‘গুল’
লিখেছেন লিখেছেন নকীব কম্পিউটার ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১০:২৬:৪৪ সকাল
2002 সালের কথা। আমি তখন জামিয়া মিফতাহুল উলূম মাদরাসার ছাত্র। এ বছর হিফজ শুনাইতেছি। রমজান মাস আগত। খায়ের বাংলা গ্রামে তারাবীহ পড়াতে হবে। এ গ্রামে ৩ টি মসজিদ। প্রত্যেক মসজিদেই খতমে তারাবীহ হয়।
আমাদের হিফজখানার হাফেজ সাইদুর রহমান ( বর্ণি হুজুর) দীর্ঘ দিন এ গ্রামে তারাবীহ পড়িয়েছেন। সেই সুবাদে এই গ্রামের প্রতিটি মসজিদে তারাবীর হাফেজ হুজুরের মাদরাসা থেকেই দেওয়া হয়। আমি আর হাফেজ আবু রায়হান নির্বাচিত হলাম প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন মসজিদে নামায পড়াবো। ৬ জন হাফেজ রওয়ানা হলাম ৩টি রিকসা যোগে। আমরা আমাদের জন্য নির্বাচিত মসজিদে গেলাম। 28 রমযান পর্যন্ত আমরা তারাবীহ পড়ালাম।
রমযান মাসে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। আমার সাথের হাফেজ সাহেবের একটা বদ নেশা ছিল। ‘গুল’ দিয়ে দাঁত মাজা। ইফতারের পরেই প্রতিদিন সে এই কাজটি করত। কয়েকদিন আমাকে বলে গুল ব্যবহারের জন্য। আমি সব সময়ই এড়িয়ে চলেছি।
একদিন শখের বসে গুল দিয়ে দাঁত মাজলাম। একটু পরে শুরু হলো মাথা ঘুরানি। পড়া বাদ দিয়ে শুয়ে রইলাম কতক্ষণ। সারা শরীর ঘামছে। বেহুঁশের মতো হয়ে গেলাম। আবু রায়হান কি করবে বুঝতে পারছে না। পাশের পুকুর থেকে বদনা দিয়ে পানি এনে আমার নাকে মুখে শরীরে ছিটিয়ে দিল, কোন কাজ হলো না। আস্তে আস্তে উঠে বারান্দায় গেলাম। মাথায় পানি ঢালল অনেকক্ষণ। আমি অসুস্থ, আর আবু রায়হান হাসে। হাসছে তো হাসছেই। কারণ এই জিনিসটা সে প্রতিদিন ব্যবহার করে কিছুই হয় না। শখের বসে আমি একদিন ব্যবহার করলাম আর আমাকে গুলে ধরে ফেলল।সেদিনের কথা আমি কখনও ভুলতে পারব না।
আজ দীর্ঘদিন পরে এই কথা লিখার কারণ: কর্মস্থলে আসার পথে হঠাত আবু রায়হানের সালাম। একটু সামনে এগিয়ে আসলে পিছন থেকে আমাকে নাম ধরে ডাক দেয়। কাছে গিয়ে আমি তাকে চিনতে পারলাম। শরীরের গঠন ঠিকই আছে, কিন্তু নেই দাঁড়ি, টুপি, পাঞ্জাবী। ভাল ইয়াদের হাফেজ ছিল সে। বর্তমানে সে একজন রাজমিস্ত্রী। মনে হয়, নামাজটাও পড়ে না। আল্লাহর পথ থেকে সে এভাবে বিমুখ হয়ে যাবে কখনও ভাবিনি।
বিষয়: বিবিধ
১৪৫১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন