বাংলা সন, মাস ও সপ্তাহের ৭দিনের নামকরণ হলো কীভাবে?
লিখেছেন লিখেছেন আবু আশফাক ১৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:০০:৩৮ সকাল
বাংলা সন
১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ নভেম্বর আকবর দ্বিতীয় পানি পথের যুদ্ধে হিমুকে পরাজিত করে সিংহাসন লাভ করেন। তখন থেকেই রাজস্ব আদায়কে সহজ ও তার বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তিনি তারিখ-ই-এলাহি সনটির সূচনা করেন। প্রথমে এটি তারিখ-ই-এলাহি নামে পরিচিতি পায় এবং পরে তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত হয়। সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে তার রাজত্বের উনত্রিশতম বর্ষে বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রবর্তন করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ বা ১১ মার্চ নতুন এই সালটি তারিখ-ই-এলাহি থেকে বঙ্গাব্দে পরিচিতি পায়।
বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রবর্তনের ফলে বাংলায় এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়। এর আগে মুগল সম্রাটরা রাজস্ব আদায়ের জন্য হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করতেন। কিন্তু এতে কৃষকরা বিপাকে পরতেন। আবুল ফজল আকবরনামা গ্রন্থে বলেন, হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করা কৃষকদের জন্য খুবই সাংঘর্ষিক ছিল কারণ চান্দ্র ও সৌর বর্ষের মধ্যে ১১ থেকে ১২ দিনের ব্যবধান ছিল ফলে দেখা যায় ৩০ সৌরবর্ষ ৩১ চান্দ্রবর্ষের সমান ছিল। তখন কৃষকরা সৌরবর্ষ অনুযায়ী ফসল সংগ্রহ করত কিন্তু চান্দ্রবর্ষ অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা হত। ফলে এটি কৃষকদের জন্য শুধুই বিড়ম্বনার ছিল। তাই আকবর তার রাজত্বের শুরু থেকেই দিন-তারিখ গণনার সুবিধার্থে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক, আধুনিক ও যুগোপযোগী বর্ষপঞ্জির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এ জন্য আকবর জ্যোতির্বিদ ও বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরি বর্ষপঞ্জি সংস্কার করে তা যুগোপযোগী করে তোলার দায়িত্ব দেন। সে সময় বঙ্গে শক বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করা হত আর চৈত্র ছিল শক বর্ষের প্রথম মাস। বিজ্ঞানী শিরাজী ৯৬৩ হিজরি সালের শুরু থেকে বাংলাবর্ষ ৯৬৩ অব্দের সূচনা করেন। ৯৬৩ অব্দের পূর্বে বাংলাবর্ষে আর কোন সন ছিল না। আরবি মুহররম মাসের সঙ্গে বাংলা বৈশাখ মাসের সামঞ্জস্য থাকায় বাংলা অব্দে চৈত্রের পরিবর্তে বৈশাখকে প্রথম মাস করা হয়।
তারিখ-ই-এলাহি’র সূচনা থেকে ৪৫৬ বছর পর বাংলা (১৪১৯) ও হিজরি (১৪৩৩) বর্ষপঞ্জিতে প্রায় ১৪ বছরের ব্যবধান পাওয়া যায়। অর্থাৎ হিজরি সাল বাংলা সন থেকে প্রায় ১৪ বছর এগিয়ে। তার কারণ হিজরি বর্ষ হচ্ছে চন্দ্রনির্ভর আর বাংলা বর্ষ হচ্ছে সূর্যনির্ভর। চান্দ্রবর্ষ হয় ৩৫৪ দিনে আর সৌরবর্ষ হয় ৩৬৫ বা ৩৬৬ দিনে। অর্থাৎ চান্দ্রবর্ষ থেকে সৌরবর্ষ ১১ বা ১২ দিন এগিয়ে। তবে উভয়ই সৌরবর্ষ ভিত্তিক হওয়ায় বাংলা ও গ্রেগরিয়ান বর্ষের মধ্যে পার্থক্য খুব কম। তারিখ-ই-এলাহি’র সূচনার সময় বাংলা ও গ্রেগরিয়ান বর্ষের মধ্যে পার্থক্য ছিল ১৫৫৬-৯৬৩ = ৫৯৩ বছর যা বর্তমানেও (২০১২-১৪১৯ = ৫৯৩ একই। অর্থাৎ বাংলা সনের সাথে ৫৯৩ যোগ করলে খ্রিষ্টীয় সন পাওয়া যায়।
বাংলা মাসের নামকরণ
বঙ্গাব্দের বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে নত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে । এই নাম সমূহ গৃহীত হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ "সূর্যসিদ্ধান্ত" থেকে। বাংলা মাসের এই নামগুলি হচ্ছে -
বৈশাখ - বিশাখা নত্রের নাম অনুসারে
জ্যৈষ্ঠ - জ্যেষ্ঠা নত্রের নাম অনুসারে
আষাঢ় - উত্তর ও পূর্ব আষাঢ়া নত্রের নাম অনুসারে
শ্রাবণ - শ্রবণা নত্রের নাম অনুসারে
ভাদ্র -উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নত্রের নাম অনুসারে
আশ্বিন - অশ্বিনী নত্রের নাম অনুসারে
কার্তিক - কৃত্তিকা নত্রের নাম অনুসারে
অগ্রহায়ণ(মার্গশীর্ষ) - মৃগশিরা নত্রের নাম অনুসারে
পৌষ - পুষ্যা নত্রের নাম অনুসারে
মাঘ - মঘা নত্রের নাম অনুসারে
ফাল্গুন - উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নত্রের নাম অনুসারে
চৈত্র - চিত্রা নত্রের নাম অনুসারে
সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত তারিখ-ই-ইলাহী-র মাসের নামগুলি প্রচলিত ছিল পারসি ভাষায়, যথা: ফারওয়াদিন, আর্দি, ভিহিসু, খোরদাদ, তির, আমারদাদ, শাহরিযার, আবান, আযুর, দাই, বহম এবং ইসক্নদার মিজ।
সপ্তাহের সাতদিনের বাংলা নামকরণ
বাংলা সন অন্যান্য সনের মতোই সাত দিনকে গ্রহণ করেছে এবং এ দিনের নামগুলো অন্যান্য সনের মতোই তারকামন্ডলীর উপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে।
সোমবার হচ্ছে সোম বা শিব দেবতার নাম অনুসারে
মঙ্গলবার হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের নাম অনুসারে
বুধবার হচ্ছে বুধ গ্রহের নাম অনুসারে
বৃহস্পতিবার হচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহের নাম অনুসারে
শুক্রবার হচ্ছে শুক্র গ্রহের নাম অনুসারে
শনিবার হচ্ছে শনি গ্রহের নাম অনুসারে
রবিবার হচ্ছে রবি বা সূর্য দেবতার নাম অনুসারে
বাংলা সনে দিনের শুরু ও শেষ হয় সূর্যোদয়ে । ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির শুরু হয় যেমন মধ্যরাত হতে ।
বিষয়: বিবিধ
৩১৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন