সেকুলারিজমের প্রকৃত তাৎপর্য

লিখেছেন লিখেছেন তৎপর ১৭ জানুয়ারি, ২০১৩, ১০:৪৭:৩১ রাত



বাংলাদেশে সেকুলারিজমের অনুবাদ করা হয় “ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ”। কিন্তু এ অনুবাদ সঠিক নয়। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ সেকুলারিজমের প্রকৃত তাৎপর্য প্রকাশ করে না। এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এবং জনগন প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পারে না।

ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রকৃত তাৎপর্য রাষ্ট্র ও শিক্ষাকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করা। সেকুলারিজমের উদ্ভব হয় এনলাইটেনমেন্ট আন্দোলন বা বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে। অস্টাদশ শতাব্দিতে আন্দোলন শুরু হয় ফ্রান্সে এবং ইউরোপের কিছু দেশে । এটা ছিল ধর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন। তাদের মূলকথা ছিল দু’টি। প্রথমত: ন্যাচারালইজম(ঘধঃঁৎধষরংস) । অর্থাৎ সৃষ্টি প্রাকৃতিক ভাবে হয়েছে। এখানে “স্রষ্টা” বলে কোনো সত্তার ভূমিকা নেই। অর্থাৎ এটি স্রষ্টাকে অস্বীকার করারই শামিল। দ্বিতীয়ত: রেশনেলইজম(জধঃরড়হধষরংস) বা যুক্তিবাদ। অর্থাৎ মানুষ যুক্তির ভিত্তিতে চলবে। মানষ জীবনে চলার ক্ষেত্রে যুক্তির ভিত্তিতে চলবে। স্রষ্টা বা ওহী বা ধর্মগ্রন্থের নির্দেশের ভিত্তিতে নয়। এটিও নাস্তিকতারই নামান্তর। এ দু’টি ছিল এনলাইটেনমেন্ট মুভমেন্টের মূল কথা ।

এ চিন্তারই প্রায়োগিক বিস্তার ঘটেছে সেকুলারিজম এর নামে। কোথাও এর প্রয়োগ নাস্তিকতার রুপ নিয়েছে। যেমন রাশিয়া, চীন ও কম্যুনিস্ট দেশসমূহে। অন্যান্য দেশে এটা রাষ্ট্র ও শিক্ষাকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে রুপায়িত হয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি এ সব দেশে সরকারী বা সরকারী সাহায্য প্রাপ্ত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম শিক্ষা দেওয়া হয় না। তবে প্রত্যেক ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের নিজের অর্থে নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তা করাও হয়। ভারতেও শিক্ষাকে ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সরকারী কোনো স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষার কোনো সুযোগ নেই। তবে বেসরকারী স্কুলে ধর্ম শিক্ষা দিতে পারে। তবে তারা সরকারী সাহায্য নিতে পারবে না।

বলার অপেক্ষা রাখা না যে এ ধরনের ব্যবস্থার সংগে ইসলাম বা কোনো ধর্মেরই কোনো সম্পর্ক নাই। কোনো ধর্মই এ ধরনের ব্যবস্থা সমর্থন করে না। ইসলামের কথা বলতে গেলে বলতে হয় যে, রাসূল(সাঃ) নিজেই মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন যার আইন ছিল ইসলামী শরীয়া। খেলাফতে রাশেদার সময় ও রাষ্ট্রের ভিত্তি ছিল ইসলাম ও ইসলামী আইন। একই কথা সত্য উমাইয়া, আব্বাসী ও উসমানী খিলাফতের ব্যাপারে এবং মোঘল রাষ্ট্রের মতো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে। আল্লাহ হচ্ছেন মালিকিন্ নাস ( মানুষের শাসক, সুরা ইখলাস), এবং মালিকাল মুলক (রাষ্ট্রের মালিক, সুরা আলে ইমরান) কোনো মুসলিমই আল্লাহর চুড়ান্ত ক্ষমতা অস্বীকার করতে পারে না।

সেকুলার ব্যবস্থা বিশ্বে কম বেশী দুই শত বৎসর প্রতিষ্ঠিত আছে। এতে তেমন কোনো কল্যাণ হয়নি। সেকুলারিজমের গর্ভ থেকে কম্যুনিজম ও ফ্যাসিবাদের উদ্ভব হয়েছে। এ সব মতবাদ মানুষের কোনো কাজেই লাগেনি। সেকুলারিজমের কারনেই উগ্র পুঁজিবাদের জন্ম হয়েছে যারা সারা বিশ্বের সম্পদ লুট করে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় নিয়ে গেছে। সেকুলার শাসকরাই বিশ্বে কলোনী বানিয়েছে। সারা বিশ্বকে দাস বানিয়েছে। বিংশ শতাব্দির শেষভাগে এ সব কলোনী মুক্ত হয়েছে। সেকুলার শাসকদের কারনেই বিশ্বে প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ হয়েছে। ভিয়েতনাম ও আলজিরিয়ায় রক্তপাত হয়েছে।

সেকুলারিজমের প্রকৃত অর্থ না জানার কারনেই অনেক লোক নামায পড়ে আবার সেকুলার। সেকুলারিজমের অর্থ বুঝলে এ বিভ্রান্তি দূর হবে। এখন আমি ইসলামী মন বা ধার্মিক মন এবং সেকুলার মনের পার্থক্য বলব। ইসলামী মন হল সেই মন, যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধান খুজে কোরআন ও সুন্নাতে, পরে অন্যদিকে। অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে তাদের ধর্মের মধ্যে সমাধান খুজে, পরে অন্যদিকে। কিন্তু সেকুলার মন সমাধান খুজে বিভিন্ন পন্ডিতের মতামতে, যুক্তরাষ্ট্র কি করে, রাশিয়া কি করে, চীন কি করে এসব দিকে। এ প্রেক্ষিতে ইসলাম মনাদের দায়িত্ব সেকুলার মনাদেরকে ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনা। এ জন্য সেকুলারদেরকে ইসলামের মৌলিক কিছু বই পড়াতে হবে। আশা করি এতে ভালো ফল হবে।

----------------------------

লেখক ঃ শাহ আব্দুল হান্নান

সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার।

বিষয়: রাজনীতি

১০১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File