একটি পিঠার দোকান ও ---
লিখেছেন লিখেছেন নকীব কম্পিউটার ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৪:২১:১৭ বিকাল
ফজরের আযানের সাথে সাথেই ঘুম ভাঙে জমিলার। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে গভীর রাতে যখন বিছানায় পিঠ লাগায় তখন শোয়া মাত্রই রাজ্যের ঘুম এসে একসাথে ভীড় করে। অলস শরীর নিয়েই ঘুম থেকে প্রতিদিন ওঠতে হয় খুব ভোরে। সাথে সাথে জাগিয়ে তুলে আট বছরের ছোট ছেলেটাকেও। মায়ের সাথে সাথে ঘর থেকে বের হয়ে রওয়ানা হয় জীবিকার তাগিদে। যখন তার মতো ছেলে মেয়েরা কিন্ডার গার্টেনে যায় পড়া শুনা করতে। আর সে কি না জীবিকার সন্ধানে ছুটে চলে মায়ের সাথে।
ফজলুর বাপ আমি গেলাম।
স্বামীকে জানিয়ে জমিলা ভ্যান গাড়ীতে টেনে টেনে সব জিনিস তুলে। পানির কলসী, জগ, গ্লাস, পিঠার গুড়ি, লাকড়ী। ফজলু তার মাকে ভ্যান চালাতে সহযোগিতা করে। সামনে থেকে ড্রাইভারের সিটে বসে ফজলু। পেছনে তার মা গাড়ী ঠেলে। সদর হাসপাতালের মোড়ে তাদের পিঠার অস্থায়ী দোকান বসে প্রতিদিন। দোকান বেশ ভাল চলে।
ইদানীং সাথে যোগ হয়েছে ডিম। এখন কিছু মানুষ পিঠার পাশাপাশি ডিমও খেতে চায়। তাই ডিমও যোগ হয়েছে পিঠার সাথে। এক হালি ডিম বিক্রি করলে ৮ টাকা লাভ থাকে। তবে ডিমের চেয়ে পিঠায় লাভ বেশি।
প্রতিদিন কয়েকটা ছেলে এসে পিঠা খেয়ে যায়। মাঝে মধ্যে মন চাইলে টাকা দেয় । অনেক সময় পিঠা খেয়ে চলে যায়। খালা পরে দিমুনে। এলাকার পোলাপান ওরা। ব্যবহার মোটামুটি ভাল। কোন চাঁদাবাজি টাদাবাজি করে না। মাঝে মাঝে পিঠার দাম দেয় না, এই আরকি। ইদানীং ডিমও খেয়ে চলে যায়। টাকা চাইলে বলে পরে দিমুনে।
জমিলা ভাবে- ব্যবসা করতে হলে কিছু ছাড় দিতেই হবে।
জমিলার দোকান বেশ ভালই চলছে। সারাদিন কম বেশী বেচাকেনা হয়। তবে সন্ধার পর ও ফজরের পর পিঠার চাহিদা বেশি থাকে। এ সময় দুইটি চুলা জ্বালিয়েও পিঠার অর্ডার দিয়ে শেষ করা যায় না। ফজরের পর যারা হাঁটতে বের হয় কিছুটা ক্লান্ত হয়ে এখানে এসে দাড়ায়। কয়েকটা পিঠা খায় এরপরে চলে যায়। সন্ধার পর কিছু মানুষের কাজ থাকে না, তাই চায়ের দোকান আর পিঠার দোকানেই ভীড় জমায়।
ইদানীং জমিলার দোকানের পাশে আরেকটা নতুন দোকান হয়েছে। কিছু মানুষ এখানে বেশি ভীড় দেখে ওই দোকানে চলে যায়। জমিলার এতে চিন্তা নেই। যার রিযিক যেখানে আছে সেখানেই খাবে। সবই উপরওয়ালার হাতে।
৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচন। নির্বাচন উপলক্ষে অনেক রাত পর্যন্ত জমিলার দোকান চলে। ওয়ার্কিং শেষে কর্মীরা বাসায় ফেরার পথে ডিম ও পিঠা খায়। পাশে নতুন দোকান হলেও জমিলার চিন্তা নেই। তার ব্যবসা জমজমাট। বেশ ভাল চলছিল চলতি মাসে।
আজ আযানের সাথে সাথেই ঘুম ভাঙল না জমিলার। একটু দেরীতে ঘুম থেকে ওঠে ছোট ছেলেকে নিয়ে রওয়ানা হয়।
মোড়ের কাছে যেতেই চোখ চড়াক গাছ। একি! আমার দোকানের জায়গায় এ কোন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে? আমার দোকানের জায়গা দখল করলো কে? চারপাশে সুতার বেষ্টনী। তাতে পোস্টার লাগানো। নাম পড়তে না পারলেও ছবি দেখে ও মার্কা দেখে জমিলার চিনতে ভুল হলো না। পাঞ্জাবী মার্কা লোকটার পোস্টারে ছেয়ে আছে জমিলার দোকানের জায়গা টুকু। তারা এখানে চায়ের স্টল দিয়েছে মানুষকে চা খাওয়াবে ভোটের বদলে! এখন আমার দোকানের কি হবে?
ঘরে অসুস্থ স্বামী। তিন চারটে ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার চলবে কিভাবে জমিলার? ভেবে কুল পায় না জমিলা।
আমি একজন গরীব মানুষ। রাস্তার পাশে একটু জায়গা নিয়ে অস্থায়ী দোকান দিলাম তাও দখল করে নিতে হলো? গরীবের পেঠে লাথি না দিয়ে বুঝি বড় নেতা হওয়া যায় না? এই ছোট জায়গাটার দরদও ছাড়তে পারলনা তার লোকেরা।
কাঁদতে কাঁদতে জমিলা তার দোকানের জন্য অন্যত্র জায়গা খুঁজে।
বিষয়: বিবিধ
১৭৬১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবুও জমিলার প্রতি সহানুভূতি
ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন