শেষ বছরে বেপরোয়া সরকারি দল

লিখেছেন লিখেছেন ইকবাল ১৮ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৪:১১:৩২ বিকাল

ক্ষমতার শেষ বছরে এসে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, দলীয় সংঘাত গত চার বছরের প্রতিদিনকার চিত্র হলেও শেষ বছরে এসব ঘটনা যে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে—গতকাল তা আরও স্পষ্ট হয়েছে।

ঢাকায় গতকাল গণপূর্ত অধিদফতরের ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার টেন্ডার দখল করার জন্য আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা ঠিকাদারদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে, ঠিকাদারদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে এবং টেন্ডার ডকুমেন্টস ফেলে দিয়েছে। অন্যদিকে তদবির অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে গুলি করার হুমকি দিয়েছেন ময়মনসিংহের সরকারি দলের বিতর্কিত সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন আহমেদ।

এদিকে গতকাল ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার সংগঠন ছাত্রলীগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিনাজপুরে হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাক্রমে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ১৫ ছাত্র আহত হয়েছে। শুধু বিরোধী সংগঠনের ওপর হামলাই নয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা নিজেদের মধ্যেও তুমুল মারামারি করেছে।

গণপূর্ত অধিদফতরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে গতকাল সেগুনবাগিচার সরকারি ১২ তলার ২ নম্বর ভবনের ১২ তলা কার্যালয়ে সরকারদলীয় ক্যাডাররা ঠিকাদারদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এসব ক্যাডার প্রতিদ্বন্দ্বী ঠিকাদারদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে এবং টেন্ডার ডকুমেন্টস ফেলে দিয়েছে। ঠিকাদারদের আটকে রাখার সংবাদে গণপূর্তের স্থানীয় কার্যালয়ের বিভিন্ন অফিসকক্ষে তল্লাশি চালিয়েছে র্যাব সদস্যরা। কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে র্যাব কাউকে উদ্ধার কিংবা আটক করতে পারেনি।

তদবির অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. আফসারুল আমিনের দফতরের এক কর্মকর্তাকে গতকাল গুলি করার হুমকি দিয়েছেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। তিনি এ সময় নিজে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার কথাও বুক ফুলিয়ে বলে গেছেন। এর আগে তিনি নিজ এলাকার জনগণকে লক্ষ্য করে গুলি করে ধিকৃত হয়েছিলেন।

১২ জানুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল ছাত্রদল আয়োজিত মিছিলে গুলিবর্ষণসহ সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। এ সময় ইবি ছাত্রলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন পুলিশের শটগান ছিনিয়ে নিয়ে তা দিয়ে ছাত্রদল সদস্যদের গুলি করে। সংঘর্ষে অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে এক ছাত্রদল নেতাকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এসময় অন্তত ১২ রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্স ও ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় শিবিরকর্মী, পথচারী ও এলাকাবাসীসহ ১৫ জন আহত হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দু’ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে বুধবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে দু’গ্রুপের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। বাকৃবি ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

বিষয়: রাজনীতি

৯৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File