তেঁতুল খেলে নাকি বুদ্ধি কমে? নাকি এটা নিছকই কুসংস্কার?
লিখেছেন লিখেছেন আবু আশফাক ১৩ মে, ২০১৩, ০৭:৪৬:৩৭ সকাল
তেঁতুল এমন এক ফলের নাম যা না খেয়ে শুধু নাম শুনলেই জিহবায় পানি আসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। টক তেঁতুল মুখে দিলে আমাদের যে ভিন্ন এক অনুভূতি হয় তা নিশ্চয়ই বলতে হবে না। আমরা কম বেশি সবাই ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি- তেঁতুল খেলে নাকি বুদ্ধি কমে যায়। ছোটবেলায় বুদ্ধি কমে যাবে এই জন্য তেতুল খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়নি এমন মানুষ খুজে পাওয়া ভার। ছোটবেলায় এই নিষেধাজ্ঞার কবলে কত বার যে তেতুল হাতে নিয়ে আবার রেখে দিতে হয়েছে তার ইওত্তা নেই। বিশেষ করে গরমের দিনে যখন অনেকেই তেঁতুল খেতো তখনতো স্বাভাবিকভাবেই জিহবায় পানি চলে আসতো আর খেতে মন চাইতো। আম্মা আব্বাকে লুকিয়ে অনেক সময় তেঁতুল খেয়েছি। আবার ধরা খেয়ে চাউল খেয়ে প্রমাণ দিতে হয়েছে যে, আমি তেঁতুল খাইনি। এমন সমস্যায় অনেকেই পরে থাকবেন।
অনেকেরই ধারণা, তেঁতুল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং রক্ত পানি হয়। তবে তেতুল প্রেমীদের জন্য সুখবর হচ্ছে- এ ধারণার বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই। এটা নিছকই ভুল ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত। আধুনিককালে ভেষজ বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে- তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর ভেষজ ও পুষ্টিগুণ। তেঁতুলের পুষ্টি গুণ দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকারী। এমনকি রক্তে কোলস্টেরল কমানোর কাজে তেঁতুলের আধুনিক ব্যবহার হচ্ছে।
অধিকাংশ মানুষের এই ভুল বিশ্বাসের কারণে বাংলাদেশে তেঁতুল গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অথচ, তেঁতুলগাছের পাতা, ছাল, ফলের শাঁস (কাঁচা ও পাকা), পাকা ফলের খোসা, বীজের খোসা—সবকিছুই উপকরী। এর কচিপাতায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে এমাইনো এসিড। পাতার রসের শরবত সর্দি-কাশি, পাইলস ও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ায় বেশ কাজ দেয়।
তেঁতুল চর্বি কমানোয় বেশ বড় ভূমিকা রাখে। তবে তা দেহের কোষে নয়, রক্তে। এতে কোলস্টেরল ও ট্রাইগ্রাইসেরাইডের মাত্রা এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
দেখা যায়, পুরোনো তেঁতুলের কার্যকারিতা বেশি। যদি পেট ফাঁপার সমস্যা থাকে এবং বদহজম হয়, তাহলে পুরোনো তেঁতুল এক কাপ পানিতে ভিজিয়ে সামান্য লবণ, চিনি বা গুড় দিয়ে খেলে অসুবিধা দূর হয়। আবার হাত-পা জ্বালা করলেও এই শরবতে উপকার পাওয়া যায়।
প্রয়োজনে টমেটোর সসের পরিবর্তে তেঁতুলের সস বা আচার খাওয়া যেতে পারে। যদি তেঁতুলের সঙ্গে রসুনবাটা মেশানো যায়, তাহলে রক্তের চর্বি কমানোর কাজে ভালো ফল দেয়।
তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর ভেষজ ও পুষ্টিগুণ :
১. তেঁতুল দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকারী।
২. রক্তের কোলেস্টেরল কমায়।
৩. শরীরের মেদ কমাতেও তেঁতুল কাজ করে।
৪. পেটে গ্যাস, হজম সমস্যা, হাত-পা জ্বালায় তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী।
৫. খিদে বাড়ায়।
৬. গর্ভাবস্থায় বমি বমি বমি ভাব দূর করে।
৭. মুখের লালা তৈরি হয়।
৮. তেঁতুল পাতার ভেষজ চা ম্যালেরিয়া জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
৯. শিশুদের পেটের কৃমিনাশক।
১০. তেঁতুল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
১১. পাইলস্ চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করা হয়।
১২. মুখে ঘাঁ ও ত্বকের প্রদাহ সারাতে সাহায্য করে।
১৩. তেঁতুল রক্ত পরিস্কার করে।
১৪. বাত বা জয়েন্টগুলোতে ব্যথা কমায়।
১৫. ভিটামিন সি-এর বড় উৎস।
১৬. পুরনো তেঁতুল খেলে কাশি সারে।
১৭. পাকা তেঁতুলে খনিজ পদার্থ অন্য যে কোনো ফলের চেয়ে অনেক বেশি।
১৮. খাদ্যশক্তিও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।
১৯. ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ১৭ গুণ বেশি।
২০. আর আয়রনের পরিমাণ নারকেল ছাড়া সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ২০ গুণ বেশি।
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলের পুষ্টিমান :
ক্যালরি ২৩৯, আমিষ বা প্রোটিন – ২.৮, শর্করা – ৬২.৫ গ্রাম, ফাইবার – ৫.১ গ্রাম, চর্বি – ০.৬ গ্রাম, ফসফরাস – ১১৩ মিলিগ্রাম, লৌহ – ২.৮২ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম – ৭৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি – ২ মিলিগ্রাম, মিনারেল বা খনিজ পদার্থ ২.৯ গ্রাম, ভিটামিন বি – ০.৩৪ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম – ৬২৮ মি:লি, ভিটামিন ই – ০.১ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৬০ মাইক্রোগ্রাম, সেলেনিয়াম – ১.৩ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম – ২৮ মিলিগ্রাম, দস্তা – ০.১২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম – ৯২ মিলিগ্রাম, এবং তামা – ০,৮৬ মিলিগ্রাম।
তেঁতুল ছাড়াও অন্যান্য টকে আছে ভিটামিন সি -মানে এসকর্বিক এসিড। এসকর্বিক এসিড খাবার থেকে আয়রন আহরণ, সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন কোষে আয়রন পরিবহনের কাজ করে। এই আয়রন ব্রেনের অনেক কাজে লাগে। ব্রেনে আয়রন সাপ্লাই ঠিকঠাক হলে চিন্তা ভাবনা দ্রুত হবে। তার মানে বুদ্ধি যদি নাও বাড়ে অন্তত: কমবেনা। বরং ভিটামিন সির অভাব হলে আয়রন ট্রান্সপোর্ট প্রায় ৪০০% কমে যায়।
সুতরাং তেতুলকে আর না নয়; আসুন মজা করে তেতুল খাই।
বিষয়: বিবিধ
৬৮৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন