অবহেলিত পথকলিদের কথা
লিখেছেন লিখেছেন নকীব কম্পিউটার ০৭ নভেম্বর, ২০১৫, ০৮:৩০:৩০ রাত
আজ দুপুর ১টায় নেত্রকোণা উপজেলা জামে মসজিদ সংলগ্ন বিআরডিবি অফিসের নিকট যাই একটি বিশেষ প্রয়োজনে। আমার কানে বাজে একটি কান্নার শব্দ। মনে হবে বিড়ালের ছোট বাচ্চার আওয়াজ। কয়েক মিনিট শুনলাম। এরপর কৌতুহল সামলাতে না পেরে সামনে এগুলাম। গিয়ে দেখি নোংড়া জামা কাপড় পরিহিত এক তরুণী। শুয়ে আছে একটি প্লাস্টিকের বস্তায়। পাশে একটি মানি ব্যাগ। আর ছোট একটি শিশু কান্না করছে। আমাকে দেখে তাড়াতাড়ি শিশুটিকে বুকের নিচে নিয়ে দুধ খাওয়াতে দিল। শিশুটি এত ছোট যে চোখে দেখা যায়না একটু দূর থেকে। অপুষ্টি আর অনাহারে এই তরুণী গর্ভধারিণীর অবস্থা খুবই খারাপ। আর সদ্য প্রসুত নবজাতকটির অবস্থা তো খুবই নাজেহাল। না আছে গোসল না আছে খাওয়া, ঘুম।
আমি কয়েকবার জিজ্ঞাসা করলাম তোমার বাড়ি কই? তিন চারবার জিজ্ঞাসা করার পর উত্তর দিল নেত্রকোণা। নেত্রকোণার কোথায়? আরও কয়েকবার জিজ্ঞাসা করার পরও আর কোন উত্তর পেলাম না। একবারের জন্য তার মাথাটা উঁচু করেনি।
আমার হাতে খুব কমদামী একটি মোবাইল সেট। ৪-৫টি ছবি তুললাম। কোন ছবিতেই তার মুখটা ভালভাবে দেখা গেল না।
কে এই তরুনী? কি তার পরিচয়? কেইবা ওই শিশুটির বাবা?
মনে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে কর্মস্থলে চলে এলাম।
কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম। তারা বলে পাগল। হা দেখেছি একটা পাগল মেয়ে একটি শিশু নিয়ে ঘুরে।
এর বেশি কিছু জানা গেল না।
সে যাই হোক, এই বাচ্চাটির জন্মদাতা কে! প্রিয় পাঠক পাঠিকা সবাই জানেন।
আমাকে আর বিশ্লেষণ করতে হবে না। এরপরেও এদের জন্য কষ্ট হয়। মনে বড় ব্যাথা লাগে। ইস্ এদের জন্য কিছু করা যেত।
জীবন নামের রেলগাড়ী থেকে এই মানবরূপী বগীটি কখন যে কার গাড়ী থেকে লাইনচ্যুত হয়েছে একমাত্র আল্লাহপাকই ভাল জানেন। কে সেই হতভাগা বাবা, যার মেয়েটি আজ নোংড়া কিছু জনগণের আঁধার রাতের অবৈধ খোড়াক।
সারাদিন মানুষের দ্বারে দ্বারে দুমুঠো আহারের জন্য ধিক্কার শুনে শুনে ক্লান্ত। আজ অফিস বন্ধ তাই রাস্তা থেকে একটু দূরে এই অফিসের বারান্দায় একটু ঘুমানোর অব্যর্থ চেষ্ঠা। পেটের ক্ষুধায় নবজাতকটির কান্নায় ঘুম ভেঙে যায়। শুকনো বুকে তাই প্রিয় সন্তানটির মুখ লাগায়। যাকে দীর্ঘ ৯টি মাস গর্ভে রেখেছে কষ্ট করে। মৃত্যুসম যন্ত্রণা সহ্য করে সন্তানটি প্রসব করে দুনিয়ার মুখ দেখিয়েছে।
কি হবে তার ভবিষ্যত পরিচয়!
সারাদিন না উপবাসই থাকল, কোথাও হয়ত কেউ একটু দয়া করবে কেউ, কেউবা বকাঝকা করে বিদায় করবে।
রাতের বেলাতেই কি এই আউলা কেশী পাগল বেশী নারীটি কি শান্তিতে একটু ঘুমাতে পারবে? আছে কি এর নিশ্চয়তা সোনার বাংলাদেশে?
বড় বড় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের ঘরে থাকে কিছু কুলাঙ্গার কর্মচারী। তারা হয়তো তাদের পশুত্ব চরিতার্থ করতে ওই পাগলনীর ঘুম হারাম করবে। নতুবা কিছু খাদ্যের প্রলোভনে ভোগ করবে। এভাবেই কি চলবে এদের জীবন? রাষ্ট্রের কাছে কি এদের কিছু পাওনা নেই? মারা গেলে তো এদের মতো মানুষের দাম বাড়ে। পোস্ট মর্টেমের নামে উপরি কিছু হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এদের কদর বাড়ে।
বিষয়: বিবিধ
১২৫০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এমনই এক পাগলি মায়ের সন্তান কে নিয়ে। যে বড় হয়ে ঘৃনায় পিষে ফেলতে চায় সারা পৃথিবিটাকেই। আর আমরা যারা পৃথিবীটা উপভোগ করছি প্রতি মুহুর্তেই তাদের ঘৃনায় সঞ্চয় করছি অাল্লাহর গযব।
মন্তব্য করতে লগইন করুন