স্বাধীনতা ৭১- মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাপরাধী না রাজাকার-১
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবু তাহের ৩০ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:১১:৪৩ রাত
প্রত্যেক জাতিরই গর্ব করার কিছু বিষয় থাকে, তেমনি আমাদেরও গর্ব করার অনেক বিষয় আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মাত্র নয়টি মাসে একটা দেশ স্বাধীন হতে পারে এটা বাংলাদেশের দিকে না তাকালে বিশ্বাস করাই কঠিন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই মুক্তিযুদ্ধের আগে পরের কিছু বিষয় নিয়ে অনেকেরই মনে কিছু প্রশ্ন উদিত হতে দেখা যায়। তবে এটাতো ঠিক যে কোন একটা বিষয়ে সবাই একমত নাও হতে পারেন, কিন্তু প্রশ্নগুলো যদি অমুলক না হয়ে থাকে তাহলে সেগুলো গুরুত্বের সাথেই দেখা দরকার। প্রশ্নগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন কত জন, আমাদের দেশে রাজাকার, আলবদর আর আল শামসের সদস্যই বা কতজন, তা ছাড়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কতজন?
যদিও স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে এসে এই প্রশ্ন অনেকটা অমুলক কিন্তু এরপরেও এই প্রশ্নগুলো চলে আসছে। প্রশ্ন আসার পিছনে অনেক গুলো কারন আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো শাসক গোষ্ঠী এই মুক্তিযুদ্ধকে ঐক্যের না করে বিভাজনের রাজনীতিতে নিয়ে এসেছে। প্রায় সকল রাজনৈতিক দলগুলোই মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের দলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করে আসছে। কোন সরকারই চান না মুক্তিযুদ্ধের একটা সঠিক ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরতে। যিনি বা যারা যখন সরকার গঠন করেন তিনি বা তারা তখন নিজেদের মতো করে ইতিহাস লেখা শুরু করে দেন। যার কারনে আমরা যারা এই প্রজন্মের নাগরিক তারা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছি না। মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ না হয়ে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছি যা সত্যিই হতাশাজনক!
স্বাধীনতার এতটা বছর পরেও বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা কতজন এটা জানা সম্ভব হয়নি! মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার দাবীদার রাজনৈতিক দল এখন মতায় এরপরও তারা এই বিষয়ে কোন পদপে নেন নি অথচ তারা মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে প্রত্যেকটা কাজ করে যাচ্ছেন! আর এই কারনেই প্রশ্নগুলো তৈরী হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের হিসাব করার জন্য যখন আবেদন চাওয়া হলো তখন দেখা গেল আবেদনকারীদের বেশির ভাগই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। মজার বিষয় হলো এই ভুয়া প্রমানীত হওয়ার পরেও তাদের ব্যাপারে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না কারন তারা যে মতাসীনদেরই নেতা কর্মী!
মুক্তিযোদ্ধাদের একটা হিসাব মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ে সংরণ করা হচ্ছ্ কিন্তু সেই হিসাবটা একেবারেই অবিশ্বাস্য। সেখানকার হিসাব মতে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা হলো ২,০৪,৯২৯ জন। কিন্তু একটা সহজ হিসাব করলেই মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা অনুমান করা যায়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানে অর্থাৎ বাংলাদেশে জনসংখ্যা ছিল ৬,৯৭,৭৪,০০০ জন। এর মধ্যে শাহাদাত বরন করেছেন ৩০,০০,০০০জন (যদিও এই সংখ্যার ব্যাপারে অনেক কথা আছে এবং এটা সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হওয়া কোন হিসাব নয়)। রাজাকারেরও কোন সঠিক হিসাব সংরণ করা হয়নি। বিভিন্ন হিসাব মতে যতটুকু জানা যায় সেই সুত্র ধরে যদি মনে করে নেই রাজাকার, আল বদর ও আল শামস মিলে ছিল ৫০,০০০জন। যদিও এই রাজাকাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। অনেকেই শুধু নামকাওয়াস্তে রাজাকার ছিলেন কিন্তু কাজ করতেন মুক্তিযোদ্ধাদের মতই। ঘাদানিকের শাহরিয়ার কবির সেরকম কিছু তথ্যও উপস্থাপন করেছেন (যদিও শাহরিয়ার কবির মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানপন্থি ছিলেন বলে নিউ এইজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির অভিযোগ করেছেন)। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রীতাঁর বিয়াইর ব্যাপারে এটা বলেই দিয়েছেন যে- আমার বিয়াই রাজাকার তবে যুদ্ধাপরাধী নয়। তার মানে প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বলেছেন, তাই ধরে নেই যে সকল রাজাকার খারাপ ছিল না। এরপরও আমরা আমাদের ঐ পঞ্চাশ হাজারের হিসাব থেকে সরে আসছি না। (চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১১১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন