স্বাধীনতা ৭১- মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাপরাধী না রাজাকার (আপনাদের পরামর্শ কামনা করছি)
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:৫৫:০৭ রাত
প্রত্যেক জাতিরই গর্ব করার কিছু বিষয় থাকে, তেমনি আমাদেরও গর্ব করার অনেক বিষয় আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মাত্র নয়টি মাসে একটা দেশ স্বাধীন হতে পারে এটা বাংলাদেশের দিকে না তাকালে বিশ্বাস করাই কঠিন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই মুক্তিযুদ্ধের আগে পরের কিছু বিষয় নিয়ে অনেকেরই মনে কিছু প্রশ্ন উদিত হতে দেখা যায়। তবে এটাতো ঠিক যে কোন একটা বিষয়ে সবাই একমত নাও হতে পারেন, কিন্তু প্রশ্নগুলো যদি অমুলক না হয়ে থাকে তাহলে সেগুলো গুরুত্বের সাথেই দেখা দরকার। প্রশ্নগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন কত জন, আমাদের দেশে রাজাকার, আলবদর আর আল শামসের সদস্যই বা কতজন, তা ছাড়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কতজন? যদিও স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে এসে এই প্রশ্ন অনেকটা অমুলক কিন্তু এরপরেও এই প্রশ্নগুলো চলে আসছে। প্রশ্ন আসার পিছনে অনেক গুলো কারন আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো শাসক গোষ্ঠী এই মুক্তিযুদ্ধকে ঐক্যের না করে বিভাজনের রাজনীতিতে নিয়ে এসেছে। প্রায় সকল রাজনৈতিক দলগুলোই মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের দলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করে আসছে। কোন সরকারই চান না মুক্তিযুদ্ধের একটা সঠিক ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরতে। যিনি বা যারা যখন সরকার গঠন করেন তিনি বা তারা তখন নিজেদের মতো করে ইতিহাস লেখা শুরু করে দেন। যার কারনে আমরা যারা এই প্রজন্মের নাগরিক তারা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছি না। মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ না হয়ে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছি যা সত্যিই হতাশাজনক!
স্বাধীনতার এতটা বছর পরেও বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা কতজন এটা জানা সম্ভব হয়নি! মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার দাবীদার রাজনৈতিক দল এখন মতায় এরপরও তারা এই বিষয়ে কোন পদপে নেন নি অথচ তারা মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে প্রত্যেকটা কাজ করে যাচ্ছেন! আর এই কারনেই প্রশ্নগুলো তৈরী হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের হিসাব করার জন্য যখন আবেদন চাওয়া হলো তখন দেখা গেল আবেদনকারীদের বেশির ভাগই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। মজার বিষয় হলো এই ভুয়া প্রমানীত হওয়ার পরেও তাদের ব্যাপারে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না কারন তারা যে মতাসীনদেরই নেতা কর্মী!
মুক্তিযোদ্ধাদের একটা হিসাব মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ে সংরণ করা হচ্ছ্ েকিন্তু সেই হিসাবটা একেবারেই অবিশ্বাস্য। সেখানকার হিসাব মতে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা হলো ২,০৪,৯২৯ জন। কিন্তু একটা সহজ হিসাব করলেই মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা অনুমান করা যায়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানে অর্থাৎ বাংলাদেশে জনসংখ্যা ছিল ৬,৯৭,৭৪,০০০ জন। এর মধ্যে শাহাদাত বরন করেছেন ৩০,০০,০০০জন (যদিও এই সংখ্যার ব্যাপারে অনেক কথা আছে এবং এটা সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হওয়া কোন হিসাব নয়)। রাজাকারেরও কোন সঠিক হিসাব সংরণ করা হয়নি। বিভিন্ন হিসাব মতে যতটুকু জানা যায় সেই সুত্র ধরে যদি মনে করে নেই রাজাকার, আল বদর ও আল শামস মিলে ছিল ৫০,০০০জন। যদিও এই রাজাকাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। অনেকেই শুধু নামকাওয়াস্তে রাজাকার ছিলেন কিন্তু কাজ করতেন মুক্তিযোদ্ধাদের মতই। ঘাদানিকের শাহরিয়ার কবির সেরকম কিছু তথ্যও উপস্থাপন করেছেন (যদিও শাহরিয়ার কবির মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানপন্থি ছিলেন বলে নিউ এইজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির অভিযোগ করেছেন)। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রীতাঁর বিয়াইর ব্যাপারে এটা বলেই দিয়েছেন যে- আমার বিয়াই রাজাকার তবে যুদ্ধাপরাধী নয়। তার মানে প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বলেছেন, তাই ধরে নেই যে সকল রাজাকার খারাপ ছিল না। এরপরও আমরা আমাদের ঐ পঞ্চাশ হাজারের হিসাব থেকে সরে আসছি না।
ধরে নেই মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়সে কম হওয়ার কারনে যুদ্ধে অংশ নিতে পারে নাই মোট জনশক্তির এক পঞ্চমাংশ, যেহেতু যুদ্ধাপরাধীর মামলায় যারা সাী হয়েছেন তাদের মধ্যে ঐ সময়ে বয়স ছিল ৮-৯ বছর এরকম লোক আছেন। তার মানে সাত বছরের বেশি বয়সওয়ালা শিশুদের মধ্যে অনেই মুক্তিযোদ্ধা। কারন তারা বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছিল। সেই একপঞ্চমাংশের হিসাব দাঁড়ায় ১,৩৯,৫৪,৮০০ জনে। ধরে নেই সে সময়ে শারিরিক অমতার কারনে যুদ্ধে অংশ নিতে পারে নাই ৫০,০০০জন। তাহলে হিসাবটা কি দাঁড়ালো- আমরা মোট জনসংখ্যা থেকে যদি শহীদ, শিশু, অম আর রাজাকারদেরকে বাদ দেই তাহলে সংখ্যাটা দাঁড়াবে-
(৩০,০০,০০০+৫০,০০০+১,৩৯,৫৪,৮০০+৫০,০০০) =১,৭০,৫৪,৮০০-৬,৯৭,৭৪০০০= ৫,২৭,১৯,২০০ জনে। এই ধারনা যদি সত্যের কাছাকাছি হয় তাহলে বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল পাঁচ কোটি সাতাশ ল উনিশ হাজার দুইশত জন, এটা জীবিত এবং মৃত উভয়ের হিসাব। কিন্তু সেখানে দেশের হিসাব মতে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা মাত্র দুই ল চার হাজার নয়শত উনত্রিশ জন, জানিনা এখানে মৃতদের হিসাব দেয়া হয়েছে কি না!
বর্তমানে সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধাদের শুধু নয় তাঁদের ছেলে-মেয়ে আর নাতি-পুতিদেরও সকল েেত্র অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। এটা অবশ্যই ভাল দিক। কিন্তু সঠিক হিসাব করলেতো বাংলাদেশের প্রায় সকলেই মুক্তিযোদ্ধা, ঐ হিসাবে সকলকেই সেই সমান অধিকার দেওয়া প্রয়োজন কিন্তু সেটাতো হচ্ছে না! আমরা জানি যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা, যারা সেই যোদ্ধাদেরকে অস্ত্র এগিয়ে দিয়েছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা, যারা তাদেরকে শত্র“ঘাটি চিনিয়ে দিয়েছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা, যারা তাঁদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা, যারা তাঁদেরকে খেতে দিয়েছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা, যারা বক্তব্য আর গান শুনিয়ে তাদেরকে উজ্জিবিত করেছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা, যারা রাজাকারের বেশ ধরে পাকবাহিনীর গোপন খবরা-খবর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সরবরাহ করেছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা, গৃহকর্তা যুদ্ধে গেছেন আর সন্তান আগলে রেখেছেন গৃহকর্ত্রী তিনিও মুক্তিযোদ্ধা, তাহলে প্রশ্ন হলো মুক্তিযোদ্ধা নন কে। এই হিসাবে তো মুক্তিযোদ্ধার তালিকা সংরনের কোন প্রয়োজন পড়ে না কারন বাংলাদেশের প্রায় সবাই মুক্তিযোদ্ধা বরং যদি তালিকা সংরণ করতেই হয় তাহলে রাজাকারের তালিকা সংরন করাই দরকার। দেশে যেহেতু রাজাকারের সংখ্যা অনেক কম তখন তাদের তালিকা করাটাই অনেক সহজ হওয়ার কথা।
প্রত্যেক ইউনিয়নে বা থানায় রাজাকারের তালিকা সংরতি থাকবে, এখন যেমন কোন চাকুরীতে নিযুক্তির আগে মুক্তিযোদ্ধা কিনা তা দেখা হয় তখন দেখা হবে রাজাকার কি না। যদি রাজাকার না হয়ে থাকে তাহলে তিনি অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আর এই তালিকা করা তেমন কোন ব্যাপারই না। আমাদের দেশে ষোল কোটি মানুষের হিসাব করতে লাগে মাত্র কয়েক দিন তাহলে শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা বা রাজাকারের তালিকা দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছরেও হবে না কেন! আমার তো মনে হয় এই তালিকা করতে একমাস সময়ও লাগবে না, শুধু প্রয়োজন একটু সদিচ্ছার।
যেখানে সাহারা মরুভূমিতে কতটা বালুকনা আছে সেই হিসাব করার জন্য মানুষ লেগে গেছে সেখানে বাংলাদেশে কতজন মুক্তিযোদ্ধা বা রাজাকার আছে সেটা হিসাব করা যাবে না এটা কি বিশ্বাস করা যায়? এই তালিকা তৈরী করার জন্য বাংলাদেশ সরকার যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে নির্দেশ দেন একমাসের মধ্যে শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকারের তালিকা দিতে হবে, তাহলে এই নির্দেশ পেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দিবেন পঁচিশ দিনের মধ্যে তালিকা জমা দিতে, জেলা প্রশাক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিবেন বিশ দিনের মধ্যে তালিকা জমা দিতে এরপর উপজেলা কর্মকর্তা ইউনিয়ন চেয়ারম্যাদেরকে ডেকে পনের দিনের মধ্যে তালিকা জমা দেওয়ার জন্য বলবেন আর চেয়ারম্যান তাঁর অধিনে থাকা নয়টি ওয়ার্ডের সদস্যদেরকে ডেকে দশদিনের মধ্যে এই তালিকা তৈরী করার জন্য বলবেন। এক একটা ওয়ার্ড যেহেতু খুব একটা বেশি বড় নয় তাই তাদের সেই তালিকা তৈরী করতে দশ দিন সময়ও লাগার কথা নয়। এই জন্য সরকার একটি লোভনীয় পুরস্কার ও সম্মানীর কথা ঘোষনা করতে পারেন, অন্যদিকে যারা মিথ্য তথ্য পরিবেশন করবেন তাদের শাস্তির কথাও বলতে পারেন। যেহেতু এখন ডিজিটাল যুগ সেহেতু এই তালিকা কম্পোজ করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট প্রেরন অর্থাৎ মেইল করতে খুব কম সময়ই লাগার কথা। এভাবে আমরা একটা স্বচ্ছ হিসাব পেতে পারি।
তবে এেেত্র পপাতিত্ব হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেটা যাই হোক না কেন আমার বিশ্বাস এতে অনেকটা কাজ হতে পারে। আর যাদেরকে দিয়ে এই কাজটা করানো হবে তারা যদি নৈতিকতার মানে উত্ত্বীর্ণ হয়ে থাকেন তাহলে অন্তত পঁচানব্বই ভাগ স্বচ্ছতা আনা সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয়।
আর এই কাজটা করতে না পারলে চিরদিনই আমাদেরকে সংঘাতের মধ্যে জড়িয়ে থাকতে হতে পারে। একজন আর এক জনকে রাজাকার বলে গালিই দিব অথচ হয়তো কেউই রাজাকার নই। একটা সহজ বিষয় ল করুন। আমরা আমাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে কি বলবো- মুক্তিযোদ্ধা না রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানে ছিলেন এবং সেনাবাহিনীর যে সকল অফিসার বা সদস্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য পালিয়ে আসার চেষ্টা করে ধরা পড়েছিলেন তাদের কোর্ট মার্ষালে বিচার করার দায়িত্ব ছিল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের। অথচ তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে আসলেন সেনা প্রধান হলেন, নয়টি বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করলেন এরপরও তাকে কেউ না কখনও মুক্তিযোদ্ধা উপাধীতে ভুষিত করলেন আর না রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী বললেন!
আমরা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়কে কি বলবো মুক্তিযোদ্ধা না রাজাকার? কারন তিনি মুক্তিযুদ্ধ যে সময় চলছিল সে সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শেখ হাসিনা নিজেও মুক্তিযোদ্ধা নন তাঁর স্বামী অর্থাৎ জয়ের পিতা ওয়াজেদ মিয়াও মুক্তিযোদ্ধা নন তাহলে জয়কে আমরা কি বলবো মুক্তিযোদ্ধা না অন্য কিছু? এরকম অনেকের ব্যাপারেই কথা থাকতে পারে।
অন্যদিকে এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন যাদের কোন সার্টিফিকেট নাই, এমনকি তাঁরা কোনদিন সার্টিাফকেট নেওয়ারও ইচ্ছা পোষন করেন না তাঁদের এবং তাঁদের ছেলে-মেয়েদেরকে কি হিসেবে অবিহিত করবেন?
দুঃখজনক হলেও সত্য যে বর্তমানে বাংলাদেশকে বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে একটা খেলা শুরু হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে এখন অনেকেই অনেক কিছু করে যাচ্ছেন। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর অন্তর্ভক্ত না হওয়ার কারনে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীও রাজাকার হয়ে যান আর সেই গোষ্ঠীর অর্š—রভুক্ত হওয়ার কারনে মহিউদ্দীন খান আলমগীরও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যান! যে যাই করেন তিনি শুধু বলেন এটাই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর অমনি ওটা জায়েজ হয়ে যায়!
মজার বিষয় হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা কি সেটাই এখনও আমাদের মতো সাধারণ জনগন জানতে পারলাম না। কেউ বলেন ধর্মনিরপেতা হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবার কিউ বলেন মৌলবাদ মুক্ত দেশ গড়াই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আসলে সত্যটা কি?
বর্তমান বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রটি যুক্ত করা হয়েছে। সেই ঘোষনাপত্রে বাংলাদেশ কিসের ভিত্তিতে স্বাধীন হলো সেটা উল্লেখ আছে, সেখানে বলা হয়েছে- “বাংলাদেশের জনগনের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষনা করিলাম।” আমিতো অন্তঃত দেখি না এই ঘোষনা পত্রের কোথায় ইসলামী রাজনীতি মুক্ত আর ধর্মনিরপেতা প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা হয়েছে! তার মানে জোর যার মুল্লুক তার মত অবস্থা আরকি। আপনার যদি শক্তি থাকে তাহলে আপনি যা বলবেন তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আপনি মুক্তিযোদ্ধা আর যদি শক্তি না থাকে তাহলে আপনি মুক্তিযোদ্ধা হন বা সংবিধান নিয়ে সঠিক কথাগুলো বলেন এরপরও আপনি মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের পরে শক্তি হতে পারবেন না!
বলা হচ্ছে আমাদের দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে কিন্তু এই বিষয়ে অভিজ্ঞ কেউ এই বিচার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এটা বলছেন না। বরং বলছেন এটা একটা রাজনৈতিক হয়রানী ছাড়া আর কিছুই নয়।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল যখন বললেন বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নাই তখন কতশত মুক্তিযোদ্ধা আর বুদ্ধিজীবীরা আদা-জল খেয়ে তাঁর সেই কথার বিরোধীতা করতে লাগলেন এবং গালাগালি করে যারপর নাই নাস্তানাবুদ করলেন কিন্তু মজার বিষয় হলো গত ১৫.১২.২০১২ তারিখে একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের টকশোতে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী এবং আসম রব স্পষ্ট করে বললেন যে বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নাই অথচ তাঁদের কথার কেউ কোন প্রতিবাদ জানাতে সাহস পেলেন না। তাহলে কেন এটা হবে যে জামায়াতের মুজাহিদ বললে অন্ধভাবে সেটার প্রতিবাদ জানাতে হবে আর কাদের সিদ্দিকী এবং আব্দুর রব বললে সেটার প্রতিবাদ জানানো যাবে না? তার মানে হলো মুজাহীদের বিরুদ্ধে বললে যেহেতু কোন সমস্যা নাই বরং আরও বাহাবা পাওয়া যাবে সেই জন্য বলতে হবে আর বঙ্গবীর বা আব্দুর রবের বিরুদ্ধে বললে- যে বলবে তার টুটি চেপে ধরা হবে তাই তাঁদের বিরুদ্ধে বলা যাবে না এই হলো বাস্তব অবস্থা।
এই সকল দিক ভেবে দেখলে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, যদি আমরা সর্বসম্মতিক্রমে একটা সিদ্ধান্তে পৌছতে না পারি তাহলে সমস্যা লেগেই থাকবে। সেই সকল দিক ভেবেই আমি বলেছি উপরের হিসাব মতে একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। যদি আমরা সেই হিসাব গ্রহণ করতে পারি তাহলে অন্তঃত কারো এই কথাগুলো বলার আর তেমন সুযোগ থাকবে বলে মনে হয় না।
দেশ স্বাধীনের বিয়াল্লিশটি বছর পরে এসেও যদি আমরা কে মুক্তিযোদ্ধা আর কে রাজাকার এটা চুড়ান্ত করতে না পারি তাহলে আর কখন করতে পারবো? সরকারের প্রতি আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই, এই নতুন প্রজন্মের জন্য হলেও একটা সঠিক হিসাব-নিকাশ আমাদের সামনে উপস্থাপন করুন। প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদেরকে যেহেতু বঙ্গবন্ধু সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছেন অতএব এখন আর বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নাই অতএব দলীয়ভাবে চিন্তা না করে কে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আর কে রাজাকার সেই হিসাব চুড়ান্ত করুন এবং জনসম্মুখে প্রকাশ করুন।
বিষয়: বিবিধ
২১৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন