বিরাশির কথকতা এবং মূল্যায়ন
লিখেছেন লিখেছেন শামীম রেজা ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:৫৩:১৪ দুপুর
১৯৮২সালে ছাত্রশিবিরের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন আব্দুল কাদের বাচ্চু। বাচ্চু সাহেব কেন্দ্রীয় সভাপতি হওয়ার পরপরেই এমন কিছু গোপন কার্যক্রম গ্রহণ করলেন যেটা জামায়াতের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছিলো। ফলশ্রুতিতে যা হওয়ার তাই হলো তিনি বহিষ্কৃত হলেন। তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আমার তেমন একটা ধারণা নেই,যেহেতু ফরিদ আহমদ রেজা সাহেব বিতর্ক তৈরি করেছেন আশা করছি কেউ না কেউ অবশ্যই কলম ধরবেন।
তথ্যগত অজ্ঞতার কারণে প্রেক্ষাপটের গভীরে যেতে পারবোনা, তবে ফরিদ আহমদ রেজা সাহেবের বক্তব্য থেকেই যতটুকু বের হয়ে এসেছে তা নিয়েই কিঞ্চিত সমালোচনা সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করবো।
ঘটনার সূত্রপাত যুব শিবির গঠন দিয়ে। আব্দুল কাদের বাচ্চু সাহেবরা দায়িত্ব গ্রহণ করেই যুব শিবির গঠনের উদ্যোগ নিলেন এবং সেটা জামায়াতের অগোচরেই। ছাত্রশিবির আসমান থেকে নাজিল হয়নাই, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব তৈরির কারখানা হিসেবে ছাত্রশিবিরকে তৈরি করা হয়েছিলো। সেই জামায়াতকে অন্ধকারে রেখেই উদ্যোগ নেয়া হয় যুব শিবির গঠনের। জামায়াত কি সেটা মেনে নিবে?
এবার আসি যুবশিবির গঠনের রেজাল্ট কি হতে পারে- শিবিরের প্রাক্তন/সদ্য বিদায়ীরা আগে যেখানে সরাসরি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করতেন সেখানে তারা জামায়াতে যোগ না দিয়ে যুব শিবিরে যোগ দিবেন, খুব সিম্পল একটা হিসেব। কিন্তু ঘটনার পেছনেও ঘটনা থাকে, ব্যাপারটা যত সরল হিসেবে ভাবা হচ্ছে ততটা সরল নয়। এই যুব শিবিরই পরবর্তীতে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতো। মূল কথা হচ্ছে জামায়াতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ছাত্রশিবিরকে ছিনতাই করার সুগভীর পরিকল্পনা থেকেই উদ্ভব হয়েছিলো যুব শিবির ধারণা।
এখানে আরেকটা ব্যাপার পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন, যদি আদৌ যুবশিবির গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় সেটা করবে জামায়াতে ইসলামী কিংবা শিবিরের প্রাক্তন দায়িত্বশীলরা। আব্দুল কাদের বাচ্চু সাহেবরা কেন যুব শিবির গঠন করার প্রকল্প গ্রহণ করলেন, তিনি কি শিবির থেকে বিদায় নিয়েছেন?
শুধু যুব শিবির গঠন করেতো একটা ছাত্র সংগঠনকে ছিনতাই করা যায়না। কি করতে হবে? হ্যাঁ, বিশাল একটা কাজ করতে হবে, মুক্তিযুদ্ধ, এখানে মুক্তিযুদ্ধ বিশাল একটা ফ্যাক্ট। “জামায়াতকে জবাব দিতে হবে কেনো তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো”। ছাত্রশিবিরের মধ্যে প্রচারণা শুরু করা হলো, জামায়াতের বিরুদ্ধে শিবির কর্মীদের মন বিষিয়ে তোলার লক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ললিপপ হাজির করা হলো।
আরো একটা কাজ করতে হবে, শিবিরকে জামায়াত থেকে পৃথক করতে হবে। "শিবির স্বাধীন সংগঠন তাই শিবিরে জামায়াতের হস্তক্ষেপ চলবেনা"। শিবিরের প্রোগ্রামগুলোতে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে দাওয়াত দেয়ার ঐতিহ্য ধীরে ধীরে বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করা হলো। অর্থাৎ একটা ছাত্রসংগঠনকে তার মূল সংগঠন থেকে ছিনিয়ে নেয়ার যতগুলো ধাপ আছে তার সবগুলোই করা হলো আব্দুল কাদের বাচ্চুর নেতৃত্বে।
এই পরিস্থিতিতে জামায়াত কি করবে? বসে বসে আঙুল চুষবে? ললিপপ খাবে? না জামায়াত সে পথে যায়নাই। ফরীদ আহমদ রেজা সাহেবের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সংগঠন থেকে বের করে দেয়া হয়েছিলো।
এবার আসি আব্দুল কাদের বাচ্চু কিংবা ফরিদ আহমদ রেজা সাহেবরা তাদের অবস্থানে কতটা সৎ ছিলেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী তারা কোন ষড়যন্ত্র করেন নাই, তারা দুধে ধোয়া তুলসী পাতা, যুব শিবির গঠনের পেছনে তাদের কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিলোনা। শিবিরকে জামায়াতের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখার পেছনে তাদের কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিলোনা। শরীর থেকে ৭১ ঝেড়ে ফেললেই তারা শনৈ শনৈ উন্নতি করে দেশের ক্ষমতার মসনদ দখল করতে পারবেন।
শিবির থেকে বহিষ্কৃত হয়ে ফরিদ আহমদ রেজা সাহেব আর ইসলামী পলিটিক্যাল সংগঠন করেননাই। ইসলামী পলিটিক্যাল সংগঠন বলতে আমি জামায়াতকে বুঝাইনাই। সেটা যেকোন ইসলামী পলিটিক্যাল সংগঠন হতে পারে। কিন্তু যেই সাইফুল আলম মিলন কিংবা অন্যান্য জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় দাড় করিয়েছেন তারা কিন্তু এখনো আন্দোলনের ময়দানে সক্রিয় রয়েছেন। এখানেই মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায় সেদিন কার কিংবা কাদের অবস্থান সঠিক ছিলো।
এরপর আসি আব্দুল কাদের বাচ্চু প্রসঙ্গে। আব্দুল কাদের বাচ্চু সাহেব শিবির থেকে বহিষ্কৃত হয়ে গঠন করলেন যুব শিবির, তিনিই হলেন যুবশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি। তারপর যুব শিবির নিয়ে গঠন করলেন খেলাফত মজলিস। খেলাফত মজলিস ভেঙে গড়লেন পৃথক খেলাফত মজলিশ। আর সবচাইতে মজার ব্যাপার হচ্ছে ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রশিবিরকে জামায়াতের রাহু মুক্ত করার যে মুনাফেকি সিদ্ধান্ত সেদিন আব্দুল কাদের বাচ্চু সাহেবরা গ্রহণ করেছিলেন সেই বাচ্চু সাহেবরাই আবার ছাত্রমজলিশকে খেলাফত মজলিশের অঙ্গসংগঠন বানিয়েছেন। যুব মজলিশও খেলাফত মজলিশের অঙ্গসংগঠন। মুখে এক অন্তরে আরেক! আব্দুল কাদের বাচ্চু সাহেবের এসব পদক্ষেপই প্রমাণ করে সেদিন যুব শিবির গঠনের পেছনে তাদের নিয়্যত ত্রুটি মুক্ত ছিলোনা।
এবার আসি মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে, ছাত্রশিবিরের গায়ে মুক্তিযুদ্ধের গন্ধ নাই, তাই ছাত্রশিবির দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ ছাত্রসংগঠন। অন্যদিকে জামায়াতের গায়ে মুক্তিযুদ্ধের গন্ধ আছে তাই জামায়াত পিছিয়ে আছে। জামায়াতের শরীর থেকে মুক্তিযুদ্ধের গন্ধ ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে তাহলেই জামায়াত ক্ষমতায় চলে যাবে এমন একটা বক্তব্য ছিলো বাচ্চু গং এর।
আব্দুল কাদের বাচ্চুরা খেলাফত মজলিশ গঠন করলেন আজ বহু বছর হয়ে গেলো। কই, খেলাফতের গায়েতো মুক্তিযুদ্ধের গন্ধ নাই! কি করতে পেরেছেন তারা? যুব মজলিশ গঠন করে কি উল্টাইছেন তারা? যতটুকু জানি আব্দুল কাদের বাচ্চু সাহেবরা খেলাফত মজলিসের যে অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন সে অংশে যুব মজলিশ নামক কোন সংগঠনও তারা তৈরি করেন নাই।
ভাজা মাছ সামনে দিলে সেটাকে উল্টে, পাল্টে, চিৎ করে, কাৎ করে সবভাবেই খাওয়া যায়। মাছ কয়জনে ভেজে খেতে পারে সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন। রেডিমেড ছাত্রশিবিরকে হাতে পেয়ে গো-গ্রাসে গিলতে চেয়েছিলেন আব্দুল কাদের বাচ্চু এবং ফরিদ আহমদ গং। খেতে পারেন নাই, মুখ পুড়ে গেছে, এখন পোড়া মুখে একপাক্ষিক ইতিহাস চর্চা করছেন। লিখনির বিভিন্ন বাকে প্রতিপক্ষের বক্তব্যকে “প্রাসঙ্গিক অনেক কথা” নামক পর্দা দিয়ে ঢেকে রেখেছেন।
এভাবে ইতিহাস চর্চা হয়না জনাব ফরিদ আহমদ সাহেব, আপনার কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে দিবে আপনার ঐতিহাসিক অবস্থান সঠিক কিংবা ভ্রান্ত ছিলো। শিবির থেকে বহিষ্কৃত হয়ে আপনি কি করেছেন,আপনার কাজ দ্বারাই আমরা আপনাকে মূল্যায়ন করবো।
© শামীম রেজা
১৬/০৯.২০১৫
https://www.facebook.com/shamimreja/posts/1034306069927490
বিষয়: বিবিধ
১৭১০ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কোন ব্যক্তি যার জন্ম ১৯৭০ সালে হয়েছে, তাকে ফাসানোর দরকার পড়লে, তাকেও রাতারাতি রাজাকার কমান্ডার বানিয়ে ফেলা যাবে, বাংলাদেশে এর সবগুলোই সম্ভব।
কোন ইসলামী ব্যক্তি সে রাজাকার না হলেও, যদি ফাসানোর চিন্তা মাথায় আসে, তাহলে কোন না কোন ভাবেই তাকে ফাসানো হবে। কেননা তার ফেঁসে যাবার মাধ্যমে কারো গদি রক্ষা, গদি স্থায়ী, গদি প্রাপ্তির সাথে সংযোগ আছে।
ফরিদ রেজা সাহেবেরা হল গুই সাপের মত। বহুদিন আগেই এসব কথা লিখলে হতয় উপকার পাওয়া যেত। তাঁর লিখার সময় বিচারেই বুঝা যায় তাঁরা তখনও কত অদূরদর্শী ছিলেন।
তিনি এই সময়ে এই জন্যই কলম ধরেছেন যে, তিনি ধারণা দিতে চাচ্ছেন যে, 'যদি সে সময় তাদের কথা মত, দলের নেতরা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের কাদা ধুয়ে ফেলত তাহলে আজকে তারা ফেঁসে যেতেন না। তাদেরকে যে কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে, আজ সে কারণে দলের সমস্যা হচ্ছে'। তাদের সেই ঐতিহাসিক চিন্তা সঠিক প্রমান করতে আজকের সময় একটু সুবিধা জনক, তাই তাদের কলম ধরা। অনেক ধন্যবাদ
জাযাকাল্লাহ...
আরেকটু বেশী লিখলে ভালো হতো!
সেই সময়ের ঘটনা থেকে আল্লাহ্তায়ালা আমাকে হেফাজত করেছিলেন; এখন এ বিষয়ে কোন পক্ষকে ঠিক বেঠিক মন্তব্য করে আমার জিহ্বা(লেখনী)কে জড়াতে চাইনা!!
রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ঠিক-বেঠিক হওয়া না হওয়া রাজনীতির গতিপথের দ্বারা নির্ধারিত হয়, ব্যক্তির দায় শুধু তার ইখলাস ও কর্মপ্রক্রি্যার স্বচ্ছতা তথা আদালতের উপর নির্ভর করে!
আলোচ্য পোস্টের ভাষা ও শব্দের ব্যবহার আমার কাছে কর্কশ ও আক্রমণাত্মক মনে হলেও ধরে নিয়েছি যে, এর দায় যাঁর-
তিনি হয়তো ঐ সময়ের অনেক কিছুর প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী এবং
ভেবে-চিন্তেই শব্দপ্রয়োগ করেছেন!
আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন!!
জাযাকাল্লাহ..
আর রেজা ভাইরা যা করছেন - এটা বর্তমান সমযের ফসল। দেখা যাক। মনে হয় আবার ও ভুল করলেন রেজা ভাই।
চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় রেজা ভাইকে স্বাভাবিক ভাবেই ভালোবাসতাম সামনেরে কাতারের নেতা হিসেবে। যথেষ্ট পান খেতেন, পানও খাইয়েছি অনেকবার।
চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে ছাত্রসংসদ নির্বাচানের প্রাক্ষালে আব্দুল কাদের বাচ্চু ভাইকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। তাঁর বাগ্মীতা সেদিন আমাকে মুগ্ধ করেছিল। এতকিছুর পরও বিদ্রোহের দাওয়াতকে ‘না’ বলতে কোনই কার্পণ্য করিনি সেদিন। আলহামদু লিল্লাহ।
১/ ছাত্রদের মাঝে ইসলামি আন্দোলনের কনসেপ্ট এই উপমহাদেশে মাওলানা মওদূদী তথা জামায়াতে ইসলামি এনেছিল। তারই প্রেক্ষিতে সৃষ্টি হলো ইসলামি ছাত্রসংঘ পরবর্তীতে ইসলামি ছাত্রশিবির। বলা যায় জামায়াতের ব্রেইন চাইল্ড হলো ইসলামি ছাত্রশিবির। একদল সুশিক্ষিত জাতি বৃহ্ত্তর আন্দোলনের নেতৃত্ব দিবে এর জন্যই জামায়াতের মাধ্যমেই ছাত্রসংঘ/ছাত্রশিবির তৈরি হলো। কাজেই একদল নিখাদ ছাত্র দ্বারা ছাত্রসংগঠন তৈরি হয়নি এটা হয়েছে মুরুব্বীদের চিন্তাক্রমে। তাহলে জামায়াতের প্রভাবমুক্ত হয়ে ছাত্রশিবির চালানোর সিদ্ধান্তটা কি আত্নঘাতি ছিলনা? আফটার অল ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন প্রোগ্রামে জামায়াতের প্রচুর সহায়তা থাকে। সংবিধানে কি আছে না আছে সেটা না ধরে (কারন সংবিধান একটা জাস্ট নিয়ম। মাঝে মধ্যেই নিয়মকে বিভিন্ন সময়ে কার্ভ করেছে শিবির) আমরা যদি বৃহত্তর আন্দোলনের কথা চিন্তা করি তাহলে জামায়াতে ইসলাম যেই কনসেপ্টে একটা ছাত্রসংগঠন তৈরি করল সেটাকে কি করে তারা নিজেদের প্রভাবমুক্তকরন করার প্রতি সম্মত হবে?
২/ আপনার লেখা পড়ে বুঝলাম যুব শিবির গঠন প্রক্রিয়া চলছিল আপনারা সংগঠনের অধীনে দায়িত্বশীল থাকাকালে এবং সেটা অনেকটাই মুরুব্বীদেরকে ধোয়াঁশার মধ্যে রেখে। যুব শিবির গঠনের কাজতো শিবিরের করার কথা না। এটা করার কথা বৃহত্তর সংগঠনের। যেমন করে তারা ছাত্রদের মাঝে সংগঠনের কথা চিন্তা করেছিল এবং এটার ব্যাপারে সতর্কীকরন করার পরেও কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে যুব শিবির গঠন করার প্রক্রিয়া হচ্ছিল। এটা নেতৃত্বের আনুগত্যের বাহিরে যায় কিনা? খালিদ বিন ওয়ালিদ যেমন করে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে সাধারন সৈনিকের কাতারে চলে গিয়েছিলেন যুব শিবিরের প্রতিষ্ঠাতাগণ সেইরকম মত সেক্রিফাইস করার মনমানষিকতা লালন করতে পারেনি। এককথায় বলতে গেলে তারা নিজেদের মতকেই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তাহলে বুঝা গেল যুব শিবির যদি সফল হত তাহলে যার যার মতামত প্রতিষ্ঠার জন্য এই সংগঠন ব্যবহৃত হতো।
৩/ '৭১ এ আপনারা ছিলেননা কিন্তু '৭৭ এ যারা শিবির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তারা সবাই '৭১ এ ছিলেন এবং পুরো ঘটনা জানেন। তাদের কাছ থেকে কি '৭১ এর অপকর্মে (যেই ধর্ষন, খুনের অভিযোগে আজ নেতৃবৃন্দের ফাঁসি হচ্ছে) জামায়াত সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা সেটা জানতে চাননি? জামায়াত কেন কনফেস করবে? কারন '৭১ হয়েছিল জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? আর '৭১ এ পাক সরকার যেই অপকর্ম করেছিল সেগুলোর জোড়াল প্রতিবাদ তারা তাদের তখনকার সময়ে যতটুকু শক্তি ছিল করেছে। তারপরেও কিভাবে দায়মুক্তির কথা আসে? তাহলে কি আপনারা জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে শিবিরকে পরিচালনা করতে চাইছিলেন?
৪/ জামায়াত নাম পরিবর্তন করেনাই কেন এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তবে নাম পরিবর্তন করলে কি হত? নেতৃত্বে কারা থাকত সেটার বিষয়ে কি কোন দৃষ্টিভংগি ছিল? কারন জামায়াতের উৎপত্তিস্থল পশ্চিম পাকিস্তান। সংগঠনের ভিত সেখানে অনেক মজবুত ছিল। আর পূর্ব পাকিস্তানে যারা নেতা ছিলেন তারা কেন্দ্রের আনুগত্য করার কারনে '৭১ এর কাদা তাদের মধ্যে লেগেছিল। পূর্ব পাকিস্তানে পরবর্তী বাংলাদেশে নুতন জামায়াতের হাল ধরতে পারে যার '৭১ এর কোন কাদা নাই সেইরকম নেতা কি ছিল জামায়াতে? ছাত্রসংঘে যারা ছিল তাদের বহু মানুষ আলবদর বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। ছাত্রসংঘ অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। তাহলে ছাত্রসংঘ থেকে নেতা এনে জামায়াত চালালেও সেই একই ফল হতো। দেখা যেত নুতন জামায়াতের হাল পুরাতন নেতৃত্বকেই ধরতে হত। তাহলে নাম পরিবর্তন করে কি ফায়দা হতো?
৫/ ইসলামি আন্দোলনে কি রাজনীতি বেহুদা জিনিস? রাজনীতি না করলে ইসলামপন্থীরা কিভাবে ক্ষমতায় যাবে? শুধু সামাজিক আন্দোলন করে একটা সংগঠন হয়ত জনপ্রিয়তা পাবে কিন্তু সেই জনপ্রিয়তাকে রাজনীতি ছাড়া কিভাবে পূর্ণতা দেওয়া যায়?
৬/ ছাত্রশিবিরকে জামায়াত প্রভাবমুক্ত করে একটা অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার একটা প্রচেষ্টা আপনাদের মধ্যে ছিল। তাহলে যারা ছাত্রত্ব শেষ করবে তারা পরে যুব শিবিরে যোগ দিবে। সেই যুবশিবির কি রাজনৈতিক প্লাটফর্মে কাজ করবে? সারাজীবন অরাজনৈতিক কাজ করে হঠাৎ করে কিভাবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে নেতৃত্ব দেয়া যায় যদি রাজনীতি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান ছাত্রদের মাঝে না থাকে। এটা কি টিকে থাকার মত সংগঠন হলো? আর এটাতো সরাসরি জামায়াতের বিকল্প প্লাটফরম হয়ে গেল। এতে কি ইসলামি শক্তি দুইভাগ হয়ে গেলনা? তাহলে জামায়াতের আশংকা কি অমূলক ছিল যার ভিত্তিতে তৎকালিন শিবির নেতৃবৃন্দকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল? বৃহত্তর আন্দোলনকে মজবুতিকরণের একটা স্টেপ ছাত্রশিবির সেটাকে জামায়াত ভাগ করতে দিতে চাইবে কেন?
৭/ আপনারা চলে যাওয়ার পরেও জামায়াত আপনাদের সংগঠনে যোগ দেবার জন্য অনেক অনুরোধ করেছে। যদিও সেখানে যোগ দেয়া না দেয়া আপনাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার এটা নিয়ে আপনাদের কাঠগড়ায় দাড় করানোর কোন এখতিয়ার কারও নেই। তারপরেও বলি আপনাদের সেইমসয়কার সময়ে অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল। আপনি সহ যারা বের হয়ে গিয়েছিলেন তারা জামায়াতে যোগ দিলে জামায়াত আপনাদের মেধার কারনে আরও ডায়নামিক হতে পারত। আফটার অল বর্তমান জামায়াত কে টিকিয়ে রেখেছে সকল সাবেক শিবির। আপনারা থাকলে জামায়াত শক্তিশালি হত। যেহেতু নেতৃবৃন্দ বলেছিল আপনাদের ব্যাপারে তাদের কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু স্বাধীনচেতা গোলামী না করার অজুহাতে বৃহত্তর আন্দোলন থেকে দূরে থাকলেন। তাহলে এরকম স্বাধীনচেতা যেই চেতনা কোন সংগঠন আমাকে ডমিনেট করতে পারবেনা, আমাকে কন্ট্রোল করতে পারবেনা এগুলো করলে ইসলামি আন্দোলনের প্রকৃতপক্ষে কোন কল্যান আসবে কিনা।
৮/ আরেকটা কিউরিউসিটি। এই ধরনের অতিরিক্ত স্বাধীনচেতা চরিত্র যে সাফল্য বয়ে আনতে পারেনা সেটার প্রমানতো যুব শিবির। শিবিরের থেকে উল্লেখযোগ্য এবং মেধাবী একটা অংশ বের হয়ে গিয়ে যুব শিবির গঠন করল। কিন্তু সেই যুবশিবিরের তেমন কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় না। কিন্তু ছাত্রশিবির বা জামায়াত ইসলামী বহাল তবিয়তেই আছে। বিষয়টি আসলে কি এটা বোঝায় যে, কিছু অতিরিক্ত স্বাধীনচেতা মানুষ বৃহত্তর অংশের সাথে দ্বিমত করে নিজেদের মতকে প্রাধান্য দিয়ে একটা কিছু বানালো। কিন্তু যখন নিজেদের পরিচালনায় এলো, তখন নিজেরাই আবার স্থিরতার সাথে এক হয়ে আর কাজ করতে পারলো না। অর্থাৎ অসংগঠিত হবার যে বীজ বুনে তাঁরা নতুন সংগঠন তৈরি করলেন, সেই বীজই চারা গজিয়ে গাছ হয়ে তাদেরকে অসংগঠিতই করে দিল।
৯/ আপনি লেখার অনেক জায়গাতে জামায়াতের জন্যে কাজ করাকে গোলামী হিসেবে দেখিয়েছেন। জামায়াত ইসলামী বা ইসলামী ছাত্রশিবিরের কাজকে পুর্ববর্তী ওলামা-মাশায়েখদের কাজের বিপরীতে দাড় করিয়েছেন। অথচ জামায়াতের শুরুই হয়েছে পুর্ববর্তী ওয়ালা-মাশায়েখদের কাজকে সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে পুর্নতা দেয়ার জন্যে, কাউন্টার বা বিরোধীতার জন্যে নয়। তাছাড়া জামায়াত বা শিবির নতুন বিষয় ইসলামে যোগ করেনি বা কোন বিষয়কে বিয়োগও করেনি। তাহলে ইসলামী সংগঠিত প্রক্রিয়া চালানোর জন্যে প্রতিষ্ঠিত জামায়াত বা শিবিরের কার্যক্রমকে আপনি যখন পুর্ববর্তী ওলামা-মাশায়েখদের কার্যক্রমের বিপরীতে দাড় করান, তখন তা কেবল নিজের অবস্থানকে জাস্টিফাই করার একটা দুর্বল প্রচেষ্টা বলে প্রতীয়মান হয় না!
ইসলামী আন্দোলন চার বার ভেঙ্গেছে। এর
জন্য, আমি আলবদর বলছি এবং জামাত
রিসার্স পর্ব পড়া যেতে পারে। খুজে পেয়ে যাবেন,কোথায় ত্রুটি রয়েছে। পরে আমি মাওলানা আব্দুর জব্বার সাহেব কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। উত্তর১/ বস্তুবাদী লোক দ্বারা ইসলামী বিপ্লব হয় না। ২/ মানুষের আইন মানলে ঈমান হয় না। যুব শিবির সেই সময় ইরান ঘেষা হয়ে যায়। আমি নিজেও ইরানের
বিপ্লব দেখতে গিয়েছিলাম। ওখানের শিয়ারা শেরেকের সাথে জড়িত। তাই আমার কাছে শিয়া
বিপ্লব মনে হয়েছে।
http://onlinebangla.com.bd/post/11572/শিবিরের-ক্রান্তিকাল:-বিরাশির-কথকতা-১
মন্তব্য করতে লগইন করুন