ভালবাসার রং মাখা একটি অপবাদের কাহিনী ====================
লিখেছেন লিখেছেন নকীব কম্পিউটার ২১ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:৪৮:৩৯ সকাল
সিরাজ মিয়া একটি ছোটখাটো হোটেলের মালিক। ওরা দুই ভাই মিলে হোটেলটি চালায়। রান্নার কাজে সহযোগিতা করে ওদের মা। সিরাজের বাবার রয়েছে একটি পান দোকান। ওরা বেশ ভালো আয় করে। সিরাজের বড় ভাই সোহেল। সে হোটেল ব্যবসার পাশপাশি সিএনজি চালিত একটি অটো রিকসা চালায়। সিরাজ যা আয় করে তাও সোহেলের হাতে তুলে দেয়। উপজেলা সদরে বসবাস করার সুবাদে সকল সমাজের মানুষের সাথেই তার বেশ ভাল সম্পর্ক। একবার সোহেল ডেসটিনির আমন্ত্রণ পায়। এক সময় কাজ বুঝে এতে ঢুকে পড়ে সে। তার লাভের আশায় সে সদস্য বাড়াতে শুরু করে। ওর মামার বাড়ীতে একবার যায়। পার্শ্ববর্তী গ্রামের একটি মেয়ে প্রতিদিনই কলেজে আসা যাওয়া করে। ওর প্রতি সোহেলের আকর্ষণ বাড়ে। ডেসটিনিতে কাজ করার জন্য ও লাভের কথা বলে সোহেল এক সময় মেয়েটিকে বাগে আনে। মেয়েটির প্রতি এক সময় দূর্বল হয়ে পড়ে সোহেল। তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। মেয়েটি প্রথম প্রথম লজ্জা করলেও এক সময় তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। মেয়েটির বাবা খুব গরীব। দিন মজুর যাকে বলে। মেয়েটি প্রতিদিন কলেজে আসে। প্রাইভেট পড়ার কথা বলে শুক্রবারও মিস দেয় না। মেয়েটি এক সময় তার প্রেমিক সোহেলের সাথে দেহ সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। নানা ছলছুতোয় ছেলেটি মেয়েটির সর্বনাশ করতে থাকে। মেয়েটি ভাবে তাদের বিয়ে হবে। কিন্তু না ছেলেটির মনেও ইচ্ছা নেই বিয়ে করার আর মেয়েটির ইচ্ছা নেই বিয়ে করার। ইন্টার পাশ করা একটি মেয়ে অশিক্ষিত একটি ছেলেকে বিয়ে করবে! এটা তো হতেই পারে না।
ছেলেটি প্রতি সপ্তাহেই ডেটিং এর স্থান পরিবর্তন করে। এভাবে তাদের মজা দেয়া নেয়ার কাজ দুবছর চলে। ওরা এখন নতুন একটি স্থান বের করেছে একটি গেস্ট হাউজে দিনের বেলায় ২ ঘন্টার জন্য ভাড়া নেয়। সোহেল নিজে যায় না ভাড়া করার জন্য। ওকে সহযোগিতা করে তারই পাশের আরেক হোটেলের ছেলে ফারুক। ফারুক সোহেলের কাছ থেকে নেয় ২শ টাকা। গেস্ট হাউজ মালিককে ফারুক দেয় ১শ। আর ১শ নিজের পকেটে পুরে।
একদিনের ঘটনা। সেদিন ছিল শুক্রবার। ফারুক মেয়েটিকে সাথে করে নিয়ে প্রবেশ করে। কয়েক মিনিট পর সে বেরিয়ে আসে। ১০ মিনিট পর সোহেল গিয়ে ঢুকে। ফারুক কিছুক্ষণ পর গিয়ে রুমের বাহির দিয়ে তালা মেরে রেখে আসে। ২ ঘন্টা পর ফারুক তালা খুলে মেয়েটিকে নিয়ে আসে। এর কিছুক্ষণ পর সোহেলও বিদায় হয়। এভাবে প্রায় সপ্তাহেই ওদের ডেটিং চলে। ফারুক যে এই কাজটি করে সে নিজে মনে মনে অনুতপ্ত। একদিন সে তার পরিচিত একজনের কাছে বলে সমস্ত ঘটনাটি। এসব কাজে সে যে সহযোগিতা করছে; তার কি পরিণাম হবে। সেই পরিচিত লোকটি একজন শিক্ষক। প্রাইভেট পড়ান তিনি। দূর্ভাগ্যক্রমে সোহেলের ওই প্রেমিকা ফারুকের পরিচিত লোকটির কাছে পড়াশুনা করে সেই বিষয়টি ফারুক জানে। এক সময় মেয়েটির পরিচয় গোপন রাখলেও শেষ পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়।
শিক্ষক মহোদয় একদিন তার ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর সময় উপদেশ দিলেন যে, এই শিক্ষার্থীরা তোমাদের বয়সটা এখন খুব বিপদজনক। এই বয়সে তোমরা একে অপরের চোখে ভাল লাগতে পার। আর ভাল লাগা আর ভালবাসা এক নয়। হাঁ ভাললাগা থেকেই ভালবাসার জন্ম। এটা হতেই পারে। তবে একটি কথা তোমরা জীবনে মনে রাখবে; প্রেম করতে পার মনের সাথে কিন্তু দেহের সাথে প্রেম করবে। বিবাহ পূর্ব দৈহিক প্রেম ভালোবাসা জীবনে কল্যাণ বয়ে আনেনা। উভয় জগতেই তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। সোহেলের প্রেমিকা যে মেয়েটি সে কিছুটা আঁচ করতে পারে। কেন আজ শিক্ষক মহোদয় এই কথাগুলি বললেন। কারণ ফারুককে একদিন ওই টিচারের সাথে কথা বলতে দেখেছে মেয়েটি। তার দৃঢ় বিশ্বাস ওই ফারুক তার সম্পর্কে টিচারের কাছে সবকিছু বলে দিয়েছে।
ওই মেয়েটির চাচাত বোনও তার স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে। চাচাত বোন মিতু এবার বি,এ ভর্তি হয়েছে। ওরা ৫ বোনের মধ্যে মিতু সবার বড়। বাবা কৃষক মানুষ। মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য পাত্র খুঁজছেন। মিতুর ইচ্ছা একটি সরকারী চাকুরী নিবে তারপর বিয়ে। মিতুর গায়ের রং শ্যামলা। চেহারা মোটামুটি সুন্দর। মিতু কোনদিন কারও প্রেমে পড়েনি। ইদানীং তার ইংরেজীর ওই টিচারের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে। মিতু প্রতিদিন প্রাইভেটে সবার আগে আসে ও যায় সবার পরে। মাঝে মাঝে সে স্যারের জন্য চকলেট কিনে আনে। এই সেই উপহার দেয়। স্যার নিতে না চাইলে মাঝে মাঝে এমনটি সে করে। একদিন স্যারের মোবাইলে ২০ টাকা রিচার্জও করে দেয়। স্যার বুঝতে পারেন যে, এই টাকা মিতু ছাড়া আর কেউ দেয় নাই। পরে অবশ্য স্যার টাকাটা উসুল করে। স্যারকে সে তার মনের কথাটা বুঝানোর চেষ্ঠা করতেছে। স্যারের মনোভাব দেখে মিতু এক সময় বুঝতে পারে যে, স্যার খুব কঠিন মনের মানুষ। স্যার একদিন মিতুকে বলে দেয় যে, স্যার কোনদিন কোন ছাত্রীকে বিয়ে করবে না। তাছাড়া ছাত্রী বিয়ে করলে প্রেম না করলেও লোকে বলবে প্রেম ছিল। প্রেম করে বিয়ে করার প্রতি স্যারের প্রচণ্ড রকম ঘৃণা। এক সময় মিতু স্যারের প্রতি মনের টানকে সরিয়ে নেয়। এর পরেও সে তার জীবনের সব কিছু তার স্যারের সাথে শেয়ার করে। স্যার শুনতে না চাইলেও বাসার সব খবরা-খবর ইনিয়ে বিনিয়ে স্যার কে সে জানায়। স্যার একদিন মিতুকে বলে, তোমাকে একটি কথা বলব; সেটি তুমি অবশ্যই গোপন রাখবে এবং নিজের পক্ষ থেকে তোমার চাচাত বোনটিকে সংশোধন করাবে। এই কথা যে আমার পক্ষ থেকে, সে কথা কোনদিন বলবে না।তোমার চাচাত বোনটি খারাপ হয়ে গেছে। ওকে ভালভাবে বুঝাও। ওকে সুপথে আনার চেষ্ঠা কর।
মিতুর কথায় ওর চাচাত বোন রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে। সে বাজী ধরতে রাজী। সে কারো সাথে প্রেম করে না। এমনকি কোনদিন কারো সাথে কোথাও ডেটিং হয়নি। মিতু বলে, শোন তুই যে কোথায় কার সাথে ডেটিং করিস, স্যার সব জানে। এমন কি ছবি সহ প্রমাণ আছে। স্যার ছবি তুলে রেখেছে, তুই সোহেল ও ফারুককে সাথে যে গেস্ট হাউজে গিয়েছিলি। যাওয়ার পথে স্যার পিছন থেকে তোদের তিনজনের ছবি তুলেছে। স্যারের কম্পিউটারে আমি নিজে দেখেছি। তুই যতই অস্বীকার করস। আমি বিশ্বাস করি না। শোন, আজকের পর হতে তুই হয়তো স্যারের কাছে আর পড়তে আসবি না। কিন্তু স্যারের উপদেশটি তুই মনে রাখিস। ৯৯% ছেলেরা তোদের মন থেকে ভালোবাসেনা। ভালবাসে দেহটাকে। ভোগ করার পর ওটা ব্যবহৃত টিস্যু পেপার। শোনলাম তুই নাকি আর কয়েকদিন পর চট্টগ্রাম চলে যাবি গার্মেন্টে চাকুরী করতে। তাই তুই সোহেলকে ভুলে যা। অনেক কথা মিতু তার চাচাত বোনকে বলল। কথা শেষ হলে সোহেলের প্রেমিকা বলল ঠিক আছে, দেখে নিব কে দোষী আর কে নির্দোষী। কয়েকদিন পর সোহেলের প্রেমিকা চিটাগং চলে যায়। সোহেল তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে এবং সম্পর্কটা ঠিক রাখতে চায়। কিন্তু মেয়েটি তাকে দূরে সরাতে চাইছে। সত্যিই সে তাকে ভুলতে চাইছে। কিন্তু সোহেল তো এত সহজে মজা ছাড়তে রাজী নয়। এত স্বাদের জিনিসটা কিভাবে ভুলবে? সে জানতে চায় বারবার ফোন করে। কেন ওকে ভুলতে চায়। কেউ কি তাকে বাধা দিয়েছে কি না। সোহেলের পীড়াপীড়িতে এক সময় মেয়েটি মিথ্যার আশ্রয় নেয়, সেই পুরনো প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। তার চাচাত বোনকে বলেছিল, দেখে নিব কে দোষী আর কে নির্দোষী? এক সময় বলে, স্যার আমাকে বলেছে, স্যারের সাথে প্রেম করতে হবে, নইলে আমার সর্বনাশ করবে স্যার। আর তোমাকে ভুলে যেতে বলেছে স্যার।
সোহেল তার প্রেমিকাকে নিজেই ভর্তি করিয়েছিল স্যারের কাছে। সে স্যারের কাছে যায়। এবং তার মোবাইলে বলা কথাগুলির কথা জানিয়ে দেয়। সে বলে তার কাছে রেকর্ড আছে। সে রেকর্ডও শুনাতে চায়, মেয়েটি সত্যিই বলেছে স্যারের কথা। একদিন সোহেল কয়েকজন মানুষ নিয়ে স্যারের প্রাইভেট সেন্টারে হাজির। সবাই বলছে সোহেলের পক্ষে। তার কাছে প্রমাণ আছে। স্যার যতই বলছে সব মিথ্যা কথা। এটা ভুয়া কথা। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব বলছে মেয়েটা। মাতুব্বররা কেউই এটা বিশ্বাস করতে চায় না। স্যারের কাছে রয়েছে- ফারুক, সোহেল ও ওই মেয়েটা ডেটিংয়ে যাওয়ার ছবি। কিন্তু স্যার কি করে এটা মাতুব্বরদের দেখায়! রাস্তায় তো যে কেউ চলতে পারে এভাবে। এক সময় স্যারকে দোষ দিয়ে মেয়েটা পার পেয়ে যায়। প্রকৃত পক্ষে স্যার কোনদিন ওই মেয়ের সাথে প্রেম প্রেম খেলা খেলেনি। বরং ওই মেয়ের চাচাত বোন মিতু চেষ্ঠা করেছিল স্যারকে পটাতে । এই কথা গোপনই থেকে যায়, কেউ জানেনা শুধু মিতু আর স্যার ছাড়া। আর প্রকাশ পায় মিতুর চাচাত বোনের সাথে স্যারের প্রেম কাহিনী। যা কখনোই ঘটেনি। যা ফারুক ভালোভাবেই জানে। সোহেলও নিজের দোষ ঢাকতে তার প্রেমিকাকে বানায় ‘ডাকা বোন’। সমস্ত ঘটনার প্রকৃত স্বাক্ষী ফারুক। সে সোহেলের জন্য ডেটিংয়ের জায়গা করে দিত। ফারুক যদি সত্য কথা বলে, তাহলে সে নিজেও অন্য একটি কারণে দোষী। যে কারণে প্রকৃত দোষীরা পার পেয়ে যায়। মাঝখান থেকে উদোরপিন্ডি বুদোর গাড়ে এসে পড়ে। গ্রাম্য প্রবাদে বলে- খেয়ে গেল গোঁফওয়ালা দোষী হইল দাঁড়িওয়ালা
বিষয়: বিবিধ
৫১২২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ নারীদের ছলনা ভয়ংকর - সূরা ইউসূফ , আয়াত নং ২৮
মন্তব্য করতে লগইন করুন