক্তি”। (দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা, পৃষ্ঠা-৬০)
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনারই দেখুন যেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি সেটার আজ কি হাল। আজকে আমাদের দেশে বিভেদের রাজনীতি করা হচ্ছে অথচ স্বাধীনতা হয়েছে ঐক্যের জন্য। তখন সাড়ে সাত কোটি মানুষ ছিল আজ তাঁদেরই সন্তানরা ১৬ কোটিতে পরিণত হয়েছে এরপরও বিভেদ কেন? বর্তমানে একটি বিশেষ দলের অন্তর্ভুক্ত না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকে না! তখন যেমন পশ্চিম পাকিস্তানের চেতনায় বিশ্বাসী না হলে “পাকিস্তানী” থাকা যেত না বর্তমানে তেমনি ঐ বিশেষ দলে শামিল না হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা যায় না- যদিওবা আপনি যুদ্ধ করতে গিয়ে একটি পা হারিয়েছেন! অতএব যেহেতু আমাদের প্রতিজ্ঞার তেমন কিছুই পুরণ হয়নি তাই বলতেই হচ্ছে যে ৪৩ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি।
আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে যেটাকে সবচেয়ে বেশি সাংঘর্ষিক বলে মনে করা হয় সেটা হলো ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর ইসলাম যেন দুটো দুই প্রান্তের বিষয়! বর্তমানে আমাদের দেশে ইসলামকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, যারাই ইসলাম পালন করে তারাই মনে হয় সবচেয়ে বেশি খারাপ! সিনেমায় বা নাটকে যিনি সবচেয়ে খারাপ চরিত্রে অভিনয় করেন তার পড়নে পাঞ্জাবি, টুপি আর দাঁড়ি থাকতেই হবে। তার মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা কখনও দাঁড়ি রাখে না বা রাখতে পারে না আর টুপি পড়ে না বা পড়তে পারে না! আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, কুকুরের ছবিতেও টুপি পড়ানো হচ্ছে! আজকে যারাই দাড়ি রাখেন তারাই ভয়ে থাকেন, কখন যে এই দাঁড়ি রাখার অপরাধে(?) গ্রেফতার হয়ে যেতে হয় আল্লাহই মালুম। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হলো দাঁড়ি রাখা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যিনি ভ্রাম্যমান রাষ্ট্রদূত ছিলেন সেই নূরুল কাদির তাঁর -দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা- বইয়ের ১৪৫ পৃষ্ঠায় বলেছেন,
“দাড়ি কামানো সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব স¤প্রতি যে উক্তি করিয়াছেন তাহা পাকিস্তান তথা সমগ্র দুনিয়ার মুসলমানের জন্য অপমানজনক। একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে আমরা যখন আশা করিয়াছিলাম যে, প্রেসিডেন্ট আইয়ুব নিজেই দাঁড়ি কামানো বন্ধ রাখিয়া একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে মুসলমানের জন্য অন্যতম সুন্নত পালন করিবেন, সেই সময় একজন মুসলমানকে সুন্নত পালন না করিতে উপদেশ দিয়া তিনি ইসলামিক মূলনীতিকেই অবজ্ঞা করিয়াছেন।”
পাকিস্তান যদিও ইসলামিক রাষ্ট্র নয়, বলা যায় মুসলিম রাষ্ট্র ছিল এরপরও মুক্তিযোদ্ধারা দাড়ি রাখার মত বিষয়টিকেও ছাড় দেন নি। তারা যেন কোন বাধা-প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই দাড়ি রাখতে পারেন এই জন্যই স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন, আর আজকে সেই দাড়িই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী হয়ে গেল! পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট দাড়ির বিরুদ্ধে ছিলেন আর বর্তমান সরকারও দাড়ির বিরুদ্ধে- তাহলে আমরা যেই স্বাধীনতা চেয়েছিলাম সেটা ৪৩ বছর পরেও কি পেয়েছি?
প্রথম কিস্তি
বিষয়: বিবিধ
১১৪১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা পিন্ডি থেকে বের হয়ে দিল্লির গোলাম হওয়ার জন্য যু্দ্ধ করিনি। ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন