কনে দেখাতে গিয়ে নিজের পছন্দ এবং দ্রুত বিয়ের জন্য যমুনায় সাঁতার
লিখেছেন লিখেছেন আবু আশফাক ০৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৫০:৩৯ সন্ধ্যা
আমার চার বছরের ছেলে আশফাক কয়েকদিন আগে বলতেছে- 'আব্বু! তুমি আম্মুকে বিয়ে করো'। আমি বললাম- তোমার আম্মুকে তো আগেই বিয়ে করেছি। ওর প্রশ্ন- কবে?
ব্লগে বিয়ের গল্প নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। অপ্রাসঙ্গিক নয় বিধায় হাস্যকর কথাটি দিয়েই শুরু করছি আমার বিয়ের গল্প।
তখন আমি ও ছোট বোন ঢাকায় হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করতাম। বাড়িতে যেতাম খুব কম, রমযান মাস ছাড়া। রমযানের পুরোটাই প্রায় বাড়িতে থাকা হতো। মাস্টার্স শেষবর্ষের রমযানে বাড়িতে যাব যাব করছি; এমন সময় জানতে পারলাম- আম্মু বাড়িতে নেই, মামাদের বাড়ি বেড়াতে গেছে। আমাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জ হলেও যমুনার পূর্ব পাড় যা টাঙ্গাইলের সাথে; অন্যদিকে মামা বাড়ি নাটোরের চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলায়। দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। সবচেয়ে বড় কথা হলো- যমুনার কারণে যেতে প্রায় সারাদিন ব্যয় করতে হয়।
সে যা-ই হোক, আম্মু যেহেতু মামাদের বাড়ি তাই বাড়িতে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। সুতরাং দুই ভাই-বোন চললাম মামাদের বাড়ি।
সেখানে গিয়েই শুনি- মেঝ মামার ছোট মেয়েকে কাল বর পক্ষ দেখতে আসবে। আমি বললাম ওর কি বিয়ের বয়স হয়েছে? আমার প্রশ্ন শুনে কেউ কেউ হাসাহাসি করলো। এখানে বলে রাখি- আমি মামা বাড়িতে খুব কম যেতাম। এমন কি এর ৬ বছর আগে মামাদের বাড়ি সর্বশেষ বেড়িয়েছি। তাছাড়া আমার সেই মামাত বোন নাটোর শহরের বাসায় থেকে লেখাপড়া করায় ওকে সর্বশেষ দেখি ১০ বছরেরও বেশি সময় আগে। তো আগামী কাল বরপক্ষ দেখতে আসবে বিধায় বাড়িতে মোটামুটি একটি উৎসব উৎসব ভাব।
সকাল বেলা ভাবীগণ ছোট ননদীকে সাজাতে ব্যস্ত আর আমি ও ছোট মামা বৈঠকখানা ঠিকঠাক করতে। একসময় বরপক্ষ আসলেন, তাদেরকে যথেষ্ট আগ্রহের সাথে আপ্যায়ন করালাম আমি ও ছোট মামা। যদিও বাড়িতে তখন হাফডজন দুলাভাই বর্তমান। একসময় ভাবীদের নিকট থেকে কনেকে বৈঠক খানায় আনার দায়িত্বও পেলাম। নিয়ে আসলাম বরপক্ষের সামনে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরপরই তারা জানিয়ে দিলেন- মেয়ে আমাদের পছন্দ। এমন সময় ছেলের মামা (এক মুরুব্বী বয়সী লোক) মেয়ের চুল দেখার আগ্রহ দেখালে ছোট মামা ঘোমটা খুলে চুল দেখালেন।
.
.
.
এ আমি কি দেখছি? এতো পুরোই বনলতা!!
চুল তার কবে কার..................
মুখ দেখে চোখ ফেরানো যায় না বললে হয়তো ভুল হবে, কিন্তু চুল দেখে দৃষ্টি ফেরানো আমার দায় হয়ে দাড়ায়।
এই খানে এখখানা কথা বলে রাখি; সেটা হচ্ছে আমার এক দুলাভাইয়ের বাণী। তিনি একদিন শালাদের বৈঠকে বলেছিলেন- যেৌবনকালে কুত্তাকেও সুন্দর লাগে। তবে এখানে কিন্তু তেমনটি মনে করার কারণ নেই।
সে যা-ই হোক। বরপক্ষ আমাদের দাওয়াত করলেন তাদের ছেলে-বাড়ি-ঘর দেখতে। মামারাও রাজী। অর্থাৎ? বিয়ে হতে যাচ্ছে।
এমন সময় ছোট মামাকে আমি বাইরে ডেকে নিয়ে বললাম- মামা! এখানে বিয়ে হবে না। মামা আমার চোখ-মুখ দেখেই মনে হয় বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন- তাহলে কি তুই বিয়ে করবি? আমি বললাম- আম্মুকে বলুন।
তারপর?
আম্মুকে বলা হলো। আম্মু রাজী, মেঝ মামানি মহাখুশি। অন্য দুই মামা খুশি, তবে বড় মামা গড়রাজী। তিনি তার মেয়েকে........................।
এমতাবস্থায় আম্মুকে নিয়ে বাড়ি চলে আসলাম। বাড়ীতে এসে আব্বুকে বলতেই এককথায় রাজী। তিনিই নাকি এটা আমাকে বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেঝ ভাই ১৮০ ডিগ্রিতে। তিনি কোনোমতেই ওখানে ছোটভাইকে বিয়ে দেবেন না। কি আর করা, বড় ভাইয়ের ভোট দরকার। চলে আসলাম ঢাকায় বড়ভাইয়ের কাছে। বড় ভাইও রাজী। নো চিন্তা। চলে গেলাম হোস্টেলে। ওখানে গিয়ে বন্ধুদের বলতেই বললো- চল, বিয়ের বাজার করে আসি। ওদের পিড়াপীড়িতে মীরপুর-১১ তে গেলাম বেনারশি পল্লীতে। ওখান থেকে লাল বেনারশীসহ অন্যান্য কিছু কাপড় কিনলাম। এরপর বন্ধুদের দাওয়াত দিয়ে সোজা ঢাকা-আরিচা টু বাড়ি।
বাড়িতে এসে শুনি অনেক কাণ্ড ঘটে গেছে। মেঝ ভাইয়ের ভেটোতে আম্মু আমতা আমতা করছে। অন্যদিকে চাচা-চাচাতো ভাইগণ কেউ বিয়েতে যেতে রাজি নন। একে তো দুরত্ব বেশি, গেলে ২-৩দিনের জন্য যেতে হবে, দ্বিতীয়ত মেঝ ভাইয়ের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়।
এমতাবস্থায় আব্বু বললেন- তুমি একাই যাও। ওখানে তোমার মামারা আছেন, তারা যেটা ভালো বোঝে করবে। আমার তখন বিবেচনা শক্তি রহিত। তাই ছোটবোন, বড় ভাতিজা আর আমি মামা বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। যেতে হচে ফজরের আগে মাছে আনতে বেড়া (বেড়া, পাবনা) যাওয়ার নৌকায়।
কিন্তু ভাতিজাকে তৈরি করতে দেরি হওয়ায় ঘাটে গিয়ে দেখি নৌকা চলে গিয়েছে। তবে চর ঘূরে যখন কাছাকাছি আসবে তখন যাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। সমস্যা হচ্ছে ঐ চরে যেতে হলেও নৌকা লাগবে যা নেই। কিন্তু হতাশ হলে চলবে কেন? বাড়ীতে ঘুরে যাওয়া মানেই বিয়ের সম্ভাবনা ৩০ শতাংশে নেমে আসা। এটা হতে দিতে পারি(!)
হঠাত দেখি একটি মাছধরা নৌকা ডোবানো আছে একটু দুরে। চিন্তু করার সময় নেই, কাপড় খুলে দিলাম সাতার। গিয়ে নৌকা পাড়ে টেনে তুলে পানি কমালাম। ভাতিজা-ছোটবোনকে সাথে নিয়ে নৌকা কাত করে যতদুর সম্ভব পানি ফেলে সেই নৌকায় পার হয়ে চরে গিয়ে পৌঁছলাম। এভাবে নৌকা ধরে চলে গেলাম নাটোর। তারপর?
তারপর নানা ঘটনা পেরিয়ে সেই বনলতা'র সাথে.......................।
এখন আমাদের ছোট ছেলে আবার ওর মায়ের সাথে বাবার বিয়ে দিতে চায়!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
বি. দ্র. লেখা দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে বিধায় পরবর্তী অংশ অন্যদিন....................
বিষয়: বিয়ের গল্প
৪৯২৪ বার পঠিত, ৮০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ছবি তুলতে না দিতে চাওয়া
আমাদের দুষ্টু আশফাকের জন্য
দুআ চাই।
এক দুলাভাইয়ের বাণী। তিনি একদিন শালাদের বৈঠকে বলেছিলেন- যেৌবনকালে কুত্তাকেও সুন্দর লাগে। এই লাইনটি যখন পড়ছি তখন হাসতে হাসতে শেষ..........
আপনার মামাতবোন ভাবী কে আমার সালাম পৌছাইয়া দিবেন।
এখানে তো বিয়ের ভুমিকা লিখেছি মাত্র। বিয়ের কথা বলায় দুলাভাইদের অনেক মজার মজার বাণী শুনতে হয়েছে, তার মধ্যে এটাকে এখানে মানানসই মনে হওয়ায় লিখে ফেলেছি। কেউ হয়তো এতে বিরূপ মন্তব্যও করতে পারে।
আপনার সালাম মামাত বোনকে পৌছে দিচ্ছি।
অব্যশই আপনার গল্পটা অনেক মজার ।শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ ।
মনে রাখার জন্য ধন্যবাদ।
@ সুর্যের পাশে হারিকেন : আগেরটায় কেশ এর কথা উল্লেখ করলেও এমন বিস্তারিত ছিল না বিধায় নতুন করে লিখেছি।
ধন্যবাদ মনে রাখার জন্য।
ভালো লাগলো
ভাই, দিন না বাচ্চাটাকে একটা দাওয়াত খাইয়ে, এই সুযোগে আমরা যারা গতবার মিস করেছি তারা এইবার খেয়ে নেব।
তবে যদি চেয়ারম্যানের মতো পরামর্শ দেন, তাহলে বলবো-
আপনিও আমার সাথে শত্রুতা করেন? কত সুন্দর অফিস শেষ করে বাসায় গিয়ে মজার মজার খাবার অার মিষ্টি মিষ্টি বাক্য শুনি; এটা বন্ধ করতে অনেকের মতো আপনিও কেন পিছে লেগেছেন?
সুর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : Rolling on the Floor Love Struck Rolling on the Floor Love Struck Rolling on the Floor Love Struck Rolling on the Floor Love Struck Rolling on the Floor Love Struck Rolling on the Floor Love Struck Rolling on the Floor Love Struck Rolling on the Floor Love Struck থ্যাংক্স ভাইয়া এত্ত সুন্দর একটা বাস্তব গল্প উপহার দেয়ার জন্য! বেশ মজাকরে উপভোগ করলাম Rose Rose Rose আচ্ছা আশফাকের মাথায় এমন চিন্তা আসলো কেন যে আবার বিয়ে করাইতে চাচ্ছে বনলতাকে?
সিকদারর লিখেছেন : দারুন বিয়ে !! এই ঘটনা এতদিন চেপে রাখলেন কেমনে ? বাদ বাকিটাও তাড়াতাড়ি পোষ্ট করুন।
ধ্রুব নীল লিখেছেন : ডারুন মজা পেলাম
এমনিতেই ফাতিমা আপা বেল গাছের নিচে যায় না
এখানে আসো জলদি
nice write up,,carry on brother
তবে সেখানে পিছনের কারণটি বিস্তারিত ছিল না।
ফেবুতে ভুল করে প্রায় ৩০০ বন্ধু ডিলিট করে ফেলেছি। ফেবুতে আমি।
আল্লাহ আপনার দুআ আমাদের সকলের জন্য কবুল করুন; আমিন।
এখানে বিয়ে হবে না। মামা আমার চোখ-মুখ দেখেই
মনে হয় বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন- তাহলে কি তুই
বিয়ে করবি?
হা হা হা হা হা জটিল
মামা ভাগনা যেখানে আপদ নাই সেখানে......
ফেবুতে ভুল করে প্রায় ৩০০ বন্ধু ডিলিট করে ফেলেছি। ফেবুতে আমি।
ফেবুতে ভুল করে প্রায় ৩০০ বন্ধু ডিলিট করে ফেলেছি। ফেবুতে আমি।
ফেবুতে ভুল করে প্রায় ৩০০ বন্ধু ডিলিট করে ফেলেছি। ফেবুতে আমি।
ভাবছি এখন কেন যে মামা বাড়ি বেড়াতে গেলামনা
তয় মামা বাড়ি গেলে হিসেব করে যাইয়েন। উমামা মা মনির আম্মু আবার ডেঙ্গায় না যেন!
তাই দেখেই বিয়ের শখ জাগলো কথাটা ফেলে দেয়ার মতো নয়।
তবে আপনার মন্তব্য দেখে মনে হলো আপনি পোস্টটি পড়েন নি।
?
?
?
পড়ে অনেক মজা পেলুম
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন