গরমে সাবধান হোন, সুস্থ থাকুন : গরমে সুস্থ থাকবেন যেভাবে
লিখেছেন লিখেছেন আবু আশফাক ১২ জুন, ২০১৩, ০৩:১১:৪১ দুপুর
এ বছর গ্রীষ্মে রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রা বেড়েছে। প্রতিদিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে অসংখ্য মানুষ। গরমের এ বৈরী প্রভাব খুব সহজেই একজন মানুষকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। গরমের সময়ে যে কেউ হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। গরমে আক্রান্ত হবার পর ক্রমশ একজন মানুষ অসুস্থ হতে থাকেন। বিশেষজ্ঞগণ সাধারণভাবে গরমের কারণে এই সৃষ্ট অসুস্থতাকে ৩টি পর্যায়ে ভাগ করেছেন। এ নিয়ে নিম্নে কিছু আলোচনা করা হলো-
প্রচুর ঘাম হওয়ার কারণে সৃষ্ট সমস্যা
প্রচুর ঘাম হওয়ার কারণে শরীর অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে/ শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে/ মাংসপেশিতে খিঁচুনি বা ক্র্যাম্প হতে পারে/ গাঢ় হলুদ বর্ণের প্রস্রাব হতে পারে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে এবং প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
এক্ষেত্রে আমাদের করণীয়
গরমে যতটা সম্ভব রোদে চলাফেরা বন্ধ করতে হবে। মাথায় ছাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। ঢিলেঢালা সুতি পোশাক পরিধান করতে হবে। সিনথেটিক এবং আঁটসাট পোশাক না পরাই ভালো। কারণ সিনথেটিক কাপড়ের মধ্য দিয়ে বাতাস সুবিধাজনকভাবে চলাচল করতে পারে না। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। যারা কায়িক পরিশ্রমের কাজ করেন এবং যাদের বেশি ঘাম হওয়ার প্রবণতা আছে তাঁদের ক্ষেত্রে পানি পানের পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবে একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের ক্ষেত্রে লিটার পানি পানি করা দরকার। গরমের সময় সেই পানি পানের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিতে হবে। মোট কথা যতণ না প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক হবে ততণ ধরে পানি পান করে যেতেই হবে। শরীরে ঘাম বেশি হলে সেক্ষেত্রে পানিতে খানিকটা লবণ মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। তবে খাবার স্যালাইন পান করতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়।
ভুলেও এগুলো খাবেন না
উত্তাপজনিত গুরুতর অসুস্থতা
এ অবস্থায় শরীরে প্রচুর ঘাম হয় শরীর সাধারণত ভেজা ও ঠাণ্ডা থাকবে এক পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন শরীর থেকে প্রচুর ঘাম হওয়ার কারণে লবণ-জলের অভাবে রক্তচাপ কমে যায় এবং এর ফলে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
এক্ষেত্রে আমাদের করণীয়
আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ঠাণ্ডা পরিবেশে বা এসি রুমে নিয়ে যেতে হবে কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোন খোলা রুমে নিয়ে পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। শরীরের কাপড়-চোপড় যতটুকু সম্ভব খুলে দিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে, কারণ হাসপাতালে নেয়ার পর রোগীকে শিরাপথে স্যালাইন দেয়ার প্রয়োজন পড়বে। তাছাড়া রোগীকে অক্সিজেন দেয়ারও দরকার হতে পারে। জ্ঞান ফিরে এলে রোগীকে মুখে খাওয়ার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
মারাত্মক পরিণতি : হিটস্ট্রোক
এটি গরমের কারণে সৃষ্ট সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা। হিটস্ট্রোক হলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়, এমনকি এ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তি অচেতন হয়ে পড়ে শরীরের ত্বক তখন শুষ্ক ও গরম থাকবে, দ্বিতীয় পর্যায়ের ঠিক বিপরীতধর্মী উপসগ চোখ দুটো স্থির ও ভাবলেশহীন তাকিয়ে থাকবে এ অবস্থায় রোগীর খিঁচুনিও হতে পারে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়ার ফলে শরীর বিশেষ করে মুখমণ্ডল নীলাভ হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থাকে আরও বেশি খারাপ অবস্থা বলে গণ্য করতে হবে অজ্ঞান বলে রোগী প্রস্রাব-পায়খানা নিয়ন্ত্রণের মতা হারিয়ে ফেলতে পারে। তাই অজ্ঞান অবস্থায় রোগী পায়খানা-প্রসাব করে দিতে পারে তাছাড়া প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গিয়ে তা কিডনির ওপর তিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
এক্ষেত্রে আমাদের করণীয়
হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি স্প্রে করে কিংবা ঢেলে শরীর ভিজিয়ে দিতে হবে। রোগী অজ্ঞান হলেও এই কাজটি করতে হবে। রোগীর শরীরে যে পানির প্রবাহ দেয়া হবে তা ঠাণ্ডা হওয়ার দরকার নেই। পানি খুব ঠাণ্ডা হলে সমস্যা আছে। ঠাণ্ডা পানি শরীরের বা কেন্দ্র থেকে দূরের রক্তনালীসমূহকে সঙ্কুচিত করে ফেলে, এতে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। আর কোথাও রক্ত প্রবাহ কম থাকা মানেই সেখানে অক্সিজেন সরবরাহ কম থাকা, যা মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়। এছাড়া রোগীর শরীরের পরিধেয় যতটুক সম্ভব খুলে ফেলতে হবে এবং ঘরের ফ্যান কিংবা এসি চালিয়ে দিতে হবে। এসবের ব্যবস্থা না থাকলে পাখা দিয়ে বাতাস দিতে হবে।
ইতোমধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে হিটস্ট্রোক একটি মেডিক্যাল ইমারজেন্সি। হিটস্ট্রোকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো খুবই জরুরী। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার রোগীকে পরীক্ষা করে,বিশেষ করে নাড়ির স্পন্দন (পালস), রক্তচাপ, শ্বাসপ্রশ্বাস ইত্যাদি দেখবেন। সেই সঙ্গে শিরাপথে স্যালাইন চালু করে উপসর্গ অনুযায়ী অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৬০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন