আমার দিনলিপি: ========
লিখেছেন লিখেছেন নকীব কম্পিউটার ২৫ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:৪৪:৫৭ দুপুর
যখন থেকে পড়তে ও লিখতে শিখেছি। তখন থেকেই পড়া এবং লেখার প্রতি আমার আগ্রহ। যেখানে যাহাই পাই পড়তে ও বুঝতে চেষ্ঠা করি। ছোটবেলা থেকেই আমি পড়ুয়া। লেখার প্রতিও আমার দুর্বলতা রয়েছে। কারো হাতের সুন্দর লেখা দেখলেই চেষ্ঠা করতাম তাদের হাতের লেখার মতো করে লিখতে। আলহামদুলিল্লাহ আমার হাতের লেখার ধরণ মোটামুটি ভাল।
আমার বড় ভাই এস এস সি পাশ। তার হাতের লেখা দেখলে মনে হয় ২য়-৩য় শ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থীর হাতের লেখা।
স্কুলে পড়াশুনা করেছিলাম 1994 সালে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত। এরপর হাফিজিয়া মাদরাসায় ভর্তি করেন আমার মা বাবা। হিফজ পড়াকালীনও আমি সময় পেলেই বিভিন্ন উপন্যাস, দৈনিক পত্রিকা, সাময়িকী পড়তাম। ২০০১ সালে লেখালেখির প্রতি খুব আগ্রহ জন্মে। ২০০১ সালে মাসিক রহমত পত্রিকায় প্রথম আমার হাতের লেখা প্রবন্ধ ছাপা হয়। ২০১০ এর পরে আর লেখা পাঠাইনি। সর্বশেষ ২০১০ সালেই লেখা ছাপা হয়েছিল। কি যে আনন্দ লাগছিল ভাষায় ব্যক্ত করতে পারব না।
আমার লেখালেখিতে আমার বাবা আমাকে উৎসাহ যোগাতেন। এছাড়া আমার কিছু সংখ্যক উস্তাদ ব্যতীত সকলেই আমাকে লেখার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। যারা লেখালেখিকে পছন্দ করতেন না, তারা ঠিকই আমার কাঁচা হাতের লেখাগুলি পড়তেন।
আমি উৎসাহ পেয়েছি জামিয়া মিফতাহুল উলুম মাদরাসার শিক্ষক মাও: আব্দুল কাইয়ুম সাহেব, মাও: নাজমুল হাসান সাহেব, আমার হিফজ উস্তাদ হাফেজ সাইদুর রহমান সাহেব, মাও: জিল্লুর রহমান সাহেব এর কাছ থেকে।
এছাড়া আমার প্রিয় বন্ধু হাফেজ মাও: মাহমুদুল হক ফজল সব সময়ই প্রেরণা যুগিয়েছেন। সেও একজন ভাল লেখক, কবি, আর্টিস্ট। এক কথায় বহু গুণে গুণান্বিত এক মহীরুহ।
পড়াশুনা জগতে পা রাখতেই জীবনে হোচট খাই বড় ধরণের। যে কারণে আমার সাধের কাঙ্খিত পড়াশুনাটি হয়ে ওঠেনি। এখন যা করছি নিজের তাগিদে। কিছু কিছু ছড়া, কবিতা লিখতে চেষ্ঠা করি। জানিনা কতটুকু হয়। এরপরেও চেষ্ঠা করি আরকি।
২০০৪ সালে প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন বাদ দিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করি। এ এক বিরাট দু:খ গাঁথা। যাই হোক এসব বলে আর কষ্ট বাড়াতে চাইনে।
লেখাপড়ার প্রতি আমার অদম্য ইচ্ছাই আমাকে এখনও ছাত্র বানিয়ে রেখেছে। ২০১২ সালে আমি দাখিল পরীক্ষা দেই। তখন আমি বিবাহিত মানুষ এবং একজন ছোটখাট ব্যবসায়ী। সারাদিন আয় রোজগার নিয়ে ব্যস্ত। প্রায় পনের বছর আগে আমার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া কথা। অর্থাৎ আমার সাথের সকলেই 1997 সনে এসএসসি পাশ করেছে।
আর আমি- 2012 সালে এসে দাখিল পরীক্ষা দেই। হাঁ, কোন দিন মাদরাসায় গিয়ে ক্লাস করিনি। শুধুমাত্র বইগুলো বাসায় মাঝে মাঝে পড়েছি। অন্যের কেনা বইগুলো আমি পড়েছি। কারণ সে কিনেছিল পরীক্ষা দেবে বলে। সে পরীক্ষা দেয়নি, হাওলাত নিলাম তার বইগুলো। আমি পাশ করার পর সে আবার নিজের বই ফেরত নেয় এবং সেও পরীক্ষা দেওয়ার উৎসাহ পায় এবং পরীক্ষা দিয়ে পাশও করেন। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। বেশিরভাগ সময়পরীক্ষার রাতগুলোতে পড়েছি। দাখিলের ফলাফল 4.06।
মোটামুটি ভাল ফলাফল করায় আরেকটু উৎসাহ পেলাম, তাই আলিম এ ভর্তি হলাম। এবারও মাদরাসায় গিয়ে ক্লাস করার সুযোগ হয়নি কোনদিন। বই উপহার পেলাম আমার এক ছাত্রের কাছ থেকে। যাকে কম্পিউটার শিখিয়েছিলাম। যাই হোক তার বই পড়ে ভালই ফলাফল পেলাম। আলিম ফলাফল 3.83। হাঁ, এ বছর আমার গাফিলতি বেশি ছিল। সারা বছর তো মাদরাসায় যাই ই নি। বাসায়ও পড়িনি।
অনেকের সাথে পরামর্শ করে ফাযিলে ভর্তি হলাম। বই কিনলাম, রেজিস্ট্রেশন করলাম। বর্তমানে চলছে ফরম ফিলাপের কাজ। গতকাল আমার ভর্তি হওয়া মাদরাসার একজন শিক্ষক ফোন দিলেন 3200 টাকা দিতে হবে। আমি বললাম: আমি তো গরীব মানুষ। নিজে কামাই করে পড়াশুনা করছি। বাবা নেই। বড় ভাইও পৃথক। মা কোথা থেকে দিবেন টাকা? তার তো কোন উৎস নেই। আমাকে একটু কমিয়ে বলুন। তাঁদের আবদার একটাই। কম দেয়া যাবে না। আমার ঘরনী শুনে বলে, বাদ দেন এসব পড়ালেখা, কি হবে সার্টিফিকেট দিয়ে। আমি তাকে বলেছি- শোন, তুমি ইচ্ছে করলেই পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে পারবে না। আমি কিন্তু পারছি। আমার শেষ ইচ্ছা মাস্টার্স / কামিল শেষ করা। যে কোন মূল্যে আমি আমার সার্টিফিকেটগুলি অর্জন করতে চাই। অনার্সে ভর্তির চেষ্ঠা করেছিলাম। অর্থাৎ অনলাইনের আবেদন করেছি। যেহেতু নিজের কম্পিউটার আছে। কিন্তু অর্থাভাবে আর কলেজের বারান্দায় পা রাখা সম্ভব হয়নি। কেননা আমি যে পরিবারও চালাই আবার পড়াশুনাও চালাই। সারা মাসে দেখা যায় 8-9 হাজার ইনকাম হয়। এর দ্বারা বাসা ভাড়া, নিজেদের খাবার ইত্যাদি খরচের পর এক টাকাও জমানোর ব্যবস্থা থাকে না। তাহলে পড়াশুনার জন্য বাড়তি খরচ করি কোথা থেকে। ( আজ একটু বেশিই জানিয়ে ফেললাম নিজের সম্পর্কে) কেউ মাইন্ড না করলে খুশি হবো। জীবন সংগ্রামে যেন জয়ী হতে পারি সে জন্য দোয়া চাই সকলের। আমি যেন আমার কাঙিখত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার ইচ্ছা আছে চেষ্টা চালিয়ে যান । ইনশা আল্লাহ আপনি সফলকাম হবেন ভাইয়া ।
এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেললাম। .।.।.।।
আপনার জন্য অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন