৪৩ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি-১
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ১৭ মার্চ, ২০১৪, ০৪:৩০:৩২ বিকাল
স্বাধীনতা! এই ‘‘স্বাধীনতা’’ শব্দটার ভিতরে কি যেন লুকিয়ে আছে। স্বাধীনতা শব্দটা শোনা মাত্রই হৃদয়ের মাঝে এক অন্য অনুভূতি জাগ্রত হয়। আর এই স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য পৃথিবীর সকলেই প্রাণপন চেষ্টায় লিপ্ত। বিশ্বে মনে হয় এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি স্বাধীনতা চান না। শুধু মানুষ নয় বরং পশু-পাখীরাও পরাধীনতার উর্ধ্বে উঠে স্বাধীন ভাবে ঘুরতে চায়। আমরা বাবুই আর চুড়ুই পাখীর সেই কবিতাটি জানি- বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়ুই
কুড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই......
পাকা হোক তবু ভাই পরেরও বাসা
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা।
কষ্টে থাকলেও সেখানে যদি স্বাধীনতা থাকে তাহলে সেটাই ভাল আর মহা সুখে থেকেও যদি পরাধীন থাকা হয় তাহলে সেখানেও ভাল লাগার কথা নয়। সহজভাবে বললে বলা যায় যে, জন্মগতভাবেই মানুষ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী আর এজন্যই পরাধীনতা ভাল লাগে না।
এই পরাধীনতা ভাল না লাগার কারনেই আমরা তৎকালীন বিশ্বের সর্বে সর্বা ব্রিটিশের বন্ধন মুক্ত হয়েছিলাম অনেক রক্তের বিনিময়ে। কিন্তু এরপরও নিজেদেরকে পুরোপুরি স্বাধীন বলে মনে হলো না। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী আমাদের- পূর্ব পাকিস্তানীদের উপর বিভিন্নভাবে অবিচার করে আসছিল। আমাদের কোন প্রয়োজনকেই তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখছিল না। স্বভাবতই আমাদের দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ ধীরে ধীরে ফুঁসে উঠতে থাকে। শুরু হয়ে যায় সংগ্রাম- স্বাধীনতার সংগ্রাম- মুক্তির সংগ্রাম। অনেক রক্ত আর ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা পেলাম একটি লাল সবুজ পতাকার স্বাধীন সার্বভৌম দেশ-বাংলাদেশ।
কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছর পরে এসেও বলতে হচ্ছে আমরা যে জন্য লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছি সেটা পুরো-পুরি পাই নাই। শাসক গোষ্ঠী শুরু থেকেই আমাদেরকে শুধু ঠকিয়েই আসছে। যারাই ক্ষমতায় যায় তারাই আমাদের জাতীয় “সম্পদ” মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের দলীয় শ্লোগানে পরিণত করে থাকেন! অথচ মুক্তিযুদ্ধ কোন ব্যক্তি বা দলের নয় বরং এটা সমগ্র জাতির সত্ত্বার সাথে মিশে আছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম একটি চেতনার ভিত্তিতে। বর্তমানে অবশ্য কেউ কেউ বলে থাকেন যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো “ধর্মনিরপেক্ষতা”, অথচ স্বাধীনতার যেই ঘোষনাপত্র পাঠ করা হয়েছিল সেখানে ধর্মনিরপেক্ষ বলে একটি শব্দও নেই। যেই কারন দেখিয়ে বা দেখে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনলাম কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই চেতনাকে ডিলেট করে দিয়ে আমাদের শাসক গোষ্ঠী সেখানে প্রতিস্থাপন করলেন তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা!
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষনা পত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে “বাংলাদেশের জনগনের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষনা করিলাম”। আচ্ছা দেখুনতো এই ঘোষনার কোথায় ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা আছে? আমি হয়তো চোখে কম দেখতে পারি কিন্তু আপনিতো ভালভাবেই দেখেন-আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন? তার মানে হলো আমরা যে চেতনার ভিত্তিতে স্বাধীন হয়েছি সেটা “ধর্মনিরপেক্ষতা” নয়, বরং সেটা হলো সমাজে “সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করা’’। অথচ স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছর পরেও আমরা সেটা ফিরে পাইনি, এখনও খুঁজে ফিরছি।
বিষয়: বিবিধ
১০৯১ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
দোয়া করবেন এখন থেকে যেন আপনাদের সাথে থাকতে পারি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন