"আন্তরিকতা" মাকে ভালবাসা
লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ২৭ মার্চ, ২০১৩, ০৪:২৩:৫৩ রাত
দিন দিন পরম আত্নীয়রা আন্তরিকতা ভুলে যাচ্ছে যাক না
ক্ষতি কোথায়
তাই বলে রক্তের সম্পর্কগুলোও মরে যাবে তা ত সহজে মানা যায় না।
আচ্ছা আমি কি সেই ছোট্ট বালিকাটি থাকতে পারিনা।
যার মাথা ভর্তি চুল দুই পাশে দুটি ঝুটি আর চাচার দেওয়া লাল টুকটুকে ফ্রক পরে উঠনে ছোটাছুটি করছি আর চাচা আমার জন্য চকলেট এনে দিবেন আর বলবেন চুল কাটবিনা।
খুব মনে পড়ে ওয়ান টুতে যখন পড়ি হঠাত্ আম্মু চুল কেটে নাড়ু বেল করে দেন।
চাচা খুব রেগে যান কেন আমার চুল কাটা হল।
সব সময় চাচার সাথে মজার মজার বিষয় নিয়ে তর্ক করতাম
গান শোনার বদ অভ্যাসটি সম্ভবত তার কাছ থেকে পাওয়া।
প্রতিটি গানের বিশ্লেষণ ছিল অসাধারণ
ওনি কি বিশ্লেষণ করবেন আমার কাছ ছিল তার আলোচনার বারটা বাজিয়ে তাকে রেগে দেওয়া।
তার পর বলতেন গাধা আগে মনোযোগ দিয়ে কথা শোন।
মাসুদ রানা,ওয়েস্টার্নগুলো,বা হুমায়ন আহমেদ,সমরেশ মজুমদার,শীর্ষেন্দু ,সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী বা আবুল আসাদ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা তর্ক চলছে ত চলছে।
আমি গাধা ছিলাম কিনা অবুজের মত তর্ক করতাম।
কবিতা কখন শোনার আগ্রহ ছিল না।
চাচা কবিতা শুনতেন আর আমার কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাইতেন
আরে বাবা আমি বাংলা অত কঠিন ভাষা বুঝি নাকি।বুঝার দরকার কি গাজা গুড়ি একটা ব্যাখ্যা দ্বার করানো হল আমার প্রধান কাজ।যাতে করে বড়সড় ধমক খেয়ে তারপর সুন্দর একটা ব্যাখ্যা শুনা যায়।
এ রকম মেধাবী ফেন্ড পাওয়া কঠিন।
দূর্ভাগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এত ছাত্র ছাত্রী সবাই ভাল কিন্তু কেউ চাচার মত বন্ধু হতে পারেনি।
মেয়েরা ত সাংসরিক গল্প ছাড়তে পারে না।
আর ছেলেদের সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকা ফরজ ছিল।তাই বই হচ্ছে আমার সাথী।
দাদী যেদিন ইন্তেকাল করলেন।দাদীর প্রাণহীন দেহটা শক্ত করে ধরে আছি কপালের উপর মাথা।চাচা দাদীকে জড়ায় ধরে স্থির হয়ে আছেন।সত্যি বলতে কি আমার চাচার মত মা বাবাকে ভালবাসতে কাউকেই আমি দেখিনি।১০ বা ১৫ মিনিট পর্যন্ত লাশটি গরম মনে হল যেন জীবিত ঘুমন্ত দাদী।
সবাই খাট থেকে নামাতে বলছে।চাচাকে সবাই সরে যেতে বলছে।
চাচা বলে উঠলেন,
আপনারা পাগল হয়ে গেছেন আমি সরে যাব আমার মাকে ত আপনারা ফেলে দিবেন।চারতলায় কোলে করে ডাক্তারের কাছে আমি ছাড়া কেউ কি নিয়ে গিয়েছিল
দেখছেন।
না না তোমরা কেউ পারবেননা।তারপর চাচাসহ সবাই ধরে মেঝেতে দাদীকে শোয়ান হল।
অবাক চাহুনি শুধুই তাকিয়ে থাকার একটুকর অনুভূতি।
দাদীকে গোসল করান হল।
বারান্দায় রেখে দেওয়া হল
কারণ আত্নীয় স্বজন এলেই পরের দিন কবর দেওয়া হবে।বারান্দায় দাদীর মাথার কাছে বসে আছি।চাচা আসছেন আধ ঘন্টা পর পর আর এসে মশারি তুলে মুখের কাপড় সরিয়ে দাদীর দিকে তাকিয়ে থাকতেন ।
আর আমাকে বলতেন, "দেখ আমার মা কত সুন্দর দেখ মা হাসতেছে"
আমারও তার সুবাদে দেখা হত কয়েক বার।
দাদীকে কবর দেওয়ার পর।সন্ধ্যার পর আমি আর চাচা কবরের কিছু দূরে টংকি[বাশের তৈরি বসার জায়গা] উপর বসে ছিলাম ।দেখ বুড়া বুড়ি পাশে শুয়ে ঘুমাচ্ছে।নিরবে দুই এক ফোঁটা পানিও হয়ত ঝরে
পরে ছিল তখন।
অনেক দিন চাচার সাথে দেখা হয়না।
রোবট পৃথিবী আমাদের পাথর বানিয়ে ফেলল।
রাতঃ৪.০০
রংপুর
বিষয়: বিবিধ
১২৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন