তুমি, আপনি, তুই : ফেসবুক ব্যবহারে কি আমাদের সৌজন্যতাবোধ লোপ পাচ্ছে?
লিখেছেন লিখেছেন আবু আশফাক ২৩ জুন, ২০১৪, ০১:২৭:০৫ দুপুর
মোবাইলেই ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। তবে এটি অল্প সময়েই মানুষের অপরিহার্য এক অনুসঙ্গে পরিণত হয়েছে। মোবাইলে কথা বলার অভ্যস্তদের যে বিষয়টি আমার ভালো লাগে তা হলো- রিং হলে সেটা ধরেই প্রথমে সালাম দেয়া। খুব কম লোকই আছেন যারা মোবাইল ধরে সালাম না দিয়ে কথা শুরু করেন। তবে এই সৌজন্যতাবোধটার প্রচলনে কাদের অবদান বেশি সেটা একটি বিতর্কীত বিষয়। তবে মোবাইল যে আমাদের সৌজন্যতাবোধ বাড়িয়ে দিয়েছে সেটা নিয়ে বোধ হয় কারো দ্বিমত নেই।
অন্যদিকে আমরা ফেসবুক ব্যবহারের দিকে তাকাতে পারি। ফেসবুক আজকাল প্রাইমারী লেবেলের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীও ব্যবহার করেন।
মোবাইলে একজন ইচ্ছা করলেই যে কারো সাথে কথা বলতে না পারলেও ফেসবুকে এটা অহরহ হয়ে থাকে। কিন্তু ফেসবুকের যে বিষয়টি আমাদের বিশেষ করে বাংলাদেশীদের জন্য বিব্রতকর সেটি হচ্ছে- এর অধিকাংশ ব্যবহারকারীদের সম্বোধনের ধরণ।
অনেকেই ইনবক্সে স্বল্প পরিচিত, অপরিচিত বা সদ্য পরিচিতি কাউকে শুরুতেই তুমি সম্বোধন করে থাকেন। আমি এমনও দেখেছি যে ব্যক্তি আমাকে তুমি সম্বোধন করছেন তিনি কম করে হলেও দুই দশকের ছোট। এটা সাধারণত দেখেছি পরিচিতদের ক্ষেত্রে। আবার অনেকের তথ্য ঘেটে দেখেছি যে, তার দেয়া তথ্যানুযায়ী কিশোর বৈ নয়।
কিন্তু সম্বোধনের ক্ষেত্রে তিনি তুমি ব্যবহারে অভ্যস্ত।
বাংলা ভাষায় 'আপনি', 'তুমি', 'তুই'র বিস্তৃত ব্যবহার আছে। এই শব্দগুলো ইংরেজীতে এক (you-ইউ) হলেও বাংলায় আলাদা অর্থ বহন করে। এই শব্দগুলো আমাদের ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধ, সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা এবং পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পরিচয় প্রকাশ করে। তুমি সম্বোধন টি অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্কের গভীরতা, নৈকট্য ও আন্তরিকতার উপর নির্ভর করে। তুই সম্বোধন তুচ্ছার্থে কিংবা ঘনিষ্ঠতা অর্থে ব্যবহৃত হয়। সহপাঠী বন্ধুদের তুই বলতে পারার মাঝে ঘনিষ্ঠতা বা তাচ্ছিল্য প্রকাশের একটা স্টেজ অতিক্রম করা বুঝায়। কাউকে তুই-তোকারী করতে পারলে যেন আমাদের অনেক বেশী বড়ত্ব প্রকাশ হয়। ক্ষেত্র বিশেষে তুমি বা তুই অনেক আন্তরিক শোনায়। ছোট বাচ্চাকে তুমি বলার মাঝে আদর প্রকাশ পায়। সম্পর্কের ঘনিষ্টতা বা পুর্বানুমতি ছাড়া কাউকে তুমি সম্বোধন অনেক ক্ষেত্রেই বিব্রতকর হয়ে দাড়ায়।
সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রফেসর বি চৌধুরী একবার একটা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তা হল- ‘অপরিচিতকে আপনি বলুন’। জানিনা তার এই আন্দোলনের মুলে কোন চেতনা কাজ করেছিল। তবে তার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আমার ভালো লেগেছিল।
তাই আসুন! আমরা আমাদের গর্বের সৌজন্যতাবোধটার লালন করে অপরিচিতকে আপনি বলে সম্বোধন করি। হোক সেটা সামনাসামনি বা ফেসবুক।।
বন্ধুদের ফেসবুকে ব্যাপকভাবে শেয়ার বা কপি-পেস্ট করার অনুরোধ করছি।
- নাঈম
বিষয়: বিবিধ
১৬৫৭ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব ভালো লাগলো!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন