(ছোট গল্প) আমৃত্যু ভালবাসা!

লিখেছেন লিখেছেন রাইস উদ্দিন ২৩ মার্চ, ২০১৩, ০৪:১৯:৪৪ বিকাল

(এক)

হেমন্তের আকাশ আজ অবিশ্বাস্য রকমের নীল। পুরো আকাশ জুড়ে শুধু নীলের খেলা।সারা আকাশে এক ফোটা মেঘের দেখা নেই।ফসলের ভূমি পানি থেকে জেগে ওঠেছে। নতুন করে আবার ফসল বোনার কাজ শুরু হবে।এ সময়ের নির্মল বাতাস আর উর্বরতায় ভরা সতেজ ভুমি। ফসল কাটার উৎসবে মেতে ওঠেছে গায়ের সব কিষাণ কিষাণী।গ্রামে চলছে নবান্নের উত্সব।বাউল গানের আসর বসে প্রতি রাতে। জুঁই,চেওলা গোলাপ, শাপলা, বাগানে বিলাস সহ অনেক ফুলের ভেতর দিয়ে প্রকৃতি যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বাতাসে, রোদ্দুরে কেমন যেন মিষ্টি একটা ভাব। আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বুক ভরে নিশ্বাস নিলেই প্রকৃতির সতেজতাকে নিজের ভেতরে নিয়ে যাওয়া যায়। মোশারফ ভাবছে আকাশটা যেন বিশাল বক্ষ হয়ে পৃথিবীর অনেক কাছে চলে এসেছে। চৈত্রের আকাশে চিলেরা ডানা মেলে যেভাবে ঘুরে ঘুরে উড়ে, হেমন্তের আকাশে ঠিক তেমনি উড়তে ইচ্ছে করছে মোশারফের। প্রতি বছরেরমত এবারও সে তার খালার বাড়ি সিলেটে এসেছে।

সিলেটে তার খালার বাড়ি ছিল শহরের বাইরে, একেবারে গ্রাম এলাকায়। চারদিকে ছিল ছোট-বড় টিলা। আর অনেক দূরে, দিগন্তের কাছাকাছি ছিল ভারতের উঁচু উঁচু পাহাড়। ওগুলো ছিল হিমালয় থেকে বের হওয়া শাখা প্রশাখা।

মোশারফ পকৃতির অপরুপ দৃশ্য অবলোকন করছে আপন মনে।

-ভাইয়্যা তুমি একা এখানে দাড়িয়ে কি করছো ?আমি সাড়া বাড়ীর এপাশ ওপাশ খুজেঁ খুঁজে হয়রান।হাপাতে হাপাতে বললো রূপা।

-আরে পাগলী!দেখছিস না আমি সিলেটের পাহাড় ও পকৃতিকে ভাল বেসে ফেলেছি। ঐ ছোট-বড় পাহাড় গুলোর পেছনে বিস্তৃত নীল আকাশ। কতো যে সুন্দর সেটা তোকে বলে বোঝানো যাবে না।কাছের সবুজ পাহাড় আর দূরের কালচে নীল পাহাড় গুলো আঁকাবাঁকা হয়ে মিশে গেছে দিগন্তে। এত সব অপূর্ব দৃশ্য তুই কি কখনো আমার মত করে দেখেছিস?

-না!সাড়াক্ষন দেখি তো আমার কাছে তেমন অলৌকিক কিছু মনে হয়না।আর আমি কি তোমার মত কবি না সাহিত্যিক। কবিদের চোখ একটু ভিন্ন।রূপার কথা শোনে মুচকি হাসলো মোশারফ।

নীল আকাশের স্বপ্নের উড়া উড়ি যেন রূপার বুকে এক নতুল কল্পনার জন্মনিল।সে নতুনকরে পকৃতি ও মোশারফকে ভাবতে শুরু করলো।

আচ্ছা ভাইয়্যা!বলতো যারা পকৃতিকে ভালবাসে তাদের মনও নাকী পকৃতির মত স্বচ্ছ এবং নিমর্ল হয়?রূপার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কিছুটা নিরব থেকে জবাব দেয় মোশারফ।

-জানি না!

- থাক জানার দরকার নেই।চলো নাস্তাখাবে।মা নাখেয়ে অপেক্ষা করছেন তিনি ডায়বেডিসের রুগী।বেশি অপেক্ষা করতে পারবেন না।

-ঠিক আছে চল!আমারও খুব ক্ষুধা পেয়েছে।

(দুই)

আকাশে আলো, বাতাসে আলো,আলো আমার চোখে

আলো আমার মুখে আলো আমার প্রাণে…

রূপা আরও গুন গুনিয়ে গেয়ে উঠে-

“আলো আমার আলো,ওগো আলো ভুবন ভরা,

আলো নয়ন ধোয়া আমার আলো হৃদয় হরা;

নাচে আলো নাচে ও ভাই আমার প্রাণের কাছে,

বাজে আলো বাজে ও ভাই হৃদয় বীণার মাঝে…”।

-বাহ্ সত্যি অপূর্ব! তোর কন্ঠে যেনো সূরের মুর্ছণা ঝরছে।আবার গা শুধু অমার জন্য।আজ সারা দিন ধরে চলছে মিষ্টি মায়াবী আলোর খেলা। এ আলো গ্রীষ্মের খর রৌদ্রতপ্ত আলো নয়, এ আলো এক অতি মনোরম মন প্রাণ জাগিয়ে তুলার আলো।এ আলো তোর আমার ভিতরে লুকানো সন্ধ্যার গোধূলীর আলো যা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। এটি এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার। শুধু পশ্চিম আকাশ জুড়ে নয় আমার হৃদয়াকাশ জুড়ে চলছে রঙের খেলা। এ লাল রঙ কোন পৃথিবীর রঙ নয়, সে এক অপার্থিব ধরণের আলোর নাচ।

রুপা নিরবে নি:শব্দে শোনছে মোশারফের কবি শূলভ অভিব্যাক্তি!

-রূপা!তুই যে কিছু বলছিসনা? আমি পাগলের মত একাই বকে যাচ্ছি।

-আমি তো কবি নই।তোমার মতঅত সুন্দর করে বলতে পারি না তাই নিরব! কিন্তু তুমি যখন পকৃতির সৌন্দর্য্য বর্ণনা কর তখন আমি নিজেকে কোথায় যেনো হারিয়ে ফেলি।মনে চায় তোমার হৃদয়ে সমাহিত হইয়ে পকৃতির এতসব রূপ ও বৈচিত্র অবলোকনকরি।

-রূপা তুইতো নিজেই ভিন্ন একটা পৃথিবী !আমি যখন তোকে দেখি তোর মাঝে সমগ্র পৃথিবীটা যেন দেখতে পাই।জানিস চাদঁ যেমন জানে না তার সৌন্দর্য্য সম্পর্কে তেমনী তুই। রূপা লজ্জায় মাথা নিচু করে!

-ভাইয়্যা আজ রাতে স্কুলের মাঠে নাটক হবে তুমি যাবে? আমার খুব ইচ্ছ করছে যেতে।চলো রাতের খাবার খেয়ে মাঠে যাই।জানো মাঠে মেলাবসেছে।কত কি উঠেছে।

-তুই কি নিবি মেলা থেকে?

-কিচ্ছু না!

-কেন?

-আমার সবই আছে।তার পর তুমি পছন্দকরে কিছু দিলে না করবো না।

-চল তাহলে মাঠের দিকে যাওয়া যাক!

-আচ্ছা লুকিয়ে লুকিয়ে দুজন কোথায় যাওয়া হচ্ছে? রুবেলের কথায় কি যেন একটা রহস্য লুকিয়ে আছে।

-বা রে কোথায় আবার ? মেলায় যাচ্ছি!

-আমাকে না নিয়েই? বুবু তুই এতটা স্বার্থপর কেনরে ?

-তুই সাড়া বিকেল একা একা মেলায় টই টইকরে ঘুরে এলি তখন বুবুর কথা মনে পরলো না?

- তোমরা দুজন মিলে বিকেল থেকেই ঐ হিমালয়রে দিকে তাকিয়ে কাব্য রচনা করছো দেখে, তোমাদের বিরক্তের কারন না হয়ে একাই ঘুরে এলাম। কিন্তু এখন তোমাদের একা যেতে দিচ্ছিনা!

রূপার কথায় ফুরন কেটে রুবেল এক সাথ হাজার কথা বলে ফেললো”রুবেল ডানপিটে ধরনের দুরন্ত একটি ছেলে ।যেমনি লেখা পড়ায় তেমনি খেলা ধুলায়।

মার্বেল, কানামাছি, গোল্লাছুট, ছিঁ কুতকুত, বউছি, আর চোখ ধাদানো যত খেলাই হোকনা কেন তার সাথে জুড়িমেলাভার।কোন টেনশন নেই। দুরন্ত মনে যখন যা ইচ্ছে তাই করে বেড়ায় । কেউ কিছুই বলে না।পাখির বাসা খুঁজে বেড়ানো, কোন পাখির বাসায় কয়টা ডিম কয়টা ছানা তার হিসেব রাখা, বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বন্দুক বানানো, গুলতি দিয়ে পাখি মারার ব্যর্থ চেষ্টা, নষ্ট বিয়ারিং দিয়ে তিনচাকার গাড়ি বানিয়ে তাতে চড়ে আর একজনকে ঠেলতে দেয়া, সাইকেলের স্প্রোক দিয়ে পটকা বানানো, গুনা ও দিয়াশলাইয়ের খালি ঠোঙ্গা দিয়ে টেলিফোন বানিয়ে খেলা করা, নানা ডিজাইনের ছোটবড় ঘুড়ি বানানো ও উড়ানো, কাগজের নৌকা বানিয়ে পানিতে ছেড়ে দেয়া, সাইকেলের ফেলে দেয়া টায়ার চালানো, পুকুরে গোসল করা, ইলেক্ট্রনিক্স ও ইলেক্ট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি ঘুটঘাট করে নষ্ট করা অতঃপর রূপার হাতে মার খাওয়া ।

-আমাদের ইচরে পাঁকা ভাইটিকে আমাদের সাথ যেতে কে বারন করেছে শুনি!এবার মোশারাফ মূখ খুললো!রুবেল এবার মিষ্টিহেসে বললো”

-ভাইয়্যা মাইন্ডকরেছো?যাগগে আমাকে পাঁচশত টাকার একটা নোট দিলেই চলবে।তোমাদের সাথে নাটক দেখার সখ নেই।আমি এমনিতেই ওসব পছন্দ করিনা।জানো ভাইয়্যা বন্ধুরা চটপটি খাবে বলে ভিষনকরে ধরেছে।বলে ঢাকা থেকে তোর খালাতো ভাইএসেছে তাকে ধরতেহবে।আমি ওদেরকে তোমার ব্যাপারে অনকেকিছুবলেছি।তুমি স্কলারশীপ নিয়ে লন্ডন যাবে এও বলেছি।তুমি পকৃতিকে নিয়ে গবেষনা করছ ইত্যাদী।

-বন্ধুদের কাছে আমার ব্যাপারে বাড়িয়ে বলে এখন তার মূল্যচুকাতে বলছো?একটাকাও দিবনা।

-তোমার অভিরুচি!যখন সবাই এসে ধরবে তখন হাজারেও কুলুবেনা।এখন পাচঁশতেই সারতে পারবে।

-ব্লাকমেইল করতে চাচ্ছ? পকেট থেকে পাচঁশত টাকার একটা নোট বের করে রুবেলের হাতে দিতেই।রুবলে ধন্যাবাদ বলেই কেটে পরলো।রূপা এবার হাপ ছেড়ে বাচলো।

-সত্যি বাচা গেলো!রুবেলটা এতকথা বলতে পারে দেখে বিশ্বাস হয়না।চলো ভাইয়্যা!এবার হাটা যাক।

-খালাকে বলতে হবে না?

আমি আগেই বলে রেখেছি।বাবা একটু বারন করেছিলেন।মা বুঝিয়ে বলায় রাজি হলেন।ঠিক আছে চলো!

(তিন)

সন্ধ্যার পর পরই মোশারফ ও রূপা মেলায় গিয়ে বিভিন্ন স্টল ঘুরফিরে দেখছে। মেলায় মেলা ধরনের জিনিষ পত্রের সমাগম ঘটেছে। গ্রামীণ মৃৎশিল্প ও কারু পণ্যের বিকিকিনিতে বারতিআকর্ষণ সৃষ্টিকরেছে।মেলা আষলে একটি সামাজিক, ধর্মীয়, বাণিজ্যিক যোগসূত্র। মেলার সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্টীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির যোগাযোগ নিবিড়।

বাংলার এই সংস্কৃতিতে থাকে সব ধর্মের মানুষের সংস্কৃতির সমন্বয়।কয়েকটি গ্রামের সংযুক্তস্থানে একটি খোলা মাঠে আয়োজন করা হয়েছে এ মেলার।মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ জীবনে ফিরে এসেছে প্রানচাঞ্চল্য।এখানে সাতদিন ব্যাপী চলে যাত্রা, পুতুল নাচ,নাগরদোলা, জারি-সারি, গম্ভীরা পালার আসর, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, লাঠি খেলা, হাডুডু খেলা।এসব খেলাধুলা মুগ্ধ করে আগত দর্শনার্থীদের। এখানে নাগরদোলা ছিল সব বয়সীদের কাছে প্রধান আকর্ষন।রুবলে বন্ধুদেরকে সঙ্গনিয়ে নাগরদোলায় চড়েছে।নাগরদোলার পাশ দিয়ে মোশরাপ ও রূপাকে যেতে দেখে রুবেল পিয়াজী খাচ্ছিল তাথেকে দুটি ওদের উপর ছুড়েমারায় ওরা উপরদিকে তাকালো।

-নিচে আয় মজা দেখাবো,বললো রূপা!

-আরে থাকনা! চলো সামনে যাই।মোশারফ রূপাকে হাতধরে সামনের দিকে নিয়ে চললো।হঠাত রুপার নজরে পরলো এক লোক টিয়েদিয়ে মানুষের ভাগ্য পরিক্ষা করছে । কত গুলি খাম তার ভিতরে কাগজ যাতে লিখা আছে ভাগ্যের ফলাফল। লোকটির হাতেএকটি লাঠি যা দিয়ে সে টিয়েপাখীটাকে নির্দেশকরে।লোকজন পাঁচ দশ,পঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত খুশিহয়েই দেয়।টাকা দিলেই টিয়েকে দিয়ে একটি খাম উঠিয়ে ভাগ্য পরিক্ষা করতে আসা ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়।সে নিজেই তার ভাগ্য সম্পর্কে জানতে পারে।মজার ব্যপার হলো যখন রুপা দশটাকা একটি নোট টিয়েটিকে দিতে চাইলো সে নিতে চাচ্ছিলো না।কয়কেবার চেষ্টাকরার পর টাকা নিয়ে একটি খাম হাতে তুলে দিলো।এবার তার হাত থেকে খামটা কেড়ে নিয়ে মোশারাফ খুলে ওটি পড়তে লাগলো।

-কাজটা কিন্তু ভাল করলে না ভাইয়্যা।তাই বুঝি?ঠিক আছে নে তোর ভাগ্য তুই দ্যাখ।আমি এসব বিশ্বাসকরিনা।এবার রূপা নিজের ভাগ্য নিজেই পড়ছে-

আপনি অতি তারাতারি হৃদয় ঘটিত সম্পর্কে জড়িয়ে যাবেন।যাকে বলে প্রেম ভালবাসা। নিভৃতচারী আর ঘরকুনো স্বভাবের এক সূদর্শন যুবকের প্রতি এতোটাই ঝুঁকে পড়বেন যে, প্রকাশ্যে একসঙ্গে চলাফেরা করতেও দ্বিধাবোধ হবে না।

দুজনের মধ্যকার উষ্ণ সম্পর্ক নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা চলবে।উভয়ের প্রেমের একপর্যায়ে পারিবারিক ভাবে বিয়ের কথাবার্তাও চলবে।এ বিষয়টি কেন্দ্র করেই দূরত্ব তৈরি হবে উভয় জুটির।প্রেমের শেষ পরিনতি হচ্ছে মিলণের সূখ! প্রণয়-বন্ধনের মধ্যে বিরহ দেখা দিতে পারে।এমন কি কোন এক ধ্বংসকারী প্রলয় আসিয়া সবকিছু তছনছকরে দিতেপারে।

- তোর ভাগ্য সম্পর্কে কি তুইএকাই পড়বি না আমাকেও কিছু বলবি।প্রশ্ন করে মোশারফ!

-বলবোনা!আচ্ছা ভাইয়্যা তুমি কি ঘরকুনো স্বভাবের?রুপার এ প্রশ্ন শোনে মোশারফ একটু রেগে গিয়ে তাকে মারতে উদ্যত হবে।

-বা রে রাগকরছো কেন? এটিতে তো তাই লিখা রয়েছে।রূপার কথায় মোশারফ কিছুটা বচিলিত হলো।

-ভাগ্য পরিক্ষা করছিস তুই তাতে আমার কথা আসবে কি করে!ইয়ারকী মারা হচ্ছে?ওটি দে আমাকে!

-কালকে সকালে দিব।কিছু বিষয় আমি নিজেও বুঝতেপারছিনা।এখন চলো বাসায় যাই অনেক রাত হয়েছে।

-কেন নাটক দেখবি না?

-না!এখন আর নাটকের প্রতি আকর্ষণ নেই।

-কেন কি হয়েছে বলতো ?তুই অল্পসময়ের মধ্যে বদলে গিয়েছিস!কাল সকালে সব বলবো কথা দিলাম!

-ঠিক আছে চল!আমারও ভিষন মাথাটা ধরেছে শুধু তোর খুশির জন্যই আমার মেলায় আসা তাই তোর খুশিতেই ঘরে ফেরা।ভাগ্য গণণাকারী টিয়ের মালিক তার চিঠিটি ফেরতচাইলে রূপা তাকে আরও পঞ্চাশ টাকা দিয়ে বললো এটি আমার জীবনে স্মৃতিহয়ে রইবে।উভয়ে হাতধরে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো।

(চার)

সমগ্র রাতটি কেটেছে উৎকন্ঠার মধ্যে দিয়ে।উত্কন্ঠিত হওয়ার যথেষ্ট কারনও রয়েছে।মোশাররফের বার বার মনে হয়েছিল ঐ কাগজটির কথা!তাতে কি লিখাছিল যে রূপা তাকে ঘরকোনো কিনা তা জিঙ্গেস করলো? এতসব ভাবতে ভাবতে ভোরের দিকে তার প্রচন্ড ভাবে ঘুমে ধরেছে।ও দিকে রূপা ব্যচারীরও ভাল ঘুম হয়নি।রাত পোহাবার আর কত দেড়ি? অধীরতা বেড়েই যাচ্ছিল সে চিঠির কয়কেটি শব্দ নিয়ে মোশাররফের সাথে সেয়ার করবে বলে স্থির করেছে।রাত পোহালো ঠিকই ঘুম থেকে উঠে সকালের সবকাজ কর্ম সেরেও দেখলো তার প্রিয়মানুষটিএখনো উঠেনি।নাস্তা তৈরিও শেষ।

রুবেল পিতার জন্য নাস্তা নিয়ে ধান খেতে চলে গেছে।স্কুল কলেজ গুলো নবান্ন উত্সবে ছুটি হয়ে গেছে তাই পড়ালেখার চাপ কম।বাড়ীর সামনেই ধানখেত। দিগন্ত জোড়া শুধু ধান আর ধান। ধানের যেনো শেষ নেই। নতুন ধান কাটার ধুমধাম মহাউত্সব। সোনালী ধান দেখে কৃষান কৃষানী আনন্দে উদ্বেলিত হয়।যে সব জমিতে ধান কাটা শেষ সেখানে বিকেলে চলে গুল্লাছুট,বউচি কানামাছি আরো কতরকম খেলা।ছোট্ট ছেলে মেয়েরা কি সুন্দর ধান কূড়াচ্ছে।নাকে নূলক দূলছে পড়নে তাদের লাল রঙের তাতের শাড়ি দেখলে সত্যি প্রাণভরে যায়।রুবেলও নাস্তা জমিতে রেখে কৃষাণদের পিছনে পিছনে পুষ্টাই ধানের ছড়া গুলো ভাজকরে হাতের মধ্যে জমা করছে।হঠাত তার চোখপড়লো একটি ইদুঁরের গর্তের দিকে।গর্তের ভিতর অনকে গুলো ধানের ছড়া।

-রুবেল এসব কি করছিস? তুই কি এখনো ছুট্ট টি আছিস যে ধান কূড়াচ্ছিস? ধান কুড়ানোর সময়তো কত আগেই শেষ হয়েছে।

-আপু এতসুন্দর ধানের ছড়াগুলো দেখলে কার না লোভ হবে বল?এই দ্যাখ গর্তের ভিতর কতগুলো ধানের ছড়া দেখা যাচ্ছে!শালা ইঁদুরের সাহস দেখেছিস?আমার মনে হয় এর ভিতরে অনেক ধান হবে।হ্যারে বুবু মোশাররফ ভাইকে নিয়ে আসবিনা?শহরে মানুষ এসব দেখে মজাপেতো।

-তিনি এখনো ঘোম থেকে উঠেননি।তুই একটু সড়ে দাড়া আমি ধানেরছড়াগুলো তুলছি!

নিয়তির নির্মম পরিহাস।গর্তের ভিতর হাত ঢুকানোর সাথেই ভিতরে লুকানো কালো গুখরো সাপ ফুসকরে কামড়েদিল রূপাকে।সাপের বিষক্রিয়ায় মূখে উগরা এসে মাটিতে লুটিয়ে পরলো রূপা।রুবেল চিত্কার দিয়ে বোনকে ধরে কাদঁতে লাগলো। ধানের গুছাধরে যেসকল কিষাণ কাচিদিয়ে পোছদিতেছিলো তারা রুবেলের চিত্কারে হতবিহ্বল হয়ে কেউ কেউ নিজের হাতে কাচি বসিয়ে দিলো।সবাই পেরেশান হয়ে দৌড়ে এল!কি হলো কি হলো? বাবা নাহীদ মেয়ের কাছে এসে মূছরে পরলেন।যেনো আসমানটা হঠাত তার মাথায় ভেঙ্গেপরলো।তিনি তারা তারি মেয়েকে কোলে তুলে বাড়ির দিকে দৌড়াতে লাগলেন।গ্রামের সবাই তার কান্নায় দৌড়েএল।শহর একটু দুরে তাই গাড়ি ছাড়া কোন ক্রমেই নেয়া সম্ভব না।হট্টগোলের শব্দে মোশাররফ ঘোম থেকে হুড়মুড় করে উঠে।হায় একি হলো?তার বুঝার বাকি রইলো না রূপার ণীলবর্ণ মূখমন্ডল দেখে যে তাকে নিয়ে স্বপ্নদেখার মানুষটিকে যে সাপে কেটেছে।রূবেল এতটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে যে সে নিজেকে একমাত্র অপরাধী মনে করছে।মোশাররফ একটি ভ্যান ডেকে এনে ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার রূপাকে মৃতবলে ঘোষনা দেন।

মোশাররফের চোখ দুটো অশ্রুসজল।এতটা সপ্নদেখা কারো জন্য সূখকর নয়।সে রূপাকে নিয়ে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল।সে এতদিন পকৃতি নিয়ে ভাবতো সবেমাত্র যখনই একজন মানব হিসেবে একজন মানবীকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে তখনই নিয়তি তার সকল ভাবনার মূলে বিচ্ছেদের পানি ঢেলে দিল।প্রকৃতি যেমনি ভয়াবহ সৌন্দর্য্য বেশিক্ষণ রাখতে চায় না ।হেমন্তও বেশিদিন থাকে না কোথাও। মোশাররফের বুকে স্বপ্নের উড়াউড়ি শুরু না হতেই হঠাত্করেই চলে আসে বেদনা নামের কুয়াশার চাদর যাহা তার নরম হৃদয়কে, কঠিন কষ্টের আবরনে বেথাহত করে। তার হৃদয় মনে যে রঙ্গ আর আলোর খেলা চলছিল তা নিমিশেই শূন্যেমিলিয়ে গেল। হেমন্ত তাকে মনে করিয়ে দেয় জীবনের উপভোগ্য বস্তুগুলোর স্বল্পস্থায়ীত্বের কথা।এ জীবনে কিছুই থাকে না চিরকাল ধরে।না সুখ, না স্বপ্ন, না সৌন্দর্য্য। কিন্তু সুখ-স্বপ্ন-সৌন্দর্য্য উপভোগ করার ইচ্ছা মোশাররফের হৃদয় থেকে চিরতরে দুরিভত হতে থাকলো। চারপাশের কৃতি তাকে আর আকর্ষণীয় করে তোলেনা। সে ভালবাসা আর বিচ্ছেদের অনলে জলিতে লাগিলো। প্রেমের সহিত জ্বালার অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধ রয়েছে।যত তীব্র জ্বালা ততো গভীর প্রেম।প্রেমকে সইতে হয়।সে সুখ চায়না বিনিময় না পেলেও মরে না কেবল ভালবাসে।তাই রূপার তার জীবনে আমৃত্যু ভালবাসা হয়ে থাকলো রূপারঐ চিঠিটি বুকে জড়িয়ে প্রেমের স্মৃতিধারন করে খালার বাড়ি সিলেট হইতে আপন গৃহে পত্যাবর্তণ করিলো অতপর ল্ডনে পারি জমাইলো।

বিষয়: বিবিধ

১৭৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File