মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আমার লিখা এ নাটকটি
লিখেছেন লিখেছেন রাইস উদ্দিন ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:৩৯:৪২ রাত
স্বদেশ প্রেম
সৈয়দ মুস্তফা একজন আদর্শ পিতা। তার স্বপ্নস্বাধ ছিল ছেলে সন্তান নিয়ে সূখে দুখে এক সঙ্গে থাকবে । সুখ দুঃখ ভাগা ভাগী করে নিবে। গড়ে তুলবে একটি আদর্শ পরিবার। এক মেয়ে এক ছেলে নিয়ে তার জীবন সংগ্রাম। কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছতে তিনি ব্যয় করছেন তার সমস্ত মেধা শ্রম যোগ্যতা সময় সাথে অর্থ।স্বপ্ন আর বাস্তবের লড়াইয়ে বাস্তবতার বীজয় হলো। অসহায় পিতার স্বপ্ন আজ পরাজীত। মেয়েটি বি,এ,অনার্স পাশ করার পর পরই বিয়ে হয়ে চলে গেল সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সুুদুর লন্ডনে। ছেলে ইউনিভারসিটি থেকে স্কলারশিফ পেয়ে সেও চলে গেল তার স্বপ্নের দেশ লন্ডনে। এক সময় পিতার অগোচরে সেখানে বিয়েও করে ফেলে । অথচ সৈয়দ সাহেব মনে মনে কত স্বপ্নের জাল বুনতেছিলেন , ছেলে তার বিদেশ থেকে উ”চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বড়ডিগ্রী নিয়ে দেশে আসবে । ঘরে শিক্ষিত বউ আসবে , নাতী নাতকুরে ঘর ভরে যাবে । সংসারে বইবে সুখের বন্যা । সৈয়দ সাহেব ছেলের এমন কর্মে আহত হলেন। বন্দ করে দিলেন যোগাযোগ। স্ত্রীকে কঠিন কসম দিলেন যাতে এমন সন্তানের সাথে ফোন যোগাযোগও না করেন। মৃত্যুশয্যায় থেকেও ছেলের সাথে কথা বলার অনুমতি পায়নী শয্যাসায়ী মাতা। এমন কঠিন কসম যে তার অন্যায় আদেশ ছিল, তা তিনি এখন বুঝতে পেরে চরম অনুশুচনায় ভুগছেন। প্রতিটি মুহুর্তে ছেলে সুজন ও তার ছোট ছোট ছেলেদের কচি মূখ তাকে ভাবিয়ে তুলেছে। মেয়েজামাই মেয়ে স্ত্রীর মৃত্যূর সময় এসেছিল এবং অনুরোদ করেছে তাদের সাথে যেতে কিš‘ সৈয়দ সাহেব কিছুতেই রাজী হননি। এখন শ্যালক এসেছে জোরজবরদ¯িত তাকে লন্ডনে নিয়ে যাবে।
প্রথম দৃশ্য
মর্নিং ওয়াক করতে গিয়ে নদীর পারে মিঃ টনি ও নুর“ বসে গলপ করছে। হাপাতে হাপাতে ।
মিঃ টনি ঃ এই নি তোদের গ্রাম এত কাঁদা এত গোবর আর সেকি ধুলো মাটি এখানে কি মর্নিং ওয়াক করা যায়? কি বলবো তোমাকে। আমাদের ম্যানচিস্টারের তুলনা হয়না একদম নিটেল ক্লিন। দেখলেই প্রান জুড়িয়ে যায়।
নুর“ ঃ মামা ! এই কাঁদা মাটিতেই তো আপনার আমার জন্মভ। শরীরে সাথে লেগে থাকা এই ধুলো মাটি কি অস্বীকারকরা যায়?
মি ঃ টনি ঃ বা-রে তুমি তো দেখছি কবি হয়ে গেলে।
নুর“ ঃ এদেশকে যারা ভাল বাসে তাদের হৃদয় নিস্মৃত কথা গুলোই কবিতা । আর ঐ কবির জীবন ধন্য যিনি মাতৃ ভুমিকে নিয়ে মায়ের ভাষায় সাহিত্য চর্চা করেন। কবি মাইকেল মধুসুদনের কথা নিশ্চয়ই জানেন। যিনি আপনার মত লন্ডনী হয়ে ইংরেজী ভাষায় সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে ব্যর্থহয়ে আবার মায়ের ভাষার কাছে চলে এসেছিলেন। এই তো সেই কপোতাক্ষ নদ যাকে নিয়ে তিনি কবিতা লিখেছিলেন।
মি ঃ টনি ঃ নুর“ মিয়া তুমি ঠুলা ভাইয়ে সাথে থেকে তোমারও মাথা মন্ডু খারাপ হয়ে গেছে। তুমি যদি একবার লন্ডনে যেতে পারতে তাহলে এদেশের প্রতি তোমার এত ভালবাসা থাকতো না। আরে এখানে অহরহ মানবাধীকার লংঘিত হয় । কিš‘ আমাদের লন্ডনে নাগরিক সুবিধা এত সুন্দর তোমাকে কি বলবো। একদিন আমি বাজার থেকে একটি মোরগ কিনে বাড়ি ফিরছি ট্রেনে করে । হঠাৎ মোরগটা এত চেচামেচি শর“ করলো যাত্রীদের ডিস্ট্রাব হলো । তারা পুলিশকে ইনফরম করলো আর যাই কোথায় আট ঘন্টা জেলে থেকে তার পর বাসায়। বাংলাদেশে মানুষ মানুষের জমি জোর করে দখল করলেও নো প্রবলেম।
নুর“ঃ মামা !পিয়াজ মরিচ কাটতে লন্ডনে যাওয়ার আমার কোন শখ নাই। আপনারা ভীন দেশিদের সেবা করছেন কর“ন। আমারা আমাদের স্বদেশের
মাটি আর মানুষের সেবাকরে মরতে
মিঃ টনিঃ স্যাটাপ! তুমি কি বলতে চাও আমি পিয়াজ মরিচ কাটি?
নুর“ ঃ রাগ করেন কেন?আমিকি তাই বলেছি নাকি? এদেশ থেকে যারা যায় অধিকাংশ লোক হোটেলে থালা বাসন ধোয়া এবং পিয়াজ মরিচ কাটার কাজ করেন। আপনি কি করেন তাতো জানি না ! তবে ঐ দেশের লোকের সেবা করেন এটাতো সত্যি কথা?
মিঃটনিঃ তুমি কিš‘ আমাকে অপমান করছো। আমি আমার দেশের লোকদের সেবা করছি,আমি এখন বাংলাদেশী নই বুঝলে ? আর ডেফিনেটলি প্রত্যেকেই আমরা সেবক।
নুর“ ঃ মামা ! আর বির্তক নয় এবার চলেন গোসল সেরে বাড়ি যাই। কাকা আমাদের রেখে একা কখনোই নাস্তা করবেন না।
মিঃ টনিঃ চল ! নদীতে আজকে মজা করে গোসল করবো। এই যে নুর“ আবার ধাক্কা দিওনা যেন শাতার কাটতে জানিনে বাবা।
নুর“ ঃ তাই নাকি ? তাহলে তো আপনার জীবন ষোল আনাই মিছে। সেই মাঝি আর নৌকা আরোহীর গল্পের মত ।
মিঃ টনিঃ সেটা কেমন?
নুর“ মিয়া ঃ নৌকা আরোহী মাঝিকে জিঙ্গেস করছে মাঝি ভাই ! তোমার বাবাও কি নৌাকা চালাতেন মাঝি জবাব দিলেন আমার চৌদ্দ গোষ্ঠি নৌকা চালাতেন আরোহী জিঙ্গেস করলেন তারা কিভাবে মরেছেন? মাঝি বল্লেন নৌকাতে। আরোহী হেসে বল্লেন তা হলে তো তোমার জীবন আট আনাই মিছে। মাঝি প্রশ্ন করলেন ভাই পশ্চিম আকাশে মেঘ করেছে ঝড় আসতে পারে,আপনি কি সাতার জানেন? আরোহী জবাব দিলেন তাতো জানি না ! মাঝি বল্লেন তাহলে তো আপনার জীবন ষোল আনাই মিছে।
মিঃ টনিঃ লেটস গো মাই আংকেল ! কমন। ইউ আর গ্রেট আই নেভার ফরগেট ইউ। (উভয়ে নদীতে নেমে গোসল সেরে বাসায় পৌছবে)
দ্বিতীয় দৃশ্য
সৈয়দ সাহেব একা বসে ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি মš’ন করছে । কেয়ারটেকার নুর“ মিয়া, হুক্কা সাজিয়ে নলটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে
নুর“ ঃ চাচা মিঞা ! নিজের শরীরের দিকে একবারও কি খেয়াল করেছেন ? এই ভাবে যদি নিজের উপর জুলুম করতে থাকেন তাহলে কি ভাবে বাচবেন আপনি?
সৈয়দ সাহেব ঃ বেচে থেকে আর কি হবে রে নুর“ ! এখন মরে গেলেই বেচে যাই। একজন তো মরে গিয়ে বেচে গেলো। (দির্ঘ শ্বাস ফেলবেন)
নুর“ ঃ এমন কথা বলতে নেই চাচা মিঞা ! সব রাগ মাটি করে একবার লন্ডন থেকে ঘুরে আসেন। নাতী নাতকুরদের কচি মুখ গুলো দেখলে আপনি একদম সু¯’ হয়ে যাবেন।
সৈয়দ সাহেব ঃ লন্ডন! হাঃ হাঃ হাঃ। লন্ডন আমার আশা ভংগের কল্প পুরি। মানুষ সেখানে যায় উ”চতর শিক্ষালাভ উন্নত জীবন গড়া আর কোটিপতি হওয়ার জন্য। আমি সেখানে কেন যাব বল? ঐ ছেলেকে দেখতে -যার ভুলের জন্য তার মা দূঃখ যন্ত্রনায় ধুকে ধুকে মরেছে। আমার আশা আকাংক্ষা স্বপ্নস্বাধ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বিদেশীনী বিয়ে করে নিজের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে প্রতারনা করেছে। আমি নিজের কাছে অপরাধী হতে পারিনা। (কাদঁতে থাকবে)
নুর“ ঃ চাচা মিঞা! আমি জানি সিমাহীন দূঃখ আপনাকে কুড়ে কুড়ে খা”েছ। তাই বলি কি ভাগ্যের উপর কারও যেহেতু হাত নেই তাই সব কিছু ভুলে আপনার তাদের কাছে একবার যাওয়া উচিত।
(শ্যলকের প্রবেশ)
মিঃটনিঃ ঠুলাভাই! ঙঁৎ ভষরমযঃ হবীঃ ঞযঁৎংফধু ড় শ ? হড় পড়সঢ়ৎড়সরংব
এই আমি পাসপোর্টে ভিসা লাগিয়ে টিকিট কনফার্ম করে নিয়েএসেছি।
নুর“ ঃ মামা !আপনি সত্যি একটা ভাল কাজ করেছেন।
মিঃটনিঃ এই যে মিঃ নুর“ তোমাকে না বলেছি আংকেল বলতে বলেছি । এই যে ঠুলা ভাই ! এই ভাবে নীরব হয়ে বসে থাকবেন না। কিছু একটা বলেন! না হলে আমি আমাদের লন্ডনের গল্প শুনাই?
সৈয়দ সাহেব ঃ না ! তোমার মুখে লন্ডনের গল্প শুনে শুনে আমার একদম বারোটা বেজে গেছে। আর তোমার মুখে ঐ ঠুলা ভাই শব্দটা
খুবই বিশ্রী শুনায় বুজেছো? দয়া করে ভাই বলে ডাকলে খূশি হবো। বুঝলে ভাই টুনা মিঞা?
মি ঃ টনি ঃ ও কে ! ব্রাদার ! বাট -আপনি ও তো বার বার একই ভুল করে আসছেন।
সৈয়দ সাহেব ঃ আমি আবার কি ভুল করলাম?
নুর“ ঃ আমি বলছি চাচা মিঞা ! তা হ”েছ আংকেল লন্ডন গিয়ে টুনা মিঞা থেকে মিঃ টনি হয়েছেন । কিš‘ আপনি তাকে টুনা বলে অপমান করছেন।
সৈয়দ সাহেব ঃ স্যরি মিঃ টনি!এবার যাও ফ্রেশহয়ে খাবার খেয়ে বিশ্রাম করগে।
মিঃ টনিঃ ও কে ঠুলা ভাই ! স্যরি ব্রাদার ! লেটস গো মিঃ নুর“ ! অনেক কাজ বাকি । ট্রাভেলস এর সকল আয়োজন কমপ্লিট করতে হবে।
(প্র¯’ান উভয়ে)
(চেয়ারে কিছুক্ষন বসে হতচকিত হয়ে)
সৈয়দ সাহেব ঃ আমাকে ক্ষমা করে দিও আতিয়ার মা ! মৃত্যুসজ্জায় ও তোমাকে ছেলের সাথে কথা বলতে দেইনি। সত্যি আমি স্বার্থপর ! তোমাকে দির্ঘ আট বছর ছেলের সাথে বি”িছন্ন রেখে আজ আমি নিজেই তার কাছে যা”িছ। বিশ্বাস কর সময়ের কাছে আমি এতটা অনুগত হবো তা কোন দিন ভাবিনী ।
মানুষ এভাবেই বুঝি অনুগত হয়ে যায়। ভেবেছিলাম শেকড়ের টানে ওরা ফিরে আসবে ! কই ওরাতো এলনা? বাধ্য হয়ে অদের শত অনুরোধে আমাকে যেতে হ”েছ। আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি তোমার অপরাধী !!!!!(কাদতে থাকবে ) পর্দা পরবে।
তৃতীয় দৃশ্য
শামীম ও সূজন দুভাই দুষ্টমি করছে। পিতা সফিক তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করছে ।
পিতা সফিক ঃ এই যে, সোনা মনিরা ! কি করছো তোমরা? এত দুষ্টমি কিš‘ ভাল না ! বুঝেছো ? এক্ষুনি তোমার মাম আসবেন । পিটুনী দিলে আমাকে আবার ডেকো না যেন।
শামীম ঃ পাপা ! দেখছোনা সুজন আমার পেনসিল দি”েছ না । আমি ড্রইং করবো কি ভাবে?
সূজন ঃ পাপা ! আমাকে আঁকতে দি”েছনা ভাইয়্যা। আমি বাংলাদেশের ছঁবি আঁকবো ।
পিতা সফিক ঃ তুমি কি বাংলাদেশ দেখেছো যে আঁকবে?
সূজন ঃ কেন ? তুমি যে একটি ছড়ার বই এনে দিয়েছো তাতে তো বাংলাদেশের ছঁবি রয়েছে । কত সুন্দর আকা বাকা নদী ,নদীর পাড়ে কাঁশবন । মাম বলেছেন ”আমাদেরও নাকী সেখানে সুন্দর একটি বাড়ী রয়েছে । সেই বাড়িতে গ্রেন্ডপাপা আর গ্রেন্ড মাম থাকেন।
শামীম ঃ পাপা ! আমরা কখন বাংলাদেশে যাব? মামতো কন্টিনিউ দেশের স্টোরী শেুনান।
পিতা সফিক ঃ (একটু নিরব) তোমার মম সত্যি বাংলাদেশকে গভীর ভাবে ভাল বাসে। কিš‘ তাকেও তো আমি আমার জন্ম ভুমি দেখাতে পারলাম না।
মিঃটনির প্রবেশ) )
মিঃ টনি ঃ ডন্ট ওরি মাই সান ! অল প্রবলেম্বস ওইলবি সল্ভ নাউ।
সফিক ঃ আরে মামা ! তুমি কখন এলে ? বাংলাদেশ গেলে অথচ একটু বলেও গেলে না । ফোন করলাম তাও বন্ধ পেলাম । এটা কি ভাল করেছো? তোমার সাথে কোন কথা নেই। মিঃ টনি ঃ এই যে লিটল ব্রাদারেরা তোমাদের জন্য একটা বিগ সারপ্রাইজ এনেছি। (ওরা উভয়ে কি এনেছো বলে দৌড়ে কাছে আসবে)
সফিক ঃ মামা ! আগে বল বাবা কেমন আছেন? তার শরীর সা¯’্য ভাল তো? আমি জানি মা মারা যাওয়ার পর তিনি বেশি অসু¯’্য হয়ে পড়েছেন। হে আল্লাহ ঐ কঠিন মানুষটার হৃদয়ে আমাদের জন্য ভালবাসা সৃষ্টি করে দাও।
(সৈয়দ সাহেবের প্রবেশ)
সৈয়দ সাহেব ঃ ঐ কঠিন হৃদয়ের মানুষটার হৃদয়টি যে কঠিন বাস্তবতার আঘাতে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছেরে বাপ ! আমি যে তোদের ছাড়া বাঁচবোনারে। তাই তো সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চলে এসেছি। (বাবা বলে চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরবে) কোথায় আমার দাদু ভাইয়েরা ! আমার কাছে আয়। তোরা আমার ভাঙ্গা হৃদয়টা জুড়িয়ে দিবিনা ? অরাও দাদু বলে জড়িয়ে ধরবে।
সফিক ঃ বাবা ! তুমি পারলে এতটা বছর আমাকে না দেখে থাকতে? আমি না হয় একটা বড় ভুল করেই ফেলেছি তার জন্য এত বড় সাস্তি আমাকে দিবে তা ভাবতেও পারিনী। মৃত্যুশজ্জাসায়ী মাকেও দেখতে দাওনি বাবা।
সৈয়দ সাহেব ঃ আমি যে অপরাধী ! যে শাস্তি তোরা দিবি তা মাথা পেতে নিব ।
মিঃ টনি ঃ ঠুলা ভাই। মাস্ট বি পানিস্ট এইযে ” জাজ সাহেবেরা ! বলতো সৈয়দ আশরাফুল সাহেবের কি ধরনের পানিস্টম্যান্ট হওয়া দরকার।
সূজন ঃ ( টেবিল চাপরিয়ে) অডার অডার অডার ! তিন মাসের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশ দেখাতে নিয়ে যেতে হবে । না হয়। (সুজন শামীমের দিকে তাকাবে)
শামীম ঃ না হয় সৈয়দ সাহেবকে যাবজ্জীবন আমাদের কাছে কারাবরন করতে হবে।
সৈয়দ সাহেব ঃ (মাথা নাড়িয়ে ) ঠিক আছে ।
তোমাদের সকল আবদার আমি পূরণ করবো দাদু ভাইয়েরা। এবার বল তোমরা কেমন আছ ? তোমাদের মা কোথায় ? আমার কথা গিয়ে বল যাও।
(সফিক কিছুটা ইতস্ততাবোধ করবে)
মি ঃ টনি ঃ ঠুলা ভাই ! বউ মা কিছক্ষনের মধ্যে চলে আসবে। হ্যা সী ওইল কাম ভেরি সুন। জানেন ঠুলা ভাই ? আমাদেও বউ মা ভাল বাংলা বলতে পারে।এমনকি লিখতেও পারে। এখন বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিজ্যের উপর ডক্টরেট
করতে চা”েছ্ । এখন আপনি যখন এসেই গেছেন বউ মাকে এব্যাপারে সাহয্য করতে পারবেন।
সফিক ঃ বাবা ! তুমি খুশি হওনি? আমি জানি আমার ছেলেরা যদি বাংলা না শিখে তুমি জীবনেও আমাকে ক্ষমা করতেনা। তাই ছেলেদের তোমার আশাকাংখা অনুযায়ী গড়ে তুলেছি।
সৈয়দ সাহেব ঃ আমি সত্যি তোকে নিয়ে গর্ববোধ করি খোকা !
আমরা বাংলাদেশি আমাদের রয়েছে একটি আলাদা সংস্কৃতি এবং কৃষ্টি কালচার।আদর্শগত ভাবেও আমরা একটি স্বতন্ত্র জাতি। আমাদের সব সময় নিজস্ব কালচার আত্বস্ত এবং বাস্তবায়নে ভুমিকা রাখা একান্ত জর“রী। কারন জাতীয় আদর্শ বাস্তবায়নে জাতীয় শক্তির বর্হি প্রকাশ হয়, জাতি হয়ে উঠে জীবন্ত ও প্রানবন্ত। কোন জাতি যখন আত্ম বিস্মৃত হয় তখনই স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা হারায়।
মি ঃ টনি ঃ ঠুলা ভাই! এখনই বউ মা এসে যাবে আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন , তারপর ডিনার সেওে রাতভর গল্প করা যাবে। আমার আবার বাসায় ফোন করা দরকার । ও হ্যা ভাগ্নিকেও ফোনে জানিয়ে দেই আপনার কথা।
সফিক ঃ অলরাইট মামা ! ইউ আর গ্রেট। বাবা তুমি গোসলটা সেরে নাও । দির্ঘ সময় জার্নি করেছো প্লেনে কিসব খেয়েছো কে জানে।
সৈয়দ সাহেব ঃ আমার যে খিদে মিটে গেছেরে খোকা।
দাদু ভাইদের দেখার পর থেকে মনে হলো আমি একটা নতুন জীবন পেলাম। এদের দ্বারা আমাদের ভাষা সংস্কৃতি বিশ্বমাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বে পরিচিত করতে চাই। বলতো দাদু ভাইয়েরা। বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস কোন তারিখে?
শামীম ঃ একুশে ফেব্র“য়ারী।
সৈয়দ সাহেব ঃ কে শিখিয়েছে?
সূজন ঃ মা !
সৈয়দ সাহেব ঃ তা হলে তো বউ মাকে তার গবেষনার কাজে
সাহায্য করা আমার জন্য কতর্ব্য।
মিঃটনিঃ আমি সবাইকে ফোন করেছি সবাই সকাল না হতেই চলে আসবে।
শামীম ঃ কি মজা ! কি মজা ! ফুপু আসবেন ঝুমু র“মা ওরা আসবে।
সুজন ঃ ভাইয়া ! এবার সবাই মিলে বাংলাদেশে যাব । আমাদের বাড়িতে বেড়াতে যাব। কি মজা হবে তাইনা দাদু?
সৈয়দ সাহেব ঃ হ্যা হ্যা আমারতো এক্ষুনি যাইতে মন চায়।
শামীম ঃ দাদু ! আমরা কখন যাব ? বল না?
সৈয়দ সাহেব ঃ একেই বলে নাড়ির টান । তোর দাদী বলতেন তুমি রাগ করোনা । দেখবে ওরা একদিন সব বাধাঁ ছিন্ন করে তোমার কাছে ফিরে এসেছে। আতিয়ার মা ! তুমি কত বলতে আমার শুন্যভিটা নাতিনাতকুরে ভরে যাবে। সাড়া আঙ্গীনা জুড়ে আনোন্দের প্লাবন বয়ে যাবে । তুমি যদি আজ বেঁচে থাকতে তাহলে দাদুভাইদের নিয়ে কত আন্দ উল্যাস করতে । আমি তোমার সব আহ্লাদ ধ্বংস করে দিয়েছে। দাদুভাইদেরকে বঞ্চিত করেছি তোমার আদরস্নেহ থেকে । আমার এই অপলাধের কোনই ক্ষমানেই আতিয়ার মা ! কোন ক্ষমানেই। (কিছুক্ষ্ণনিরবথেকে)
দাদু ভাইয়েরা ! তোদের দাদীকে দেখতে ই”েছ করেনা ?
জানিস ? বাড়ির দক্ষিণে ডালিম গাছের তলে তার কবর দিয়েছি।
ডালিম গাছে লাল টকটকে ডালিম ধরেছে মাঝে মাঝে হলদে পাখিটা এসে অপর“প সুরে ডাকতে থাকে। মনে হয় তোদের দাদী আমাকে ডাকছে। বার বার মনে পরে পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের কবর কবিতাটি
ঐ খানে তোর দাদীর কবর
ডালিম গাছের তলে
তিরিশ বছর ভিঁজিয়ে রেখেছি
দুই নয়নের জলে।
চল দাদু ভাইয়েরা তোমাদের আমি পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের কবর কবিতাটি শিখিয়ে দিব । চল চল (অন্য রোমে যেতে থাকবে শামীম ও সূজনকে নিয়ে, মামা ভাগ্নে অশ্র“স্বজল নয়নে অদের দিকে তাকিয়ে থাকবে)
(পর্দা পরতে থাকবে )
বিষয়: বিবিধ
১২৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন