মাহমুদুর রহমান : তারুণ্যের ভালোবাসা
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ মাহবুব হাসান ২৬ জানুয়ারি, ২০১৩, ১২:১৫:০৯ দুপুর
আমার দেশ-এর সম্পাদক বন্দি মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে এরই মধ্যে বিজ্ঞজনেরা বেশ লেখালেখি করে ফেলেছেন। এমনকি তার মুক্তি পর্যন্তই বিজ্ঞজনেরা লেখালেখি চালিয়ে যাবেন—এমনটাই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এসব লেখালেখির কারণে পরোক্ষভাবে যে বিষয়টি বোঝা যায় তা হলো, এদেশের বিজ্ঞজনদের অনেকেই মাহমুদুর রহমানের সত্ সাহসিকতায় মুগ্ধ। তার স্বাধীন শক্ত হাতের লেখনীর ভক্ত। যদি বলি, এরা প্রত্যেকেই মাহমুদুর রহমানকে খুব আবেগ দিয়ে ভালোবাসেন—তাও বোধকরি অত্যুক্তি হবে না। বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রভাষক ড. মু. শফিকুল ইসলাম মাসুদ তো তার একটি লেখার সূচনাতে বিষয়টি এভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ‘আমিও অনেকের মতো প্রিয় মানুষ মাহমুদুর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে হৃদয়ের সবটুকু আবেগ দিয়ে ভালোবাসি।’ এদেশের তরুণ সমাজের একটা বিশাল অংশও যে মাহমুদুর রহমানের দারুণ ভক্ত, তার লেখার সাহসী প্রেমিক; তা কিন্তু তরুণদের বিচ্ছিন্ন ক’টি মানববন্ধন ছাড়া সেভাবে ফুটে উঠছে না। আর যাও হচ্ছে তা অনেকটা নীরবে-নিভৃতেই। তাই আমি একজন তরুণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের সমাজের নীরবে-নিভৃতে ঘটে যাওয়া কিছু বিষয়াবলি উঠিয়ে আনার জন্যই আমার এ লেখাটির অবতারণা।
এক
‘মাহমুদুর রহমানের রিমান্ড মঞ্জুর’ সংবাদটি নিয়ে একটি দৈনিকের ওয়েবসাইটে তরুণদের বেশকিছু কমেন্ট একদা আমার চোখে পড়েছিল। দুটি কমেন্ট পড়েই পাঠক বুঝতে সক্ষম হবেন যে, এদেশের তরুণ সমাজ মাহমুদুর রহমানের প্রতি কী পরিমাণ সুধারণা পোষণ করে। কমেন্ট দুটি নিম্নরূপ :
১ম জন : মাহমুদ ভাই! আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট আচরণ সম্পর্কে জেনে-বুঝেও কেন পত্রিকায় এমন সত্য প্রকাশের রিস্ক নিতে গেলেন? বড় করুণা আপনার প্রতি!
২য় জন : (ওই ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে) ভাই! আপনি ভুল বুঝছেন কেন? মনে রাখবেন, মাহমুদুর রহমানের মতো এমন জীবনবাজিকারী কতেক মানুষের কারণেই আজকের বাংলাদেশ টিকে আছে!
দুই
৩১ মে ভোর রাতে কালের সাহসী সৈনিক নিঃসঙ্গ শেরপা মাহমুদুর রহমান অন্যায়ভাবে গ্রেফতার হন। সকালে বিবিসি’র ‘প্রত্যুষা’ শুনে যখন বিষয়টি নিশ্চিত হই, তখন সরকারের এই বাকশাল কায়েমের অপচেষ্টা দেখে আমরা বন্ধুরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি। নিজেদের অজান্তেই অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে আমাদের চক্ষু বেয়ে। উপায়ন্তর না দেখে অকুণ্ঠচিত্তে তার মুক্তির জন্য মহান স্রষ্টার দরবারে আমরা মিনতি আরম্ভ করি। আমাদের ধর্মমতে, কেউ কোরআন তেলাওয়াত করে; আবার কেউ জায়নামাজে দাঁড়িয়ে।
সর্বশেষ শবেবরাতেও আমরা বন্ধুরা নামাজ, কোরআন পাঠ ও তসবিহ-তাহলিল আদায়ের মাধ্যমেও মাহমুদুর রহমানের মুক্তির জন্য বিশেষ ধর্মীয় কর্মসূচি পালন করি। অল্প অল্প করে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির জন্য আমরা বন্ধুরা কত যে সদকা করেছি—তার হিসেব করাও এখন কঠিন। একজন মাহমুদুর রহমানের জন্য আমাদের এত কষ্ট-ক্লেশ সওয়া ও তার প্রতি আমাদের অন্তহীন ভালোবাসার সংবাদ পেয়ে এক স্যার বললেন : ‘জানো, আমার কারাগারের গেটে দাঁড়িয়ে চিত্কার করে বলতে ইচ্ছে করছে—মাহমুদুর রহমান! একদল মুষ্টিমেয় তরুণ ছাত্রবাহিনী—যাদের কাছে লগি-বৈঠা নেই। নেই তাদের সঙ্গে আওয়ামী ঠ্যাঙারে বাহিনী। নেই তাদের মাথায় মহাশক্তিধরদের আশীর্বাদ, না এদেশের মারমুখো পুলিশ বাহিনী। তবুও এরা কতটা প্রতিবাদী! নীরবে-নিভৃতে এরা তোমার জন্য কী না করছে! বলো মাহমুদুর রহমান! বন্দি থেকেও তুমি এই অসহায় অক্ষম তরুণ ছাত্র জনতা থেকে আর কী চাও!!’
তিন
ডালিয়া সাত্তার নামে এক তরুণ ব্লগার মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে নাতিদীর্ঘ এক কবিতা লিখেছে। কবিতার মানদণ্ডে হয়তো এটা তেমন কিছুই নয়। কিন্তু দরদ ও আবেগে ভরপুর কবিতাটি সত্য প্রতিবাদী তরুণদের জন্য অবশ্যই গর্বের প্রতীক। দীর্ঘ সেই কবিতাটিতে মাহমুদুর রহমানের সাহস, দেশপ্রেম ও উপমাসহ স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদী কলম ও কণ্ঠস্বরের যথেষ্ট বিবরণ দিতে চেষ্টা করা হয়েছে। শেষমেশ গ্রেফতার-পরবর্তী রাত-দিন অসহনীয় নির্যাতনে ধৈর্য ধারণের পর যখন আদালতে দাঁড়িয়ে মাহমুদুর রহমান বললেন, ‘ওরা আমার লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেবে, তবুও আমি ভীত নই।’ তখন তরুণ এই কবির মানসপটে ভবিষ্যত্ বাংলাদেশের নতুন একটি চিত্র ভেসে ওঠে। কবির ভাষায় :
‘তখন আমি আকাশের দিকে চেয়ে দেখলাম,
বাংলাদেশের ভবিষ্যত্ নতুন করে লেখা হচ্ছে
বিক্ষিপ্ত জনতা আস্তে আস্তে সারিবদ্ধ হচ্ছে
জেগে উঠছে ডিজুসে মগ্ন তারুণ্য
ধীরে ধীরে গড়ে তুলছে সিসাঢালা প্রাচীর
গড়ে উঠছে দুর্জয় মুক্তিবাহিনী
শুরু হচ্ছে আরেকটি স্বাধীনতা সংগ্রাম।
আর তার ঘোষণা দেয়ার জন্য
বিশ্ব সমূহের প্রভু (আল্লাহ তায়ালা)
তোমাকেই বেছে নিয়েছেন
মাহমুদুর রহমান।’
পরিশেষে মাহমুদুর রহমানকে উপলক্ষ করে ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রভাষক ড. মু. শফিকুল ইসলাম মাসুদের একটি উক্তির সঙ্গে আরেকটি কথা জুড়ে দিয়েই আমি লেখাটির ইতি টানব। তিনি লিখেছেন, ‘স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আপনাকে দিয়ে যে আপনি গ্রেফতারের মিছিল শুরু করে রেখে গেছেন, সেই মিছিলের আজ অগ্রভাগ দেখা যায় শুধু, প্রান্তসীমা দূর বহু দূর। এই মিছিলের সারিতে যোগ দিতে আজ প্রস্তুত লাখো-কোটি গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক জনতা।’ আমি উল্লেখ করতে চাই—তরুণরাও কিন্তু সেই মিছিলে অন্তর্ভুক্ত।
দ্রষ্টব্য : আমারএই লেখাটি মাহমুদুর রহমান জেলে থাকা অবস্থায় আমার দেশ পত্রিকার উপসম্পাদকীয় পাতায় ছাপা হয়েছিল। দেখুন : Click this link তখন আমি ব্লগ লিখতে জানতাম না তাই পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পরও ব্লগে দিতে পারি নাই। । অবশ্য তখনো আমি একজন ব্লগ পাঠক ছিলাম। মাহমুদুর রহমান এর প্রতি তরুণদের আস্থা কিন্তু কমেনি বরং বেড়েছে। তাই সরকারকে এটা জানাতেই লেখাটির পুনর্মুদ্রণ জরুরি।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন