উপজেলা নির্বাচন : বিএনপি – জামায়াতের নাকি জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জ?

লিখেছেন লিখেছেন আবু আশফাক ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০২:৩৯:০৯ দুপুর

যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট সংবাদকর্মী শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ এর বস্তুনিষ্ঠ লেখাগুলো আমার ভালো লাগে। আমার মতো আরো অনেকেরই ভালো লাগবে বলেই মনে করি। তিনি সাধারণত দেশ-জাতির স্বার্থে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী দলগুলোর সফলতা-ব্যর্থতা, ভুলত্রুটিসহ দিক নির্দেশনামূলক কলাম লেখেন। তিনি সম্প্রতি শেখ নিউজ ডটকম-এ ১৯ দলীয় জোটের উপজেলা নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে একটি সুচিন্তিত মতামত পেশ করেছেন। সচেতন পাঠকের মনের খোরাক হবে মনে করে লেখাটি শেয়ার করলাম।[

উপজেলা নির্বাচন : বিএনপি – জামায়াতের নাকি জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জ?

----------------শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ

দেশে হঠাৎ করেই সরকার বিরোধী রাজনীতি জনগনকে বেকুব বানিয়ে উল্টা স্রোতে চলে যাওয়ায় এক অস্বস্তিকর গুমোট পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের লাশের উপর তৈরি হওয়া আন্দোলনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে উপজেলা নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর যোগ দেয়ার বিষয়টি শেখ হাসিনার গোঁয়ার্তুমির কাছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ১৮ দলের পরাজয় এবং ভারতীয় আধিপত্যের কাছে বশ্যতা স্বীকার বলেই দেশপ্রেমিক জনগণ মনে করছে। যদিও এ বিষয়ে ঐ দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন কৈফিয়ত থাকতে পারে, কিন্তু জনগণের জীবনের চেয়ে বড় হয়ে যাওয়া গদির রাজনীতির এ চক্ষুলজ্জাহীন অবস্থান রাজনৈতিক এক নয়া মাইলস্টোন বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে। এতেও সব শেষ নয়। বিএনপি’র তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং ছাত্র ও যুব সংগঠনের অনেকেই এখন তাকিয়ে আছে মনোনয়নের ব্যাপারটি দেখতে। ত্যাগীদের বদলে সুবিধাবাদীদের মনোনয়ন বিএনপি’র জন্য একটি রাজনৈতিক বিপর্যয় বয়ে আনবে বলে তারা জানিয়েছেন।

এদিকে জামায়াতে ইসলামী নিজেদের নেতাদের ফাঁসির দড়ির কাছে ফেলে রেখে উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি জামায়াতের অনেককেই বিস্মিত করেছে। দলীয় কঠোর শৃংখলার কারনে অনেকেই এ বিষয়ে মুখ না খুললেও এক প্রকার চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে দলের অভ্যন্তরে। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে যাওয়াকে অনেকেই আন্দোলনে আত্মাহুতি দেয়াদের প্রতি অবমাননা বলেই মনে করছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে নিরস্ত্র কর্মীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে আবার সেই অন্যায়কারীদের সাথেই তাদের অধীনে নির্বাচন ইসলামী আন্দোলনের সাথে সাংঘর্ষিক বিবেচনা করছে জামায়াতের সচেতন একটি অংশ। এদের দ্বারা অদুর ভবিষ্যতে আবারো দলীয় বিভাজন দেখা দিতে পারে রন কৌশলের এ বিতর্কিত অবস্থানের কারনে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি ভোটার বিহীন নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে রাজনীতিতে নিজেদের ধরে রাখতেই নির্বাচনের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এতে অবৈধ শেখ হাসিনার সরকারকে বৈধতা দেয়া হয়ে যাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। সেই সাথে অবৈধ নির্বাচন সম্পন্নকারী নির্বাচন কমিশনকেও বিএনপি ও জামায়াত সরাসরি বৈধতা দিয়েই মেনে নিচ্ছে। এটি বিএনপির রাজনীতির জন্য এক বিরাট চ্যালঞ্জ হয়ে আসছে। এই মেনে নেয়ার সাথে নিরস্ত্র নাগরিক ও দলীয় নেতা কর্মীদের সরকারী বাহিনীর হাতে অব্যাহত নিহত হওয়াকে কোন আঙ্গিকে মূল্যায়ন করা হবে তা নিয়েও বিএনপির ভেতরে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সবচেয়ে মারাত্মক যে আন্তঃদলীয় কোন্দল সামনে আসছে তা হচ্ছে এই উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে। উপজেলা পর্যায়ের নেতা কর্মী যারা সকল আওয়ামী বিরোধী আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নির্যাতিত হয়েছেন, জেল জুলুম পেয়েছেন, নিজেদের সম্পদ হারিয়েছেন তাদের প্রত্যাশা মনোনয়ন তাদের ভেতর থেকেই দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে তারা আন্দোলনের বাইরে থাকা দলীয় সুবিধাবাদি চক্রটিকে মনোনয়ন দেয়া কোন ভাবেই মেনে নেবেন না বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন। বিএনপি যদি এ ক্ষেত্রে টেকনিক্যালি বলে যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় নয়, তাতেও বিএনপি’র হাইকমান্ড এ অসন্তোষ থামাতে পারবে না। কারন অলিখিত মনোনয়ন কাকে দেয়া হলো এটা জানতে বিশেষজ্ঞ হতে হবে না। এর বাইরেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন যদি দলীয়ই না হবে তবে বিএনপি’র এতে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়ারও প্রয়োজন ছিল না বলে তারা মনে করেন। এ বিষয়গুলোর উপর আগামী দিনে বিএনপির রাজনৈতিক সফলতা ব্যর্থতা নির্ধারিত হবে।

দলীয় হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে কেউ হয়তো সাহস করে কিছু বলবে না; কিন্তু নির্বাচন পূর্ব আন্দোলনের মতই সামনের দিনগুলোতে কর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা থাকবে বিএনপির নেতাদের।

জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিকভাবে এক প্রকার এতিম অবস্থায় রয়েছে। বিএনপি যেমন জামায়াতের সংগ্রামী জনবলকে ক্যাশ করতে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছিল, মার্চ ফর ডেমোক্রেসিতে সেটি প্রকাশিত হয়ে পরে। কৌশলে জামায়াত নিজেরা সাহসী হয়ে রিস্ক না নেয়ায় দেখা যায় বিএনপির নেতা কর্মীদের আসল অবস্থান। বিএনপি তাদের রাজনৈতিক জোট সঙ্গীকে সর্বাবস্থায় স্বীকৃতি না দেয়ার কারনে মূলত জামায়াত রাজনৈতিক কোণঠাসা হয়ে পরে। তাদের নেতাদের এক অদ্ভুত বিচার ব্যবস্থায় একের পর এক মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিষয়ে কোন সহায়তা দেয়াতো দুরের কথা যে কোন মন্তব্য করা থেকেও বিরত থেকে জামায়াতের সাথে বিএনপির রাজনৈতিক বিশাল এক দুরত্ব তৈরি হয়ে যায়। সেই দূরত্বই শেখ হাসিনার ভারতপন্থি সরকারকে উৎসাহিত করে জামায়াতকে সাইজ করতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তিকে বিএনপি নিজেদের জন্যও হুমকি মনে করা শুরু করে বিধায় বিএনপির ভারতপন্থি অংশটি কৌশলে শুধু জামায়াতকেই নয় ইসলামী অন্যান্য শক্তিদেরও দমনে এই নীরবতা কৌশলের আশ্রয় নেয়।

কিন্তু বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় অংশটি নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই ভারত বিরোধী। এই জনগোষ্ঠী পাকিস্তান বানানোয় মুসলিম লীগকে সমর্থন করেছিল যতটা না ইসলাম প্রেমে তার চেয়েও বেশী নিজেদের অস্তিত্বের স্বাতন্ত্রতার প্রশ্নে। আজ সেই জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যখন ভারতীয় চানক্যদের হাতের ক্রীড়ানক হয়ে পড়েছে, তা একপ্রকার রাজনৈতিক শুন্যতার সমার্থক। জনগণের পালস আর স্বার্থ না বুঝে গদির রাজনীতি করতে গিয়ে মুসলিম লীগ অস্তিত্ব হারিয়েছে, গদির রাজনীতি না করেও শুধুমাত্র জনগণের পালস না বুঝে ন্যাপ অস্তিত্ব হারিয়েছে। তেমনি এক রাজনৈতিক সংকটের মোহনায় দাঁড়িয়ে আজ বিএনপি। অস্তিত্ব সংকট দেয়া দিয়েছে জামায়াতের রাজনীতিতেও, যদিও তা দৃশ্যমান নয় এই মুহূর্তে তবে সংকট শুরু হবে যদি জামায়াত নেতাদের ফাঁসি ঠেকানো সম্ভব না হয়। অবৈধ সরকারকে মেনে নেয়া আর তার বিনিময়ে দলীয় অস্তিত্ব সংকট মোচন না হলেই কোন্দল প্রকাশিত হয়ে পড়বে।

রাজনীতিতে দর্শন চর্চার যেমন বিকল্প নেই, বিকল্প নেই তেমন রাজনৈতিক সততার। তেমনি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত রাজনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন; যার জন্য প্রয়োজন নিবেদিতপ্রান নেতা কর্মীর। রাজনৈতিক ভুল পদক্ষেপে একের পর এক বিভ্রান্ত হচ্ছে সেই দলগুলোর নেতা কর্মী এবং যা অস্তিত্বের সঙ্কটে ঠেলে দিয়েছে আধিপত্যবাদ বিরোধী পুরো জনগোষ্ঠীকে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে অনেকেই ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবেন অচিরেই। আর সফলতার দন্ত বিকশিত কুৎসিত হাসিটি দেখা যাবে চুরি করে সিনাজুরিতে অভ্যস্থ ভারতপ্রেমিদের। সেটাই হবে আফসোসের।

সূত্র : শেখ নিউজ

বিষয়: বিবিধ

১২৬৫ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

173325
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:২১
আল্লাহর সন্তুষ্টি লিখেছেন :

জঙ্গিবাদী--আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক

জঙ্গিবাদী--আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:১১
126908
আবু আশফাক লিখেছেন : ধন্যবাদ।
173332
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:২৫
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ভালো লাগলো
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:১১
126909
আবু আশফাক লিখেছেন : শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
173339
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৩২
ভিশু লিখেছেন : গুড শেয়ার!
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:১২
126910
আবু আশফাক লিখেছেন : ধন্যবাদ।
173356
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৬
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : গুড এনালাইসিস।
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:১২
126911
আবু আশফাক লিখেছেন : শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
173409
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৭
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:১৬
127134
আবু আশফাক লিখেছেন : আপনকেও ধন্যবাদ।
179315
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:০১
মোহাম্মাদ নেছার উদ্দিন লিখেছেন : বুঝলাম

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File