আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও বাংলাদেশে নারী নির্যাতন চিত্র

লিখেছেন লিখেছেন আবু আশফাক ০৮ মার্চ, ২০১৪, ০২:০৮:১৭ দুপুর

আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রতি বছর ৮ মার্চ তারিখে পালিত হয়। সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ্য হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক প্রকার হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটি বেশি গুরুত্ব পায়।



ইতিহাস

এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ সালে খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৪

'অগ্রগতির মূলকথা, নারী-পুরুষ সমতা' প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ বছরের নারী দিবস পালিত হচ্ছে। প্রতিবছরের মতো নারী দিবস পালনে বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশ ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। প্রত্যেক দেশ তার নিজ সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধ থেকে নারী দিবস উদযাপন করে। বিশ্বের অনেক দেশে নারী দিবসে সরকারি ছুটি থাকলেও বাংলাদেশে এই দিনটিতে নেই কোনো ছুটি। তবে নানামূখী কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে বেশ আড়ম্বরেই পালিত হয় দিবসটি।



বাংলাদেশে নারী নির্যাতন চিত্র

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পেক্ষাপটে আজ প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতৃ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীর পদচারণা থাকলেও আজও পরিবার থেকে রাষ্ট্র অবধি কোথাও নারীরা নিরাপদ নয়।

৮ মার্চ সারা বিশ্বে যখন নারী দিবস পালন করা হচ্ছে, অন্যদিকে হয়তো কোন নারী সহিংসতা বা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ঘরে, ঘরের বাইরে, রাসত্মাঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বত্রই নারী নিরাপত্তাহীন। নিরাপত্তা বিধানে দায়িত্বরত পুলিশবাহিনী দ্বারাও সহিংসতার শিকার হচ্ছে নারী। এ পরিস্থিতি উত্তরনের জন্য অনেকদিন থেকেই সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানান পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে এতো পদক্ষেপ সত্ত্বেও নেই বাস্তবায়ন।

২০১৩ সালে মহিলা পরিষদের এক জরিপে দেখা যায় দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৪হাজার ৭শ ৭৭টি। যৌন নির্যাতন, বাল্য বিবাহ, নারী আত্মহত্যা,শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অত্যাধুনিক যুগেও নারীর প্রতি এ ধরনের বর্বরতা চলছে।

এছাড়া সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশে প্রথমবারের মতো নারী নির্যাতন নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি জরিপ চালিয়েছে। ‘ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন (ভিএডব্লিউ) সার্ভে ২০১১’ নামের এই জরিপে নারী নির্যাতনের একই চিত্রই উঠে এসেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনের বলা হয় নারীরা বাইরের থেকে নিজ ঘরে অনেক বেশি নির্যাতিত হয়। তাহলে নারী উন্নয়ন ঘটলো কিভাবে? এই প্রশ্ন থেকেই যায়।



এই বাস্তবতাকে মোকাবিলা করতে হলে পরিবার ও সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি অপরাধের বিচার ও দোষীর শাস্তির নিশ্চয়তা বিধানে রাষ্ট্র যাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে সে বিষয়েও প্রত্যেককে স্বোচ্চার হতে হবে।

নারী নিজে বা তার পরিবার সহিংসতার কথা সহজে প্রকাশ করতে চায় না, প্রকাশ করলে বা বিচার চাইলে তাদেরকেই নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় এবং নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। তারা নিজ পরিবার, সমাজ ও প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় সহমর্মিতা, সমর্থন, সহযোগিতা পায় না। আসুন, আমরা সহমর্মী ও সমব্যথি হয়ে সহিংসতার শিকার নারীর পাশে দাঁড়াই, নারীর উপর সহিংসতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলি, সহিংসতার ঘটনা লুকিয়ে না রেখে দোষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে এবং বিচার পেতে সহিংসতার শিকার নারীকে সহযোগিতা করি।

বিষয়: বিবিধ

১৯০৭ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

188867
০৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:২৫
নেহায়েৎ লিখেছেন : ব্যাপক তথ্যবহুল লেখার জন্য আপনার অনেক ধন্যবাদ পাওনা।
০৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:২৯
140106
আবু আশফাক লিখেছেন : তবে এধরণের লেখার পাঠক কম, এটাই সমস্যা। ধন্যবাদ আপনাকে।
188871
০৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৪৩
হতভাগা লিখেছেন : কোটা ও আইন করার পরেও নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে !

বাংলাদেশের মত পৃথিবীর আর কোথাও কি নারীদের জন্য এরকম লিঙ্গ বৈষম্য মূলক আইন ও কোটা রাখা হয় ?
০৮ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৯
140153
আবু আশফাক লিখেছেন : ঠিকই বলেছেন। শুধু নারী বিষয়ক কোটা নয়, বরং বাংলাদেশের মতো এমন কোটা পদ্ধতি আর কোনো দেশে আছে বলে মনে হয় না।
188879
০৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:৫৭
অজানা পথিক লিখেছেন : এই বাস্তবতাকে মোকাবিলা করতে হলে পরিবার ও সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি অপরাধের বিচার ও দোষীর শাস্তির নিশ্চয়তা বিধানে রাষ্ট্র যাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে সে বিষয়েও প্রত্যেককে স্বোচ্চার হতে হবে। যথার্থ বলেছেন
০৮ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:০০
140154
আবু আশফাক লিখেছেন : ধন্যবাদ সুচিন্তিত মতামতের জন্য।
188892
০৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:১৭
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : অনেক তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট। সিবিএফ এর পেজ এ শেয়ার করা হলো।
https://www.facebook.com/bdcbf/posts/605513929535673

https://www.facebook.com/bdcbf/posts/605513929535673
০৮ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:০০
140155
আবু আশফাক লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ প্রেসিডেন্ট।
188899
০৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৩
বেআক্কেল লিখেছেন :
বাঙ্গালী মাইয়ারা স্বাধীনতা পাইছে বইলাই তো লুলু ফেরদৌস মঙ্গলে যাইবার চাণ্স পাইয়াছে।
০৮ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:০০
140156
আবু আশফাক লিখেছেন : ঠিকই তো বইলাচেন!!!!!!!!!!!!
188940
০৮ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৫০
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : নারী অধিকারের কথা বলে চিল্লা চিল্লি করে আসলে তারা কি চায় আমরা জানি ,আপনার লিখা পড়ে ভালো লেগেছে ভাইয়া।
০৯ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৪২
140416
আবু আশফাক লিখেছেন : ধন্যবাদ শাহীন ভাই। জামাল ভাইয়ের সাথে আপনার গ্রুপ ছবি ভালোই লাগলো!!
189012
০৮ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:২৪
সজল আহমেদ লিখেছেন : প্রিয়তে রাখলাম।
০৯ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৪২
140417
আবু আশফাক লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।
189031
০৮ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৪২
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লেগেছে।
০৯ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৪২
140418
আবু আশফাক লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইজান।
189109
০৮ মার্চ ২০১৪ রাত ১১:২৮
জোবাইর চৌধুরী লিখেছেন : তথ্যবহুল আপনার এই লেখাটি পডে অনেক ভালো লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে।
০৯ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৪৩
140419
আবু আশফাক লিখেছেন : ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
আপনাদের গ্রুপ ছবিতে আপনাকে এই নিক ছবির চাইতে আরো ইয়াং মনে হচ্ছে!!!!!!!
০৯ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৪১
140648
জোবাইর চৌধুরী লিখেছেন : হা হা হা..... আপনি কি আমাকে বুড়ো বানিয়ে ফেলতে চান?
১০
189284
০৯ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:২০
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : দারুন একটি লেখা। কিন্তু এই ধরনের লেখাগুলো স্টিকি না হওয়ার পিছনে কারন খুঁজে পাই না। কালকে যেহেতু ৮মার্চ ছিল...
১১
189320
০৯ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:৩৮
১২
189598
০৯ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:১৫
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : চমৎকার তথ্যবহুল পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ Rose Rose Rose

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File