গণহত্যা রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ : শওকত মাহমুদ
লিখেছেন লিখেছেন আবু আশফাক ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০৯:৪৮:২৬ সকাল
সময়টা কি একাত্তরের মার্চের মতো নয়? জল্লাদ ইয়াহিয়ার বাহিনী তখন মুক্তিপাগল, গণতন্ত্রপিপাসু বাংলাদেশিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আজ হাসিনা সরকারের র্যাব-পুলিশ ও সীমান্ত রক্ষক বিজিবি নিরস্ত্র জনগণের ওপর নির্বিচারে গুলি-গ্যাস চালাচ্ছে। তারা একদিনে অর্থাত্ ২৮ ফেব্রুয়ারির কালো দিনে অর্ধশতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। আমরা কি এমন কখনও দেখেছি? না, একাত্তরের উত্তাল ফেব্রুয়ারি-মার্চেও নয়। শহরে শহরে র্যাব-পুলিশকে বিনা উস্কানিতে শত শত রাউন্ড গুলি ছুড়তে দেখিনি। কিন্তু ২০১৩-তে দেখছি। কী জন্য? স্রেফ একজনের প্রধানমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখতে। সর্বত্র শুরু হয়েছে গণহত্যা। ধরে নিয়ে কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করছে। জানি না কোথায় গণকবর দেয়া হচ্ছে। বা কোন পুকুরে লাশের সারি ডুবিয়ে রাখা হয়েছে। জেলবন্দী বা রিমান্ডে আটকদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার হচ্ছে। খুনি স্টালিনের নব্য অনুসারী বোধহয় গোটা বিশ্বে এখন একমাত্র বাংলাদেশে। স্টালিন বলতেন, ‘হত্যা সব সমস্যার সমাধান’। বন্দীদের কাছ থেকে যারা স্বীকারোক্তি নিত তাদের স্টালিন বলত, There is a man, there is a problem. No men no problem (Arguably Essays; Christoper Hitchens). সোভিয়েত ইউনিয়নের নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক আলেকজান্ডার সোলসেনিিসন বলেছিলেন, স্টালিন প্রায় বলতেন এক ব্যক্তির মৃত্যু বিয়োগান্তক ঘটনা; কিন্তু ১০ লাখের মৃত্যু একটি পরিসংখ্যান (Statistics) মাত্র। বাংলাদেশে এখন কার নির্দেশে, ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি বা জুডিশিয়াল ইনকোয়ারির কথা না বলাই ভালো, এমন হত্যাযজ্ঞ হচ্ছে? একজন পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, ‘এখন পুলিশ গুলি খরচ না করলে শাস্তি পেতে হয়। আপনি দেখছেন, তোপখানার মোড়ে দাঁড়ানো পুলিশ যদি বায়তুল মোকাররম থেকে আসা মুসল্লিদের ওপর গুলি শুরু করে তখন হাইকোর্টের মোড়ে, কাকরাইল মোড়ে, প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়ানো পুলিশও গুলি ছুড়তে শুরু করে। কেন? এক, গুলি খরচ না করার শাস্তির ভয়ে। দুই. সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে। আগে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের নিয়মেই যাচ্ছে না পুলিশ।’ মার্চের এই নতুন খান- সেনাদের সঙ্গে রাজাকার হিসেবে যোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বাম দলগুলোর গুণ্ডারা এবং শাহবাগের নেতৃত্বে থাকা ডিজুস জেনারেশনের একটা অংশ, যাদের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোকিত তরুণ সমাজের কোনো মিল নেই। জাতীয় কবি নজরুলের সেই বাণী স্মরণ করুন—পথের ঊর্ধ্বে ওঠে ঝড়ো বায়ে পথের আবর্জনা।
তাই বলে ওরা ঊর্ধ্বে উঠেছে কেহ কভু ভাবিও না।
গণতন্ত্রের মুখোশে ফ্যাসিবাদ আজ নাগিনীর বিষাক্ত ফণা তুলেছে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের রক্তাক্ত জন্মের পেছনে আপামর জনসাধারণের ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিরোধের আগুন ছিল। আজ এক ধাপ পিছিয়ে সেদিনকে স্মরণ করে দু’ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের সেই বীরত্বগাথা হঠাত্ মূর্তিমান ইতিহাস হয়ে আজ বাংলাদেশের কাছে সরে এসেছে। মনে হতে পারে ধর্ম, দেশ, গণতন্ত্র বোধহয় যায় যায়। কিন্তু না, প্রতিরোধে জেগে উঠেছে বাংলাদেশ। এই অগ্রগমন সময়ের দাবি। চলুন এগোই। ববর্রতার প্লাবণে বাংলাদেশকে নিমজ্জিত করার চক্রান্ত সফল হয়নি।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে শনিবার যে বিশাল শান্তিপূর্ণ গণমিছিল হলো, তা সেই রুখে দাঁড়ানোর চেতনা থেকেই। কিন্তু সরকার বাধা দিল। চক্রান্ত অনুযায়ী মিছিলের ওপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বোমা ফেলল, গাড়ি ভাংচুর করল। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো পুলিশের গুলি, টিয়ারগ্যাস। মৌচাকে বোমা ফাটাল, শান্তিনগর, মালিবাগে পুলিশের ববর্রতা শুরু হলো। এ কেমন কথা? উল্টো বিএনপি নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক হানিফ খোয়াব দেখেছেন, ২/১ দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। ওই গণমিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা বা বোমা ফাটানো তো হয়নি। বিশাল এবং সফল মিছিল যারা করে, তারা তো নিজের মিছিল পণ্ড করে না। পুলিশের আক্রমণে খিলগাঁও থানা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফ খান নিহত হয়েছেন। তার বাড়ি আমার এলাকা বুড়িচংয়ের লরীবাগ গ্রামে। অভিবাদন এই শহীদকে। আরও অনেকে সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কোথায়, কীভাবে বেঁচে আছেন জানি না।
বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড চলমান আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিরোধীদলীয় নেতা ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ও রায়কে যথার্থভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বলেছেন। ফ্যাসিবাদে অতিষ্ঠ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মুখর এবং হাসিনা সরকার ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় শাহবাগ মঞ্চের ব্লগারদের উচ্চারিত ইসলামবিদ্বেষে তীব্র ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের জনগণ দেশ রক্ষায় আওয়ামী সরকারকে বিদায়ের এক দফার দিকে যাচ্ছে। এই রোববার বগুড়ায় পুলিশের গুলিতে সাতটি প্রাণ ঝরেছে। সর্বত্র রাস্তায় নেমেছে সাধারণ মানুষ। সিংহাসন টিকিয়ে রাখতে চালানো হচ্ছে গণহত্যা। সেনা নামানো হয়েছে পরিস্থিতি শান্ত করতে। আবার সেনা বিষয়ে সংবেদনশীল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উল্টো কথা বলেছেন। গোটা বাংলাদেশ আজ ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। সড়ক পথে, রেল পথে অবরোধ আর অবরোধ। র্যাব-পুলিশের গুলি, সেনা প্রহরা, ১৪৪ ধারা, কারফিউ অথবা ইমার্জেন্সি কতটুকু রক্ষা করবে হাসিনা সরকারকে? টিভি খুললেই লাঠি হাতে অযুত জনতা এবং গুলিবর্ষণরত বিজিবি-র্যাব-পুলিশের ছবি। ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার এতো লোভ? ...................
পূর্ণ লেখার লিংক এখানে.......
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১১১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন