হালিমার কুটির
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ আবদুর রহিম ১৫ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:৩৬:৪৩ সন্ধ্যা
১
দিনের আলোয় চারদিক আলোকিত কিন্তু আলো নেই হালিমার কুটিরে। দরজার সামনে কবির নামের ঝীর্ণ দেহের ছোট একটা বাচ্চা খেলা করছে। কাঁদা মাখা হাত-পা, ছেড়া জামায় শুন্য তার বস্ত্র পরার উদ্দেশ্য। মায়ের কুড়িয়ে আনা লাড়কি দিয়ে বুনছে খেলা ঘর। চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে সে ঘর বারবার ভাঙ্গছে আর ঘড়ছে।
হালিমা ফিরে এসেছে। হাতে গ্যালন ভর্তি পানি। ভাত-তরকারী রান্না করতে হবে। ছোট বাচ্ছার খেলাঘর ভেঙ্গে দিতে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে কবির। ময়লা ভর্তি দেহে লাগে আরো কিছু ধুলাবালি। ছেলেটি কেঁদেই যাচ্ছে কিন্তু হালিমার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তাকে দ্রুত রান্না করতে হবে। স্বামী আসলে খেতে দিতে হবে।
২
ফিরে এসেছে হালিমার স্বামী আলতাফ। রোগা, পাতলা দেহে তালি দেওয়া জামা। মুখ ভর্তি খোছা খোছা দাড়ি। এলোমেলো চুল। মায়াহীন চাহনী। চোয়ালে যেন বর্ষার রাস্তার খাদ। পরনের লুঙ্গী পরিষ্কার করতে গেলে যেন ময়লা হবে একপুকুর!
ছেলের কান্না থামাতে তার কোন প্রচেষ্টা নেই। একরুমের একচালা ডুলির ঘরে ডুকে বিছানায় এলিয়ে দেয় ক্লান্ত শরীর। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ফিরলেও আজ তার শরীর খারাপ তাই কাজ ছেড়ে ফিরে আসে বিকেলেই। পানির বোতল মুখে নিয়ে কয়েক ডোক গিলে বৌকে খাবারের তাড়া দেয় বারবার।
৩
হালিমার রান্না শেষ। সবকিছু গুছিয়ে ছেলেকে কোলে তুলে ঘরে আসে। আলতাফের অপ্রত্যাশিত আগমনে তাকে দ্রুতই কাজ করতে হচ্ছে। ঘর গোছানো, প্লেট ধোয়া, খাবার পানি আনা সব কিছু সে একাই সামাল দিয়ে স্বামীর জন্য প্লেটে ভাত বাড়ে। সাথে বাচ্চাকেও। বাপ-বেটার খাবার পরেই সে খেতে বসবে।
দ্রুত কাজ করতে গিয়ে তরকারিতে লবন দিতে ভুলে গেছে হালিমা। আলতাফের কাছে এটা চরম অপরাধ। লবন বিহীন তরকারী দিয়ে খাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব। এই অপরাধে হালিমাকে শাস্তি পেতেই হবে। গরম ভাত-তরকারি সহ প্লেট হালিমার মুখের ওপর মেরে, পশ্চাতে একটা উষ্ঠা মেরে বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে যায় আলতাফ।
শান্ত শিষ্ট হালিমার পিঠে হাত বুলানোর কেউ নেই, একমাত্র সম্বল নির্জনে চোখের পানি বিসর্জন। স্বামীর অবাদ্ধ হওয়া, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা তার পক্ষে হয়ে উঠে না। দিনদিন আলতাফের সংসার করা তার জন্যে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবুও তাকে সংসার করতে হবে। তার ছেলের জন্য সইতে হবে সব। সে চায় না তার ছেলের অন্ধকার ভবিষ্যত। পিতৃহীনতার যন্ত্রনা সে বুঝে। তার বাবা ছিলনা বলে তাদের অনেক ভুগতে হয়েছিল। অজানা ভবিষ্যতের শঙ্কা তাকে আলতাফের কাছেই থাকতে হবে, অবশ্যই থাকতে হবে। স্ত্রীর স্বাধ নিয়ে না হোক, প্রয়োজনে দাসী হয়ে!
৪
রাত গভীর হয়েছে। ফিরে এসেছে আলতাফ। বৌয়ের স্বান্যিদ্ধ তার বড়ই প্রয়োজন। এখানে বৌ ভালবাসার জন্যে নয়, জীবনের জন্যে, দেহের জন্যে! জীবনের মানে যেখানে বেঁচে থাকা সেখানে ভালবাসা অর্থহীন। এখানে কেউ শেখাতে আসে না ভালবাসা কি জিনিস।
এখানে সভ্যতার বালাই নেই, নেই ভদ্রপল্লীর বাসিন্দাদের আনাগোনা। এখানে ভদ্রলোকদের দেখা যায় প্রতি পাঁচ বছর পরপর!
বিষয়: সাহিত্য
১৩১৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখানে সভ্যতার বালাই নেই, নেই ভদ্রপল্লীর বাসিন্দাদের আনাগোনা। এখানে ভদ্রলোকদের দেখা যায় প্রতি পাঁচ বছর পরপর!
মন্তব্য করতে লগইন করুন