পোস্টমার্টেম ; তয় কার পোস্টমার্টেম এইডা পইড়া বুইজ্জা লন

লিখেছেন লিখেছেন তারেক হাসান শেখ ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৯:২০:২৯ রাত



হা হা হা আওয়ামীলীগ যে কি সিয়ানা মাল এই রায়ই তার উৎকৃষ্ট প্রমান । বিচারিক এভিডেন্সে তুলনামূলক শিশু অপরাধ করেও বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসি আর কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড! সেলুকাস ! দেশে বিচার ব্যবস্থা যে সরকারের আঙ্গুল হেলানিতে পরিচালিত হচ্ছে তা বোধকরি প্রমান করার জন্য আর বেশী কিছুর দরকার নেই? আ’লীগ হলও এমন এক ধূর্ত সংগঠন যারা বারবার শুধু হ্যাঁমিলনের মতো বাঁশি বাজায় আর আমারা সেই বাঁশির সুরে ইদুরের মতো দলে দলে তাঁদের পিছনে ছুটি আর ছুটতে ছুটতে একসময় পাহাড় থেকে নিচে সমুদ্রে পড়ি । আ’লীগ সবসময় নতুন নতুন কনসেপ্ট নিয়ে আমাদের আশা দেখিয়েছে, তাঁদের পিছনে ছুটতে বাধ্য করেছে আবার স্বার্থ হাসিল হওয়া মাত্রই আমাদেরকে নির্মমভাবে ল্যাং মেরে মিরজাফরের মতো কেটে পড়েছে । কখনও মুক্তিযুদ্ধ, কখনও এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, কখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চালু, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আবার আন্তর্জাতিক ঠেলায় পড়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে মানবাতাবিরোধী বিচার আবার কখনও বা তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল । কনসেপ্টের উপর কনসেপ্ট । আর এইদিকে ৪১ বছরে এত সব কনসেপ্টের গ্যাঁড়াকলে পড়ে আমরা সাধারণ মানুষ বা বাংলাদেশ জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, অর্থনীতিতে বা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় তুলনামূলক সবচেয়ে নিচের সারিতে অবস্থান করছি । অন্যদিকে খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি আর রাজনৈতিক হানাহানিতে বা ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে ধাবমান দেশ গুলোর মধ্যে রানার্স-আপ হয়ে বসে আছি কিন্তু ইনশাল্লাহ খুব তারাতারি চ্যাম্পিয়নও হয়ে যাব ।

যাইহোক, বছর দেড়ক বা দুইয়েক আগে আমার বর্তমান বার্তা সম্পাদক ও তৎকালীন চীফ স্টাফ রিপোর্টার (ডেস্ক) রাসেল জিজ্ঞাসা করলো স্যার, আপনি তো দেশে যুদ্ধাপরাধ বিচার বাস্তবায়ন নিয়ে অনেক বছর আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, তাই আপনার কাছে জানতে চাই যুদ্ধাপরাধী ইস্যু নিয়ে দেশে এট লাস্ট কি হবে ?

- প্রতিত্তরে বললাম শুনো রাসেল, সমকালীন সময়ে আমার প্রবল মৌন সমর্থন থাকলেও মাঠ পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধ বিচার বাস্তবায়ন নিয়ে আমাকে কি আর কাজ করতে দেখ?

->> জী না স্যার...কিন্তু কেন ?

- কারণ আমি বুঝে গেছি এইসব আওয়ামী ভাউতাবাজি, একটা পলিটিকাল স্ট্যান্ড মাত্র । নির্বাচন বা মেয়াদকাল শেষ হওয়ার ঠিক ৬ মাস বা ১ বছর আগে জামাতের সাথে আ’লীগের একটি গোপন সমঝোতা হয়ে যাবে । কিছু জামাতিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হবে কিন্তু ফাঁসি কারও হবে না । আর এই গোপন সমঝোতা হবে নির্বাচন কে ঘিরে । তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংসদে বাতিল করা হবে যা বিএনপি মেনে নিবে না । বিএনপি নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত আন্দোলন করবে কিন্তু কার্যকর সরকার বিরোধী কিছুই করতে পারবে না । অন্যদিকে জামাত-শিবিরের উপর এখনকার মতো আগামীতেও চালানো হবে অত্যাচারের চরম স্ট্রীম রোলার । ধীরে ধীরে তা সকল মাত্রা অতিক্রম করবে। শুরু হবে শিবির কেন্দ্রিক সরকার বিরোধী বিদ্রোহ । মেয়াদকালের শেষ বছরে দুই/একজন কম গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধাপরাধীকে গঠিত আন্তর্জাতিক আদালতে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হবে । অর্থাৎ ঝিকে মেরে বউকে বোঝানোর মতো । নির্বাচনের ঠিক আগে জামাত-শিবিরের হাতে আর কোন পথ খোলা থাকবে না । কারণ শীর্ষ সব নীতিনির্ধারক জামাত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হবে । বাঁকি সব জামাত-শিবিরের নেতাদের বিভিন্ন মামলায় খুঁজে খুঁজে কারাগারে প্রেরণ করা হবে । গ্রেফতারের এই কাফেলা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্তও পৌছাতে পারে । ১/১১-এ যেমন অবস্থার মুখামুখি বিএনপি হয়েছিল ঠিক তেমন অবস্থার মুখোমুখি হবে জামাত-শিবির । তাদেরকে কারাগারে আটক রেখে সমঝতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে ।

->> কিন্তু স্যার আসলে কি সমঝোতা হবে ?

- বিস্তারিত বলা আমার পক্ষে সম্ভব না, কারণ পরিবেশ পরিস্থিতির উপর সমঝোতা নির্ভর করে । তবে এইটুকু নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রেখে জামাতকে এককভাবে নির্বাচনে নিয়ে আসাই হবে এই সমঝোতার প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

->> স্যার জামাত কি সমঝোতায় যাবে?

এইটা নির্ভর করবে বিএনপি’র উপর । বিএনপি যদি যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জামাতের পাশে না দাড়ায় বা কোন সমঝোতায় না আসে তাহলে আ’লীগের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে আগামী নির্বাচনে জামাতের এককভাবে অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যাবে ।

->> স্যার যদি জামাত-বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে ?

- তাহলে দ্বিতীয় কনসেপ্ট-এর বাস্তবায়ন করা হবে । আর দ্বিতীয় কনসেপ্ট হলও জাতীয় পার্টি ও বাম দলদের নিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান রক্ষার নামে ১৫-ই ফেব্রুয়ারির মতো একটা নির্বাচন করা হবে, আর যদি আন্তর্জাতিক চাপ অসহনীয় হয়ে উঠে তাহলে আজ্ঞাবহ সেনাবাহিনী দিয়ে ১/১১ এর মতো একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে পরবর্তী দুই বছরের জন্য আবারও সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে । আর এই দুই বছরে শুধু জামাত-শিবিরের বিগত ৫ বছরের কর্মকাণ্ডের বিচার করা হবে । পাশাপাশি বিচার করা হবে যুদ্ধাপরাধীদেরও । অর্থাৎ ১/১১-এ যেভাবে বিএনপি’র মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল তারচেয়েও ভয়াবহভাবে মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়া হবে জামাতের । আর দিকনির্দেশনাহীন জামাত-শিবিরের সাথে তখন জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেও বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না । আসবে আবার সেই আওয়ামীলীগ জোট ।

->>> স্যার শেষ একটা প্রশ্ন করবো । আপনি তো যুদ্ধাপরাধ নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন, দেশের জেলায় জেলায় ঘুরেছেন তথ্য সংগ্রহ করেছেন । নিজের ‘যুদ্ধাপরাধ বিচার বাস্তবায়ন কমিটি’ নিয়ে অনেক মিছিল, মিটিং, প্রেস কনফারেন্সও করেছেন, তো স্যার আপনার কি মনে হয় মওলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদী একজন যুদ্ধাপরাধী ?

-কেন জিজ্ঞাসা করলা বলও তো ?

->>> না স্যার মানে আমি ছাত্রলীগ করলেও মওলানা সাঈদীর ওয়াজের অনেক বড় ভক্ত । তার ওয়াজ আমার খুব ভালো লাগে ।

- তো শুনো, যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আমার কোন গবেষণাতেই তাঁর নাম আমি কোথাও পাইনি এবং আমার ও আমার মতো লক্ষ লক্ষ মানুষদের যৌক্তিক দৃষ্টিতে তিনি সম্পূর্ণ একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি । জামাতকে শুধু নেতৃত্ব শুন্য করার জন্য তাঁকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে । আমি এক ঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী মানুষ হলেও তাঁর জন্য অনেক খারাপ লাগে ।

->>> থাঙ্ক ইউ স্যার, অনেক অনেক থ্যাংকস । এখন চলেন আমাদের কাজে গিয়ে বসি।

-বললাম তুমি যাও, আমি আসছি । চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ আনমনা হয়ে ভাবলাম, এতক্ষণ রাসেলকে যা বললাম তাঁর সব না হোক কিন্তু যদি ৭৫%-ও সত্যি হয়ে যায় তাহলে কি ভয়াবহ কিয়ামতের দিকেই না ধাবিত হতে যাচ্ছি আমরা !!!

বিষয়: বিবিধ

১৪৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File