স্বপ্ন

লিখেছেন লিখেছেন অমিত হাসান ১১ মার্চ, ২০১৫, ০১:৪৮:৩৮ দুপুর



[ছবিটি ইন্টার্নেট থেকে নেওয়া]

তানু পাশের বাসার বড় ভাই এর তিন বছরের ছোট্ট মেয়ে। সে কি যে পন্ডিত, না দেখলে বুঝাই যায় না! প্রতিদিন ওর সাথে - সকালে অফিসে যাওয়ার সময় একবার আর বিকেলে অফিস থেকে ফেরার সময় - ন্যূনতম দুইবার দেখা হবেই। আর যদি কোনোদিন আসা যাওয়ার পথে দেখাটা বাদ পড়ে যায়, সে নিজেই আমাদের বাসায় এসে দেখা করে যাবে! এসব কারণে তার সাথে আমার বেশ ভালোই বন্ধুত্ব জমে গেছে অল্প দিনে। আমাদের বাসায়ও ছোট বাচ্চা কাচ্চা নেই। ভাতিজা-ভাতিজি এক হালি খানেক যা ছিলো সবাই এখন বাইরে, তাদের বাবা-মার সাথে। ঘরটা পুরাটাই কেমন যেনো খাঁ-খাঁ করছে তাদের শূন্যতায়। এর মাঝে তানুকে পেয়ে আম্মুও বেশ খুশি।

বন্ধুত্বের খাতিরে হোক কিংবা চাচা বনার খাতিরে হোক, তানুর জন্য প্রতিদিনই অফিস থেকে ফেরার পথে কিছু না কিছু আনতাম। অনেকটা রুটিন কাজ হয়ে গিয়েছিলো। নিজের প্রশংসা নিজে না করলেও পারি, এর পরও সুযোগ কি আর হাতছাড়া করা যায়? আমি আসলে এই অভ্যাসটা তানুর সাথে পরিচয়ের অনেক আগে থেকেই রপ্ত করেছি। প্রথম যখন ভাতিজাটা কিছু মূখে দিয়ে চিবুতে শিখেছে, তখন থেকেই তার জন্য কিছু না কিছু আনার অভ্যাস গড়েছিলাম। এর পর থেকে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমার পকেটও তা টের পেতে শুরু করলো। ভাতিজা-ভাতিজিদের জন্য বলেই পকেটকে সব সয়ে যেতে বলতাম। এখন তানু একাই, তাই তেমন একটা অভিযোগ আসে না পকেট থেকে।

একদিন অফিস থেকে ফিরছি, তানুদের দরজায় তানু অপেক্ষা করছিল আমার জন্য। তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সে জটিল কোনো সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত! আমাকে দেখেই তার স্বভাব সুলভ হাসিটা দিয়ে প্রশ্ন করলো “আচ্ছা চাচু, তুমি কি জান্নাত চিনো?” আমারও হঠাৎ এমন প্রশ্নে হাসি পায়, তাকে অভয় দিয়ে বললাম “হ্যাঁ চিনিতো মনে হয়। কেনো বলোতো?” তার সাদাসিধে পাল্টা প্রশ্নটা আরো মজারঃ “আম্মু বলছিলো জান্নাতে নাকি সবকিছুই পাওয়া যায়। আচ্ছা চাচু, তাহলে কি জান্নাতে চকোলেট পাওয়া যায়?” আমার তখন বেশ মজা লাগছিলো তার কথায়। সারাদিনের অফিস সেরে আসার ক্লান্তিটাই টুস করে উড়ে গেলো নিমিষেই!

অন্য যে কোনো দিনের মতো আজকে তার দেখা পাইনি দরজার সামনে। তার কথা চিন্তা করে করে ঘরে ঢুকতেই লক্ষ্য করলাম আমাদের ঘর ভর্তি মেহমান। এদের অনেককেই আমি চিনিনা। কেবলমাত্র তানুর মা মানে আমাদের পাশের বাসার রিপা ভাবিকেই ভালোমতো চিনতে পারলাম। বাকীরা খুব সম্ভবত উনার আত্মীয় স্বজন কেউ হবে হয়তো। মহিলা মানুষ দেখলেই আমার একটু লজ্জা বেড়ে যায় বলে প্রয়োজনের বেশী কথা বলতে সাহস পাইনা। তাই সবার সাথে সৌজন্যমূলক কুশল বিনিময় করেই আমি আমার কামরায় চলে গেলাম। কাপড় পাল্টিয়ে একটু বিশ্রাম নিবো, এমন সময় আম্মু রূমে এসে ঢুকলেন। চোখে-মূখে অন্যরকম এক আনন্দের ঝিলিক, আবার কিছুটা সংকোচও আছে। আমি তখনও বুঝে উঠতে পারিনি ঘটনা কি হতে যাচ্ছে। আম্মু পাশে এসে বসেছেন ইতিমধ্যে। শেষ মেশ এভাবেই শুরু করলেনঃ “দেখ, নিউ জিল্যান্ড থেকে তোর রিপা ভাবীর ফ্যামিলি বেড়াতে এসেছে প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগে। আরো প্রায় দুয়েক সপ্তাহ থাকবে তারা দেশে। রিপার একটা ছোট বোন আছে, আমাদের বাসায় এসেছিলো আগে একবার। তুই তখন অফিসে ছিলি, তাই দেখসনি। মেয়েটাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ভাবছি তোর আপত্তি না থাকলে ...” ইতিমধ্যেই আমি বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছি। কোথাকার কোন মেয়ে, আমি যার সম্পর্কে সামান্যতম জ্ঞানটুকুও রাখিনা, তাকে কিভাবে এই অল্প সময়ে নিজের করে গ্রহন করবো!? দুশ্চিন্তায় আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জড়ো হয়েছে। মাথাটা আর কাজ করছেনা, কানগুলোও মনে হচ্ছে বেশ গরম হয়ে রেল গাড়ির চিমনির মতো ধোঁয়া বের করে যাচ্ছে। আমি আসলেই কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারছিনা। হঠাৎ জেগে উঠি ঘুম থেকে। চোখ গিয়ে পড়ে ফ্যানটায়। বুঝলাম বিদ্যুৎ অনেক আগেই বিদেয় নিয়েছে!

বিষয়: বিবিধ

১১৪৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

308343
১১ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০২:১০
হতভাগা লিখেছেন :
'হঠাৎ জেগে উঠি ঘুম থেকে। চোখ গিয়ে পড়ে ফ্যানটায়। বুঝলাম বিদ্যুৎ অনেক আগেই বিদেয় নিয়েছে! ''


০ বোঝাই যাচ্ছিল যে ঘুমের ঘোরে আবোল তাবোল স্বপ্ন দেখছিলেন । কারণ শুরু করলেন পাশের বাসার ছাট্ট ভাজিতিকে নিয়ে আর শেষে আসলো তার খালা , তাও আবার নিউজিল্যান্ড থাকে ?




লাল বক্সের লেখাটা কি ঠিকই আছে ?
১২ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০১:০০
249560
অমিত হাসান লিখেছেন : ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেয়ার জনয়ে।
308351
১১ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:০৭
অসহায় মুসাফির লিখেছেন : লেখাটা ঠিক কি বিষয়ে বুঝতে পারলাম না।
308477
১২ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০১:০০
অমিত হাসান লিখেছেন : কোনো বিষয় নেই Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File