কাকের বাসায় কোকিলের ডিম: নারী চিত্রায়ন-1
লিখেছেন লিখেছেন নকীব কম্পিউটার ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৮:২২:১৬ রাত
শিরিন আমার সাবান আর তোয়ালেটা দিয়ে যাও তো। গোসলখানা থেকে চড়া গলায় শালিকাকে ডাক দেন সিরাজ মিয়া। সিরাজ মিয়া এই বাড়ীর বড় জামাতা। বিয়ে করেছেন ২ বছর হলো। মনে হয় এখনো নতুন। শশুর বাড়ীতে এলে নবাব সেজে যান। সব কিছু এগিয়ে দিতে হয় তাকে। নিজ হাতে পানের মধ্যে চুনটুকু লাগাতে পারেন না। প্রথম প্রথম তো বউকে সাথে নিয়ে আসতো। একটু পুরাতন হওয়ার পর থেকে শশুরবাড়ীতে একাই আসেন বিভিন্ন ছলছুতোয়। তার নজর এখন শালিকা শিরিনের দিকে। নিজের বউ থেকে অনেকটা সুন্দরী। টানা টানা চোখ। গোলগাল চেহারা। মাথায় লম্বা চুল। সব সময় নিজেকে পরিপাটি করে রাখে শিরিন।
বাবার সংসার তেমন স্বচ্ছল না হওয়ায় প্রাইমারীর পরে ২ ক্লাস পড়া হয়েছিল। চার বছর যাবত পড়াশুনা বন্ধ। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে ২ বছর হলো। বিয়েতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। সেই ধকল সামলে উঠতে পিতা মাতাকে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে। পাশাপাশি ছোট মেয়েটাও বিয়ের যোগ্য হয়ে উঠেছে। কি করবে, ভেবে কুল কিনারা পায় না, আমেনা বেগম ও তার স্বামী। ইদানীং বাড়তি মেহমানদারীর খরচটাও বেড়ে গেছে। বড় জামাই প্রায়ই বন্ধু বান্ধব নিয়ে বেড়াতে আসে। ২-৩দিন থেকে এর পার যায়।
বউয়ের অনুপস্থিতে সিরাজ মিয়া শালিকা শিরিনকে দিয়েই তার সমস্ত কাজ কাম করায়। নানা রকম উপহার দেয় দুলা ভাই। সেই লোভেও কিছুটা তাছাড়া নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেও খেদমত করে শিরিন। বড় বোন জামাইকে খুবই শ্রদ্ধা করে। সব সময় নিজেকে ঢেকে রাখার চেষ্ঠা করে। সিরাজ মিয়া আস্তে আস্তে শিরিনের মন যোগানোর চেষ্ঠা করে। কিভাবে কোন বাহানায় তাকে কাছে পাওয়া যায় সেই চেষ্ঠায় লিপ্ত সিরাজ মিয়া। ছোট খাট বিষয় নিয়ে শাশুড়ির সামনে মাঝে মাঝে তাদের দুজনের হাতাহাতি, খুনসুটিও হয়। মুক্তমনা শাশুড়ি কিছুই মনে করেন না এসব। হাতাহাতির সম্পর্কটা এক সময় দূর্বলতার দিকে এগোয়। কি যেন বলতে চায় শিরিন কে। শিরিনও বুঝতে পারে দুলা ভাইয়ের মনোভাব। এক সময় ওদের মন দেয়া নেয়া হয়ে যায়। একজন ছাড়া অন্য জন বাঁচে না। এদিকে সময় অনেকটা অতিবাহিত হয়। নদীর পানি সমুদ্রে গড়িয়েছে ইতিমধ্যে। দুজনেই রঙীন স্বপ্নে বিভোর। অজানার পথে পা বাড়ানোর চিন্তা করে দুজনে। কিন্তু ইতোমধ্যে শিরিনের গর্ভে বাচ্চা এসে গেছে। যেটা শিরিন বুঝতে শুধু। অন্য কাউকে কিছু সে বলে না।
মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে থাকে মা বাবা। ভাল একটা সম্বন্ধ আসায় আমেনা বেগম মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে।
আল আমিন একজন দিন মজুর। বেশ কর্মঠ একটি ছেলে। তার একটি দোষ হল যা রোজগার করে তার বেশিরভাগই সে জুয়াখেলায় ব্যয় করে। বৃদ্ধ বাবাও সারাদিন অন্যের বাড়ীতে কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে কোনরকমে দিনাতিপাত করেন।
সন্তান পিতা মাতার দেখাশোনা না করলেও তাদের একটা দায়িত্ব আছে সন্তানটি যাতে ভবিষ্যত জীবন সুন্দর ভাবে কাটাতে পারে তার একটা ব্যবস্থা করে যাওয়া। সকল মা বাবাই সেই চেষ্ঠা করে থাকেন। হাজার কষ্ট হলেও তারা তো জন্মদাতা। ছেলে নিমকহারামী করলেও মাতা পিতা সন্তানকে ভুলতে পারেন না। মা বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলেকে বিয়ে করাবেন। তারা ভাবছেন হয়তো ছেলেটি এই পথ থেকে ফিরে আসবে। বউ পেলে আর জুয়া খেলবে না। স্ত্রী ভালো হলে ছেলেটিকে কুপথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারবে।
সপ্তাহ খানেক ঘুরে ফিরে খুব সুন্দরী দেখে একটা পাত্রী পছন্দ হলো। পাড়ার সবাইকে সাথে নিয়ে তারা বউ নিয়ে বাড়ী ফিরে। বেশ কিছু জিনিসপত্র উপঢৌকনও পায় আল আমিন। খুব সুন্দর ভাবেই চলছে তাদের সংসার। পিতা মাতা থেকে এখনও পৃথকই তাদের থাকা খাওয়া। নিজে কোরআন শরীফ পড়তে না পারলেও বউকে কুরআন শিখানোর জন্য চেষ্ঠা করে আল আমিন। পাশের বাড়ীর হাওয়া বেগমকে ঠিক করে কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য। আকদের ১৫ -১৬ দিন পর থেকে নতুন বউ কুরআন শিখে আসছে হাওয়া বেগমের কাছে। শিক্ষিকা তাদের বাড়ীতে এসে কুরআন পড়িয়ে যান।
আজ কুরআন পড়িয়ে আসার পর হাওয়া বেগম তার ছোট বোনটিকে কাছে ডেকে নিয়ে বিড়বিড় করে যেন কি বলছে। প্রায় মাস খানেক হল বিয়ে হয়েছে আল আমিনের। অথচ বউটাকে আমার কাছে কেমন জানি মনে হয়। কিভাবে ওঠা বসা করে। নড়াচড়া করে খুব কষ্ট করে। মাটিতে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে। মনে হয় গর্ভবতী। ছোট বোনটি বলে, আমার মনে হয় তার স্বাস্থ্য একটু বেশি, তাই এভাবে উঠা বসা করে। বেশি বুঝিস না নাসিমা। স্বাস্থ্যবান মানুষ আমি দেখেছি। এমনভাবে নড়াচড়া সাধারণত গর্ভবতী মহিলারা করে থাকে।
সময়ের কাঁটা সামনে এগুচ্ছে । দেখতে দেখতে তিন মাস অতিবাহিত হল। এর মাঝে আল আমিন বউকে নিয়ে ২-৩ বার শশুরবাড়ীতে আসা যাওয়া করেছে। কোন কিছুই আঁচ করতে পারে না সে। তিন মাসের সময় স্ত্রী বায়না ধরছে- বাবার বাড়ীতে থাকবে কিছুদিন। আল আমিন বউয়ের মন রক্ষার জন্য তার বাবার বাড়ীতে দিয়ে আসে। সপ্তাহ খানেক পরে আল আমিন জানতে পারে তার স্ত্রী একটি সন্তান প্রসব করেছে। এই কথা এক কান থেকে অন্য কানে ছড়াতে ছড়াতে গ্রামের সবাই জেনে ফেলেছে। বিয়ের সাড়ে তিন মাসের মাথায় আবার সন্তান হয় কিভাবে। ঘটনার সত্যতা প্রমাণের জন্য আল আমিনের বাবা যান পুত্র বধূকে দেখতে।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন পুত্রবধূ পাশে একটি ফুটফুটে সন্তান। দূর থেকে শুধু এক নজর তাকিয়ে দেখলেন কোন কিছু বললেন না। মুখটা কালো করে মনে পাহাড়সম কষ্ট নিয়ে বের হয়ে আসছেন। পথিমধ্যে বেয়াইন সাহেবাকে পথ্য নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেখলেন। চার চোখের মিলন ঘটে। কি বলবেন কিছু হদিস পাচ্ছেন না। জেনে শুনে এমন একটি সর্বনাশ করতে পারলেন বেয়াইন সাহেবা। গলা শুকিয়ে কাঠ, কথা বলার ভাষা নেই আমেনা বেগমের মুখে। মাথাটা নিচু করে শুধু এতটুকু বললেন- আমরা যদি জানতাম তাহলে কখনো এমনটা হতো না। ‘ঘরের শত্রু রাবণ বন্দী’। এতটুকু বলে সামনের দিকে পা বাড়ালেন আমেনা বেগম।
বাড়ীতে এসে আলআমিনের বাবা ছেলেকে বলে, এই মেয়েকে তালাক দে। তোকে অন্যত্র বিয়ে করাব আবার। ছেলে নাছোড়বান্দা। তাকে ছাড়বে না।
... চলবে।
বিষয়: বিবিধ
২৩৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন