অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়কে অনীহা থাকলেও অনির্বাচিতদের দিয়েই দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ

লিখেছেন লিখেছেন আবু আশফাক ২২ মে, ২০১৩, ০৮:৪৭:২৩ সকাল

গোটা দেশ যখন নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ঐক্যবদ্ধ, যখন দেশের সুশীল সমাজসহ সাধারণ জনতা তত্ত্বাবধায়কেই আস্থা রাখছে, তখন আওয়ামী লীগ এটি শুনতেও নারাজ। তাদের প্রয়োজনের সময় আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে, আবার প্রয়োজন শেষ হওয়ায় সেটাকেই তারা ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। তাদের যুক্তি যে, দেশ জনগণের আর সরকার চালাবে জনগণের সরকার; কোনো অনির্বাচিত লোকেদের হাতে ক্ষমতার দণ্ড তুলে দেওয়া যাবে না।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে- তারা অনির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা না দেয়ার যুক্তি দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থার বিরোধিতা করলেও দেখা যাচ্ছে- বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার চলছে মূলত অনির্বাচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে।

প্রথমেই দৃষ্টি দেয়া যায় মহা ক্ষমতাশালী উপদেষ্টাগণের প্রতি। যারা নির্বাচিত নন, অনির্বাচিত। মন্ত্রী মর্যাদায় সাত উপদেষ্টা-ই মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করছেন।

প্রধানমন্ত্রীর সাত উপদেষ্টা হচ্ছেন ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক আমলা ও জনতার মঞ্চের নেতা এইচ টি ইমাম, আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক নেতা ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা ড. আলাউদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও আওয়ামী লীগ সমর্থক চিকিৎসক নেতা ডা: সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, জনতার মঞ্চ নেতা ড. মশিউর রহমান ও গওহর রিজভী।

তাদের আবার ক্ষমতার সীমা-পরিসীমা নেই। তারা এক একজন মহা ক্ষমতার অধিকারী। এই উপদেষ্টারা গোপনীয়তার শপথ না নিয়েও মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন। নির্বাচিত মন্ত্রীদেরকেও আদেশ-নির্দেশ দিচ্ছেন।এমন কি মাঝে মাঝে কোনো কোনো আত্মমর্যাদাশীল মন্ত্রীর সাথে তাদের ভিন্ন রকম বাৎচিতের খবর প্রকাশ পায়।

এ ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৬৫ সদস্যের এই মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রী মর্যাদার সাতজন উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার ছয়জন ছাড়াও রয়েছেন তিনজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী। অর্থাৎ অনির্বাচিত। এই অনির্বাচিত টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের হাতে রয়েছে আইন ও শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়।

এ ছাড়া বিভক্ত দুই ঢাকা সিটি করপোরেশন তথা ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন চলছে অনির্বাচিত প্রশাসকদের দিয়ে। অন্যদিকে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদও পরিচালিত হচ্ছে নিয়োগকৃত যে প্রশাসকদের মাধ্যমে তারাও নির্বাচিত নন বরং অনির্বাচিত।

সর্বশেষ অনির্বাচিত যে ব্যক্তি দেশের অন্যতম শীর্ষ ক্ষমতায় আরোহণ করেছেন সেই স্পিকার শিরিন শারমিনও অনির্বাচিত। অর্থাৎ জাতীয় সংসদের স্পিকারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদেও বসানো হয়েছে একজন অনির্বাচিত ব্যক্তিকে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়কে আওয়ামী লীগের অনীহা থাকলেও অনির্বাচিত উপদেষ্টা, মন্ত্রী, মেয়র, জেলা পরিষদ প্রশাসকে অনীহা নেই মোটেও।

তবে কেন এই হাঙ্গামা? কারণ একটাই, আর তা হচ্ছে- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মানে সুষ্ঠু না হলেও সুষ্ঠের কাছাকাছি নির্বাচন। আর সুষ্ঠ বা সুষ্ঠের কাছাকাছি ধরণের কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার সাধ কোনো মতেই পূরণ হওয়া সম্ভব নয়।

অর্থাৎ আওয়ামী লীগের অনির্বাচিতদের নিয়ে অনীহা নয় বরং অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়কে অনীহ।

বিষয়: বিবিধ

১৩৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File