গ্রাম্য বধুয়া-৪
লিখেছেন লিখেছেন নতুন মস ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৩:৩৫:২৯ দুপুর
গ্রামে যারা থাকে
এই গ্রাম্য মানুষগুলোকে অনেকেই অলস ভাবতে পছন্দ করে এবং গর্ব করে তা আবার বলে বেড়ায়।
আর কেউ কেউ ত হেয়ও করে চাষা বলতে বেশ তৃপ্তি পায়।হয়তবা শহরের বাসিন্দাদের এটা একটা ঢং নিজেদের বড় ভাবা বা জ্ঞানী ভাবার নতুন কৌশল।এই ভাবনাটি যখনই স্মৃতিতে জাগে আচ্ছাঃখাওয়া, দাওয়া আর ঘুম এই তিনটি চক্রে গ্রাম্যের সরল সহজ জীবনগুলো মোড়ানো থাকে।এদের কি আর কোন কাজ আছে।আর কোন লক্ষ্য আদৌ আছে।যেন নেই এই গ্রাম্য মফিজদের এটায় মনে হয় অনেকের।হ্যা,ঠিক আয়েশা বিবির শহুরে বসবাসরত ভাই বোনেরা প্রায়শ বলে এই কথাগুলো।প্রায় বলে এই বিরক্তিকর জীবন ছেড়ে দিয়ে শহরে চলে আসতে তাকে।আয়েশা বিবি শুনে আর হাসে।সে ত যানে গরমকালে নলকূপ থেকে এক বালতি পানি উঠানোর খাটনিটা কি?ধানের কাজ যদিও বা নেই কিন্তু বস্তায় বস্তায় তুস থেকে চাল ঝেড়ে আকির বেচে খাওয়া মোটেও চারটি খানি কথা নয়।আবার গরু যদি দু একটা থাকে তার ঝামেলার কথা না হয় নাই বলল।তবুও আয়েশা বিবি আল্লাহর রহমতে অনেক সন্তুষ্ট এই ছোট্ট তরীতে উত্তল সমুদ্র পাড়ি জমানোর সুযোগ পেয়ে।
তিনি তার একটা কুঁড়ে ঘরেই সুখে আছেন যেহেতু তার সীমাহীন চাহিদা নেই, আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি মনকে বলে বুঝান তিনি।তিনি সুখে আছেন বটে কিন্তু আয়েশা বিবির জীবনটার শুরু থেকে এমন সুখের দোলনায় দোল খেয়েছে তা ভাবা কিন্তু মোটেও ঠিক নয়।হঠাত্ যখন ছেলে পক্ষরা পছন্দ করে বিয়ে করে ঐ সবুজে ঢাকা গ্রামের মাটির ঘরে নিয়ে আসল তাকে তখনও তার শাশুড়ি আম্মা দেখেননি আয়েশা বিবিকে।ঘরে ঢোকালেও বউ মনপুত হল না শাশুড়ি আম্মার বউ এর গায়ের রংটা যে অলতা দুধে ধোয়া গড়নে ছিল না অনেকটা কালসে গড়নে থাকাটা ছিল ভয়ানক দোষের গ্রামবাংলায় গেরস্থবাড়িতে।বাড়ির বড় ছেলের বউটা হবে ফুটফুটে ডানা কাটা পরির মতন।তা না হলে যে মনটা খারাপী হওয়ার কথা আয়েশা বিবি তা ঠিকই ঠাওর করতে পেরেছিল।সেই দ্বিমুখী আচরণটা মানতে মানতে বেশ খড় পোড়াতে হয়েছে আয়েশা বিবিকে।তার উপর অনেকগুলো ছোট ভাই বোনের ভার।সবাই ত সবকিছু গড়ে তুলতে পারেনা হয়ত আয়েশা বিবি শহুরে থেকে থেকে হঠাত্ এসে সব ঝামেলাকে মোকাবেলা করতে পারেননি।অদৃশ্য ঝড়,দ্বন্দ আর ভালবাসার কথা ভাবতে ভাবতে কত যে বসন্ত কেটে গেল।হঠাত্ গ্রাম থেকে শহুরে জীবনে পা রাখা সেখানেও অনেকটা পথ একা একা হেটেছেন তিনি ছোট ছোট বাচ্চাদের কাধে নিয়ে।যেহেতু তার জামাই বড় ছেলে বাড়ির হয়ত
বড় সন্তানের হৃদয়ে সব সময় মা বাবার প্রতি ভালবাসার প্রচন্ড টানের অনুভূতি ছিল।তাই বৃদ্ধ বাবা মার মায়াজালে জড়িয়ে আবার গ্রামে ফিরে আসেন তারা।আয়েশা বিবি এই দ্বায়িত্ববান লোকটাকে তার দ্বায়িত্ববোধের কারণে কখন একা ছেড়ে দেওয়ার সাহস পান নি।জোঁকের মত পাশে ছিলেন হয়ত অজ্ঞ মূর্খ গ্রাম্য নারীর ভুমিকায়,কখনবা ঝগড়াটে মহিলা হিসেবে।আর
মন খারাপের ছলে ঘরের কোণে বসে থাকা ত নিয়ম হয়ে দাড়াত মাঝে মাঝে।হয়ত অভিমানী নারীও ছিলেন তিনি।সেখানে হয়ত প্রচুর ভালবাসা ছিল পরস্পরের,
কখনবা ছিল না,কখন শুধুই দ্বায়িত্ববোধ।আর সন্তানদের মায়ামাখা মুখ দেখে লাল মাটিকে আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকার মিথ্যা অভিনয়।
সময় গড়িয়ে কোথাকার জল কোথায় গিয়ে পড়েছে ,তবুও অনেকটা পথ পেরিয়ে গিয়েছে ঠিক এই মহুর্ত্বে শশুড় শাশুড়ি পরকালের দীর্ঘপথে পাড়ি জমিয়েছেন ক বছর আগে।বড় দুই মেয়েকে শহরে বিয়ে দিয়েছেন।
এক মেয়ে দেশের বাইরে আর দু ছেলে পাড়ি দিয়েছে দু দেশে আর দু সন্তান আজও আঁচল ধরে গ্রামেই পড়ে আছে ওদের মাঝে।
কত আশা ,কত হতাশা,কত দ্বায়িত্ববোধ আর স্নেহ মায়া মমতাকে ঘিরে আজও আয়েশা বিবির জীবন চলছে।
চলুক না এ পথ।দেখা যাক সামনে কতটা পথ পাড়ি দেওয়া যায়।না পারলে কলম থেমে যাবে সমস্যা কোথায়।
(নতুন মস)
(চলবে)
ইনশাআল্লাহ
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন