মানুষ খুন করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবেন?
লিখেছেন লিখেছেন শামীম রেজা ১৪ মার্চ, ২০১৩, ০২:১৩:০২ দুপুর
মিডিয়ার কল্যানে দেশ এবং দেশের মানুষ আজ অনেক এগিয়ে গেছে, মিডিয়ার কথামতো এখন তারা রাতের বেলায় সূর্য দেখতে পান এবং দিনের অন্ধকারে পথ হারিয়ে ফেলেন। ধন্যবাদ মিডিয়াকে দিতেই হয় যখন দেখি ইসলামী রাস্ট্রব্যবস্থার কথা বললেই কেউ কেউ বলে ওঠেন মানুষ হত্যা করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবেন?
অর্থাৎ ইসলাম প্রতিষ্ঠা শব্দটির সাথে মানুষ হত্যা করাটা ওতপ্রতো ভাবে জড়িয়ে আছে এটা অবশ্যই মিডিয়ার অবদান।
যেখানে একটা প্রজন্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা শব্দটি শুনলেই ফিরে যায় সেই সোনালী অতীতে, চোখের সামনে ভেসে ওঠে ইসলামী কল্যান রাস্ট্রের চিত্র, যেখানে সকল ধর্মের মানুষ তার ধর্মীয় অধিকার ভোগ করবে। দারিদ্রতা থাকবেনা, ধনীর সম্পদে গরীবের হক থাকবে। রাস্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ক্ষুধার্তদের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে, বেকারদের জন্য করা হবে কর্মসংস্থানের। জাকাতের অর্থে রাস্ট্রীয় উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড পরিচালিত হবে, ধনীদের উপর থাকবেনা অহেতুক করের বোঝা। বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরবেনা কোনো বনি আদম।
ঠিক তার বিপরীত দিকে, প্রজন্মের আরেকটি অংশ ইসলামী রাস্ট্র ব্যবস্থার কথা শুনলেই আঁতকে উঠে! তাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে একদল হিংস্র দাড়ি পাগড়ী পরিহীত লোক লম্বা ছুড়ি হাতে নিয়ে তাদের জবাই করতে ছুটে আসছে।
সেদিন একজন মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায়ীর একটা লেখা পড়লাম, সেখানে দেখলাম এক পাঠক প্রশ্ন করছেন আমরা কল্যান রাস্ট্রের কথা শুনলেই সমাজতন্ত্রের কথা বলি, অথচ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা করা হয়েছে চীন এবং রাশিয়ায়। সমাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য এখনো ব্যক্তিস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে চীনের জনগণের কাছ থেকে। ইসলামের গায়েতো এমন কাদা নেই, তারপরেও আমরা কেনো ইসলামের কথা বলছিনা, ইসলামী রাস্ট্রের কথা বলছিনা? জবাবে ঐ মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায়ী বললেন, মানুষ হত্যা করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবেন? ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে আমি দাড়ি কামাতে পারবোনা, টাকনুর উপরে প্যান্ট পরতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
বিশ্বের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, সমাজবাদ,পুঁজিবাদ, জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য লক্ষ লক্ষ লোকের প্রাণ কেড়ে নেয়া হয়েছে, হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পারমানবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিলো, বসনিয়া চেচনিয়াতে গণহত্যার কথা আমরা ভুলে যেতে পারিনা। রুশ বিপ্লব এবং চীনে মাওবাদীরা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে যে নৃশংস হত্যাকান্ড পরিচালিত করেছিলো তা ইতিহাস সাক্ষী। বেশিদূরে যাবো কেনো ৭১সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের নামে পাকিস্থানীরা এবং বাংলাদেশীরা যে হত্যাকান্ড পরিচালিত করেছিলো সেটাতো আমাদের নিজের ইতিহাস।
উপরে যে উদাহরণগুলো দেয়া হলো তার কোনটির সাথেই ইসলামের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই, এমনকি ইসলামের ইতিহাসে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য এমন নৃশংস রক্তপাতের ঘটনার কোনো নজীর নেই। তাহলে কেনো ইসলামকেই রক্তপাতের জন্য দায়ী করা হয়?
হিটলারের প্রচারমন্ত্রী ছিলেন যোশেফ গোয়েবলস, তার একটি বহুল প্রাচারিত উক্তি হচ্ছে "একটি মিথ্যাকে ১০বার বললে সেটি সত্য হয়ে যায়"। ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলামের বিরুদ্ধে এভাবে ক্রমাগত মিথ্যা প্রচারণ চালিয়ে তারা মূলত ইসলামের নামে কালিমা লেপন করতে চায়। যেটা আমরা লক্ষ করছি বাংলাদেশের প্রক্ষাপটেও, একাত্তর সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত যতগুলো হত্যাকান্ড কিংবা ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশই ঘটেছে আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপি'র ছত্রছায়ায় ঐ রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকদ্বারা। এমনকি ছাত্রলীগ-ছাত্রদল প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিলেও জঙ্গী হিসেবে আখ্যায়ীত করা হচ্ছে ইসলামপন্থীদের। এটা ইসলাম বিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
পরিশেষ কাজী নজরুল ইসলাম-এর ভাষায় "উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ আমরা বলিব" সাম্য, শান্তি, এক আল্লাহ জিন্দাবাদ"। ইসলাম বিদ্বেষিদের সকল অপপ্রচারের মুখে ছাই দিয়ে ইসলামী আন্দোলন দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন ইসলামী খিলাফতের অধীনে এদেশের মানুষ দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ রাস্ট্রে বসবাসের জন্য গর্ববোধ করবে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন