একটি রম্য কথা এই শুনছ?

লিখেছেন লিখেছেন রাইস উদ্দিন ২০ জুন, ২০১৩, ০৯:০৭:২৯ রাত



-এই শুনছ?

-শুনছি,কি বলবে বল !

-তুমি সারাদিন শুয়ে থাক কেন বলতো?

-শুয়ে থাকবোনা তো কি,এই জন্যইতো দেশে ছুটিতে আসা।

-আর শুয়ে থাকতে হবেনা। চল বাইরে বেরুবো ।

-বাইরে?কেন বলতো?

-ডাক্তার আংকেল তোমাকে দেখতে চেয়েছেন।

-কিন্তু আমিতো সুস্থ।

-আরে বোকা, তোমাকে গড়াগড়ির রোগে ধরেছে তাই ডাক্তার দেখাতে হবে।

গিন্নি একটু মূচকি হেসে বাচ্চাকে পোশাক পরাতেপরাতে বললো"

-কি হলো তৈরী হচ্ছোনা কেন?বাহিরে যেতে আমার একদম ভাল লাগেনা-ধুলোবালি মিশ্রিত হাওয়া আর গাড়ির নিশ্রিত কালো ধুঁয়ায় একদম শ্বাসরুদ্ধ পরিবেশ।কাপড় পরছি আর ভাবছি,বাপরে যদি একবার যানজটে পরে যাই তাহলে তো প্রাণবায়ু বেরইয়ে যাবে।

সুয়র্টা কিছুটা পশ্চিম অাকাশে হেলে পড়েছে,রৌদ্রের তাপ কিছুটা কমেছে।সান গ্লাসটা চোখে দিলাম।তারপর-বাচ্চাকে নিয়ে রাস্তায় এসে রিক্সার অপেক্ষা করছি।

টুংটাং ঘন্টি বাজিয়ে অসংখ্য রিক্সা আসা-যাওয়া করছে অথচ একটাও খালি রিক্সা পাচ্ছিনা।

-এই রিক্সার প্রোয়োজন নেইতো,পাঁচ মিনিটের রাস্তা।চল ! ঐতো দেখা যাচ্ছে ডাক্তার অাংকেলের চেম্বার।

-তাই না কি?

-হ্যা তাই।এবার আমরা হাটছি।মিরপুর শেউরা পাড়া আমার শশুর বাড়ি।মেইন রোডের সাথে ডাক্তার আলম সাহেবের চেম্বার।ডাক্তার সাহেব আমার শশুর সাহেবের ঘনিষ্ট্ বন্ধু।আমার ওয়াইফকে তিনি নিজের মেয়ের মত স্নেহ করেন।

বাংলাদেশে যে কজন নামিদামি সুনামধন্য্ ডাক্তার হোমিওপ্যাথিক ডাক্টার রয়েছেন তিনি হলেন তাদের অন্য্তম।আমাদের প্রাক্ত্ন রাষ্ট্র্পতি হোসেন মুহাম্মদ এরশাদ সাহেবের চিকিৎসার জন্য্ যে বোড তৈরী করা হয়েছিল,ডাক্তার অালম সাহেবও সে বোডের সদস্য্ ছিলেন।যৌন বিশেষজ্ঞ্ হিসেবে তার নাম রয়েছ বিশেষ মহলে।সচিব সেক্রেটারী জয়েন সেক্রেটারীদের মত উচ্চ পদস্থ্ লোক হলেন তার বেশির ভাগ রূগী।তার মাসিক আয় পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার টাকা।কখনো লাখেরও কাছাকাছি যায়।

_যেতে যেতে স্ত্র্রীর কাছথেকে এই তথ্য্ গুলি জেনে সত্যি অামি অবাক হলাম।হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সমপরকে অামার একটা ভ্রান্ত্ ধারনা ছিল। স্ত্রীর কাছে এসব কথা শুনে ধারনাটা কিছুটা হলেও পরিবর্তন হতে লাগলো

চেম্বারের ভিতরে বাথরুম সহ কয়েকটি কক্ষ্ রয়েছে।সামনে রুগীদের জন্য্ ওয়েটিং রুম।সেখানে তিনটি সোফা।সোফা গুলোতে বেশকজন রুগীও বসে আছে।অামরা সোজা ভিতরে ঢুকে গেলাম।পরদার অাড়ালে ডাঃ অালম রুগীদের সাথে প্রাথমিক অালাপ শুরু করছেন।আমাদের দেখে

ভরাট কন্ঠে বললেন"

-এই যে মা মনি এস! ইনি বুঝি জামাই বাবাজী? তোমরা বস,অামি রুগীটাকে একটু বিদায় করে নিই।তারপর তোমাদের সাথে চা নাস্তা খেতে আলাপ করা যাবে।কি বল হ্যা?

-এই রফিক দেখতো এরা কি খাবে?

রফিককে দায়িত্ব দিলেন আমাদের আপ্যায়নের জন্য।গরমের সিজন তাই ঠান্ডা কোক আর মোগলাই পরাটার ব্যবস্থা করলেন কম্পাউন্ডার রফিক,ততক্ষনে রুগীকে বিদায় দিয়েছেন ডাক্তার সাহেব।

-এবার বল জামাই বাবাজী কেমন আছো?

-জি ভাল।

-তা কোথায় থাকা হয়?

সৌদিআরব।এবার আস্তেকরে উপদেশের ভঙ্গিতে বলেন-

-সাবধানে থেকো বাবাজী এবার মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধহবে,দেশে ইলেকশান হবেনা।

-তাই নাকি ? কিন্তু আপনি কি করে জানেন?

-হ্যা অামি সব জানি। ইমাম মেহেদী এসে গেছেন,তিনি বাংলাদেশেই আছেন। আমার খুব ভাল সম্পর্ক তার সাথে।

-কি বলছেন আপনি?

-ঠিকই বলছি । ইমাম মেহেদীর পরেই আমি। শুন গুজরাটে সম্প্রতি যে ভুমিকম্প হয়ে গেল, ওটা বাংলাদেশে হওয়ার কথা ছিল। খুব কায়দা করে ট্রান্সফার করেছি।

লোকটার এসব আজব কথা শুনে রীতিমত আমি তাজ্জব বনে গেলাম। লোকটা বলে কি? ভাবছি এই পাগল লোকটা কি করে ডাক্তার হতে পারেন?একেই তো চিকিৎসার জন্য ম্যান্টাল হাসপাতালে পাঠানো দরকার। হাতে অাবার একটা চন্দন কাঠের তাছবিহ রয়েছ,ওটা মাঝে মধ্যে নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রান নেন আর কি যেন তপজপ করেন। মূখ ভরা দাড়ি, সার্টপ্যান্ট পরনে।মাথায় টুপি গলায় টাইও রয়েছে। কি অদ্ভুদ মানুষ! তার তাছবিহ জপার ভাব দেখ প্রশ্ন করলাম।

-আংকেল আপনার তাছবিহটাতো মাশাল্লাহ খুব সুন্দর ! তা কি জপছেন আপনি?

- কেন আমার নিজের নাম! আমি আমার নিজের নামই সারাক্ষন জপকরি।

- তার মানে? নিজের নাম কি কেউ জপকরে কখনো?

- কোরআন শরিফ তো পড়না তাই জানো না। আর পড়লেও তার বাংলা তরজমা জানো না। অারে আদম আর আল্লাহর মধ্যে কোন তফাথ নেই। এই যে চলতে ফিরতে যে মানুষ গুলো দেখছ এগুলি তো সত্যিকারের মানুষ নয়।

অাল্লাহ কোর আনে এরশাদ করেছেন"খালাকাল আদম অালা সূরাতীহি"অর্থাত-অামি অামার নিজের রুপে মিশ্রিত করে আদমকে সৃষ্টিকরেছি। অতএব মানুষের হাত, পাঁ ,কান, নাক,অঙ্গপ্রতঙ্গ সবই আল্লাহর অঙ্গপ্রতঙ্গ।এবার অআমি চিন্তা করলাম সামনে কথা না বাড়িয়ে কেটে পরাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে অামার স্ত্রী বলে উঠলো !

-অাংকেল! অাপনি যা বললেন এগুলি বিশ্বাস করলে তো অামরা জাহন্নামে যাব।

-শোম পাগলীর কথা ! আরে বেহেস্ততো আমার কাছেই রয়েছে,দেখবি?কাছে অায় বলেই ,ড্রয়য়ারটা খুলে তার ভিতর থেকে দুইটি টুপি বের করে বললেন'দ্যাখো দ্যাখো এই হল বেহেস্ত ! তার কথা শুনে অামার স্ত্রী প্রশ্ন করলো ,

-টুপি কি করে বেহেস্ত হতে পারে?এতক্ষনে অামি তো প্রায় পাগল হওয়া উপক্রম। তিনি একটু থেমে স্বাশ নিয়ে আবার বললেন"শোন!

এই টুপি মাথায় দিলে বিশ্বজাহানে কোথায় কি হচ্ছে –কোথায় কি অাছে সব কিছু দেখতেপাব শুনতে পাব। যা বলবো তাই হবে।

-তাই না কি? তাহলে ও দুটোকে ড্রয়ারে পুরে রেখেছেন কেন? ওটা মাথায় দেন অার অন্ততো ফ্লিস্তিনের মুসলমানদের একটু উপকার করেন ! বললাম অামি।

-এখনো সময় হয়নি বাবা! সময় হলে রাসূল সঃ এসে সপ্ন-যোগে এসে বলে যাবেন। বাহিরে অনেক রুগী তাই বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা হলাম। উভয়ে হাটিছি আর ভাবছি ! হঠাৎ একটি গল্প মনে পরে গেল, স্ত্রীকে বললাম।

-এই শোন ! তোমাকে একটি কৌতুক বলি-

-বল,এত আজব কথা বলার পর আবার কৌতুক?

-শুনই না ! জৈনিক লোক । তার ছিল চোখের সমস্যা। তিনি সব কিছুই ডবল দেখেন। তার এক বন্ধুর পরামর্শে তিনি এক চক্ষুবিশেষজ্ঞের স্মরনাপন্ন হলেন। ডাক্তার ভিতরে বিশ্রাম করছেন তাই তার সেক্রেটারী তাকে ভিতরে যেতে দিচ্ছিলেন না।এ নিয়ে রুগী আর সেক্রেটারীর সাথে তুমুল ঝগড়া। হট্টগোল শুনে এবার ডাক্তার বাবু চোখ ডলতে ডলতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন –এখানে এত শত লোকের ভীড় কেন?

এবার রুগী হতভম্ব হয়ে বললেন

-এই ডাক্তার দিয়ে আমার চিকিৎসা হবে কি করে ? অামি একজনকে দেখি দুই জন ,আর ডাক্তার দেখে শতজন। কৌতুক শুনে স্ত্রী বলে উঠলো- তোমার কৌতুকের ডাক্তারের মত আমার আংকেল নয়। তার কাছে সব রুগীই ভাল হয়ে বাড়ি ফিরে বুঝলে?

১৯৯৫ইং

জেদ্দা

বিষয়: বিবিধ

২৪৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File