ইংরেজি টেলি-সংলাপের শেষাংশটা : আমার দেশের সৌজন্যে

লিখেছেন লিখেছেন নকীব কম্পিউটার ১১ নভেম্বর, ২০১৩, ০৬:৫০:৪৫ সন্ধ্যা

ইংরেজি টেলি-সংলাপের শেষাংশটা : বাংলায়।

হিলারি : আমি ভেবেছিলাম আমাকে এত দূর যেতে হবে না। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি ভুল ভেবেছিলাম। আপনি জানেন এবং আমরাও জানি কিভাবে আপনার সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ভুলে যাবেন না, নির্বাচনের পর আমরা বলেছিলাম, সেটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এবং আপনাকে সাহায্য করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী, আপনি জানেন দিল্লিতে আমাদের বন্ধুদের নির্দেশে কিভাবে ফলাফল আগেই ঠিক করা হয়েছিল। তারা যেভাবে চেয়েছিল সেভাবেই আমরা চলেছিলাম। প্লিজ, আপনি এটাও ভুলে যাবেন না যে, জেনারেল মইন যিনি আপনাকে ক্ষমতায় এনেছিলেন, তিনি এখন আমেরিকাতে আছেন এবং আপনি যতখানি কল্পনা করতে পারেন, তার চেয়েও বেশি এখন আমরা জানি। আমি বলছি না যে, এখনই আপনার কাছ থেকে আমরা দূরে সরে যাব। আমি শুধু ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন ইসু তুলে ধরছি।

হাসিনা : আমরা আপনার সমর্থন ও সাহায্য বিষয়ে জানি। আপনাকে খুশি রাখার চেষ্টা করব। দুশ্চিন্তা করবেন না। আপনার কথাগুলো মনে রাখব। এখন বলুন, কবে আমাদের দেশ সফর করতে আসবেন?

হিলারি : আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ। আপনি যে সময় দিলেন সেজন্য ধন্যবাদ।

হাসিনা : প্লিজ, প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে, আপনার মেয়েকে, জামাইকেও সঙ্গে নিয়ে আসবেন।

ততক্ষণে হিলারি ফোন ছেড়ে দিয়েছেন।

এখানে হিলারির কথায় কয়েকটি বিষয় ফুটে উঠেছে।

এক. তিনি প্রথমে হাসিনাকে আঘাত করতে চাননি।

দুই. আমেরিকা জানে কিভাবে শেখ হাসিনা ডিসেম্বর ২০০৮-এর নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন।

তিন. ওই নির্বাচনকে ‘ফৃ অ্যান্ড ফেয়ার’ (অবাধ ও সুষ্ঠু) সার্টিফিকেট দিয়ে আমেরিকা অভিনন্দন পাঠিয়েছিল হাসিনাকে সাহায্য করার জন্য।

চার. ইনডিয়ান সরকার সেই নির্বাচনের ফলাফল আগেভাগেই স্থির (পৃঅ্যারেঞ্জড) করেছিল।

পাচ. আমেরিকা সেটা জানতো এবং নতুন দিল্লির কর্মকর্তাদের ব্যঙ্গাত্মকভাবে ‘আওয়ার গুড ফ্রেন্ডস’ (আমাদের ভালো বন্ধুরা) রূপে বর্ণনা করেছেন হিলারি।

ছয়. শেখ হাসিনা, যিনি সবসময়ই মুখে সেনাবাহিনী সম্পর্কে খালেদা জিয়াকে সতর্ক করে দেন, তিনিই সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেন এবং ডিসেম্বর ২০০৮-এ সফল হন। হিলারি সরাসরি বলেছেন, হাসিনা যেন ভুলে না যান তাকে তদানীন্তন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ক্ষমতায় এনেছিলেন।

সাত. শেষে হিলারি আরো বলেছেন, হাসিনা যা কল্পনাও করতে পারেন না — তার সম্পর্কে এখন ওয়াশিংটন আরো বেশি জানে। হিলারির এই উক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই উক্তির পাশাপাশি বিবেচনা করতে হবে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার। এই ক্ষেত্রে কে বা কারা দুর্নীতিতে জড়িত ছিল এবং সেই দুর্নীতিতে ডলার লেনদেনের পরিমাণ কতো ছিল, তার আংশিক খবর ওয়াশিংটন সম্ভবত জানে।

বলা যায়, ২০১১ থেকে হাসিনা-ওয়াশিংটন দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং কালক্রমে এই দূরত্ব বেড়ে যেতে থাকে। ওয়াশিংটন বুঝতে পারে, যদিও হাসিনা নীতিকথা বলেন, তবুও তিনি কতোটা অনৈতিক। যদিও হাসিনা গণতন্ত্রের কথা বলেন, তবুও তিনি কতোটা স্বৈরতান্ত্রিক। যদিও হাসিনা জনগনের কথা বলেন তবুও তিনি কতোটা পরিবারতান্ত্রিক। এবং যদিও হাসিনা জনপ্রিয়তা দাবি করেন, তবুও তিনি কতোটা অজনপ্রিয়।

এখন শেখ হাসিনার ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বৈত আচরণ এবং চাতুরি ধরা পড়ে গেছে বিদেশে এবং দেশে। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সততা ক্রমেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে ২০০৭-এর তুলনায় আমেরিকা এবং ইইউসহ পশ্চিম, মধ্যপ্রাচ্য এবং দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোতে হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সমর্থন ও সহানুভূতি হারিয়েছে। যদিও হাসিনা তার ইসলামি তাশ খেলতে চেয়েছেন, তবুও তাতে ইনডিয়া ছাড়া আর কাউকেই তিনি পাশে রাখতে পারেন নি। দেশে এবং বিদেশে হাসিনা প্রায় একা হয়ে পড়েছেন। তাকে রক্ষার শেষ চেষ্টার জন্য ইনডিয়া এখন খোলামেলাভাবে এগিয়ে এসেছে। ইনডিয়ান মিডিয়া এবং ইনডিয়ান সাবেক ও বর্তমান ব্যুরোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে হাসিনাকে ক্ষমতাসীন রাখার ফর্মুলার নির্বাচন বিষয়ে জোরালোভাবে বলা হচ্ছে।

দিল্লি থেকে প্রকাশিত টাইমস অফ ইনডিয়ার ১ নভেম্বর ২০১৩-র সংখ্যায় সুবীর ভৌমিক বাংলাদেশে ইনডিয়ান সামরিক হস্তক্ষেপের ডাক দিয়েছেন। এতে মনে হতে পারে জানুয়ারি ২০১০-এ দিল্লিতে গিয়ে শেখ হাসিনা ইনডিয়ার সঙ্গে যে চুক্তি করে এসেছেন, তারই কোনো অপ্রকাশিত ধারায় ইনডিয়া বাংলাদেশে সেনা অভিযানের বৈধতা দাবি করবে। তোমরা মনে রেখ, ওই চুক্তি বিষয়ে শেখ হাসিনা সংসদে কোনো আলোচনা করেননি। এখন আর আলোচনার দরকার নেই। ইনডিয়ান সেনাবাহিনী যদি বাংলাদেশে অভিযান চালায়, তাহলে জনগন বুঝে যাবে ওই চুক্তিতে কি ছিল।

বিষয়: বিবিধ

১৪৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File