বাচ্চারা বাঁজাও তালি !

লিখেছেন লিখেছেন মাতৃভূমি ২৮ জুন, ২০১৩, ০২:৪৯:১৫ দুপুর

চারিদিকে ঘটতে থাকা একের পর এক অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখতে লিখতে আসলে সত্যিই আজ দিশেহারা হয়ে পরেছি। এত লেখার ফলাফল বিগ জিরো অন্যদিকে আমার লেখার রুচি ও এনার্জি লেবেলও এবাউট টু গোয়িং জিরো।

সেদিনের সেই বুয়েট শিক্ষকের স্ট্যাটাস-টি ছিল, ‘হায়েনা, ওই হায়েনা তুই দেশকে খেয়েছিস, এখন বুয়েটকে খাবি... পারবি না। আমরা বুয়েটের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলাম শিকারি। প্রথমে তোর মাথায় গুলি করবো, পরে পেটে। তারপর মাথা কেটে বুয়েটের সামনে টানিয়ে রাখবো। যাতে আর কোনও হায়েনার আক্রমণে বুয়েট আক্রান্ত না হয়।’

এদিকে ওকালতি জ্ঞানে যতটুকু জানি একজন দাগি খুনি, ধর্ষণকারী, এসিড নিক্ষেপকারি এমনকি জাল টাকার ব্যবসায়ী-কেও যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে ও আইনের ফাঁকফোকরের সর্বচ্চ ব্যবহারত্তর সাক্ষী-আইও'দের ক্রস ইকজামিন করে কিভাবে একজন আসামিকে জামিন পাইয়ে দেয়া হয় এবং মামলা থেকে খালাসও কিভাবে নেয়া হয়।

তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে বুয়েট শিক্ষককে যে মামলায় ৭ বছর জেল দেয়া হয়েছে সেই মামলা শুধু একটি হেয়ারিং এবং মাত্র দুইটি যুক্তিতে খারিজ হতে বাধ্য। যার প্রথমটি হলো, উক্তির মধ্যে লেখা শব্দ হায়েনা ! আসলে এই হায়েনা-টি কে? আমি? আপনি? বুয়েটে আসামির কোন প্রতিপক্ষ শিক্ষক? শিক্ষামন্ত্রানালয়? শিক্ষামন্ত্রী? আছে কি কোন পরিস্কার উত্তর? আছে কি কোন উল্লেখ?

দ্বিতীয় যুক্তি হলো, যেকোনো অপারাধকে তিন ভাগে ক্লাসিফিকেশন করা হয়। (১) অপরাধ সংঘটনের মনোবাসনা পোষণ করা। (২) অপরাধ সংঘটনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। (৩) অপরাধ সংঘটিত বা সম্পাদন করা। এই মামলার ক্ষেত্রে দেখা যায় আসামি অপরাধ সংঘটিত বা সম্পাদান করার মনোভাব পোষণ করেছে। তাই যদি তাকে অপরাধী হিসেবে মহামান্য আদালত ধরেও নেয়া হয় তাহলে তাকে বাংলাদেশী পিনাল কড অনুসারে নজরদারিতে রাখা যায়, সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় চালান করা যায়, বড় জোড় তাকে সে ৫৪ ধারায় ডিটেনশন (নিদৃষ্ট সময়ের জন্য কারাবাস) লাগানো যায়। কিন্তু কোন ভাবেই কারাদণ্ড দেয়া যায় না।

এক্ষেত্রে আদালত যদি ১০%-ও নিরেপেক্ষ হয় তাহলে এই মামলা খারিজ হতে বাধ্য। অবশ্য এখনও মামলার রায় চ্যালেঞ্জ করা যায় কিন্তু ইতিপূর্বে আদালত যে রায়টি দিলো তা বোধকরি আইনি ইতিহাসের পবিত্র পাতায় কালো রায় হিসেবে স্থান করে নিবে।

-

এই প্রসঙ্গে একটি গল্প বলে লেখাটি শেষ করবো। একদা এক গ্রামে জুম্মান নামের এক হিংসুটে মানুষ বসবাস করতো। তার ছিল বিয়ে যোগ্য এক মেয়ে আর দুই ছেলে। অন্যদিকে তার সাথে ছিল প্রতিবেশী কিছু লোকজনের কোন্দল। কিন্তু সে কোনভাবেই গ্রামে তাদের সাথে পেড়ে উঠতে পারছিল না। জুম্মান সবসময় টেনশনে থাকতো কিভাবে তার প্রতিপক্ষের ক্ষতি করা যায়? সারা রাত ভেবে-চিন্তে সে একটা প্লান বের করলো, সকালে সোজা থানায় গেল, মামলা করলো যে গ্রামের ওই কয়জন লোক তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। যথারীতি প্রাথমিক তদন্ত হলো, ওই কয়জন গ্রেফতার হলো, চালান হলো। জুম্মান বগল বাঁজাতে বাঁজাতে বাসায় ফিরলো। বউ-রে কইল দেখলা, কেমন দেখায় দিলাম?

বউ কাঁদো কাঁদো চোখে ম্রিয়মান গলায় বলল, ওগো এইটা কি করলা? জুম্মান কইল ওই... কেন কি হইসে রে, কি করসি আমি? বউ কইল বিয়ার আগেই নিজের মাইয়া-ডারে ধর্ষিতা বানায় দিলা? এখন ওরে বিয়া দিমু কেমনে?

-

পুনশ্চঃ এই মামলায় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আদালত কর্তৃক স্বেচ্ছায় 'হায়েনা' হিসেবে উপাধি লাভ করলেন। বাচ্চারা বাঁজাও তালি বাঁজাও।

বিষয়: বিবিধ

১৭৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File