অনুসন্ধানী কর্মীকে ধন্যবাদ

লিখেছেন লিখেছেন ওমর বিশ্বাস ২৪ জুন, ২০১৪, ০৬:০৬:০৩ সন্ধ্যা

রাত দশটার কাছাকাছি। রিক্সার পাদানিতে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ হলো। ভাবলাম ইট বা পাথরের টুকরো ছিটকে এসে পড়েছে। একটু পড়ে পকেটে হাত দিয়ে দেখি মোবাইল নাই। আরো ভালো করে দেখলাম, সত্যিই নাই। কভারটা পকেটে রয়ে গেছে। মনে হলো তখন তাহলে মোবাইল সেটটা পড়ে গেছে। সেই আওয়াজই পেয়েছি।

ভালো করে খুঁজলাম পকেটে। চকলেট পর্যন্ত পাওয়া গেল। এতবড় একটা বস্তু শুধু পকেটে নাই। পাদানিতে ভালো করে দেখলাম। চোখ বড় বড় করে। আলো না থাকলেও আকাশের ধূসর আলোয় বোঝা যাচ্ছে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাদানিতে নিজের পা ঘষে ঘষে নিশ্চিত হতে চাইলাম।

আগের দিন রেলগেটের কাছে এক রিক্সা থেকে দুজন যাত্রি নেমে গেল। রিক্সাওয়াল রিক্সাটাকে সাইড করছে। একজন পথচারী রিক্সার পাদানিতে একশলা সিগারেট পড়ে থাকতে দেখে রিক্সাওয়াকে জানালো। আমি খুব ভালো করে তবু দেখছি কিছু শক্ত বস্তু পায়ে ঠেকে কিনা।

একটু দ্বিধা ছিল। রাতের বেলা, তার উপর বৃষ্টিতে জায়গায় জায়গায় গর্ত হয়ে সে সব জায়গায় পানি জমে আছে। এলাকাটাও অন্ধকার। সেটটা পাওয়া কি সম্ভব? তবু রিক্সাওয়ালাকে বললাম, একটু ঘুরাও, আমার সেটটা পড়ে গেছি। একটু খুঁজে দেখি পাওয়া যায় কিনা?

বাড়ির পথে দুই ভাগ রাস্তা ইতিমধ্যে এসে গেছি। রিক্সাওয়ালা কোনো কথা না বলে রিক্সা ঘোরালো। তাকে বললাম যদি পাওয়া যায় তো ভালো, একটা চেষ্টা করে দেখি। আমার ভিতর দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করলেও সে খুব আন্তরিকতার সাথে আস্তে আস্তে রিক্সা চালায় আর খুঁজতে থাকে। আমি ভাবছি পাব কি না, ফেরত যাব কি না। কিভাবে বাসায় বলি আমার নম্বরে রিং দিয়ে দেখতে। কাছাকছি দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনো মোবাইলের দোকানও চোখে পড়ে না। তার কাছে কোনো মোবাইল ফোন আছে কি না জানতে চাইলে সে না বলে খোঁজার কাজে মনোযোগ দিল।

তাকে একবার বললাম, খুঁজে লাভ নেই, চলো ফিরে যাই। কথাটায় অবশ্য জোর ছিল না। মনে আশাও নাই কষ্টও নাই। নিরুদ্বিগ্ন আমি। মনে মনে ঠিক করলাম যদি পাই তাহলে তাকে পুরস্কৃত করব। না পেলে তার কষ্টের মূল্য দেব।

দুজনেই চোখ বড় বড় করে সতর্কতার সাথে খুঁজতে থাকি। অন্যান্য রিক্সা বেল বাজাতে বাজাতে ওভার টেক করে চলে যায়। বিপরীতমুখী রিক্সাগুলো স্বাভাবিকভাবেই যেতে থাকে। সেই দুইভাগ রাস্তার একভাগ খুঁজলাম। তাকে দুর্বল কণ্ঠে বললাম, রিক্সা ঘুরাও। এতদূর হবে না। আর পাওয়া যাবে না। আবার বললাম, দেখি যেতে যেতে একবার চেষ্টা করে।

খুঁজতে খুঁজতে, চার চোখের দৃষ্টি রাস্তায় ফেলতে ফেলতে অর্ধেক পথ পিছনে চলে এসেছি। একপর্যায় মনে হলো এখানে হবে না। তাকে জানালাম যেখানে খোয়া ওঠানো, রাস্তা খারাপ বেশি সেদিকে হয়ত পড়ে থাকতে পারে। ওই জায়গায় আমি আওয়াজ শুনেছি। ইটের টুকরা বা এজাতীয় কিছু পাদানি কাঠের উপর পড়ার শব্দ শুনেছি।

তাকে আবার রিক্সা ঘুরাতে বললাম। ফেরত যেতে যেতে দেখব পাওয়া গেলে তো গেল না গেলে নাই। সে রিক্সা ঘোরালো ঠিকই। কিন্তু এখন আরো বেশি সতর্ক।

যখন প্রথম পকেটে হাত দিয়ে বুঝেছি সেটটা নাই তখন ইন্নালিল্লাহ পড়েছি। রিক্সা এরই মধ্যে ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমি একবার রাস্তার দিকে তাকাই একবার তার দিকে তাকাই। খুঁজব কি, তার দিকেই আমার দৃষ্টি। তার অঙ্গভঙ্গি আর হাবভাব আমাকে আকৃষ্ট করছে। সে খুবই সতর্কতা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। আমার চেয়েও বেশি আত্মবিশ্বাসী। সাবধানী। সে যেন তার নিজের জিনিসই খুঁজছে। ঝুঁকে পড়েছে সামনের দিকে। সিটে না বসে রডের উপর নিতম্বকে বাঁকা করে বসিয়ে দিয়েছে।

আমি নির্লিপ্ত। তবে এবার আন্তরিকতার সাথে ‘ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্নাইলাহি রাজেউন’ এবং ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’ পড়লাম।

যেখানে আওয়াজটা পেয়েছিলাম সে জায়গাটা তাকে দেখিয়ে বললাম হলে এর মধ্যে হতে পারে। আগেই তাকে বলেছিলাম সেটটা ছোট ও কালো দেখতে। একটা কালো কিছু দেখে তাকে থামাতে বললাম। সে নেমে হাত দিয়ে দেখলা ইটের টুকরা। চিন্তা করছি রাস্তায় তাও আলো-আাঁধারিতে স্পষ্ট-অস্পষ্ট কিছু বোঝা যায়, দেখা যায়, কিন্তু যেসব জায়গায় পানি সেখানে পড়লে কিভাবে বুঝব? অন্ধকারে পানিতে ঢিলই বা মারব কিভাবে?

কয়েক গজ সামনে গিয়ে রিক্সা হঠাৎ থেমে গেল। কি হয়েছে, কিছু কি? সে নামলো। এরই মধ্যে পিছনের রিক্সা অভ্যাসবশত গুতা দিয়ে ব্রেক করল। বিরক্ত হলেও কিছু করার নাই। আমার মাথা যথেষ্ট ঠান্ডা। মোবাইল সেট না পেলেও উত্তেজিত হবো না ঠিক করেছি। হতাশও হবো না। পিছনের রিক্সাওয়ালাকে বললাম, পাস কেটে চলে যেতে। সে তার হ্যান্ডল বাঁকা করে দিয়েছে।

আমার অনুসন্ধানী কর্মী অল্প অল্প পানিতে হাত দিয়ে কিছু একটা উঠালো। একবার হাতের বস্তুটাকে দেখে নিয়ে আমার দিকে তাকালো। চেহারা প্রাপ্তির উজ্জ্বল্য। বলল, পেয়েছি! এটা না!! চোখে মুখে পরিস্কার আনন্দের ছাপ। আমি বস্তুটি হাতে নিলাম। নিশ্চিত হলাম এটা মোবাইল সেট এবং অতপর নিশ্চিত হলাম এটা আমারই। খালি হাতটা উঠে গেল তার গায়। হাত বুলাতে বুলাতে তাকে ধন্যবাদ দিলাম। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে পেয়েছি বলে জানালাম। তার কষ্টের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম এবং মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম।

ঠিক করেছি এ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আবার খোঁজ করব।

তাকে জানালাম এর আগে একবার পাবলিক বাসে দুই দুষ্ট চোর সেটটা নিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু হজম করতে পারে না। আমি মুহূর্তের মধ্যে টের পেয়েছিলাম সেটটা কেউ নিয়ে নিয়েছে। আওয়াজ দিয়েছিলাম বাসে। সেটটা ফেলে দিয়েছিল সিটের নিচে। সেটটা লক থাকা অবস্থায় বন্ধ করা যায় না। তারা হয়ত তাই বন্ধ করতে পারেনি। একজন আমার কাছে নম্বর চাচ্ছিল যাতে রিং দিতে পারে। যদি রিং বাজে তাহলে তো ধরা পড়ে যেতে পারে। হয়ত সেই ভয় তাদের ছিল।

এর মধ্যে পরবর্তী স্টপেজে এসে গেছে বাসটি। আমি মাত্র আগের স্ট্যান্ড থেকে উঠেছি। একজন যাকে নিতে দেখেছে তার দিকে আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করে অভিযুক্ত করছিল। ওই দুইজনকে আমি বাসে উঠেই দেখেছি। এখনো ভাসছে চোখে তাদের চেহারা পোশাক আশাক। সন্দেহ করার মতো কোনো সুযোগ নেই। কেউ বুঝতে পারবে না প্রথমে যে তারা এরকম কাজ করতে পারে।

তবে তার দাবি জোরালো করতে না করতে দুজন আস্তে বাস থেকে নেমে যায়।

২৪.০৬.২০১৪

বিষয়: সাহিত্য

১১৭৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

238415
২৪ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১১
নিউজ ওয়াচ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৪ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৩
184869
ওমর বিশ্বাস লিখেছেন : ধন্যবাদ।
238418
২৪ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মোবাইল কি সত্যিই গেছে না তাও গল্প!!!
মোবাইল ফোন পকেটে রাখলে সাবধান থাকা উচিত রিকশায় কারন পা এমন পজিশনে থাকে যে পকেটের মুখ খোলা থাকে।

কিন্তু কবিতা ছেড়ে আবার গল্প ধরলেন যে???
২৪ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৩
184868
ওমর বিশ্বাস লিখেছেন : কবিতা ছাড়িনি। কবিতার জন্য চট্টগ্রাম দাওয়াত পেয়েছি ধোলাই খাওয়ার জন্য!! বৃষ্টির উপর কবিতা লিখে এই তো সেদিনের ঘটনা।
২৪ জুন ২০১৪ রাত ০৮:২৪
184898
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কবে অাসলেন বা আসছেন??

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File