আমার কি দোষ....
লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ২৭ জুন, ২০১৪, ১২:২৩:৪৫ রাত
এই ত অবশেষে...মেঘলার বিয়েটা ঠিক হল।
যদিও মেঘলা নিশ্চুপ ।
এখন তার কাছে বিয়েটা নিছক অনুষ্ঠান বৈকি আর কিছুই নয় ।
বাবার দিকে তাকিয়ে শুধুই নিরব ইচ্ছে পোষণ।
অযত্নের চুলগুলোকে একটু যত্ন নেয়া প্রয়োজন।
হাতগুলো কেমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে একটু মেহেদী লাগাতে হবে।
উফফ্ পায়ের গোড়ালি ফেঁটে চৌচির ।
আজীব দুনিয়াখানা ।
বাবা হঠাত্ ঘরে এল...
খুব জোর কন্ঠে বলেছেন দরকার হলে বাড়ি বিক্রি করব তবুও সুন্দর একটা যায়গায় সবাইকে দাওয়াত দিয়ে আমার মেয়েটার বিয়ে দিব ।আর ঝামেলায় যেতে চাই না আমি।
হুট করে একটু ইচ্ছে হয়ত জেগেছিল মেঘলার টুপ করে মরে গেল।কষ্টের নীল স্রোতধারা শিরা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
তখন থেকেই সৃষ্টিকর্তাকে মন খুঁলে বলছে প্লিজ রহমান
আমি বিয়ে করব না ।
ওর কাছে ত অবাক কান্ড,এত সহজ ,এত সস্তা একটা মেয়ে যাকে একটা পুরুষের হাতেই উঠে দিয়ে দিতে হবে তাও আবার নিজের জাঁকজমকতা দেখিয়ে।
কেন?
মেঘলা এবার পুরাই উদাস ভঙ্গিতে ডায়েরি নিয়ে বসল।
মা আপি সবাই তাড়া দিচ্ছে পার্লারে যেতে হবে।
আপি এসে বলল ওঠ....
মেঘলা তাত্ক্ষনিক উঠে দাড়ালো ।
-রেডি হ।
>আমি ত রেডি ।
-এভাবে যাবি ।বোরখা পড়বি না।
>কোথায়?
-কোথায় আবার পার্লারে।
>তাহলে বোরখা পড়ব কেন?আশ্চার্য !পার্লারে মানুষ সাজতে যায় অন্যকে দেখানোর জন্য ।তাহলে তুমি বল যদি বোরখাই পড়ব তাহলে পার্লারে কেন যাব ।
-পাগল বিয়ের দিন মেয়েদের সাজতে হয়ত।
>আমার মা পার্লারে গিয়েছিলেন
'নাহ'
আমার দাদী গিয়েছিলেন 'নাহ'
-তো।
>তো,তারা ত সংসার আজ অবধি করছে ।
-তোর যা খুশি তাই কর ।
'মেঘলা মনে মনে বলল ইসস্ যদি সৃষ্টিকর্তা সুযোগ করে দিত তাহলে ত বিয়েই ভেঙ্গে দিতাম।
সারা দিনই মেঘলা কখন বই,নয়ত নামাযেই কাটিয়ে দিল ।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে ছড়িয়ে পড়েছে গোধুলীর সৌন্দর্য
অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে মেঘলা ।
হুট করে একটা হাতের উপস্থিতি টের পায় ।কখন যে হাতটা মাথায় এসেছে টেরই পাইনি ।
....তোর এই চোখের জলের জন্য,আমি দায়ী রে বিশ্বাস কর ।
মেঘলা
এত শক্তিশালী ব্যক্তির দুনয়ন দিয়ে অঝোর ঝর্ণার নোনা জল ঝরছে দেখল।
হাতটা ধরিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিল ও।মেঘলা বলা শুরু করল
>বলুন ত কি দোষ করেছেন ।
-ছেলে পক্ষ গ্রামে গিয়ে খোঁজ নিয়েছ।জেনেছে মেয়েটার পরিবারের অনেক সদস্য ভাল না।
>তো'
-ওই ছেলে চাইছেনা সম্পর্কটা এই পরিবারের সাথে হোক ।ভাল ছিল ছেলেটা ।
>মেঘলা উচ্চ স্বরে বলল 'আলহামদুলিল্লাহ'।
ফ্যাল ফ্যাল করে
কিছুক্ষণ তাকিয়ে
-চাচা বলল,
তোর কষ্ট হচ্ছে না।
>হুমম ভয়ানক কষ্ট।তবে বিয়ে ভাঙ্গার জন্য নয় বরং আমার প্রিয় ব্যক্তিদের দূর্বলতা দেখে ।
-যেমন?
>বাবা এসে বলল বাড়ি দরকার হলে বেঁচে দিবেন ।কেন প্রেমকে হারাম করে দিয়েছে বলেই বিয়ে হালাল ।সুতরাং এটা কোন অনুষ্ঠান নয় ।
বরং পুরোই একটা সুন্দর জীবন।সেখানে জুয়ারির মত বিলাসীতা।উহু এ খেলা হতে পারে না।আপু এসে পার্লার পার্লার করছে কেন কাল চেহারা ধলা করতে হবে ।
আর আপনি জীবনের ভুলকে শক্ত করে ঝেরে ফেলার রহস্য খুঁজে পেয়ে ভালোর পথে ছুটছেন ।আপনার ভাই আছে,বোন আছে,সকল আত্নীয়েরা স্বযত্নে আগলে রেখেছ আর কোথাকার কোন মহারাজ এসে একটা অপবাদ দিয়ে গেল আর আমনি নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিচ্ছেন আপনি।
-তুই ভেবে দেখ।
একটার পর একটা বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে তোর ।এটা কি তোর দোষ ?
>আপনি বোকার মত কথা বলছেন ।পৃথিবীতে এমন কিছু সৃষ্টি করেননি স্রষ্টা যা অহেতুক ।আমিও অহেতুক নই ।সুতরাং এত ক্ষুদ্র একটা বিষয় নিয়ে মাথা ব্যাথা তৈরি করার মানেই নেই ।
-ওকে তাহলে তুই বল কিছু।
>এখানে কিচ্ছু বলার নেই ।আমাকে এক কাজিন বলেছেন কি শুনবেন ?
-বল।
>এত দিন ধরে একটা ছেলে যোগার করতে পারনি ।
-তোর উত্তর কি ছিল?
>আপনারা বড়বোনরা আছেন কেন?
তবে ধাক্কা খাইনি।আজকে ধাক্কা খেয়েছি খুব।
-আমি জানি।
>উহু জানেন না।
-তুই বল।
>একটা মেয়ে একটা বস্তুর মত ব্যবহৃত হচ্ছে সমাজে ।ভেবে দেখেছেন ব্যাপারটা ।
এবং পর্যায়ক্রমে এখন ইসলামিক পরিবারগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে ।ফলে একটা মেয়ে না পাচ্ছে পর্যাপ্ত সন্মান।আর না স্বস্থিবোধ করছে বৈবাহিক বন্ধনকে।
-হুমম।
>আপনি চিন্তা করে দেখেছেন ।পুরো বিশ্ব মিডিয়া চাচ্ছে নারী পুরুষকে ঘিরে নিষিদ্ধ সম্পর্কের মায়ায় বয়ঃসন্ধিকাল থেকে ছেলে মেয়ে ব্যস্ত থাক এবং তাই হচ্ছে ।
এখন একটা ছেলের চরিত্রের চাইতে ছেলের সম্পদের মাত্রা।
একটা মেয়ের চরিত্রের চাইতে মেয়ের রূপের মাত্রা।
-বংশ বলে একটা ব্যাপার আছে ।এটা ত অস্বীকার করতে পারিস না।
>নাহ্, অস্বীকার করব কেন ?তা ত মনে আছে ।
-তাহলে আমাদের দোষটাকে হেসে উড়িয়ে দিতে পারিস না তুই ।
>অবশ্যই পারি।কারণ যার যার আমল নামা তাকেই দেওয়া হবে ।
-তুই সমাজের অন্ধ নীতিকে ভাঙ্গতে পারবি না ।কখনই না।
>অদ্ভুত ব্যাপার হলেও সত্য আমি চাই না ।শুধু নিজের মধ্যে ভাঙ্গতে চাই।
-পারবি কি?
মেঘলা অপলক অপূর্ব রাতের আ কা শে র দিকে তাকালো ।ও ভাল ভাবেই জানে এত সহজ না ভেঙ্গে ফেলা পুরন জং ধরা নীতিগুলোকে।তবুও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।আজ না হয় কাল ত হবে।
একটার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতেই পারবে।
একজন নারী সমাজে কেন মূল্যবান হতে পারছে না।খুঁজে বের করতেই হবে ।
আসলেই
'আমাদের কি দোষ?
#নতুনমস
বিষয়: বিবিধ
১৩৪২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন