ইসলাম অবমাননার এই চরম মুহুর্ত্যে তাবলিগ জামায়াতকে নতুনকরে ভাবতে হবে!

লিখেছেন লিখেছেন রাইস উদ্দিন ৩০ মার্চ, ২০১৩, ০২:২৮:৪৫ দুপুর



আমরা অনেকেই মনে করি তাবলীগ জাময়াত

নি:সন্দেহে একটি ভালো কাজের আন্জাম দিয়ে যাচ্ছে। এটি ভালকাজের অংশবিশেষ।

আমরা এও মনে করি ভাইয়েরা দাওয়াতের মাধ্যমে-অসংখ্য পথহারা মানুষকে, বেনামাজীকে নামাজী বানাতে সক্ষম হয়েছে।সঠিক দ্বীনের বুঝ দান করতে সামর্থ্য হয়েছেএটি কখনো বলা যাবেনা কারন তারা দ্বীন কায়েমের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে না এজন্য তাদের কোন উন্নত কর্মসূচী বা কর্মপদ্ধতীও নেই।তারা মনে করে সব মানুষ নামাজি হয়ে গেলে দ্বীন এমনি এমনি কায়েম হয়ে যাবে।তাই যদি হতো আল্লাহর রাসুল স:শুধু মাত্র নামাযের দাওয়াত দিতেন।আমি মনে করি এই ভাইয়েরা দ্বীনের সঠিক অর্থ বুঝেন না, আর নাহয় কোন গুষ্ঠির ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তাদের স্বার্থ রক্ষার্থে শুধু স্বস্তা সুন্নতপালনে আমল করার দাওয়াত দেন।

বলা হয় সুন্নাত যে চেনেনি বা সুন্নাতের প্রতি মনোযোগী নয় এমন ব্যক্তির অন্তরে হেদায়েতের ১৬ আনার ১ আনা ঠিকমত ঢুকেছে কি না সন্দেহ। কারণ হেদায়েতের অর্থাৎ সঠিক পথে থাকার নিদর্শনই হল সুন্নাতের পুংখানুপুংখ অনুসরণ।

এ কথা ১০০% সঠিক কিন্তু সুন্নাত কি সেটা নিয়েই তো সকল সমস্যা! সুন্নাত পালনে কিসের প্রধান্য আগে সেটাই তো আমর ভাইজানেরা জানেন না। আল্লাহর রাসুল (সঃ) সে সময়কার সামাজিক ও সাংকৃতিক অবস্থার ভিত্তিতে যা করতেন তাকে হুবুহুবু অনুকরন করাটাই কি এ যুগে প্রধান সুন্নাত না কি তাঁর বিশ্বজনীন (universal) ন্যায়নীতি, সুমহান কর্মপদ্ধতী ও তৌহিদ, তাকওয়া, ন্যয় বিচার, পরমত সহশীলতা, জ্ঞান অন্নেশন, সৃজনশীল চিন্তা ভাবনা, অন্যায়ের বিরোদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আদর্শ সত্যিকারভাবে অনুসরন করাই বড় সুন্নাত? তাই আজ প্রয়োজন অনুকরন (Imitating) না অনুসরন (following)এর মাঝে সুন্নাত সে বিষয়ে ইজতেহাদ করা।তাবলিগের মুরুব্বী তথা কথিত হাক্কানী আলেমদের মানষিকতার ছোট্ট একটি উদাহরন দেয়া যায়, তাঁরা নিজ স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে মহিলা ডাক্তার খোজেন অতচ নিজের মেয়েকে ডাক্তারী শিক্ষায় পাঠানো তো দূরের কথা স্কুল কলেজে না পাঠিয়ে দ্রুত বিয়ে দিতে পারলেই দ্বীনের খেদমত মনে করেন।আমাদের দেশের গ্রামে গঞ্জে এ জাতীয় মনবৃত্তির লোকেরাই মানুষকে ইসলাম বুঝাতে চান। আর এরা সবই আসে সেই দেওবন্ধী দিক্ষার তথাকথিত কোওমী মাদ্রাসা থেকে। তাই মাদ্রাসা শিক্ষ্যা ব্যবস্থাকে সংষ্কার খুবই জরুরী।আজ শোনা যাচ্ছে আলেমদের দুর্বলতার সুযোগে পাঠ্যপুস্তকে শেরক বিদাত ঢুকানো হচ্ছে সূকৌশলে।এখন এই পরিস্থিতিতে তাবলিগজামায়াতের ভাইদের ঘুম থেকে জাগ্রত হতে হবে।

গত শত শত বছর থেকে মুসলিমরা যে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে পৃথিবীতে অসম্মানের জিবন যাপন করে যাচ্ছে তার অবসানে আমদেরকে ঘুম থেকে জাগ্রত হতে হবে। সময়ের পরিবর্তনে পরিবর্তিত পরিস্থিতে শুধু রাজ নীতিকে এবং পম্চিমা সভ্যতাকে ঘৃনা এবং ঈমান রক্ষার জন্য শুধু মাত্র দাওয়াতীকাজ করলে এ অবস্থার পরিবর্তন কোন দিন হবে না এবং এতদিন এভাবে থেকে ও কাজ করে কিছুই যে হচ্ছেনা সে কথা নতুন করে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আমি শুধু তাবলিগ জামায়াতের ভাইদেরকেই বলবো নাবরং তথাকথিত আলেমদেরকেও বলবো সঠিক পথ এখন কি হবে তা সাধারন মুসলিমকে আপনাদেরকেই দেখাতে হবে। কিন্তু আছে কি তাদের সে যোগ্যতা?ফরিদ উদ্দীন মাসউদসহ মেজবাহউদ্দিন সাহেবদের মত আলেমরা কি পারবে জাতিকে সঠিক পথের নির্দেশনা দিতে। যদি বিশ্বাস করতে হয় ইসলামী স্কলার অর্থাৎতাবলিগজামায়াত এবং তথাকথিত উলামারা আসলে স্বয়ং হুযুর(সাঃ) কর্তৃক নিয়োজিত উম্মাতের ইমাম তাহলে আজ ওনারা শুধু মাত্র ধর্মীয় অনুষ্টানিকতার ব্যপার ছাড়া সমাজের বৈষয়িক সকল ক্ষেত্রেই কেন অবহেলীত, কেন তারা সমাজে গুরুত্বহীন ও অযোগ্য বলে পরিলক্ষিত হন? আল্লাহর রাসুল মোহাম্মদ(সঃ)কে মদীনাবাসী (তখনকার ইয়াসরিববাসী) যখন হিজরত করতে আমন্ত্রন করছিল তখন সেখানে সবাই কি ঈমানদার ছিল? তাহলে তাদের কাছে নবীর শুভাগমনের গুরুত্ব এত অধিক কেন লেগেছিল? কারন নবীর কথাবার্তায়, চালচলনে ও কর্মপদ্ধতীতে তাঁর যোগ্যতা প্রকাশিত ছিল বলেই মদীনাবাসী তাদের সমাজে নবীকে নেতৃত্ব দেয়ার উপযুক্ত মনে করেছিল। ইসলামে তো পৌরহিত্য (priesthood) নাই তাহলে আজকাল মুসলিম সমাজে ক্রিষ্টানদের মত এ প্রবনতা কেন দেখা দিল?

প্রবিত্র কোরঅনে স্পষ্ট বলা আছে

كُنتُم خَيرَ أُمَّةٍ أُخرِجَت لِلنّاسِ تَأمُرونَ بِالمَعروفِ وَتَنهَونَ عَنِ المُنكَرِ وَتُؤمِنونَ بِاللَّهِ

তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।(সুরা:৩:১১০)

তাই প্রশ্ন জাগে “কুন্নতু খাইরা উম্মতী/সর্বোত্তম উম্মত” হলে মুসলিমদের আজ এ দূরাবস্থা কেন? সাধারন মুসলিমদের কথা বাধ দিলেও আপনারা যারা “হুযুর(সাঃ)কর্তৃক নিয়োজিত উম্মাতের ইমাম হিসাবে” দাবী করেন তারা কোন অবস্থানে আছেন? একটু ভাল করে চিন্তাকরার অনুরোধ করছি।দ্বীন কি অন্য কোন ধর্মের মত নাকি এটি মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন ব্যাবস্থা?যদি তাই হয় তাহলে শুধুমাত্র কিছু আমলের দাওয়াত দেয়া

তাবলীগকে ইসলাম মনে করি তাহলে আমাদের মস্তবড় ভূল হবে যা সমাজে ইসলামের ভুল ধারণা প্রচার করবে। তাবলীগের সম্পর্কে নিচের প্রশ্নগুলো জানা দরকার, তাহলে সবার ভালভাবে বুঝে আসবে-

১. তাবলীগ কি?

২. এদের কাজ কি?

৩. তাবলীগ কারা করে?

৪. তাবলীগের কার্যপদ্ধতি?

৫. বিশ্বইজতেমা

উত্তর ১.

দ্বীনি আমলের দাওয়াতের কাজ হচ্ছে তাবলীগ।

রাসুল (সা) দাওয়াতের মাধ্যমেই্ ইসলামের প্রচার শুরু করেন। কিন্তু শুধু দাওয়াতের মাধ্যমে আজকের ইসলাম প্রতিষ্ঠা পায়নি। তাহলে তাঁকে নিজ জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে হিজরত করতে হত না। ওহুদ যুদ্ধে দান্দান মোবারক শহীদ হতে হত না।

কাফেররা তো প্রস্তাবই দিয়েছিল যে- হে মুহাম্মদ একদিন তোমার ধর্ম

আমরা পালন করব আরেকদিন আমাদের ধর্ম তুমি পালন করবে।

--এতে করে কি আল্লাহর সাথে শিরক করা হতো না?--

যার পরিপ্রেক্ষিতে সূরা কাফিরুণ নাযিল করে আল্লাহ-তায়ালা এর সুষ্ঠ জবাব দিলেন।

উত্তর ২.

এখানে একটি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে দাওয়াতি কাজ করা।

আমরা যা দেখতে পাই তাবলীগী ভা্ইয়েরা মহল্লার মসজিদ ভিত্তিক কেন্দ্র স্থাপন করে দাওয়াতি কাজ করেন।মূলত নামাজ পড়ার জন্য বুঝানো, ফাজায়েল আমল (বিশেষ আমলের ব্ই, তাদের বিশেষ প্রকাশনা) পড়াতে উৎসাহিত করা তাদের কাজ।এর বাহিরে তাদের কাজ নাই!কিন্তু ইসলাম কি নামাজ পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ?

কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত এই ৫টি স্তম্ভ। কিন্তু এতে কি ইসলাম পূর্ণাঙ্গ ? কয়েকটি খুঁটি/পিলার গেথে কি আপনার বাড়ীর কাজ শেষ হয়ে যায়, আপনি তাতে থাকতে পারবেন? নাকি ছাদ দিতে হবে, রং করতে হবে ইত্যাদি অনেক কাজ করতে হবে?

উত্তর ৩.

আমরা যা দেখতে পাই। যারা পরিবারের মধ্যে বয়স্ক, সমাজে কর্মহীন, সমাজের নামধারী ব্যক্তি, কিছু সংখ্যক আছেন শিক্ষিত, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ, বখাটে টাইপ ( উনারা আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের সৈনিক কিন্তু তাবলীগ করার কারণে মনে করেন ইসলামের মহান খেদমত করছেন এবং সমাজ তাদেরকে খোদাভীরু, সৎ লোক বলেই জানে।)কিন্তু সমাজের বৃহৎ অংশই উনাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী না এবং তারা তাদের কাছে পৌছতে পারেন না (নারীরাতো রয়েছেই)। কারণ তারা ব্যক্তিগতভাবে সমাজে গ্রহণযোগ্য আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী না।

উত্তর ৪.

ক) তৃণমূল কাজ হচ্ছে মহল্লা/মসজিদ ভিত্তিক দাওয়াতি কাজ

খ) নিয়মিত মাস’আলা পাঠ (বিভিন্ন নমাজের পর হয়)

গ) ৩দিনের চিল্লা- সাধারণত অঞ্চলভিত্তিক এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায় দাওয়াতি কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া (বেডিংপত্রসহ ৩দিন থাকা/খাওয়ার যাবতীয় খরচ নিজ ব্যবস্থায় করতে হয়)

ঘ) ৪০ দিনের চিল্লা সাধারণত জেলাভিত্তিক এক জেলা থেকে আরেক জেলায় দাওয়াতি কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া (বেডিংপত্রসহ ৪০দিন থাকা/খাওয়ার যাবতীয় খরচ নিজ ব্যবস্থায় করতে হয়)

ঙ) ৩/৬ মাসের চিল্লা আন্তর্জাতিক এক দেশ থেকে আরেক দেশে দাওয়াতি কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া (থাকা/খাওয়ার যাবতীয় খরচ নিজ বহন করতে হয়)। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ, সামর্থ্যবান, শিক্ষিতরা অংশগ্রহণ করেন।

চিল্লায় কি হয়? দরছে হাদীস, বিভিন্ন আমলের উপর আয়াত পাঠ, বিভিন্ন দুআ শিখানো, কুরআন শিখানো, দাওয়াতী কাজ।

উত্তর ৫.তাবলীগ জামাতের সর্ববৃহৎ কার্যক্রম হচ্ছে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে সারাদেশের তাবলীগ ভা্ইদের একত্রিত করার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে বয়ান/বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান। যাতে বিভিন্ন দেশ হতে তাবলীগ ভাইয়েরা অংশগ্রহণ করে থাকে।এবং ইজতেমা মুসলিম বিশ্বের ২য় বৃহত্তম সমাবেশ কিন্তু পাঠকগণ আপনারাই বিবেচনা করুণ এতেই কি ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হল? তাহলে রাসুল (সা) এত গুলো যুদ্ধ করেছেন কেন, মদীনা নামক ইসলামী রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার দরকার ছিল কি? মক্কা বিজয় করার দরকার ছিলো কি? খেলাফত প্রতিষ্ঠা করার দরকার ছিল কি? উমর (রা) এর অর্ধ জাহানের বাদশা হওয়ার দরকার ছিল কি?

সেটা কি ইসলাম ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য নয়? যাতে থাকবে কোরআন ও হাদীসের আলোকে অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, বিনোদন সহ মানব জীবনের সকল সমাধান।

আল্লাহ আমাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ করুন ওমা তাওফিক ইল্লাহ বিল্লাহ!



বিষয়: বিবিধ

১৮৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File