মাহমুদুর রহমানের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন : এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের বিবৃতি
লিখেছেন লিখেছেন মাহবুব রোকন ২০ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:০২:১৫ রাত
আমার দেশ-এর মজলুম সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে হংকংভিত্তিক খ্যাতনামা মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি)।
গতকাল এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, রিমান্ডে মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। এতে তার শরীরে গুরুতর জখম হয়েছে। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এএইচআরসি জানতে পেরেছে, রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
আদালতের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মাহমুদুর রহমানের দু’পায়েই গুরুতর জখম হয়েছে। লোহার নখ তার শরীরের মাংস এবং হাড়ের ভেতর ঢোকানো হয়েছে। তাকে একের পর এক ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়েছে।
মাহমুদুর রহমান তার আইনজীবী ও সহকর্মীদের জানান, ডিবি পুলিশ ইলেকট্রিক শক দেয়াসহ নানা উপায়ে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। যখন তাকে আদালতে হাজির করা হয়, তখন তিনি বসতে পারছিলেন না। তার উভয় পায়ের মাংস উঠে গেছে। তার পোশাকে ছিল রক্তের দাগ। গত ১১ এপ্রিল আমার দেশ কার্যালয় থেকে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিনই তাকে ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ডে বর্বর নির্যাতনে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। সেখানে অনশনরত মাহমুদুর রহমানের জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়লে তাকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এএইচআরসির বিবৃতিতে বলা হয়, উপযুক্ত চিকিত্সা দেয়া না হলে তার জীবন বিপন্ন হতে পারে।
মাহমুদুর রহমানের ওপর যে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হতে পারে, সে আশঙ্কা করে গ্রেফতারের দিনই একটি বিবৃতি দিয়ে তার জীবন রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছিল সংস্থাটি। একই দাবিতে গ্রেফতারের দ্বিতীয় দিনও একটি বিবৃতি দেয় এএইচআরসি।
গতকালের বিবৃতিতে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদের নামে মাহমুদুর রহমানের ওপর যেন নির্যাতন চালানো না হয়, সেজন্য পুলিশের আইজির কাছে তারা চিঠি দিয়েছিল। এ বিষয়ে জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার ফ্রাঙ্ক লা রুইয়ের কাছেও চিঠি লিখেছে এএইচআরসি।
বিবৃতিতে বলা হয়, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাংলাদেশে এসব নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক স্বার্থে এখানে বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। পুলিশ এখানে সরকারের দাসের মতো আচরণ করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার স্বৈরাচারী কায়দায় আমার দেশ প্রেস বন্ধ করে দিয়েছে। প্রেস বন্ধ করে দেয়ার জন্য আদালতের কোনো নির্দেশ ছিল না।
মাহুমুদুর রহমানের রিমান্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দায়ের করা মামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিবৃবিতে বলা হয়, বন্দির ওপর যেন নির্যাতন চালানো না হয়, সেজন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে তা পালন করা হয়নি। যেমন জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে দক্ষ চিকিত্সক দিয়ে অভিযুক্তের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং রিমান্ডের পুরো সময়কালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করলেও তা খারিজ করে দেয়া হয়; বরং মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট তার নিজের নির্দেশনাই লঙ্ঘন করেছে। মাহমুদুর রহমানকে প্রথম যখন আদালতে হাজির করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন যে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সরকারের আদেশে পরিচালিত হয় এবং এটা স্বাধীন নয়। এখন এটাই প্রমাণিত হলো।
বিবৃতিতে বলা হয়, মাহমুদুর রহমানকে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এবং স্বৈরাচারী কায়দায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সুশীল সমাজ এবং জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ারের কছে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষা ও মাহমুদুর রহমানের ওপর অমানবিক নির্যাতন বন্ধে হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এএইচআরসি।
বিষয়: বিবিধ
১১২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন