ভব্যতা রক্ষায় বিড়ম্বনা : শশুড়বাড়ী ও পান্তা ভাত

লিখেছেন লিখেছেন আবু আশফাক ১৩ জুন, ২০১৩, ০৪:৩৬:২৭ বিকাল



ছাত্রজীবন সমাপ্তীর বেশ আগেই দিল্লি কা লাড্ডু নামক বিয়ে কর্মটি সেরে ফেলেছিলাম। তবে যারা এখনও বিয়ে করেননি তাদেরকে এ ব্যাপারে অনুৎসাহিত করছি মনে করলে ভুল করবেন। আমি মনে করি এটা দিল্লি কা লাড্ডু হলেও খেয়ে পস্তানোই ভালো। যাক সেসব। আমি এখানে যে বিষয়টি উপস্থাপন করতে চাচ্ছি তা হয়তো অনেকে শিরোনাম দেখেই তার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়েছেন। তবে ঘটনা ঠিক কি তা যে কেউ বুঝতে পারেননি তা আমি হলফ করেই বলতে পারি।

যে জন্য ১৩ বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাটি মনে হলো সেটা হচ্ছে- জাপান প্রবাসী ব্লগার সাইদ ভাইয়ের পোস্ট ‘’এক জাপানীজ পরিবারে আমার খাবার বিড়ম্বনা’’র একটি মন্তব্য। কী সেই মন্তব্য? জানতে চাচ্ছেন তো? তাহলে আসুন আগে সেই মন্তব্যটিই জেনে নিই।

মন্তব্যটি করেছেন- ব্লগার পথিক মুসাফির। তিনি লিখেছেন : সাঈদ ভাই আপনার ঐশী ঐশী কথায় আমার একটা গল্প মনে পড়ে গেল । এক ছেলে লজিং থাকত । একদিন ঐ বাড়ীতে ভাত রান্না করতে গিয়ে ভাত পুড়ে গিয়াছে । বরাবরের মত তার ছাত্র খাবারের সময় খাবার নিয়ে এসে হাজির।স্যার দেখলেন বেশীর ভাগ ভাত পুড়া পুড়া। ছাত্র বলছে স্যার আজকে অমাদের ভাত পুড়ে গিয়াছে তাই একটু কষ্ট করে খেতে হবে। বিকল্প রান্না করা নেই। স্যার তখন আপনার মত ঐশী ঐশী বলতে গিয়ে বললেন যে তার নাকি পুড়া ভাত খুব পছন্দ কোন অসুবিধা নেই। ব্যস!! সেই দিন থেকে যখনই তাদের ভাত পুড়ে যেত সেই পুড়া ভাত স্যারের দিত। তাই ভব্যতা রক্ষা করতে এমন কথা বলে নিজেকে বিপদে ফেলা নয় কি ???

এবার শুনুন আমার কাহিনী। আগেই বলেছি- ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার আগেই বিয়ে করেছি। তো সেই বিয়ের মাত্র মাস তিনেক পরের ঘটনা। আমি তখন ঢাকার মীরপুরে থাকি, আর আমার শশুড় আব্বার বাড়ী নাটোরে। বিস্তারিত ঠিকানা বলছি না, কেউ আবার দেখতে যেতে পারেন। পড়াশোনা শেষ না হওয়ায় ক্লাসের সবচেয়ে ভদ্র ছেলেটির মতো শশুরালয়েও ছিলাম ভদ্রতা দেখানোর রেসের অগ্রগামী প্রাণী। মুখ ফুটে রা শব্দটিও সহজে বলতাম না, বেআদবী হবার ভয়ে। তো নতুন শশুড়বাড়ী, ঘনঘন যেতে ইচ্ছে হলেও লজ্জায় যেতে পারি না। তাই মাসে কোনো এক বৃহস্পতিবার টেকনিক্যাল বা কল্যাণপুর থেকে সন্ধ্যার পর হানিফ বা ন্যাশনাল ইন্টারপ্রাইজ নামের গাড়িতে উঠে বসতাম। রাস্তায় অনেকে গল্প করা বা গান শোনায় কাটিয়ে দিলেও আমার অভ্যাস ছিল গাড়িতে উঠেই ঘুমিয়ে যাওয়া। সে অভ্যাস অবশ্য এখনও আছে। তো দেখা যেতো গাড়ী নির্ধারিত স্টপেজে গিয়ে থামলে সুপারভাইজার ডেকে বলতো- ভাই আর কত ঘুমাবেন, নামবেন না? তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতাম রাত ২ বা ৩টা বাজে।

শশুড়বাড়ীতে জামাইকে সাধারণত গরম ভাত দিয়ে আপ্যায়ন করাই প্রায় সব এলাকার প্রচলিত নিয়ম। সে হিসেবে আমাকেও ঐ রাতে উঠেই শাশুড়ী আম্মা ভাত রেধে ধূমায়িত ভাত পরিবেশন করতেন।

একবার আমি ভাবলাম এতো রাতে এই বেচারিকে এভাবে কষ্ট দেওয়া উচিত হচ্ছে না। এটাতো আমি ভদ্রতার খেলাফ কাজ করছি। তাই এভাবে আর চলতে পারে না। এতো রাতে এসে এদেরকে এভাবে জ্বালাতন করা মোটোও ঠিক হচ্ছে না।

এটা ভেবে ঘটনার দিন আমার গিন্নিকে ডেকে বললাম- এতো রাতে মামানিকে ভাত রান্না করতে নিষেধ করো। আমার ক্ষুধা নেই, খাব না। একথা শাশুড়ী আম্মাকে বলার সাথে সাথে রে রে করে উঠলেন। তার ভাষায়- রাতে না খেয়ে ঘুমানো অকল্যাণকর। তাই খেতেই হবে। শেষমেষ বললাম- আচ্ছা, রাতের ভাত নেই। তিনি বললেন- আছে, কিন্তু পান্তা (পানি দেওয়া) ভাত (পহেলা বৈশাখ মনে করিয়েন না) আবার তরকারীও নেই। আমি গিন্নিকে তখন বললাম- আরে আমি পান্তা ভাত খুব পছন্দ করি আর সেটার সাথে শুধু কাচা মরিচ হলেই যথেষ্ট। ব্যস! হয়ে গেল। আসলো পান্তা। ক্ষুধায় তখন কাহিল অবস্থা। কারণ মাঝে গাড়ী হোটেলে থামলেও সেটা আমার ঘুমের মধ্যেই অতিক্রান্ত হয়ে যেত; তাই সেখানে খাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তো খেলাম নাক পর্যন্ত। খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ঘুমিয়ে পড়লাম খুশি মনে।



ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারতো কিন্তু হলো না। নামাযের পর আবার ঘুমিয়েছিলাম ৮ পর্যন্ত। ঘুম থেকে উঠে আমার চক্ষু চড়ক গাছ। দেখি থালা ভর্তি পান্তার সাথে গোটা কয়েক কাচা লঙ্কা। পাশে রাতের অতিরিক্ত হিসেবে পেয়াজ।

ঘটনা- চিরাচরিত। যে ব্যক্তি পান্তা এতো ভালোবাসে, তাকে পান্তা না দিয়ে ধূমায়িত গরম ভাত দিয়ে মেজাজ গরম করে দেওয়ার কি দরকার? দিনের বেলা দেখি আমার শাশুড়ী আম্মা (যিনি আমার মামানীও বটে) তার মেয়েদের কাছে গল্প করছেন- আমার ছোট জামাই অনেক ভালো।

কি বুঝলেন?

বিষয়: বিবিধ

৩৯৫৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385899
০৮ অক্টোবর ২০১৮ সকাল ১১:৫০
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : যে ব্যক্তি পান্তা এতো ভালোবাসে, তাকে পান্তা না দিয়ে ধূমায়িত গরম ভাত দিয়ে মেজাজ গরম করে দেওয়ার কি দরকার? Tongue Tongue Tongue Tongue Tongue Tongue Tongue ধন্যবাদ, ভালো লাগলো
385900
০৮ অক্টোবর ২০১৮ দুপুর ১২:৪৫
দ্য স্লেভ লিখেছেন : hahahaha.....puro dhora khelen bhai... Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File