ইসলামী রাজনীতি বনাম অন্যান্য রাজনীতি

লিখেছেন লিখেছেন রাইস উদ্দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৪:৪৭:৩৯ বিকাল



নীতি শব্দথেকে যেমন নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞান শব্দদয় গঠিত হয়েছে তেমনিভাবে রাজনীতি শব্দটিও গঠিত হয়েছে। নৈতিকতা বা নীতিজ্ঞান অর্থ হচ্ছে ভালমন্দ বিচারবোধ।সাধারনত রাজার নীতিকেই রাজনীতি বলে।ব্যাপক অর্থে রাজনীতি অর্থ হচ্ছে-ঐ সকল সূনিদ্দিষ্ট অনূসরন যুগ্য কিছুমৌলিক নীতি যে নীতিমালা অনুসরনের মাধ্যম সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি বিভাগে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হয়।রাজনীতি স্থানকাল পাত্র ভেদে কালের আবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল।রাজনীতির অর্থছিল এক সময়” রাজা তার প্রজাপালন বা রাজকর্ম পরিচালনায় নেওয়া নীতিসূমহ যাহাকে রাষ্ট্রব্যবস্থাও বলাচলে।উন্নত রাজনীতিই প্রজাদের মন ও হৃদয়ে রাজার প্রতি আস্থা ও ভালবাসার জন্মদেয় অন্যথায় ভূল বা অনৈতিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে রাজ্যে অশান্তি অকল্যাণ ও বিদ্রহের জন্মদেয়।এতে রাজাকে হতে হয় ক্ষমতাচ্যুত।রাজনীতিতে নাকি শেষ কথা বলতে কিছু নেই।যু্দ্ধে এবং রাজনীতিতে সব হালাল।এসব ভ্রান্তনীতি অবলম্বনের কারনে সম্রাট আকবর মুসলমানদের রুসানলে পতিত হয়েছিলেন বটে সম্রাট হিসেবে অমুসলিমদের নিকট তিনি দেবতূল্য ছিলেন। অবব্যস্থা অনিয়মের অপরাধে নিজ পিতাকে গৃহবন্দি করে সম্রাট আলমগীর মুসলমানদের জন্যছিলেন মাথার মুকুট পক্ষান্তরে ভারতের মুসলীম বিদ্বেসীদের নিকট ছিলেন ধর্মান্ধ।তার জৈষ্ঠ ভাই দারাসিকু ছিলেন অমুসলিমদের আস্থাভাজন কারন তিনি ছিলেন সম্রাট আগবরেরন্যায় ধর্মনিরপেক্ষ ভ্রান্তআদর্শের অনুসারী।

রাজনীতিকে বর্তমানে বিভিন্ন মতবাদ বা আদর্শ প্রতিষ্টার মাধ্যমও বলাচলে।রাজনৈতিক দল গুলো ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে থাকে।দল গুলো মনে করে নিজ নিজ দলের আদর্শই রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে কেবলমাত্র শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনতে পারে।

আধুনিক কালের রাজনীতির সঙ্গা হচ্ছে:রাজনীতি হলো এমন একটি প্রক্রিয়ার নাম যার মাধ্যমে কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত কোন গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যদিও রাজনীতি বলতে সাধারণত নাগরিক সরকারের রাজনীতিকেই বোঝানো হয়, তবে অন্যান্য অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেখান মানুষের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বিদ্যমান, সেখানে রাজনীতি চর্চা করা হয়।রাজনীতি কতৃত্ব ও ক্ষমতার ভিত্তিতে সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে গঠিত।রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই রাজনীতিকরে।

বর্তমানে রাজনৈতিক দল বা সংগঠন গুলো যে সকল মতবাদ বা আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনীতি করে থাকে এসকল মানব রচিত মতবাত মানুষের কল্যাণ সাধনেই সৃষ্ট।যারা এসকল মতবাদের জনক তারা সত উদ্দেশ্য নিয়েই এসব মতবাদ উপস্থাপন করেছেন । এ সকল প্রচলিত রাজনৈতিক মতবাদ সূমহ রাষ্ট্র ও জনগনের কতটুকুন কল্যানসাধন করতে পেরেছে তা বিবেচ্য বিষয়।

এখানে মানবরচিত কয়েকটি মতাদর্শ বা রাজনৈতিক মতবাদ সূমহের নাম নিন্মে দেয়া হলো।

(ক) বস্তুবাদ (materialism)

(খ) ধর্মনিরপেক্ষবাদ (secularism)

(গ) দন্দবাদ (dialectism)

(ঙ)সমাজতন্ত্র

(চ)গনতন্ত্র আরও যত ইত্যাদী।এসকল আদর্শবায়নের মাধ্যমে যারা শান্তির স্বপ্নদেখায় তারাই মূলত ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী অশান্তি সৃষ্টি করেছে ঐ সকল মানুষ। অশান্তি মানুষেরই সৃষ্টি। অশান্তি মানুষেরই কর্মফল। বর্তমান বিশ্বে বিরাজিত অশান্তির ধরণ ও রূপ বর্ণনা করে শেষ করা কঠিন। কয়েকটি বড় বড় অশান্তি নিম্নরূপ :

০১. মানুষের মানসিক অশান্তি, মানসিক যন্ত্রণা ও দাহ।

০২. ক্ষুধা, দারিদ্র, অভাব।

০৩. মারাত্মক রোগ ও মরণ ব্যাধির বিস্তার।

০৪. দাম্পত্য কলহ, বিরোধ, বিচ্ছেদ, বৈধব্য।

০৫. পারিবারিক বিশৃংখলা ও চরম অশান্তি।

০৬. চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটতরাজ, জবরদখল।

০৭. ঘুষ, চাঁদাবাজি।

০৮. ধোকা, প্রতারণা, জালিয়াতি, ফাঁকিবাজি।

০৯. হিংসা বিদ্বেষ, ঝগড়া বিবাদ, হানাহানি, খুনাখুনি।

১০. যৌতুকের যাঁতাকল।

১১. নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ব্যভিচার, যৌন হয়রানি এবং নারীর অধিকার হরণ।

১২. বেকারত্ব।

১৩. অবাধ্যতা, উশৃংখলা।

১৪. যুলুম, নির্যাতন, অন্যায়, অবিচার।

১৫. মিথ্যাবাদিতা, ওয়াদা খেলাফি, চুক্তিভঙ্গ।

১৬. দমন, নিপীড়ন, বিদ্রোহ।

১৭. আগ্রাসন, অবরোধ।

১৮. সন্ত্রাস।

১৯. যুদ্ধ।

২০. নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা।

২১. মানবাধিকার পদদলন।

২২. বিপথগামিতা।

২৩. মাদকাসক্তি/নেশা।

২৪. সম্মান ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তাহীনতা।

২৫. জীবনের নিরাপত্তাহীনতা।

২৬. হত্যা, আত্মহত্যা, অন্তর্ঘাত, নারীর জীবনাহুতি।

২৭. সম্পদের নিরাপত্তাহীনতা।

২৮. খেয়ানত, অবিশ্বস্ততা, আত্মস্যাৎ।

২৯. মন্দা, উৎপাদন ঘাটতি, সম্পদের স্বল্পতা, টাকার প্রবাহ, দুস্প্রাপ্যতা।

৩০. পরিবেশ দূষণ।

৩১. অপচয় অপব্যবহার।

শুধু এগুলোই নয়, এর বাইরেও রয়েছে অশান্তির অসংখ্য ইন্ধন। আর আমাদের জানা অজানা, প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য, ছোট বড় এসব অশান্তির ইন্ধনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি মানুষের মনের শান্তি, ঘরের শান্তি, সামাজিক শান্তি, রাষ্ট্রীয় শান্তি এবং বিশ্বশান্তি। সব অশান্তির জন্যে দায়ী মানুষের কর্ম :

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ .

অর্থ : স্থলভাগ ও জলভাগে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে মানুষের নিজেরই কৃতকর্মের দরূণ, যেনো তিনি তাদের কিছু কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করাতে পারেন। এর ফলে হয়তো তারা ফিরে আসবে। -সূরা ৩০ আর রূম : আয়াত ৪১।

মানুষ শান্তিদাতা নয়, মানুষ শান্তি ও মুক্তির অন্বেষী। সুতরাং শান্তির অন্বেষীদের শান্তি চাইতে হবে শান্তি ও মুক্তি দাতার কাছে। যার কাছে শান্তি আছে এবং শান্তি লাভের ফর্মূলাও আছে। আর সেই ফর্মূলাই হল ইসলাম ও ইসলামী রাজনীতি।

ইসলামের রাজনীতি কোন সাধারন রাজার নীতি নয় তিনি সেই পরাক্রমশালী মহারাজা! যিনি ফেরাউন.নমরুদ.হাম্মান .কারুন .সাদ্দাতের মত রাজাদেরকে মিথ্যে দম্ভওআস্ফালনের জন্য স্বাস্তি দিয়েছিলেন যা ইতিহাসখ্যাত। সুতারাং বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সেই সর্বশক্তিমান বাদশাহর রাজনীতি করতে হবে

যার কাছে শান্তি আছে এবং যিনি মুক্তি দিতে পারেন? এর জবাব একটাই, আর তাহলো : যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং শান্তি ও মুক্তির অন্বেষী বানিয়েছেন। শান্তি কেবল তাঁরই কাছে আছে এবং কেবল তিনিই মানুষকে শান্তি ও মুক্তি দিতে পারেন। তাঁরই নাম আল্লাহ। শান্তির চাবিকাঠি তাঁরই মুষ্টিবদ্ধে। তিনিই শান্তির উৎস এবং তিনিই মুক্তিদাতা :

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ .

অর্থ : তিনিই আল্লাহ। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ (ত্রাণকর্তা ও মুক্তিদাতা) নেই। তিনিই একমাত্র সম্রাট, পুত পবিত্র। তিনিই শান্তি। তিনিই প্রশান্তি ও নিরাপত্তাদাতা। তিনিই রক্ষক। তিনিই প্রবল পরাক্রমশীল মহিমান্বিত। -সূরা ৫৯ হাশর : আয়াত ২৩।

সুতরাং মানুষকে শান্তি চাইতে হবে শান্তির উৎস মহান আল্লাহর কাছে। আর শান্তি লাভের জন্য তিনি যে ফর্মূলা বা জীবন পদ্ধতি দিয়েছেন সেটার অনুসরণ ও অনুবর্তন করতে হবে। তবেই মানব জীবনে নেমে আসবে শান্তির ফল্গুধারা।ন এবার আসুন ইসলামী রাজনীতি নিয়ে কিছু আলোচনা করি যাতে সাম্যক ধারনা জন্মে।

ইসলামী রাজনীতি

ইসলামের রাজনীতির বুনিয়াদ তিনটি মূলনীতির উপর স্থাপিত : তাওহীদ, নবুয়াত এবং খিলাফত। এ তিনটি মূলনীতিকে বিস্তৃতভাবে বুঝতে না পারলে ইসলামী রাজনীতির বিস্তারিত বিধান হৃদয়ংগম করা বড়ই কঠিন ব্যাপার। কাজেই সর্বপ্রথম আমি এ তিনটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করব।

তাওহীদ

তাওহীদের অর্থ এই যে, আল্লাহ তায়ালা এ দুনিয়া এবং দুনিয়ার মানুষ সহ সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং একমাত্র মালিক। প্রভুত্ব, শাসন এবং আইন রচনার নিরংকুশ অধিকার একমাত্র তারই। কোন কিছু করার আদেশ দেয়া এবং কোন কাজের নিষেধ করার ক্ষমতা শুধু তারই কাছে বর্তমান। আল্লাহ তায়ালার সাথে মানুষ কাউকে শরীক করবে না। আমরা যে সত্তার দরুন বেচে আছি, আমাদের যে শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও বল-শক্তি দ্বারা আমরা কাজ করি, দুনিয়ার সকল জিনিসেরই উপর আমাদের এই যে অধিকার ও ব্যবহার ক্ষমতা প্রয়োগ করি - তার কোনটাই আমাদের উপার্জিত নয়। এর সৃষ্টি ও অবদানের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কেউ শরীক নেই। আমাদের নিজেদের এ অস্তিত্বের উদ্দেশ্য এবং আমাদের ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তির সীমা নির্ধারণ করা আমাদের করণীয় কাজ নয়, আর না এতে অন্য কারোও একবিন্দু অধিকার আছে। এ সবকিছু শুধু সেই আল্লাহর করণীয় যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনিই আমাদের এত শক্তি ও স্বাধীনতা দান করেছেন এবং দুনিয়ার অসংখ্য জিনিসকে আমাদের ভোগ-ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন। তাদের এ ধারণা মানবীয় প্রভুত্বকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দেয়। একজন ব্যক্তি মানুষই হোক কিংবা একটি পরিবার বা একটি শ্রেণী হোক কিংবা মানুষের একটি বড় দল, একটি জাতি কিংবা সামগ্রিকভাবে সারা দুনিয়ার মানুষ হোক, সার্বভৌ্ম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, তার আদেশই হচ্ছে মানুষের জন্য একমাত্র আইন।

নবুয়াত

আল্লাহ তায়ালার এ আইন যে উপায়ে মানুষের নিকট এসে পৌছেছে, তার নাম নবুয়াত। এ নবুয়াতের ভিতর দিয়ে আমরা দু’টি জিনিস লাভ করে থাকি। এক : কিতাব - যাতে আল্লাহ তায়ালা তার নিজের আইন-কানুনের বিবরণ দিয়েছেন। দুই : সেই কিতাবের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা - যা রাসূল (সা) আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে নিজের কথা ও কাজের ভিতর দিয়ে সুস্পষ্টরূপে পেশ করেছেন। যে মূলনীতির উপর মানুষের ধর্মীয় জীবনের ভিত্তি স্থাপিত হওয়া উচিত আল্লাহ তায়ালা সবই তার কিতাবে এক এক করে বর্ণনা করেছেন এবং রাসূল (সা) আল্লাহর কিতাবের সেই উদ্দেশ্য অনুসারে কার্যকরীভাবে জীবন যাপনের একটি পরিপূর্ণ ব্যবস্থা তৈরী করেছেন। আর তার আবশ্যকীয় ব্যাখ্যা বলে দিয়ে আমাদের জন্য একটি উজ্জল আদর্শ রূপে উপস্থিত করেছেন। ইসলামের পরিভাষায় এ দু’টি জিনিসের সমষ্টিগত নাম হচ্ছে শরীয়াত। ইসলামী রাষ্ট্র এ বুনিয়াদী নীতির উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।

খিলাফত

এখন খিলাফতের কথা আলোচনা করা যাক। আরবী ভাষায় এ শব্দ প্রয়োগ করা হয় প্রতিনিধিত্বের অর্থ বুঝার জন্য। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ এ দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার দেয়া স্বাধীনতা অনুযায়ী কাজ করবে। আপনি যখন কারো উপর আপনার জায়গা-জমির ব্যবস্থাপনার ভার অর্পণ করেন, তখন চারটি কথা আপনার মনে অবশ্যই বর্তমান থাকে। প্রথম এই যে, জমির প্রকৃত মালি সে নয়, - আপনি নিজে। দ্বিতীয়, আপনার জমিতে সে কাজ করবে আপনারই দেয়া আদেশ-উপদেশ অনুসারে। তৃতীয়, আপনি তাকে কাজকর্ম করার যে সীমা নির্দিষ্ট করে দেবেন, সেই সীমার মধ্যে থেকেই তাকে কাজ করতে হবে - আপনার দেয়া স্বাধীনতাকে সেই সীমার মধ্যেই তার ব্যবহার করতে হবে। আর চতুর্থ এই যে, আপনার জমিতে তাকে - তার নিজের নয়-আপনার উদ্দশ্যকে পূর্ণ করতে হবে। এ চারটি শর্ত প্রতিনিধিত্বের ধারণার মধ্যে এমনভাবে মিলে-মিশে আছে যে, ‘প্রতিনিধি’ শব্দ উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই আপনা আপনিই মানুষের মনে এটা জেগে উঠে। আপনার কোন প্রতিনিধি যদি এ চারটি শর্ত পূর্ণ না করে তবে আপনি অবশ্যই বলবেন যে, সে প্রতিনিধিত্বের সীমালংঘন করেছে এবং সে সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, যা ‘প্রতিনিধির’ শব্দের অর্থেই নিহিত রয়েছে। ইসলাম মানুষকে দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার ‘প্রতিনিধি’ বলে নির্দিষ্ট করেছে। এই খিলাফত বা প্রতিনিধিত্বের ধারণার মধ্যেই উক্ত চারটি শর্ত অনিবার্য রূপে বিদ্যমান। ইসলামী রাজনীতির এ মহান আদর্শ অনুসারে যে রাষ্ট্র কায়েম হবে, মূলত তা হবে আল্লাহ তায়ালার নিরংকুশ প্রভুত্বের অধীনে মানুষের খিলাফত। আল্লাহর এ রাজ্যে তারই দেয়া আদেশ-উপদেশ অনুসারে তার নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে কাজ করে তার উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করা হচ্ছে এ দুনিয়ায় মানুষের একমাত্র কাজ।

খিলাফতের এ ব্যাখ্যা প্রসংগে আর একটি কথা বুঝে নেয়া দরকার। তা এই যে, ইসলামের এ রাজনৈতিক মত কোন ব্যক্তি বিশেষকে কিংবা কোন পরিবার বা কোন শ্রেণী বিশেষকে ‘প্রতিনিধি’ বলে আখ্যা দেয়নি, বরং মানুষের সেই গোটা সমাজকেই এ খিলাফতের পদে অভিষিক্ত করেছে, যারা তাওহীদ ও রেসালাতের মূলনীতিগুলোকে স্বীকার করে খিলাফতের উল্লেখিত শর্তাবলী পূর্ণ করতে প্রস্তুত হবে, এমন সমাজই সমষ্টিগতভাবে খিলাফতের অধিকারী - এ খিলাফত এহেন সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের প্রাপ্য।

গণতন্ত্র

ইসলামের রাজনীতিতে এখান থেকেই শুরু হয় গণতন্ত্রের পদক্ষেপ। ইসলামী সমাজের প্রত্যেকটি ব্যক্তিই খিলাফতের অধিকারী ও আযাদীর মালিক। এ অধিকার ও স্বাধীনতার সমগ্র মানুষই সমান অংশের অংশীদার। এ ব্যাপারে কেউ কারো চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়, কোন মানুষ অন্য কোন ব্যক্তিকে তার এ অধিকার ও স্বাধীনতার স্বত্ব হতে বঞ্চিত করতে পারে না। রাষ্ট্রের শাসন শৃংখলা বিধানের জন্য যে সরকার গঠিত হবে তা এ সমাজেরই ব্যক্তিদের মত অনুযায়ী গঠন করতে হবে। এরাই নিজ নিজ খিলাফতের অধিকার হতে এক অংশ সেই সরকারকে দান করবে। রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে তাদের মতের মূল্য অনিবার্যরূপে স্বীকৃত হবে। তাদেরই পরামর্শক্রমে গভর্ণমেন্ট চলবে। তাদের আস্থা যে ব্যক্তি লাভ করতে পারবে। আর যে তাদের আস্থা হারাবে, সে অবশ্যই খিলাফতের পদ হতে বিচ্যুত হেত বাধ্য হবে। এ দিক দিয়ে ইসলামী গণতন্ত্র একটি পরিপূর্ণ গণতন্ত্র। একটি গণতন্ত্র যতদূর পরিপূর্ণ, পূর্ণাঙ্গ ও নিখুত হতে পারে, এটা ঠিক ততখানিই পরিপূর্ণ ও নিখুত। কিন্তু ইসলামের এ গণতন্ত্র পাশ্চাত্য গণতন্ত্র হতে মূলতই সম্পূর্ণ আলাদা। এদের মধ্যে আকার-পাতালের পার্থক্য বিদ্যমান। পার্থক্য এ দিক দিয়ে যে, পাশ্চাত্য রাজনীতি ‘জনগণের প্রভুত্বকে’ বুনিয়াদরূপে স্বীকার করে, কিন্তু ইসলাম স্বীকার করে জনগণের ‘খিলাফত’কে। পাশ্চাত্য রাজনীতিতে জনগণই হচ্ছে বাদশাহ, আর ইসলামের দৃষ্টিতে বাদশাহী একমাত্র আল্লাহর, জনগণ তার প্রতিনিধি মাত্র। পাশ্চাত্য রাজনীতিতে জনগণ নিজেরাই দেশের শাসনতন্ত্র ও আইন রচনা করে, কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণকে সেই শরীয়াত বা আইনের অনুসরণ করে চলতে হয়, যা আল্লাহ তায়ালা তার রাসূলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। পাশ্চাত্য রাজনীতিতে গভর্ণমেন্টের কর্তব্য হচ্ছে রাজ্যের জনগণের ইচ্ছাকে পূর্ণ করা আর ইসলামী গভর্ণমেন্ট এবং তার প্রতিষ্ঠাতা জনগণ সকলেরই কর্তব্য হচ্ছে দুনিয়ায় আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যকে সার্থক করা। মোটকথা, পাশ্চাত্য গণতন্ত্র হচ্ছে আযাদ, নিরংকুশ ও বল্গাহারা প্রভৃত্ত - যার নিজ অধিকার ও স্বাধীনতাকে স্বেচ্ছাচারিতার সাথে ভোগ করে। এর সম্পূর্ণ বিপরীত - ইসলামী গণতন্ত্র হচ্ছে আল্লাহর দেয়া আইনের অনুসরণ করা। এখানে মানুষ তার অধিকার ও স্বাধীনতাকে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসারে তারই নির্ধারিত সীমার মধ্যে ব্যবহার করা।

অতপর আমি তাওহীদ, রেসালাত ও খিলাফতের ভিত্তিতে স্থাপিত ইসলামী রাষ্ট্রের একটি সংক্ষিপ্ত অথচ সুস্পষ্ট চিত্র অংকন করব।

ইসলামী রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য

ইসলামী রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কুরআন শরীফে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, তা সেসব মংগল ও কল্যাণময় ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করবে, বিকাশ দান করবে এবং উৎকর্ষ সাধন করবে, যে সবের অমংগল ও পাপ অনুষ্ঠানকে বাতিল করবে, পরাজিত করবে এবং নি:শেষে বিলীন করবে। মানুষের জীবনে যে সবের স্পর্শ মাত্রকেও আল্লাহ তায়ালা পসন্দ করেন না ইসলামের রাজ্যের শৃংখলা সম্মলিত ইচ্ছা-বাসনা চরিতার্থ করাও এর লক্ষ্য নয়। ইসলাম রাষ্ট্রের সম্মুখে এমন এক উচ্চতম ও উন্নততর লক্ষ্য উপস্থিত করে, যা অর্জন করা একান্তভাবে কর্তব্য। তা এই যে, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে যে কল্যাণ ও মঙ্গলের উৎকর্ষ দেখতে চান তাকে বিকশিত ও ফুলে ফলে সুশোভিত করতে হবে। আর ধ্বংস ও উচ্ছৃংখলতার এবং এমন সমস্ত উপায়ের উৎসমুখ চিরতরে বন্ধ করতে হবে যা আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টিতে তার এ রাজ্যকে ধ্বংস করতে পারে, তার সৃষ্টি মানব জাতির জীবন নষ্ট করতে পারে। এ লক্ষ্য উপস্থিত করার সঙ্গে সঙ্গে ইসলাম আমাদের সামনে ভাল-মন্দ উভয়ের একটি সুস্পষ্ট চিত্র পেশ করেছে। তাতে বাঞ্ছিত কল্যাণ ও মংগলকে এবং অকল্যাণগুলোকে একেবারে পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। এ চিত্র সামনে রেখে ইসলামী রাষ্ট্র প্রত্যেক যুগে এবং সকল প্রকার পারিপার্শ্বিকতার মধ্যেই তার নিজ সংশোধনী প্রোগ্রাম রচনা করতে পারে।

শাসনতন্ত্র

মানব জীবনে প্রত্যেকটি শাখা-প্রশাখাতেই চারিত্রিক রীতিনীতিগুলোকে পরিপূর্ণরূপে পালন করা ইসলামের চিরন্তন দাবী। এ কারণে এটা নিজ রাষ্ট্রের জন্য এ সুনির্দিষ্ট নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে যে, এর রাষ্ট্রনীতি নিরপেক্ষ, সুবিচার, সততা এবং খাটি ঈমানদারীর উপর স্থাপিত হবে। এটা স্বাদেশিক, প্রশাসনিক বা জাতীয় স্বার্থ রক্ষার খাতিরে মিথ্যা, প্রতারণা এবং অবিচারের প্রশ্রয় দিতে কোন অবস্থাতেই প্রস্তুত নয়। দেশের অভ্যন্তরে শাসক ও শাসিতদের মধ্যস্থিত সম্পর্কই হোক, আর দেশের বাইরে অন্যান্য জাতির সাথে সম্পর্কই হোক উভয় ক্ষেত্রেই ইসলাম সততা, বিশ্বাসপরায়নতা এবং সুবিচারের জন্য সমস্ত প্রকারের স্বার্থ কুরবানী করতে প্রস্তুত। মুসলিম ব্যক্তিদের মত মুসলিম রাষ্ট্রকেও এটা এ জন্য বাধ্য করে যে, প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূর্ণ করতে হবে, লেন-দেন ঠিক রাখতে হবে এবং যা বলবে তা করতে হবে, নিজের প্রাপ্য আদায় করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের কর্তব্যকে স্মরণ করতে হবে, যা করবে তা বলবে এবং অন্যের দ্বারা তার কর্তব্য আদায় করার প্রাপ্য (হক) ভুলে যেতে পারবে না। শক্তিকে যুলুমের কাজে ব্যবহার করার পরিবর্তে তাকে সুবিচার কায়েম করার উপায় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পরের ন্যায্য অধিকারকে সবসময়ই হক বলে মনে করতে এবং তা আদায় করতে হবে। শক্তিকে মনে করতে হবে আল্লাহ তায়ালার আমানত এবং এ দৃঢ় বিশ্বাস সহকারে তাকে প্রয়োগ করতে হবে যে, এ আমানতের পুরাপুরি হিসেব তাকে আল্লাহ তায়ালার দরবারে অবশ্যই দিতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্র পৃথিবীর বিশেষ একটা অঞ্চলে স্থাপিত হয়ে থাকলেও মানবীয় অধিকারগুলোকে সে কোন ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে সীমাবদ্ধা করে না - নাগরিকত্বের অধিকারেও নয়। শুধুমাত্র মানবতার দিক দিয়েই ইসলাম মানুষের জন্যে কয়েকটি মৌলিক অধিকার স্বীকার করে এবং সকল সময়ই সেগুলোকে পূর্ণরূপে রক্ষা করার আদেশ দেয়। সেই মানুষ ইসলামী রাষ্ট্রের সীমার মধ্যে বাস করুক কিংবা এর বাইরে বাস করুক, সে মিত্রই হোক কিংবা শত্রু তার সাথে সন্ধি থাকুক কিংবা যু্দ্ধই চলতে থাকুক। মানুষের রক্ত সকল সময়ই সম্মান পাবার যোগ্য, বিনা কারণে কিছুতেই মানুষের রক্তপাত করা যেতে পারে না। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, রুগ্ন এবং আহত লোকদের উপর কোনক্রমেই আক্রমণ করা যেতে পারে না। নারীর সতীত্ব চিরদিনই সম্মানিত ও সুরক্ষণীয়, কোন কারণেই তা নষ্ট করা যেতে পারে না। ক্ষুধার্তের জন্য অন্নের, বস্ত্রহীনদের জন্য বস্ত্রের এবং আহত কিংবা রুগ্ন ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসা ও সেবা শুশ্রুষার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে-সে ব্যক্তি শত্রুপক্ষেরই হোক না কেন। এ কয়টি এবং এধরেনর আরো কয়েকটি অধিকার ইসলাম মানুষকে শুধু মানুষ হিসেবেই দান করেছে। ইসলামী রাষ্ট্রের মূল শাসনতন্ত্রে এ সকলকে মৌলিক অধিকার বলে স্বীকার করা হয়েছে। তারপর নাগরিক অধিকারকে ইসলাম কেবল মাত্র সেসব লোকের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়নি, যারা রাষ্ট্রের সীমার মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে বরং প্রত্যেক মুসলমান-দুনিয়ায় যে কোন অংশেই তার জন্ম হোক না কে-ইসলামী রাষ্ট্রের সীমার মধ্যে প্রবেশ করা মাত্রই এর নাগরিক হয়ে যায় এবং সেই দেশের জন্মগত নাগরিকদের সমতুল্য অধিকার তাকে দান করা হয়। দুনিয়ায় ইসলামী রাষ্ট্র যত সংখ্যকই হোক না কেন এদের সব কয়টির মধ্যে নাগরিক অধিকার হবে সর্বসম্মিলিত। কোন ইসলামী রাষ্ট্রে প্রবেশ করতে হবে মুসলিম ব্যক্তির ‘পাসপোর্ট’-অনুমতি পত্রের আবশ্যক হবে না। কোন বংশীয়, জাতীয় কিংবা শ্রেণীতে বৈষ্যম ছাড়াই প্রত্যেক মুসলমান প্রত্যেকটি ইসলামী রাষ্ট্রের বড় বড় দায়িত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হতে পারবে।

যিম্মিদের অধিকার

ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে যেসব অমুসলিম বাস করে, তাদের জন্য ইসলাম কতগুলো অধিকার নির্দিষ্ট করে দিয়েছ। রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রে তা অবশ্য বিধিবদ্ধ থাকবে (যিম্মীর শাব্দিক অর্থ যার যিম্মা বা দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়)। ইসলামী রাষ্ট্র অমুসলিমদের জান-মাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে বলেই তারা যিম্মী নামে অভিহিত হয়। ইসলামের পরিভাষায় এরূপ অমুসলিমদেরকে বলা হয় যিম্মী। যিম্মীর জান-মাল ও মান-সম্মান সবই একজন মুসলিম নাগরিকের জান-মাল ও মান-সম্মানের মতই মর্যাদা পাবে। ফৌজদারী এবং দেওয়ানী আইনের বেলায় মুসলিম ও যিম্মীর মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। যিম্মীদের ‘পার্সনাল-ল’ অর্থাৎ ব্যক্তি স্বাধীনতায় ইসলামী রাষ্ট্র কখনও হস্তক্ষেপ করবে না। যিম্মীদের মন, ধর্মমত ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং পূজা, উপাসনার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। যিম্মী তার ধর্ম প্রচারই শুধু নয়, আইনের গন্ডির মধ্যে থেকে ইসলামের সমালোচনাও করতে পারবে।

ইসলামী শাসনতন্ত্রে অমুসলিম প্রজাদেরকে এগুলো এবং এ ধরনের আরো অনেকগুলো অধিকার দান করা হয়েছে। এ অধিকারগুলো চিরস্থায়ী। ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে তারা যতদিন থাকবে ততদিন তাদের এ অধিকার কিছুতেই হরণ করা যেতে পারে না। অন্য কোন অমুসলিম রাষ্ট্র এর অধীনে মুসলিম প্রজাদের উপর যতই যুলুম করুক না কেন, তার প্রতিশোধ হিসেবে একটা ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষে এর অধীন অমুসলিম প্রজাদের উপর শরীয়াতের খেলাফ বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করা বৈধ নয়। এমনকি আমাদের সীমান্তের বাইরে সমস্ত মুসলমানকে যদি হত্যাও করে ফেলা হয়, তবুও আমরা আমাদের সীমার মধ্যে একজন যিম্মীর অকারণে রক্তপাত করতে পারি না।

রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব

ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার সমস্ত দায়িত্ব একজন আমীর বা রাষ্ট্র প্রধানের উপর অর্পণ করা হয়। এ আমীরকে ‘সদরে জমহুরিয়া’ বা রাষ্ট্র পরিষদের সভাপতির সমান মনে করা যেতে পারে। আমী নির্বাচনের ব্যাপারে এমন সমস্ত বয়:প্রাপ্ত স্ত্রী-পুরুষের ভোট দেবার অধিকার থাকে যারা শাসনতন্ত্রের মূলনীতিগুলোকে স্বীকার করে। আমীর (রাষ্ট্র প্রধান) নির্বাচনের মূলনীতি এই যে, ইসলামের মূল ভাবধারার অভিজ্ঞতা, ইসলামী স্বভাব-প্রকৃতি আল্লাহর ভয় এবং রাজনৈতিক প্রতিভার দিক দিয়ে যে ব্যক্তি সমাজের অধিকাংশ লোকের আস্থাভাজন হবে। এমন ব্যক্তিকেই আমীর নির্বাচন করতে হবে তারপর সেই আমীরের সাহায্যের জন্য একটি ‘মজলিশে শুরা’ বা পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। ‘মজলিশে শুরার’ পরামর্শ নিয়ে রাজ্যের সমস্ত শৃংখলা রক্ষা করা আমীরের কর্তব্য হবে। আমীরের প্রতি যতদিন পর্যন্ত জনগণের আস্থা থাকবে ততদিনই সে আমীর থাকতে পারবে। আস্থা হারিয়ে ফেললে তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। আর যতদিন তার প্রতি লোকদের আস্থা থাকবে, গভর্ণমেন্টের অধিকার ও কর্তৃত্ব তার হাতে থাকবে। আমীর এবং তার সরকারের প্রকাশ্য সমালোচনা করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।

ইসলামী রাষ্ট্রে আইন রচনা করা হবে শরীয়াতের নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকে। আল্লাহ তায়ালা এবং তার রাসূলের সুস্পষ্ট নির্দেশ শুধু অনুসরণ ও প্রতিপালনের জন্যই। কোন আইন পরিষদ তাতে বিন্দুমাত্র রদবদল করতে পারে না কিন্তু আল্লাহ আল্লাহ এবং রাসূলের যেসব হুকুমের একাধিক অর্থ হওয়ার সম্ভাবনা হবে, তাতে শরীয়াতের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা শুধু সেসব লোকের কাজ, যারা শরীয়াতের পরিপূর্ণ দক্ষতা সম্পন্ন। কাজেই এ ধরনের কাজ ‘মজলিশে শুরা’ হতে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত সাব-কমিটির নিকট সোপর্দ করতে হবে। তারপর মানুষের দৈনন্দিন কাজ কারবারের এমন অনেক ক্ষেত্রও থাকে, যে সম্পর্কে শরীয়াত নির্দিষ্ট কোন হুকুম দেয়নি। কাজেই এ ব্যাপারে ‘মজলিশে শুরা’ দ্বীন ইসলামের নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকে আইন রচনা করতে পারে।

আদালত

ইসলামী আদালত শাসন কর্তৃপক্ষের অধীন নয় ; বরং তা সরাসরিভাবে আল্লাহ তায়ালার প্রতিনিধির মর্যদায় অভিষিক্ত এবং একে আল্লাহ তায়ালরই সামনে সে জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আদালতের বিচারকদের যদিও শাসন কর্তৃপক্ষ নিযুক্ত করে ; কিন্তু এক ব্যক্তি যখন আদালতে বিচারকের পদে বসবে, তখন সে আল্লাহ তায়ালার আইন অনুসারে জনগণের মধ্যে নিরপেক্ষ ইনসাফ করবে। তার ইনসাফের হাত হতে স্বয়ং রাষ্ট্রপতিও বাচতে পারে না। বিচারকের সামনে এমনভাবে দাড়াতে হবে-যেমন করে দাড়াতে হয় রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিককে।

উপসংহার

অমুসলিমগন যেকোন আর্দশের রাজনীতি করতে পারে তাতে আমার কোন বক্তব্য নেই কারন তাদের নিজস্ব কোন জীবন ব্যবস্থা নেই যাহা অনুসরন করবে। কিন্তু মুসলিমদের তো নিজস্ব আদর্শরয়েছে যাহা তাদেররবের প্রদত্ত্ব।তিঁনি বলেন”ইন্নাদ্বিনা ইনদাল্লাহিল ইসলাম-অর্থাত আমার কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবনব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম।আল্লাহ এই দ্বীনইসলাম (ইসলামীজীবনব্যবস্থা)কে অন্যান্য জীবনব্যবস্থার উপর বিজয়ীকরার জন্যেই নাবী রাসুলগনকে পৃথিবীত পাঠিয়েছেন।আমি সেই সত্তা যিনি সত্যদ্বীন সহকারে রাসুলপ্রেরণকরেছি যাতে তিনি অন্যান্য সকল দ্বীনের উপর ইহাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন(সূরা আলফাতাহ-২৮)অতএব বুঝা গেল একজন মুসলমান অন্যান্য জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনীতি করতে পারেনা।যদি করে তাহা হবে কুফুরিএবং প্রত্যক্ষিত। আমাদের সমাজে এক শ্রনেীর লোক রয়েছে তারা ভাবেন বর্তমান আধুনিক যুগে ইসলামী শাসনব্যবস্থা চলতে পারেনা তাছাড়া এদেশে অমুসলিম নাগরিকও তো রয়েছে।এমন বিশ্বাস যাদের অন্তকরনে রয়েছে তাকে তওবাকরে আবার মুসলিম হতে হবে।আল্লাহ বলেন”যারা কুরান দ্বারা জীবনের সকল কাজের ফায়সালা করেনা তারা কাফের!অন্যত্র সুরা মায়েদা- ৪৯ নং আয়াতে বলনে’আল্লাহর বিধান অনুযায়ি মানুষের মধ্য ফায়সালাকর!তাদের মনের খেয়ালখুশির ধারনাবাসনার অনুসরন করোনা।এবার আসুন অমুসলিমদের কথা!এই পৃথিবীতে সকল সৃষ্টজীবকে আল্লাহ প্রতিপালন করেন।মুসলিম অমুসলিম কেউ তার নিয়ামত থেকে বঞ্চিত নয় কারন সবারই তিনি রব বা পালনতকারী।মহানপ্রভু যিনি মানুষের জন্য জীবন বিধানরচনা করেছেন তিনি তার প্রভূত্ব অস্বিকারকারীদের জন্যও তাঁর রচিত জীবনব্যবস্থায় ন্যায়ভিত্তিক সুযোগ সুবিধা অর্থাত মৌলিকঅধিকার সূমহ সংরক্ষিত রেখেছেন। যারা ভাবেন ইসলামী হুকমাতে অমুসলিমদের ধর্মীয় সামাজিক অর্থনৈতিক অধিকার সূমহ খর্বকরা হয়েছে তাদের ভাবা উচতি “মায়ের চেয়ে খালার দরদ বেশি হতে পারেনা।সর্বশেষ একটি হাদিস বর্ণনাকরেই ইতিটানবো আশাকরি লেখাটি আমাদের অনেক ভূল চিন্তা দ্বারার অপনোদনকরবে।রাসূলে স: বলেছেন”মনেরেখো কোন মুসলিম কোন অমূসলিম নাগরিকের উপর নিপীড়নচালায়,তার অধিকারখর্বকরে,তার কোন বস্তুজোরপূর্বকছিনিয়ে নেয় তাহলে কয়িামতের দিন আমিআল্লাহর আদালতে সেই অমূসলিমের পক্ষঅবলম্বনকরবো।(বুদাউদ)

তথ্যসূত্র

১.কুআন হাদীস সঞ্চায়ন -অধ্যাপক মাওলানা আতকিুররহামানভূঁইয়া

২. ইসলামের জীবন পদ্ধতি-সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী

বিষয়: বিবিধ

২৫২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File