আত্মঘাতী কথোপকথন ...
লিখেছেন লিখেছেন নকীব কম্পিউটার ১১ মে, ২০১৪, ০৭:১৮:১৫ সন্ধ্যা
আত্মঘাতী কথোপকথন ॥ শিক্ষার বেহালদশা
কোন মানুষই সদিচ্ছায় নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করতে চায় না। তখনই নিজের অপারগতা বা দূর্বলতা প্রকাশ করে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে বা অন্য কোন পথ খোলা না থাকে। শিক্ষকতা মহান একটি পেশা। শিক্ষার বিনিময়ে আমরা বিনিময় পেয়ে থাকি। বিনিময়ে যেহেতু কমতি নেই, তাহলে শিক্ষা দেয়ার বেলায় কমতি থাকবে কেন? অনেকে সরকার থেকে বা প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন নেন ঠিকই কিন্তু শিক্ষা দেয়ার বেলায় গাফিলতি করেন। নিয়োগের পর প্রথম প্রথম ভালোভাবে শিক্ষা দেন, যখনি একটু পরিচিত বা পুরাতন হয়ে যান তখনি শুরু হয় দায়িত্বে অলসতা, অবহেলা। হ্যাঁ এটা কারো কারো বেলায়। আবার কেউ কেউ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়েও কাজে বা দায়িত্বে অনিয়ম করেন। কিন্তু নিজের মাহিনা- বেতন ঠিকই তুলেন। কখনও তিনি কল্পনাও করেন না তার বেতনটুকু হালাল হচ্ছে কি না? কখনও ভেবে দেখেছেন? কত বড় দায়িত্ব নিয়েছেন, মানুষ গড়ার কারিগর আপনি হয়েছেন! আপনার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন না করার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা দূর্বল হচ্ছে পড়াশুনায়।
অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও ভাল ফলাফল করতে পারে না সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে। প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা না হওয়ায় তারা প্রাইভেট শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করছে। শুধুমাত্র সাজেশন্স পড়ে পরীক্ষা দিচ্ছে, পরীক্ষায় পাশের জন্য। জ্ঞানার্জনের জন্য পড়াশুনা করছে না। ফলে ভবিষ্যত প্রজন্ম ইলম বা জ্ঞানবিহীন তৈরী হচ্ছে। মূল বইয়ের ধারে কাছেও যায় না বর্তমানে এমন বহু ছাত্র আছে। হ্যাঁ আনন্দের সংবাদ হলো সৃজনশীল পদ্ধতির কারণে ছাত্ররা কিছুটা হলেও পড়াশুনা করে। তবে গণিত বিষয়ের সৃজনশীল পদ্ধতিকে কেহই পছন্দ করছে না। যত আধুনিক নিয়ম কানুন তৈরী করা হোক না কেন যদি শিক্ষার্থীকে গ্রহণ করার মত জ্ঞান না দেয়া যায় তাহলে কোন ইলমই কাজে আসবে না। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলির বিষয়ে তো কথাই নেই বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি নজর দিলে দেখা যায় তারা ভর্তি ও কোচিং বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। অভিভাবকগণ ফতুর হয়ে যাচ্ছেন সন্তানকে শিক্ষিত করতে গিয়ে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা অযোগ্য হয়ে গড়ে ওঠছে। আর অযোগ্যরাই কর্মক্ষেত্রে দূর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে ঘুষ দিয়ে চাকুরী নেয়।
সম্প্রতি কিছু কিছু ইসলামিক প্রতিষ্ঠান তথা সরকার অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরবী বিষয়ের শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। নিজেদের প্রতিষ্ঠান থেকে হাজারো শিক্ষার্থী অধ্যয়ন শেষে বের হচ্ছে কিন্তু আরবী বিষয়ে পড়ানোর যোগ্যতা কারো নেই। হাতেগোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ব্যতীত। যেমন তামিরুল মিল্লাত বা ঢাকা আলিয়া কিংবা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ব্যতীত। সেখানেও অপ্রতুল। ফলে আলিয়া মাদরাসার পরিচালনা কমিটি বা প্রধানগণ কওমী মাদরাসা থেকে ফারেগ হওয়া ছাত্রদের প্রতি নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন, যারা আলিয়ার সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে যারা আলিয়াতে আরবী বিষয় পড়ান তাদের অধিকাংশের শিকড় কওমী মাদরাসায়। কওমী মাদরাসা থেকে ভালভাবে দাওরা হাদীস পাশ করা ছাত্ররা সাধারণত আলিয়া মাদরাসার পড়াশোনাকে ঘৃণা করে। আর এমন মনোভাব তাদের অন্তরে ঢেলে দেয়া হয়েছে কাসের কিছু পাঠ্য “ফিরাকে বাতিলা” নামক বই পড়ানোর কারণে। কিছু সংখ্যক ছাত্র উস্তাদগণকে ফাঁকি দিয়ে আলিয়ায় পরীক্ষা দিয়ে আসছিল। বর্তমানে এই সুবিধাটা সরকারের পক্ষ থেকে একেবারেই বন্ধ। আগে ৯ম শ্রেণীতে সরাসরি রেজিস্ট্রেশন করার সুবিধা ছিল। বর্তমানে ইবতেদায়ী ৫ম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া ছাড়া উপায় নাই। কাজেই কওমী মাদরাসা পড়–য়াদের উপর আস্থা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের থেকে তো এখন নতুন করে কেউ আলিয়ার সার্টিফিকেট গ্রহণ করার জন্য পরীক্ষা দিতে পারবে না। যার ফলে দেখা যাচ্ছে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে কওমী পড়–য়া আলেমরা সাময়িক শিক্ষকতা গ্রহণ করছেন। কারণ তারা সরাসরি নিয়োগ দিতে পারছেন না। ইনডেক্স এর অভাব। সেই অভাব পূরণ করতে হলে আলিয়ার সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক। এতোদিন যারা পরীক্ষা দিতে পারে নাই তারা বর্তমানে আফসোস করে ভবিষ্যতেও কেউ চাইলে পরীক্ষা দিতে পারছে না। হতাশা প্রকাশ ছাড়া তাদের আর কিছুই করার নেই। ইস্ কেন যে আগে রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষা দিলাম না। এমনি পরিস্থিতিতে বিশেষ করে আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রয়োজন। কেননা সুপার বা প্রিন্সিপাল সাহেব আর কত আরবী পড়াবেন। নতুন অনেকেই আসেন শিক্ষকতা করতে, যদি বলা হয়, সেভেন-এইটের আরবী পড়াতে হবে। তখনই পিছু হটেন। অবস্থা বুঝেন! কামিল পাশ করে এসেছেন শুধুমাত্র আলফাতাহ গাইড বা শর্ট সাজেশন্স পড়ে।
আমার জানাশোনা একজন আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক অপর একজনকে পরামর্শ দিচ্ছেন “উৎকোচের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নের স্বার্থে এসব শিক্ষক নিয়োগ বাদ দেন। খোঁজেন কওমী ফারেগ আলিয়া থেকে সার্টিফিকেট গ্রহণকারী ভাল মেধাবী আলেম পাওয়া যায় কি না। কমিটির লোকদের পেট ভরালে কি হবে! প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর উন্নতি করে লাভ নেই, শিক্ষার উন্নতি করে শিক্ষার্থীর জীবনকে উন্নত করতে হবে”। কি আত্মঘাতী কথা! আত্মসম্মানে আঘাত লাগার মত । নিজেদের প্রতিষ্ঠান থেকে অসংখ্য ছাত্র পাশ করে বের হচ্ছে অথচ একজনও এমন যোগ্যতা সম্পন্ন ছাত্র তৈরী হচ্ছে না, যে আরবী বিষয় ভালভাবে পড়াবে। কওমীওলাদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে শিক্ষক নেওয়ার জন্য। এই যদি হয় প্রতিষ্ঠানগুলির শিক্ষার চিত্র তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আলিয়া মাদরাসাগুলিকে স্কুল ও কলেজে রূপান্তর করা ছাড়া কোন গতান্তর নাই। আরবী বিষয়টা হয়তো এক সময় উর্দূর মতো অতিরিক্ত বিষয়ের স্থানে জায়গা করে নিবে। কারণ একজন শিক্ষক তার বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ পর্যন্ত শিক্ষকতা করতে পারবেন। অতএব সকল প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের উচিত শিক্ষার মানকে উন্নীত করতে আপ্রাণ চেষ্ঠা করা। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে আইন শুধু থাকলেই হবে না, আইনের প্রয়োগও থাকতে হবে আর অধীনস্তদের মেনে নেওয়ার মত যোগ্যতা ও মানসিকতা থাকতে হবে। তবেই না শিক্ষার উন্নতি সাধন সম্ভব হবে।
বিষয়: বিবিধ
১২৪৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন