স্মৃতির পাতা থেকে....
লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:৫৪:৫২ রাত
ঐবার ছুটির সংখ্যা কম ছিল হয়ত।
কেন যেন মনে হচ্ছিল।
ঢাকা থেকে প্রায় একা একা ৭ অথবা ৮ ঘন্টার জার্ণি করে রংপুরে যেতে হয়।
আবার অবাক ব্যাপার রংপুরে গেলে কখনই আব্বু একা আসতে দেন না।
পাশের সিটে যদি কোন ক্রমে পুরুষ মানুষ বসেন তবে বোবার মত পুরোটা পথ বই পড়তে পড়তে যেতে হয়।
তবে অধিকাংশ সময় আপুদের পাশের সিট থাকে।
শীত আর বর্ষা বাস জার্ণির আলাদা একটা আমেজ আছে।
একবার তখন আমি ছোট নানা বাড়ি আসব
রংপুর থেকে রাতে খুব শীত নাবিল পরিবহনে স্বপরিবার।
একটা কম্বল নিয়ে বাসে উঠি
বেশ মজার ব্যাপার।
আরেকবার বর্ষাকাল আপুর সাথে যখন কাঁচে কুয়াশা জমে তাতে লিখতে বেশ মজা।
মাঝে মাঝে কাঁচ সরিয়ে দিলে বৃষ্টির ছিটে লাগে তখন ধমক খেতে হয় অযথা।
একটা আলাদা ঝুম ঝুম মৃদু শব্দ বেশ লাগে বর্ষার সময়।
রংপুরে এসেই পথে নামতে হয়।বাকিটা ভ্যানের পথ।
পথের দুই প্রান্তে ক্ষেত।সহজে ঋতুর আগমন মাঠের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।
এতটুকু পথ যাওয়া জন্য বাড়ি থেকে মানুষসহ ভ্যান পাঠানো হয়।
গ্রামে চলে আসি কারণ দাদা দাদী তখন গ্রামেই ছিলেন আব্বু আম্মুও ওখানে।
কয়েক দিনের মধ্যে আবার দাদীকে নিয়ে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়।
মজার ব্যাপার অধিকাংশ ছুটিতেই দাদা দাদীর সাথে হসপিটালেই কাটিয়েছি।
শেষ বার যখন ভর্তি করানো হয় দাদীকে তখন চাচা ভুলে আমার নামে ভর্তি করান।আমাদের নাম খুব কাছাকাছি ত।
ঐ সময় আমি ছিলাম না কিন্তু ঐ নামে শেষ কাগজের দলিলগুলো এখন আছে।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমি কি বেঁচে আছি আদৌও?
যাইহোক এখন আমরা ছোট্ট পরিবার হাসপাতালে।একদম মনে হয় আমরা একরুমের বাসা নিয়েছি।সবসময় ঘর ভর্তি মানুষ থাকত।খুবই মূল্যবান সম্পদের প্রতি টান একটু বেশি থাকে।কেন যেন খুব মূল্যবান মনে হত দাদা দাদীকে।সবার কাছে ছিল।অনেক পরিবার কেন যেন অন্য রকম?
হুম..
দাদীর আবার পারকিংসন সম্ভবত এই রূপ নামের একটা রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।
খাবার মুখের মধ্যে নিয়ে বসে থাকেন
গিলবেনও না আবার ফেলেও দিবেন না।
চাচা বার বার বলত...
মা খাও...
সোনা মা খাও...
হঠাত্ চাচার গায়ের মধ্যে কুলি করে দিতেন
তারপর শুরু হত সবার হাসি।
আমি শুরু করতাম গাঁজাখুড়ি গল্প
এখন যখন বাবুটাকে গল্প বলতে গেলেই ঐ স্মৃতি ভেসে আসে।
অতঃপর যদি তার মর্জি হত তাহলে খেতেন।
রাহেনা ফুপু না না এনি রক্তের কেউ নন তবে দাদীকে যেভাবে সেবা করেছেন আমাদের পরিবারের কেউই ততটা করতে পারেনি।
চাচা ঘুমতেন মেঝেতে।আরেকটা বেড ছিল।প্রতিদিন সকাল বিকাল বড় ফুপ্পু আর ছোট্ট ফুপ্পি আসতেন।
আব্বুও আসতেন প্রায় ব্যাগ ভর্তি আম নিয়ে। মনে পড়েছে ঐ সময়টা আম ছিল।সম্ভবত জুন মাস হবে।
অবাক লাগে বাড়ি গেলেই ছুটি এত দ্রুত শেষ হয় যে আসার সময় একটা বিশাল মন খারাপের বাক্স নিয়ে আসতে হয়।
দাদীকে বললামঃ
দাদী মুই কিন্তু কাল চলি যাম।তখন...
দাদী বলতঃ
আক্করে মারি ফেলাম তোক।মোক ছাড়ি কোটে যাবু।
তুই মোক ছাড়া কোট্টেও যাবা পারবু না।এট্টে থাকপু মোর কাছে।
হয়ত তখন চাচা বলবে জাননা তোরা আরও কয়েক দিন থাক।
আব্বুও বলে যে কয়দিন ছুটি আছে তোমার দাদীর কাছে থাক।
দাদার আবদার টাও মজার ফোনে বলবেঃ
আমার সাথে দেখা না করে তোরা ওপাকেই পালাইমেন।
ওটা হবার নাই।
ছুটি শেষ হয় চলে আসতে হয়।তবে কায়া পিছু ছাড়ে না।
দাদীও চিরকালের জন্য ছুটি নেন।এই দুনিয়াকে বিদায় জানান।এটায় নিয়ম।কাল না যে কোন মুহুর্ত্বে হয়ত আমার পালা।
মাঝে মাঝে দিবা স্বপ্ন আঁকি আমার একটা ভয়ানক রোগ(ক্যান্সার অথবা ব্রেন টিউমার)
হসপিটালের বেডে পড়ে আছি।
আল্লাহ না করুক।
এখনও ছুটি ফিরে আসে।
জমা হয়।
অবশেষে আর কখনই থাকা হয় না।
অনেক দিন যাওয়া হয়নি ঐ গায়ে।ওদের মাঝে।
মাটির টানে মন কেবল ছুটে চলে যায়।
আর ঐ জোড়া কবর কেমন যেন ইশারা করে।
#নতুন_মস
সূর্যবাড়ি
বিষয়: বিবিধ
১১৭৯ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার দাদা দাদির কথা মনে পরে গেল।
দাদা প্রায় দের বছর দাদী দের মাস হয়েছে মৃত্যুবরণ করেছেন।
জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন।
আমিন
তবে নিজেকে সম্ভবত অতিরিক্ত হাইলাইট করা হয়ে গিয়েছে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
পৃথিবী
সম্ভবত বেশি মাত্রায় রোবটিক হয়ে যাচ্ছে। অনেক ধন্যবাদ।
সবাইকে সালাম এবং শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন